আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাইবেলের ইতিহাস

আমি জানি আমি জানি না বাইবেলের ইতিহাস The Da vinci code by Dan Brown 250-260 পৃষ্ঠার থেকে বাংলা অনুবাদ ‘The bible did not arrive by fax from heaven. It is a product of man ……. ’ ‘বাইবেল আকাশ থেকে পাওয়া কোন ফ্যাক্স বার্তা নয় –এটি সম্পু‌র্নতই মানুষের বানানো একটি প্রোডাক্ট। কোন ঈশ্বরের নয়। বাইবেল যাদুর মত আকাশ থেকে মেঘের ভিতর দিয়ে পড়েনি। মানুষ একে সৃষ্টি করেছে ইতিহাসের কোন এক কোলাহলপূর্ণ সময়ের ঐতিহাসিক রেকর্ড হিসাবে । অসংখ্য অনুবাদ,পরিবর্তন, পরিবর্ধনের মাধ্যমে বর্তমান বাইবেলের উদ্ভব ।

ইতিহাসে এই গ্রন্থের কখনও কোন একটি নিদ্রিষ্ট ভার্সন ছিল না । যীশু,পৃথিবীকে টালমাটাল করা একটি ঐতিহাসিক চরিত্র , হয়তো সবচেয়ে প্রহেলিকাময়,অনুপ্রেরণামূলক নেতা, যা পৃথিবী কখনও দেখেনি । .....প্রায় আশি টি বিভিন্ন বর্ণনা বা গসপেল কে বিবেচনায় এনে তার থেকে কেবল মাত্র কয়েকটিকে নিয়ে বাছাই করে বাইবেল গ্রন্থিত হয়েছে- এদের মধ্যে ম্যাথু, মার্ক, লূক এবং জন এর বর্ণনা প্রধান । কিন্ত এই বাছাই করলো কে ? খৃষ্টধর্মের সবচেয়ে বড় ব্যজস্তুতি বা আইরনি হচ্ছে এটাই । আজকের যে বাইবেল আমরা দেখি সেটি কোলেট করেছেন, অর্থাৎ মিলিয়ে দেখে বাছাই করে বিভিন্ন সংস্করণ থেকে নিয়ে গ্রন্থনা করেছেন প্যাগান (পৌত্তলিক) রোমান সম্রাট কনস্টানটাইন দি গ্রেট ।

তিনি আজীবন প্যাগান পৌত্তলিক । কেবল মৃত্যুশয্যায় তাকে ব্যাপ্টাইজড করা হয়-যখন তার কোনরকম প্রতিবাদ করার মত- যদি করতে চাইতেন -তার ক্ষমতাও ছিল না । যীশুর ক্রুশবিদ্ধ হবার তিনশত বছর পর খৃষ্টান এবং প্যাগানদের মধ্যে দ্বন্দ বাড়তে থাকে এবং ক্রমশ: তা এত বেড়ে ওঠে যে রোমান সাম্রাজ্যকে প্রায় দুই ভাগে ভাগ করে ফেলে । কনস্টান্টাইন সিদ্ধান্ত নিলেন কিছু একটা করতেই হবে। তাই ৩২৫ খৃষ্টাব্দে ভগ্নপ্রায় রোমকে একতাবদ্ধ করলেন একটি ধর্মের মাধ্যমে-খৃষ্টধর্ম।

একজন পৌত্তলিক প্যাগান সম্রাট খৃষ্টধর্মকে তার রাজ্যের রাজধর্ম করলেন। কনস্টান্টাইন একজন ভালো ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন খৃষ্টধর্ম বেড়ে উঠছে-তাই জেতা ঘোড়াকেই বাজী ধরলেন । ঐতিহাসিকেরা এখনও তার এই প্যাগানদের ধর্মকে খৃষ্টধর্মে রুপান্তরিত করার অপূর্ব দক্ষতায় চমৎকৃত হন। বিভিন্ন প্যাগান প্রতীক,রীতি,দিনক্ষণকে গজিয়ে ওঠা খৃষ্টতত্ত্বের সঙ্গে সুন্দর ফিউসন করে এমন একটি হাইব্রীড ধর্মের সৃষ্টি করেন যা দুই দলেরই সমর্থন লাভ করে ।

বিভিন্ন প্যাগান প্রতীক, নিদর্শণ যে খৃষ্টীয় প্রতীকে রুপান্তরিত হয় এটি স্বীকৃত। মিশরীয় সূযের গোলাকার চিহ্ন ,ক্যাথলিক সেইন্টদের halos । বলতে গেলে ক্যাথলিকদের সমস্ত রীতিই - মিতার(the miter), বেদী, ঈশ্বর-বন্দনাগীতি , ভোজ সংক্রান্ত উৎসব বা কমিউনিয়ন, ঈশ্বরের খাদ্যগ্রহণ, সবকিছুই রহস্যপূণ প্যাগান ধর্ম থেকে নেয়া । খৃষ্টধর্মের কোন কিছুই আসল নয় । খৃষ্টপূর্ব ঈশ্বর মিথ্রাস, যাকে সূযর্দেবতা বলা হয় –তিনি জন্ম গ্রহণ করেন ২৫শে ডিসেম্বর এবং মৃত্যুর পর একটি পাথরের কবরে রাখা হয় এবং তিনদিন পর পুনরুত্থিত হয়।

ডিসেম্বরের পঁচিশ অবশ্য ওসিরিস,এডোনিস এবং ডাইওনিসুস দেরও জন্মদিন । যীশুকেও সেই দলে ফেলা হল- এ ভাবেই ২৫শে ডিসেম্বর খৃষ্টেরও জন্মদিন হয়ে যায় । এমনকি খৃষ্টানদের সাপ্তাহিক ছুটির দিন রবিবারও প্যাগানদের কাছ থেকে চুরি করা । এমনিতে খৃষ্টধর্ম এসেছে ইহুদিধর্ম থেকে । তারাও প্রথম দিকে ইহুদীদের শনিবারের পবিত্র দিনকেই পালন করতো ।

কিন্তু কনস্টান্টাইন তাকে প্যাগানদের শ্রদ্ধামিশ্রিত ভয়ের সূযর্পুজার দিন Sunday তে নিয়ে আসেন। আজ যারা প্রতি Sunday বা সূযর্দিবসে প্রার্থনায় যান ,তাদের ধারণাও নেই যে আসলে তারা সূযর্দেবতার সাপ্তাহিক অর্ঘ্যদিনেই প্রার্থণা করেন । ধর্মের এই ফিউসনএর কালেই কনস্টান্টাইন নতুন খৃষ্টীয় ঐতিহ্যকে আরও বৃদ্ধি করার মানসে এক বিখ্যাত সমাবেশ করেন, যা পরিচিত কাউন্সিল অফ নিকে ( council of nicea) নামে । সেই কাউন্সিলে খৃষ্টতত্ত্বের নানা দিক নিয়ে আলোচনা হয় ,বিতর্ক হয়,নির্বাচিত হয় ইস্টারের তারিখ, দিনক্ষণ, বিশপদের ভূমিকা , sagrament এর পরিচালনা এবং অবশ্যই যীশুর অবতারিত্ত্ব-divinity । তার আগে পযর্ন্ত যীশুকে একজন মরণশীল মানুষ হিসেবে দেখা হত- যদিও একজন মহান ক্ষমতাবান মানুষ ।

কিন্তু তারপরও একজন মরণশীল মানুষই- কোন ঈশ্বরপুত্র নয় । সেই কাউন্সিলেই যীশুকে সরকারি ভাবে ঈশ্বরপুত্র হিসেবে গ্রহন করার জন্য নিবার্চণ করা হয়-রীতিমত ভোট দিয়ে । সরকারি ভাবে কনস্টান্টাইন যীশুকে ঈশ্বরপুত্র বলে স্বীকৃতি দিয়ে তাকে একজন দেবতা বানালেন । তার অবস্থানকে মানুষের নাগালের বাইরে নিয়ে গেলেন। এবং কেউ যদি তার নাগাল পেতে চায় তা করতে হবে রোমান ক্যাথলিক চার্চের মাধ্যমে- যীশু এভাবেই মানুষের কাছ থেকে গিয়ে পড়লেন যাজকদের খপ্পড়ে।

চার্চ আক্ষরিক ভাবেই যীশুকে তার মূল অনুসারি শিষ্যদের কাছ থেকে চুরি করে নিলেন। তার মানবিক আবেদনগুলোকে হাইজ্যাক করা হল,-শবাচ্ছাদিত হল একটি নিশ্ছিদ্র অপার্থিব জগতের মধ্যে,-তাকে ব্যবহার করা হল ক্ষমতাকে আরও বিস্তৃত করার জন্য । যীশুর জনপ্রিয়তা এবং প্রভাবকে কনস্টান্টাইন নিজের কাজে লাগালেন ,এং সেটা করতে গিয়ে খৃষ্টধর্মকে নতুন রূপ দিলেন –আজকে সেই খৃষ্টধর্মকেই আমরা জানি । এভাবেই যীশুর মৃত্যুর প্রায় চারশত বছর পর তিনি মানবিক থেকে এক অলৌকিক রূপে রূপান্তরিত হলেন । যদিও মরনশীল মানুষ হিসেবে তার বহু নিদর্শণ তখনও ছিল –কিন্তু সেসব মোটা দাগে পুনর্লিখিত হল ।

তিনি এক নতুন বাইবেলের জন্য কমিশন নিযুক্ত করলেন, অর্থায়ন করলেন । তারা যীশুকে মানুষ থেকে প্রায় ঈশ্বর বানিয়ে তুললেন । মানুষ যীশুর সব নিদর্শণ বেআইনি ঘোষিত হল- যা কিছু তখনও ছিল সব একত্রে নিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হল । তারা এক নতুন গসপেল তৈরি করলেন এবং এই নতুন ঘোষিত গসপেলের বাইরে অন্য গসপেলকে মানলে তাকে বিদ্রোহী ,ধর্মদ্রোহী heretic বলা হবে বলে ঘোষণা হল । ল্যাটিন hrerticus, অর্থ choice – যারা আসল ইতিহাসকে পছন্দ করবে তারা heretic।

আধুনিক বাইবেল এভাবে মানুষের হাতে তৈরি- বিশেষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে, ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য যার জন্ম । ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.