আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শান্তা এবং নষ্ট হওয়া ৪জন

জসীমউদ্দীন,বালুখালী,রাঙ্গামাটি। বহুদিন আগে একবার দেখা হয়েছিল শান্তার সাথে। দিন তারিখ মনে না থাকলে ও এটা মনে আছে এটি ছিল ১৯৯৯ সালের কোন এক বর্ষার রাত। আমার বাড়ি রাঙ্গামাটিতে। কগ্ম্পিউটার প্রশিক্ষনের জন্য চট্টগ্রামে আমার থাকতে হতো।

আমার একবন্ধু বয়সে ২/৩ বছরের সিনিয়র (নামপ্রকাশে সাহসী নয়) কর্নফুলী আবাসিক সোসাইটি নামে একটি প্রজেক্টে কাজ করতো। বর্তমান নতুন ব্রীজের পাশে ছিল এটি। এই আবাসিক প্রকল্পে তখনমাত্র ২ কি ৩টি বাসা ছিল্ । তার একটিতে আমার এ বন্ধু থাকতো। আমাকে সে খুব পছন্দ করতো।

আমি তার সাথেই ঐ বাসায় থাকতাম। আর সপ্তাহে ৩ দিন ক্লাশ করতাম। চাঁদগাও আবাসিকের এ ব্লকে নট্রামসের একটি প্রশিক্ষন সেন্টারে। ঐ বাসায় থাকার সূত্রে শান্তার সাথে আমার দেখা হয়। কথা হয় ২/১ মিনিট।

তার সাথে সাক্ষাৎ হওয়া সে ঘটনাটি আজ অনেকদিন পর মনে পড়ল ব্লগার মাহমুদার একটি লেখা পড়ে। সেদিন সন্ধ্যায় ক্লাশ শেষে আমার বাড়ি ফেরার কথা। কিন্তু সন্ধ্যায় ষোলশহর রাঙ্গামাটি বাসষ্ট্যান্ড এসে দেখি কোন টিকিট নেই। লোকাল বাসে রাঙ্গামাটি যেতে হলে পুরোটা পথ দাড়িয়েই যেতে হবে। তাই আমি রাঙ্গামাটি না গিয়ে পুনরায় ঐ বন্ধুর বাসায় ফিরে গেলাম।

ফিরে গিয়ে দেখি আরো ১ জন বন্ধুসহ তারা কি যেন নিয়ে একটু ব্যস্ত। আমি ফিরে যাওয়াতে তারা একটু বিব্রত। পরে আমার ঐ বন্ধু আমাকে তাদের প্ল্যানের কথা জানাল। তার আরো ২ জন বন্ধু বাইরে আছে ১০ টার দিকে ওরা আসবে। সাথে একজন মেহমান আসবে।

মেয়ে মেহমান। তার সাথে রাত কাটাবে চারজন। পাশের একটি রুম তাদের জন্য প্রস্তুত করে রাখা হল। ১০ টার আগেই চলে আসল ওরা। একটি টেক্সীতে।

মেয়েটিকে আনা হল ছেলেদের পোশাক পরিয়ে। মাথায় একটি ক্যাপও। কারন গেইটে যেন পাহারারত আনসার বাহিনী বুঝতে না পারে। আমার নিজেকে একজন ঘৃনিত জানোয়ার হিসেবে মনে হচ্ছিল। আমি তাদের সাথে আছি এর চেয়েও বেশী খারাপ লাগছিল এই ভেবে ঐ মুহুর্তে তারা সবাই আমার কারনে কিছুটা বিব্রত এবং আমার আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নাই।

আমার মনে ভয়ও করছিল। প্রতিদিন পত্রিকায় কত ধরনের নিউজ দেখি। যদি ধরা পড়ে পত্রিকায় ছবি আসবে পতিতাসহ ৫ জন আটক। অপরাধ না করেও অপরাধী হব। মা- বাবা , বন্ধুবান্ধব, ভাইবোন-আত্মীয় স্বজন সবার কথা ভাবছি সারারাত।

দুচোখে এক ফোটা ঘুম নেই। আর পাশের রুম থেকে ভেসে আসছিল অস্পষ্ট শব্দ। মেয়েটি বলছিল ২ জন কথা ছিল ৩জন হবে না। হায়রে এখানেও প্রতারনা! আমার তখন বলতে ইচ্ছে করছিল ওরা ৩ জন না, ৪জন। শেষ পর্যন্ত ওরা ৪জন নষ্ট হয়েছিল।

কিংবা তারা আগে থেকেই নষ্ট ছিল, হয়তো আমি জানতাম না। ৪ জনের মধ্যে একজনকে আগে থেকেই বুঝতাম এ ধরনের হবে। আর আমার বন্ধুটি (সিনিয়র ভাইও) এমন হবে কল্পনাও করতে পারিনি। অথচ নামাজ পড়ার জন্য কিংবা মসজিদে যাওয়ার জন্য সে আমাকে উদ্ভুদ্ধ করতো। গরীব মানুষকে সাহায্য সহযোগীতা করত, মানুষের উপকার করতে দেথেছি সবসময় অথচ: সে নাকি! সকাল বেলা মেয়েটির যাবার বেলা।

আমি বললাম, মেয়েটির সাথে আমার কাজ আছে। তাদের একজন আমার বন্ধুকে উদ্দেশ্য করে বলল; হইলেমদে ন জসীম ম থাইত ন পারিবু। আমি বললাম মেয়েটির সাথে আমি কথা বলতে চা্ই । মেয়েটি পাশের রুম থেকে আমার সামনে আসলে আমি অবাক হই। শ্যামলা বর্নের এত মায়া চেহারা।

বড়জোড় হয়তো ১৮-২০ বছর বয়স। অন্য কোথাও দেখলে কেউ কখনো বিশ্বাস করবে না এই মেয়ে এ কাজ করতে পারে। জিঙ্গেস করলাম কি নাম? বলল, শান্তা। পুরো নাম জিঙ্গেস করলাম বলল না। বাসা কোথায় জানতে চাইলে বলল, পটিয়া।

মা-বাবা নাই। ভাই মাছের ব্যবসা করে চট্টগ্রামে। এই কাজ কেন করে জানতে চাইলে সে কিছুটা রেগে গিয়ে বলে, আপনার কি দরকার। এমন সময় আমার বন্ধুটি এসে আমার সাথে পরিচয় করানোর চেষ্টা করল, বলল; আমার বন্ধু কিন্তু আমাদের মত না। কিন্তু এ সব জেনে তার কি লাভ! আর কিছু বলা হয়নি তাকে।

বলতে পারিনি, এপেশা তুমি ছেড়ে দাও। অন্য কাজ কর। আমারতো তাকে কাজ দেয়ার ক্ষমতা নেই। কেন এ পেশায় আসছে তাও জানি না। কিন্তু এত সুন্দর মেয়ে এ পেশায় কেন আসে।

তাদের কত চমৎকার ঘরসংসার করার কথা। এই লেখার শিরোনামে কিংবা পুরো লেখাতেই শান্তা (নামটি সত্য হোক কিংবা মিথ্যা) নামটি প্রকাশ করলেও আমার বন্ধুসহ নষ্ট হওয়া ৪জনের নাম আমি প্রকাশ করতে পারিনি। শান্তাদের পরিচয় পতিতা,বারবনিতা,রাস্তার মেয়ে কিংবা অন্যকোন নামে পরিচিতি পেলেও আমাদের মত মুখোশধারী নষ্টরা সমাজের সভ্য ভাল মানুষ হিসেবেই আখ্যায়িত হই। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.