আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শান্তা নামের মাগীটার খুনের দায়ভার শান্তা মাগীকেই নিতে হল

তুমি আমি আমরা ...... শান্তা বিছানায় বসেই ছায়া , ব্লাউজ ঠিক করছে । দিল ইসলাম লুঙ্গির গিঁট ঠিকমতো বেঁধে পান মুখে নিল । শান্তাকে বলল – যা তো , মায়ের ঘর থেইক্কা একটু রতন জর্দা নিয়া আয় । পানে জর্দা কম হইছে । শান্তা শাড়ি ঠিক করে জর্দা আনতে গেল ।

দিল ইসলাম প্যান্টের পকেট থেকে ঘড়ি বের করে দেখে নিল । বেলা প্রায় ৪ টা বাজে । দিল ইসলাম বেকার মানুষ । তার জন্য সময় কোন ব্যাপার না । তারপরও সে নিয়মিত ঘড়ি দেখে ।

কারন টিভির সব অনুষ্ঠান তার সময় মতো দেখা চাই । ঠিক ৪টায় সময় একটা চ্যানেলে হিট হিন্দি গানের একটা অনুষ্ঠান দেখাবে । সে চ্যানেল ঘুরিয়ে তার পছন্দের জায়গায় আসলো । এইত অনুষ্ঠান মাত্র শুরু হচ্ছে । এক্কেবারে ঠিক সময়মতো ।

---ওই , ছেরি ; কতক্ষন লাগে জর্দা নিয়া আসতে ! মুখের মইধে কি সারাদিন পান ডুকাইয়া বইয়া থাকমু ? শালীর বাপ হইছে একটা বোকাচুদা , মাইয়া হইছে আরেক মাগী ! তাড়াতাড়ি জর্দা নিয়া আয় । দিল ইসলাম টিভির সাউন্ড বাড়াতে বাড়াতে শান্তাকে ডাক দিল । টিভিতে “ মুন্নি বদনাম হুয়ি “ গান হচ্ছে । এই গান দিল ইসলামের খুব পছন্দ । গানের তালে তালে দিল ইসলাম পা দুলাচ্ছে ।

মাঝে মাঝে সূর ও ভাঁজছে । শান্তা বেগম মাথায় ঘোমটা টেনে জর্দার প্লেট নিয়ে আসলো । সাবধানে দিল ইসলামের পায়ের কাছে রেখে চলে যাবে এই সময় দিল ইসলাম ডাক দিল – ওই মাগী , যাস কই ? সক্কালবেলায় যে কইছিলাম ডান পাডা ম্যাজম্যাজ করতাছে কানে ডুকছিল ! --- শান্তা ক্ষীণ স্বরে জবাব দিল – “ মা কলপাড়ে কাপড় ধুইতে ডাকতেছে । কাপড়গুলান ধুইয়া পরে আসি ? দিল তিরিং করে উঠে দাঁড়ালো । -- “ কি ! মুখে মুখে কথা কস মাগী কুনখানকার ! সারাদিন করস কি যে এখনো কাপড় ধুয়া হইল না ? স্বামীর পা টিপ্পা দিব্যি এইডাতেও অজুহাত ! বলি এই যে আমার এতো ভাত গিলতাছস , ভাতটা আসে তোর কোন চিপা দিয়া ! আটটা বছর ধইরা তোরে বিয়া করছি , আমার লাভডা কি হইল ? তোর বাপরে যে টাকা দিবার কইছিলাম তার কি হইল ? আমার টাকা কই ? দিল ইসলামের গলার স্বর ভরাট ।

জোড়ে কথা বললে সারা বাড়ি গমগম করে । দিলের কথা বাইরের থেকে স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে । উঠানে বিড়ি ধরিয়ে টান দিচ্ছে দিলের ছোটভাই । সে শুনতে পারছে ভাইজান ভাবীরে ধরছে । শালীর ছেরিডা টাকা দিতাছে না ।

শালা ভাইজানও বিয়া করছে এক কামলার ছেরিরে । তারা সবাই ভাবছিল বিয়ার পর শান্তার বাড়ি থেকে টাকা আসবে । কোথায় কি ! ছোটলোকেরা টাকাই দিতে পারতাছে না । এই টাকার জন্য কতো কিছু আটকাইয়া আছে । পাওনাদারদের ভয়ে গঞ্জের জুয়ার আড্ডায় কতদিন ধরে সে যেতে পারছে না ।

এদিকে ভাইজানের কাপড়ের দোকান ভাড়া করা টাকার জন্য আঁটকে আছে । ছেরিটা টাকা দিলেই সব হয়ে যায় । সে অর্ধেক বিড়ি খেয়ে বাকিটা ফেলে দিল । মাগীরে আবার আজ ভালমত ধরতে হবে । ঘরে গিয়ে দেখে মা হাজির ।

তিনি খুন্তি উচিয়ে কথা বলছে । - ওরে বাপধন দিল ! কি হারামজাদিরে ঘরে আনলাম । পুরা শয়তান একটা । বাড়ির একটা কামের মধ্যে নাই । সারাদিন টিভি দেখার মধ্যে আর বাপের বাড়ি যাইবার তালে ।

আমি কিছু কইতে গেলেই আমারে চোখ রাঙ্গায় । একটু কাম করতে কইলেই চেইত্তা যায় । তোরা তো বাইরে থাকস ! আমি এইডারে লইয়া সংসারে থাকি । আমার হাড় জ্বালাইয়া ফেলতাছে এই হারামজাদি । কিন্তু কিছুই কইতে পারি না ।

ভয়ে থাকিরে বাপধন কবে যে আমার গলায় বটি বসাইয়া দেয় । শান্তা মাথা নিচু করে দিল ইসলামের পা টিপে যাচ্ছে । তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে । হটাত দিল কষে ডান পা দিয়ে শান্তার কুনুইয়ে লাত্থি বসাল । শান্তা ছিটকে পড়লো দরজার কাছে ।

ইতিমধ্যে দিলের ছোট ভাই নাট্যমঞ্চে হাজির । সে চুলির মুঠি ধরে শান্তাকে টেনে তুলে ঘুরিয়ে পিঠ বরাবর আরেক লাত্থি বসালো । শান্তা এইবার সরাসরি খাটের কোনায় বাড়ি খেয়ে পড়ে গেল । তার আর্তচীৎকারে ঘরের পরিবেশ ভারী হয়ে গেল । প্রচণ্ড বেথায় তার মুখের রগ ভেসে উঠেছে ।

শ্বাস নিতে তার খুব কষ্ট হচ্ছে । পীঠে বেথা করছে বেশী , সে হাঁটু মুড়ে পড়ে আছে । কান্নায় তার আচল ভিজে উঠেছে । দিল পানটায় স্বাদ পাচ্ছিল না । প্লেট থেকে জর্দা মুখে পুড়লো ।

কিছুক্ষণ চিবিয়ে স্বাদ টের পেয়ে মাটি থেকে শান্তাকে চুল ধরে টেনে তুললো । - বল টাকা কবে দিবে তোর শুয়োরের বাচ্চা বাপ । অনেক দিন ধরে কইতাছি । এইবার টাকা দিতেই হবে । তাড়াতাড়ি ক , কবে টাকা হাতে পামু ? শান্তা এখনো শ্বাস নিতে পারছে না ।

তার বড্ড পানির পিপাসা পেয়েছে । সে ক্ষীণ স্বরে একবার পানি উচ্চারণ করতে পারলো । দিলের ছোট ভাইয়ের তোর সইছে না । - ভাইজান এতো কথা কওনের কি আছে । হাত পা লুলা কইরা দেও ।

দেখবা হারামজাদির বাপ মা মা কইরা ঠিকই টাকা জোগাড় করবো । দিল কিছু না বলে আবার জর্দা, আর সুপারি মুখে দিল । পান শেষ তবে সুপারির সাথে জর্দা খাইতে আলাদা মজা আছে । স্বাদ জমে । দিলের ছোট ভাইয়ের মাথা গরম , এই মাগীর জন্য তার জুয়ার আড্ডা আঁটকে আছে ।

আজ মাইর দেয়ার ভাল সুযোগ এসেছে । সে শান্তার গলা চেপে ধরে শান্তাকে ঝাকাতে লাগলো । কতক্ষন কি হল জানে না । হটাত দিল লক্ষ্য করলো , তার বউ শান্তা কানতাছে না । চিৎকারের কোন শব্দ নেই ।

শান্তার দেবর ও ব্যাপারটা খেয়াল করে তাকে ছেঁড়ে দিল । দিল ইসলাম নাকের কাছে হাত নিয়ে দেখে শ্বাস পড়ে না । স্থির । সে তার ভাইকে বলল – “তুই এইডা কি করলি “ । দিনমুজুর মিয়া সরদারের মেয়ে শান্তা বেগম মরে গেল ।

তুলনামূলক ক্ষমতাশালী দিল ইসলাম পরিবার এই বিপদে ভয় পেল না । স্থানীয় ইউপি সদস্য আজি বেপারিসহ অন্যান্য মাতব্বরদের নিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় প্ল্যান করে ঠিক করা হল শান্তা বেগমের মৃত্যুর দায় শান্তা বেগমকেই নিতে হবে । সবাই জানবে শান্তা বেগম গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছে । কারন সে খারাপ মেয়ে । খারাপ মেয়ে , নটি গিরি করবে , ইচ্ছা হলে আত্মহত্যা করবে এইডাই নিয়ম ।

মেয়ের অসহায় বাপের মুখে লাগাম লাগানোর দায়িত্ব দেয়া হল ইউপি সদস্য আজি বেপারীর হাতে । সে শান্তা বেগমের বাপকে বলল – “ মাইয়া মইরা গেছে এখন মামলা কইরা আর কি হইব , তোগো ৯০ হাজার টাকা বাবদ চাইরডা গরু দিতাছি , তোরা এইডা লইয়া বাড়াবাড়ি করিস না । করলে কিছুই পাবি না । “ সহজ সরল মিয়া সর্দার গ্রামের মাতব্বরদের উপরে আর কোন কথা বলতে পারে নাই । সব কিছু ঠাণ্ডা ।

বাতাস ঠাণ্ডা , জল ঠাণ্ডা , গরু ঠাণ্ডা , মানুষ ঠাণ্ডা । দাফন হয় শান্তা । এবং এইভাবেই শেষ হয় শান্তা বেগম নামের ২৫ বছর বয়সী এক মেয়ের গল্প । আরও অনেক গল্প লেখা হবে , আরও অনেক লাশ দেখা হবে । আর আমরা ! আমাদের কি ! আমরা তো আম্রাই থাকবো , আমরা তো শান্তা না ।

আমরা তো আমরা ! (- শরীয়তপুরের নড়িয়ায় শান্তা বেগম ( ২৫ ) নামের গৃহবধুকে “ পিটিয়ে মেরে “ আত্মহত্যা হিসেবে চালিয়ে দেয়া হয়েছে । পড়ে অবস্থা বেগতিক দেখে ক্ষতিপুরন হিসেবে মেয়ের বাবাকে চারটি গরু দেয়ার আশ্বাসে লাশ দাফন করেছে স্থানীয় মাতবরেরা । নড়িয়া থানার ওসি আবুল খায়ের ফকির জানান , পুলিস সুতরহাল করে হত্যা করা হয়েছে এমন কোন আলামত না পাওয়ায় লাশ দাফনের অনুমতি দেয়া হয়েছে । তবে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে । ঘটনার পর থেকে শান্তার শ্বশুরালয়ের সবাই পলাতক এমনকি সালিশের কাউকে পাওয়া যায়নি – সুত্র -- দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন , ২৯ আগস্ট , ২০১২ ) এবং এইভাবেই শেষ হয় শান্তা বেগম নামের ২৫ বছর বয়সী এক মেয়ের গল্প ।

আরও অনেক গল্প লেখা হবে , আরও অনেক লাশ দেখা হবে । আর আমরা ! আমাদের কি ! আমরা তো আমরাই থাকবো , আমরা তো শান্তা না । আমরা তো আমরা ! ! ছবি - নেট  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.