আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমের রাজ্যে দুই দিন.........

তুই ভালো থাকিস, আমি সুন্দর থাকবো অনেক অনিশ্চয়তা পার করে, অনেক দাঙ্গা হাঙ্গামা করে, বৃষ্টিতে ভিজে কল্যানপুর কাউন্টারে এসে যখন পৌছালাম রুবেল তখনো রাস্তায়। যাচ্ছি আমরা ৫ জন, কাজেই একজনকে বাসে একা বসতেই হবে প্রথম বারের মত বলির পাঁঠা হলো আমার টুকি (টুকি আদরের ডাক)ইমরান। যাত্রা বিরতি পার করে যেই মাত্র চোখ বন্ধ করলাম সেই সময়-ই সবুজের ডাক, দেখ দেখ আম গাছ দেখা যায়। আজিব হইয়া গেলাম, আম গাছ দেখানোর জন্য কেউ কাউকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে নাকি? সকাল সাতটায় এসে কানসাট নামলাম। নেমেই টুকি চলে গেল বাথরুম খুজতে।

ওর পিছন পিছন আমরা ও লাইন ধরলাম। আমরা লাইন ক্লিয়ার করে বের হতে হতে ইমরান এক লোকের কাছ থেকে একটা আম যোগার করে ফেলেছে, চাপাই এর প্রথম আম। এ সময় অনেক খুজে ও কোন পত্রিকার দোকান পেলাম না, পত্রিকায় দেখা দরকার ছিলো গতকাল রাতে শ্যামলীর দিকে কোন ভূমিধস বা ভূমিকম্প হয়েছে কিনা? গতরাতে আসার সময় জ্যামে পড়ায় রুবেল শ্যামলীতে বাস থেকে নেমে দৌড়াতে দৌড়াতে কল্যানপুর আসে। সবুজের পরিচিত ফারুক নামে একটা ছেলে থাকে কানসাটে, আসার আগে সবুজ তার সাথে কথা বলে আসে, মূলত সেই আমাদের কানসাট ঘুরিয়ে দেখাবে এবং আম কিনতে সাহায্য করবে। কানসাটে নেমে ফোন দেবার পর দেখা গেলো ফারুকের মোবাইল বন্ধ।

এতে আমরা একটুও অবাক হইনি, কেননা ঘুরতে এসে সবুজ কিছু ঠিক করলে সেটা না হবার সম্ভাবনা সবসময়-ই একটু বেশি থাকে। আমের বাজার মাত্র জমতে শুরু করেছে, এখনি বাজারে না গিয়ে আমরা একটা টেম্পুতে উঠে সোনামসজিদের দিকে রওয়ানা দিলাম। মাত্র ৫ মিনিট আগের সকালের সোনা রোদ মুখ লুকালো মেঘের আড়ালে, সেই সাথে ঝুম বৃষ্টি। মসৃণ রাস্তা দিয়ে ঝড়ো বেগে এগিয়ে চলা টেম্পুতে সবার প্রচেষ্টা রুবেলের আড়ালে থেকে যদি একটু বৃষ্টির ছাট থেকে বাঁচা যায়। টেম্পুর ছাদে বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ, ঝড়ো বাতাস, রাস্তার দুপাশের আম গাছ গুলোর মাটিতে কুর্নিশ করার আকুতি, পাকা আমগুলোর গাছ থেকে ঝড়ে না পড়ার প্রানান্ত চেষ্টা আর বৃষ্টি-র ভালবাসাকে অবহেলা করে আমাদের তার কাছ থেকে দুরে থাকার প্রচেষ্টা করতে করতেই একসময় এসে পড়লাম সোনা মসজিদের প্রাঙ্গনে।

টেম্পু থেকে ছিটকে বেড়িয়ে আশ্রয় নিলাম এক যাত্রী ছাউনিতে। ব্যাগ গুলোকে নিরাপদে রেখে এবার মনোযোগী হলাম বৃষ্টি-র সৌন্দর্য দেখতে। বৃষ্টি হচ্ছে, বৃষ্টি পড়ছে, আমি বারান্দায়! মেঘ জমছে, আকাশ কাঁদছে, লাগছে আমার গায়! নিচ্ছে কেড়ে, অবাক করে, আমার হৃদয়! ছিন্ন করছে, ভিন্ন করছে, এই বুঝি হয়? বৃষ্টি পড়ছে, বৃষ্টি পড়ছে, আমার সারা গায়! বৃষ্টিবিলাস অনেক হইছে, এবার প্রাতরাশ। পরোটা, সবজি আর ডিম ভাজি দিয়ে নাস্তা শেষ করে মঞ্জু এক দা যোগাড় করছে আম কাটার জন্য। ছোট সোনা মসজিদ, ছোট সোনামসজিদ ‘সুলতানি স্থাপত্যের রত্ন’ নামে পরিচিত।

প্রধান প্রবেশ পথের উপরিভাগে স্থাপিত একটি শিলালিপি অনুযায়ী জনৈক মজলিস-ই-মাজালিস মজলিস মনসুর ওয়ালী মুহম্মদ বিন আলী কর্তৃক মসজিদটি ১৪৯৪ থেকে ১৫১৯ এর মাঝামাঝি কোন এক সময় নির্মিত হয়। সোনামসজিদ প্রাঙ্গণের অভ্যন্তরে দক্ষিণ-পূর্ব কোণে দুটি আধুনিক কবর রয়েছে। কবর দুটি উত্তর-দক্ষিণে ৪.১ মিটার, পূর্ব-পশ্চিমে ৪.৭ মিটার এবং ১.৩ মিটার উঁচু ইটের প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত। কবর দুটি বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর নাজমুল হক-এর। ছোট সোনামসজিদ সোনা মসজিদ থেকে বের হয়ে আবার বৃষ্টির কবলে পড়লাম।

হোটেল শেরাটনের নিচে (ছাপড়া দেয়া পাশাপাশি দুইটা হোটেল একটার নাম শেরাটন, আরেকটার নাম সোনারগাঁ) দাঁড়িয়ে থেকে বৃষ্টি কমলে রাস্তায় নেমে হাটতে শুরু করলাম তোহাখানা কমপ্লেক্সের দিকে। সুলতান শাহ সুজা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত দ্বিতল ইমারত এই তোহাখানা মোঘল যুগের একটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য কীর্তি । তোহাখানা কমপ্লেক্স পাশেই রয়েছে শাহ্ নেয়ামতউল্লাহ (রহঃ)এর মাজার, মাজার সংলগ্ন তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ, এবং দাফেউল বালা নামক পুকুর। শাহ্ নেয়ামতউল্লাহ (রহঃ)একজন জবরদস্ত আলেম ও আধ্যাত্মিক গুরু ছিলেন। ষোড়শ শতকের শ্রেষ্ঠ আওলিয়াগণের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম।

তাহখানা প্রাসাদটি শাহ সুজা, শাহ নেয়ামতউল্লাহর বসবাসের জন্য প্রদান করেন। পহেলা মহরম হযরত শাহ নোয়ামতউল্লাহর জন্ম ও মৃত্যুর দিন বলে পরিচিত। এই দিনে প্রতিবছরই এখানে ‘উরস পালন’ করা হয়ে থাকে। এছাড়া ভাদ্র মাসের শেষ শুক্রবার এখানে অন্য একটি উরস পালন করা হয়। তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ তোহাখানা-র সামনের পুকুরটির নাম দাফেউল বালা, কথিত আছে খাসমনে এর পানি পান করলে যে কোন প্রাচীন পীড়া সেরে যায়।

এজন্য এ পুকুরের পানি জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবার নিকট পবিত্র। দাফেউল বালা তোহাখানা থেকে বের হয়ে ফিরতি পথ না ধরে এক আম বাগানের ভিতর দিয়ে রওয়ানা দিলাম। চারিদিকে শুধু আম আর আম। আমের রাজ্যে কলা গাছ দেখলেও মনে হয় এই গাছে আম নাই কেন? চোখ বন্ধ করে ৫ মিনিট বাগানে হাটলে কমপক্ষে ১০০ আমের বাড়ি খাওয়া লাগবে। কিছুক্ষন আম নিয়ে ফটোসেশন করে সদর রাস্তায় উঠে রওয়ানা দিলাম সোনামসজিদ সীমান্তের দিকে।

কিছুদুর যাবার আগেই আবার বৃষ্টি, আবারো এক দোকানের নিচে আশ্রয়। এ সময় দোকানের মালিক আসলো এক অভিযোগ নিয়ে, তার মোবাইলে ফেসবুক নাই কেন? ভাবখানা এমন যেন এটা আমাদের দোষ। রুবেল অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে অনেক সময় নিয়ে চেষ্টা করে গেল এই মহান সমস্যা সমাধান করার, এই সময়ের মধ্যে-ই টুকি পাশের দোকানদারের কাছ থেকে আম যোগার করে খাওয়া শুরু করছে। কথায় কথায় ইমরান এটাও জেনে গেল এই দোকানদার হচ্ছে সবুজের সেই পরিচিত ফারুকের চাচতো ভাই। ১০ মিনিটের মধ্যে দোকানদার কে নিয়েই ফারুকের বাড়িতে গিয়ে তাকে বাথরুম থেকে অর্ধনগ্ন অবস্থায় থেকে বার করে নিয়ে আসা হলো।

ফারুককে নিয়ে গেলাম সোনামসজিদ সীমান্তে, সেখান থেকে এক আম বাগান পার হয়ে বেশ কিছুদুর হেটে গিয়ে আম বাগানের মাঝেই চামচিকা মসজিদ। চামচিকা মসজিদের নামকরণের ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। তবে ভারতে অবস্থিত বড় চামচিকা মসজিদের আদলেই এটি তৈরী। এর দেয়ালের পরিধি এত মোটা যে চৈত্রমাসের প্রচন্ড গরমে ও এর ভিতরে শীতল পরিবেশ বিদ্যমান থাকে। এই মসজিদের পূর্বে ৬০ বিঘা আয়তনের খঞ্জন দিঘী নামে একটি বড়দিঘী রয়েছে যার পাড়ে সিড়ি বাঁধা ঘাট ছিল মুসল্লীদের ওজু করার জন্য।

চামচিকা মসজিদ খঞ্জন দিঘী চামচিকা মসজিদ থেকে রওয়ানা দিলাম দাড়াসবাড়ি মাদ্রাসার দিকে। দাড়াসবাড়ি মাদ্রাসাটাও এক আম বাগানের মাঝে, মাদ্রাসার সামনে পৌছে পিছনে তাকিয়ে দেখি টুকি আমাদের সাথে নাই। কিছুক্ষন পর দেখা গেল আম বাগানের মালিকের কাছ থেকে দুই হাতে করে আম নিয়ে আসতেছে। বৃষ্টি-র সাথে আমাদের আবাল্য সখ্যতা, তাই আমাদের কে ছেড়ে সে বেশিক্ষন দুরে থাকতে পারলোনা। এবার আশ্রয় নিলাম বাগানের ভিতরে এক তেরপলের ছাউনির নিচে।

(বাগান পাহারা দেবার জন্য প্রায় সব বাগানেই এমন দু-একটা ছাউনি থাকে)। এরি মাঝে মঞ্জু এক বটি যোগার করতে আম কাটতে লেগে পড়েছে। কোন এক জ্ঞানী লোক একবার বলছিল পুকুরের পাড়ে বৃষ্টি-র মাঝে আম বাগানে বসে রসালো আম খাবার সুযোগ পেলে সেটা কখনো হাতছাড়া করতে হয়না, আমরাও তাই হাতছাড়া করার কোন রকম চেষ্টাই করলাম না। পুকুরের অপর পাড়েই দারাসবাড়ি মসজিদ। এই মসজিদের কোন বর্ননা দেব না, শুধু এটুকু বলবো শুধুমাত্র এই মসজিদটা দেখার জন্য-ই যদি কেউ চাপাই আসে তার চাপাই আসা সার্থক।

দাড়াসবাড়ি মাদ্রাসা দারাসবাড়ি মসজিদ ফিরতি পথে আবার সোনামসজিদে নামলাম। জুমআ-র নামাজ পরেই চলে আসলাম কানসাট শহরে। আমের বাজার ঘুরে আম পছন্দ না হওয়ায় কালকে আম কিনবো ঠিক করে চলে গেলাম গোমস্তাপুর। যাবার পথে রাস্তার এক পাশে ধান বাগান দেখে আমরা পারলে আনন্দে মাটিতে গড়াগড়ি দেই। (বাগান দেখতে দেখতে এখন যাই দেখি তাকেই বাগান মনে হয়, আনন্দের কারন চাপাই তে আম বাগান ছাড়া অন্য বাগান ও আছে।

) গোমস্তাপুর গিয়ে পরলাম আরেক বিপদে, লোকজনতো কিছুই চিনে না। বাধ্য হয়ে শেষ পর্যন্ত থানায় ঢুকলাম পুলিশের সাহায্য নেবার জন্য। ছিমছাম থানা, হারিকেন দিয়ে খুঁজে একজন পুলিশকে পেয়ে তার সাথে কথা বলতেই মনে হলো সে আকাশ থেকে পড়লো, আমাদের কপাল ভালো আশে পাশে কোন হাসপাতাল ছিলো না, থাকলে পুলিশ নিয়ে হাসপাতালে দৌড়াতে হতো। পুলিশের কাছে কেও এই ধরনের সাহায্য চাইতে পারে এটা মনে হয় তার পশ্চিম পুরুষরাও কোনদিন চিন্তা করে নাই। শেষ পর্যন্ত যে একটা ঠিকানা সে চিনতে পারলো সেটা হচ্ছে ষাঁড়বুরুজ (নওদা বুরতজ নামেও পরিচিত)।

নওদা বুরতজের ইতিহাস অনেক সমৃদ্ধ হলেও একটা তিনতলা সমান মাটির ডিবি ছাড়া এখন আর কিছুই নাই। আমরা উঠতে না উঠতেই দুই জোড়া তরুন তরুনী আমার টুকিকে দেখে দৌড়ে নেমে গেল, কারন টা বুঝলাম না, টুকি আবার চাপাই আসার পর থেকেই রুবেলের সাথে ভাব জমাতে ব্যাস্ত, এটার কারন আজ বুঝতে না পারলেও পরদিন বুঝে গিয়েছিলাম। :-O কানসাটে থাকার ভালো কোন ব্যাবস্থা না থাকায় সন্ধার পর পর ই রওয়ানা দিয়ে আমরা চাপাই শহরে চলে আসলাম, দেড় ঘন্টা ঘুরে যেই হোটেলে উঠলাম সেটাকে কোন অর্থে থাকার ভালো ব্যাবস্থা বলা যায় সেটা এতোদিন ধরে চিন্তা করছিলাম বলেই চাপাই ঘুরে আসার তিনমাস পর এই কাহিনি লিখছি (চিন্তা করে এখনো বের করতে পারিনি)। রাতে ঘুমানোর আগে লীনা ফোন করে জানালো ইমন এখন চাপাই আছে, আমরা যেন তার সাথে যোগাযোগ করি, আহারে মনা তোর সাথে যে কেন আরো আগেই কথা হইল না। রাতে ঘুমাতে গেলাম আমি, সবুজ আর মঞ্জু এক খাটে; আর টুকি রুবেলকে ছাড়া থাকবেই না তাই তারা দুইজন অন্য খাটে।

রাতে ঘুমাতে যাবার আগে টুকিকে দেখলাম গোসল করে শুতে গেল, সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি টুকি গোসল করে বেরুচ্ছে; আমার টুকির জানি কি হইছে ??!!?? পরদিন ভোরে উঠে আবার যাত্রা কানসাটের দিকে। আজকের প্রথম কাজ আম কিনতে হবে। আম বাজার যে এমন হতে পারে এখানে না আসলে সেটা কোনদিন ই বুঝা যেত না, অনেকটা কোরবানীর গরুর হাটের মত অবস্থা। বড়সড় এক মাঠের মধ্যে সাইকেল অথবা ভ্যানে টুকরি বোঝাই আম নিয়ে মালিকপক্ষের লোকরা দাঁড়িয়ে আছে, আর মাঝ খানের সরু রাস্তা দিয়ে ক্রেতারা ঘুরাঘুরি করছে। দামাদামি করে দুই সাইকেল (চার ঝুড়ি, ৯ মন) ল্যাংড়া আম কিনলাম।

আমের মন আবার ৪০ কেজিতে না হয়ে ৪৫ কেজি তে হয়। এরপরের কাজটাই সবচেয়ে বিরক্তিকর। আড়তে এনে আম মেপে কেনা হলো, সেটাকে আবার প্যাকেট করার জন্য খুচরা করে মাপা হলো, প্যাকেট করার জন্য দড়ি, কাগজ, ঝুড়ি / কাগজের কার্টন, খড় এনে মোট ১৭ টা প্যাকেট করা হলো। একেকটা প্যাকেট করতে সময় লাগে ১৫/২০ মিনিট। সবগুলো প্যাকেট আবার ভ্যানে করে কুরিয়ারে নিয়ে গিয়ে পার্সেল করতে করতে আমাদের সারাদিন শেষ।

আম যখন প্যাকেট করা হচ্ছিল আমি আর টুকি তখন ক্যামেরা নিয়ে বের হই আমের ছবি তোলার জন্য। আমি ছবি তুলছি আর টুকি আম বিক্রেতাদের সাথে কথা বলছে। আমি আমের ছবি তুলছিলাম আর কাগজে ছবির নাম্বারের পাশে আমের প্রজাতির নাম লিখে রাখছিলাম। এস,এল,আর ক্যামেরা, কাগজে নোট রাখা, সেই সাথে টুকির একের পর এক প্রশ্ন শুনে মনে হওয়া স্বাভাবীক আমরা পত্রিকার লোক। আম বিক্রেতাদের সাথে টুকির কথোপকথন, ঃ কি জাতের আম।

ঃ ভোগলা। ঃ এইডা আবার কেমন জাত? নামইতো কোনদিন শুনি নাই। ঃ স্যার, অনেক ভালো জাতের আম স্যার। অনেক মিষ্টি। ঃ আম কি আপনার নিজের গাছের? ঃ জি স্যার।

ঃ আঁশ কেমন? মোটা না চিকন? ঃ আঁশ নাই স্যার, একদম মিহি। ঃ খাইতে কেমন? (আমার দিকে ফিরে) সব ঠিক মতো লিখতেছিস তো? আমি সম্মতির মাথা নাড়ি। বিক্রেতা ঃ স্যার মধুর মতো মিষ্টি। ঃ মধুর মতো মিষ্টি বুঝমু কেমনে? খাইয়া তো দেখিনাই? (আমার দিকে ফিরে) আন্দাজে কি লিখা উচিত যে ভোগলা আম মধুর মত মিষ্টি ? এবারও আমি মাথা নাড়ি তবে এবার অসম্মতির। বিক্রেতাঃ স্যার একটা আম খাইয়া দেখেন।

বিক্রেতা আম কেটে আমাদের দিতে দেরি করতে পারে, আমরাতো আর দেরি করতে পারি না। এক ঘন্টায় যা খাইলাম তা ৪/৫ কেজির কম হবে না। টুকি এই জন্যই আমার এতো আদরের। আম পার্সেল করে আমরা যাবো খাবার হোটেলে খাবার জন্য, রাস্তার মধ্যে এক ছেলে এসে রুবেলের পা ঝরিয়ে ধরে আব্বা আব্বা বলে ডাকতে শুরু করে। ঘটনা আবারো প্যাচ খাইলো, রুবেল যে এর আগেও চাপাই এসেছিল আমরা সেটা মাত্র জানতে পারলাম।

কানসাট থেকে চাপাই শহরে ফেরার পথে সি,এন,জি চড়ে ঝিমাতে ঝিমাতে চাপাই নেমে দেখি টুকি সি,এন,জি-র কোন এক যাত্রীর কাছ থেকে এরিমধ্যে আম যোগার করে ফেলছে। শহরে নেমে এক চায়ের দোকানে কিছুক্ষন অপেক্ষা করার পর ইমন এসে আমাদের সাথে করে ওদের বাড়িতে নিয়ে যায় । সারাদিন এতো আম খাবার পরও ইমনের বাড়িতে এসে আবার আমের উপর একদফা হামলা চলে এবং বিনা প্রতিদ্বন্ধীতায় এখানেও বিজয়ী টুকি। শেষ বিকালের দিকে বের হই মহানন্দার পাড়ে কিছুটা সময় কাটাবো বলে। নদী তীরে পৌছে ১০ মিনিট পার করার আগেই আকাশ কালো করে আবারো মেঘ জমলো, উদাস সময় থমকে দাঁড়ায় নদীর পাড়ে এসে, ঠোঁট ছুঁয়ে যায় ব্যাকুল বাতাস ইচ্ছে ডানায় ভেসে, হৃদয় জুড়ে ঘনঘটা কালো মেঘের খেলা, বৃষ্টি এলে ভিজবো, শুধু ভিজবো সারা বেলা... উড়িয়ে দিলাম শুকনো পাতা সবুজ মাঠের বুকে, আকাশ যখন মেঘের ভারে পড়বে নিচে ঝুঁকে, চোখের তারায় ভাসিয়ে দিয়ে মন খারাপের ভেলা, বৃষ্টি এলে ভিজবো, শুধু ভিজবো সারা বেলা... কবিতা আমার না, মনে পড়লো তাই দিয়ে দিলাম।

এরপর........................এরপর রাতের বাসে করে ঢাকা ফিরে আসা আর পরবর্তি ভ্রমনের জন্য আপেক্ষা করে থাকা। পরবর্তি গন্তব্যঃ বাগেরহাট । বিঃ দ্রঃ কবিতে দুটো সামু থেকে সংগ্রহ করা।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।