আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রেম কিংবা প্রেমসমুহ [গল্প একটাই, প্রেম অনেকগুলো। ]

প্রেমে পড়া ব্যাপারটা আমার জন্য কখনই খুব কঠিন কিছু ছিল না। কারনে অকারনে ধাপ ধুপ প্রেমে পড়ার রেকর্ড আমার আছে। যতদূর মনে পড়ে,আমি প্রথম বার প্রেমে পড়ি ক্লাস টু তে পড়ার সময়। আমার বাংলা ম্যাডামের প্রেমে। প্রেম মোটামুটি দুর্দান্ত ছিল।

কারন যেই আমি কখনই ড্রয়িং করতে চাইতাম না সেই আমিই কিনা একদিন তিনটা বেগুন একে ফেললাম ম্যাডামকে দিব বলে!বেগুন আকার পেছনে অবশ্য বিশেষ কোন চিন্তা ছিল না,তখন স্কুলে কলা,আম,বেগুন,ঘুড়ি এইগুলি আকা শেখাত। বাকিগুলি আকতে বেশি সুবিধা করতে না পেরেই বেগুন আকা। এই দুর্দান্ত প্রেমের সমাপ্তি হল খুব সাদামাটা ভাবে। যেদিন আমার মহান শিল্পকর্ম (অংক খাতায় আকা তিনটা গাব্দা সাইজের বেগুন,রঙ যথাক্রমে লাল,হলুদ ও খয়েরী) নিয়ে গেলাম ম্যাডামকে দেখাতে,ওইদিনই কিনা পড়া পারলাম না!উল্টা বেগুন দেখাতে গিয়ে খেলাম ঝারি!ফলাফলঃ শাস্তি। শাস্তি হিসেবে দুই হাতে তিনটা বেগুনের ছবি নিয়ে পুরা ক্লাসের সামনে দাড়িয়ে রইলাম।

ওইদিনের মধ্যেই আমার প্রথম প্রেমের সমাপ্তি ঘটল। ‘খুব ভাল’ ম্যাডাম আমার কাছে হয়ে গেলেন ‘রাক্ষুসী’! এরপরের প্রেমটায় অবশ্য তাড়াতাড়িই পরলাম। আমি পড়ি তখন ক্লাস থ্রীতে। বালিকার নাম শরমী(ক্লাস থ্রী,গ শাখাম্রোল ০৭)। প্রতিদিন ও যখন ওর দুইটা বেণি দুলিয়ে ক্লাসে আসত তখন আমি পিচ্চি রবীন্দ্রনাথ হয়ে যেতাম।

অনুভুতিটা ছিল অনেকটা “আহা!এই বালিকার সহিত ঝালমুড়ি ভাগ করিয়া খাইতে খাইতে পা দোলাইতে পারিলেই কেবল আমার হাফপ্যান্ট পড়া সার্থক হইত!” টাইপ। এইবারে অবশ্য কোন ঝুকি নেই নাই। সকল প্রকার চিত্রকর্ম প্রদর্শন বাদ। বরং প্রতিদিনই ‘এই ,কেমন আছ?’ কিংবা ‘আমার ছোট মামা ইটালি থেকে চকলেট এনেছে,খাবা?’ টাইপ কথাবারতা চলতে লাগলো। মোটামুটি অনেকদূর গেল।

অনেকদূর মানে এক বেঞ্চে বসে খুনসুটি পর্যন্ত। কিন্তু এইবারও বিধি বাম!সবই ঠিক ছিল,ঝামেলা বাধাল আমার একটা বদ অভ্যাস। হাতের কাছে কিছু পেলে কামড়ানোর একটা বদভ্যাস ছিল। ওর নতুন পান্ডা রাবারটার প্রায় অর্ধেক কামড়ে খেয়ে ফেলার পর বালিকা স্বরূপে আসলো! শুরু করল বিরাট কান্নাকাটি। তারপর আমার আম্মুর কাছে বিচার,আর আমার আম্মু দিল আমাকে এক দুর্দান্ত চটকানা!কি আফসোস !বালিকা রাবার খাওয়াটাই দেখল,প্রেম দেখলনা।

আমি অবশ্য চটকানা খেয়ে পিছু হটার বান্দা ছিলাম না। লিন্তু পরদিন থেকেই শরমী আমাকে দেখলেই দৌড় দিত ওর আম্মুর কাছে,আমি নাকি ওর ব্যাগ,বই,জুতা সব খেয়ে ফেলব!! ফাজিল আর কাকে বলে আর কি,এত চকলেট খাওয়ানোর পর এই প্রতিদান!এইজন্যই কবি বলেছেন “যারে করিলাম চক্ষু দান,সে করে মোরে অপমান!”(আসলে কবি কিছুই বলে নাই,আমি বলসি,কবির এত সময় কই?) যাই হোক,অল্প সময়ে দুই দুইটা ধাক্কার পর আমার প্রেমে পড়ার অভ্যাস সাময়িকভাবে বন্ধ হল। পরের কয়েক বছর নতুন অর্থাৎ তৃতীয় প্রেমে মশগুল হলাম। এই প্রেমটা ছিল ক্রিকেট। তখন আবার বাংলাদেশ আই সি সি চ্যাম্পিয়ন হল।

আমি এবং এলাকার আমার সাইজের সবার ‘এইম ইন লাইফ’ তখন ক্রিকেটার হওয়া। কেউ যখন বড় হয়ে কি হব জিজ্ঞেস করতো,গম্ভীর কন্ঠে বলতাম ‘পাইলট’। আহাম্মক রা বুঝতনা যে এই পাইলট প্লেন চালায় না,উইকেটকিপিং করে,আর মাঝে মাঝে ব্যাটিং এ গিয়ে বিশাল বিশাল ছক্কা মারে,প্রতিপক্ষের একদম পাতলা পায়খানা ছুটায়ে দেয়। তবে শেষ পর্যন্ত এই ক্রিকেটই আমার চার নাম্বার প্রেমটায় ফেলে দেয়। তখন আমরা বাসার পাশের মাঠটায় ক্রিকেট খেলতাম।

ছক্কা মারলে আউট,কারন বল আনতে পাশের বাসার বাউন্ডারিতে ঢুকতে হত। একদিন কোন এক ছক্কা (কিংবা আউট,যাই বলেন) এর পর বল আনতে গেলাম আমি। এই বল আনাই কাল হল। বাসার বারান্দায় এ কে!!সাদা জামা পড়া,চোখ ভর্তি বিষন্নতা নিয়ে বারান্দায় দাড়িয়ে আচার খাচ্ছে এ কোন পরী! পাঠক আমাকে ইচড়ে পাকা ভাববেন না যেন,তখন আমি এইটে পড়ি, বুকের ভেতর কেমন করার বয়সতো তখন থেকেই শুরু হয়,তাই না? গল্পে ফিরে আসি, তো, ওই বিকেলের পর থেকেই শুরু হল আমার আনন্দময় কষ্টের সময়। চোখ বন্ধ করলেই সাদা জামা,বিষন্ন চোখ,আমের আচার!প্রতিদিন খেলতে যাই,আর অপেক্ষা করি কখন কেউ ছক্কা মারবে।

বল ওই বাসায় পড়লেই আমি দৌড় ! অবশ্য বালিকা সবসময় থাকত না,হঠাত হঠাত দেখতে পেতাম। আর দেখতে পেলেই বুকের ভেতর কেমন যেন কষ্ট,মনের মধ্যে রঙ্গিন প্রজাপতি!কি অদ্ভুত সে সময়! এইবার উপড়য়ালা মুখ তুলে চাইলেন । অন্তত তখন পর্যন্ত এমনই মনে হচ্ছিল। এক পড়ন্ত বিকেলে দেখি বালিকা আমাদের বাসায়,তার মা আমার আম্মুর পরিচিত। বালিকার নাম নোভা।

গল্পের এই পর্যায়ে বুঝলাম,প্রভু আমার দিকে তাকিয়েছেন ঠিকই ,কিন্তু গরম চোখে! বালিকা শুধু ‘নোভা’ নয়, ‘নোভা আপু!'কলেজে পড়ে,আমার সাথে প্রথম কথা,-“ও আল্লা,তুমি এইটে পড়!!দেখেতো মনে হয় ফাইভের বাচ্চা!এই,তুমি এমন পুচকা কেন?” এইখানেই শেষ না,এরপর থেকে বল আনতে গেলেই আপু ডাকতো ‘ওই পুচকা, তুমি লম্বা হও না কেন?’ সেকি লজ্জা!সে কি যন্ত্রনা!আমি ক্রিকেট খেলা ছেড়ে দিলাম। বন্ধুরা ডাকতে আসতো, আমি যেতাম না। আমি বাসায় বসে পড়াশুনা করার ভাব ধরে থাকি,আমার বৃত্তি পরিক্ষা,আমাকে পড়তে হবে। পুচকা ছেলেদের বুঝি ক্রিকেট খেলা সাজে না। বেশ কয়েকদিন গেল, আমি আর নোভা আপুদের বাসায় যাই না,দেখাও হয় না।

মাঝে মাঝে ওদের গেটের সামনে দিয়ে হেটে আসার সময় তাকাই। বাসায় ফিরে বইএ মুখ গুজি, তাও চোখের সামনে খালি সাদা জামা,বিষন্ন চোখ, আমের আচার। মনের মধ্যে রঙ্গিন প্রজাপতি গুলি কালো হয়ে যাচ্ছে। ওই বছরই, শীতের কোন এক সকালে আমার প্রজাপতিওয়ালি বিদায় নিল। আপুদের বাসার সামনে দেখি ভ্যান গাড়ি, মালপত্র তোলা হচ্ছে,পাশে আপুর আব্বা দাঁড়িয়ে।

যাওয়ার আগে অবশ্য ওরা দেখা করতে এসেছিল,আপু বলল ‘ভাল থাকিস,পুচকা। ’ আমার সব প্রজাপতি গুলোর পাখা কালো করে দিয়ে আপুরা চলে গেল। এই পর্যন্ত যারা পড়েছেন,ভাববেননা আমার প্রেম এ পড়া শেষ। আপু গেল তো কি হয়েছে, আমার প্রজাপতিরাও ফেয়ার এন্ড লাভলী মাখে! মাত্র ছয় সপ্তাহেই আবার ঝলমলে ফরসা! এর পরের প্রেমে পড়াটা ছিল......... ……………………..থাক,আজকে বাদ। এম্নিতেই বিশাল কাহিনী ফেঁদে বসেছি।

যদি পাবলিক ডিমান্ড থাকে তাহলে পরের গল্পগুলো আরেকদিন বলব। [সব চরিত্রই কাল্পনিক,গল্পের ‘আমি’ ও কাল্পনিক। ] ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.