মনোয়ারা মণি সাম্যবাদী গুরু কবি কাজী নজরুল ইসলাম (25 May 1899 – 29 August 1976) এর ১১৩তম জন্মদিনে কিছু লেখার পরিকল্পনা ছিলো আগে থেকেই।
তাঁর বহুমুখী প্রতিভার কোন দিকটা নিয়ে লিখবো সেটা নিয়েই ভাবছিলাম।
অবশেষে কবির লেখা আমার প্রিয় গানটি দিয়েই শুরু করলাম-
‘আমায় নহে গো ভালোবাসো
শুধু ভালোবাসো মোর গান
বনের পাখিরে কে চিনে রাখে
গান হলে অবসান’...
কবি নজরুলের এই গান আর ভালোবাসার অনুভূতি নিয়ে আমার কিছু অভিজ্ঞতার কথাই এ লেখার বিষয়বস্তু।
প্রসঙ্গ ‘ভালোবাসা’ আর তার পরিপূর্ণতা নিয়ে।
ভালোবাসা শব্দটি আমি কখন প্রথম শুনেছিলাম সে কথা না মনে করতে পারলেও এর অনুভূতি কিভাবে আমার মনে প্রথম জানান দিয়েছিলো সে কথা মনে করতে পারি সবটুকু।
সেদিন নিজেকে দেখে অবাক হয়েছিলাম আর বুঝতে পেরেছিলাম আমার কিছু না ভালোলাগা জিনিসকে ভালোবাসতে পারার সক্ষমতার কথা।
সেই প্রথম বুঝেছিলাম যদি কাউকে সত্যিকারে ভালোবাসা যায় তার ভালোলাগা জিনিসগুলো অনায়াসে ভালো লাগতে শুরু করে নিজের অগোচরে।
সামাজিক ও কর্মজীবনে অনেক প্রকার ভালোবাসার চিত্র দেখার সৌভাগ্য হয়েছে এবং ভালোবাসার গল্পও শুনেছি অনেকের কাছে যেমন ‘‘আমি আমার স্বামী বা স্ত্রীকে খুব ভালোবাসি কিন্তু তার পরিবার আমার ভালো লাগেনা অথবা
অমুককে খুব ভালোবাসি কিন্তু তার চারপাশের সব একেবারে আবর্জনার মত’’...
এ ধরণের গল্পই বোধহয় সবচেয়ে বেশী শোনা হয়েছে।
একজনকে ভালোবেসে তাঁর আদর্শকে বা তাঁর কাছের মানুষগুলোকে ভালোবাসতে না পারা অথবা একজনের আদর্শকে পছন্দ না করে তাঁকে ভালোবাসা আমার কাছে অসম্পূর্ণ ভালোবাসা মনে হয়।
কবি নজরুল ইসলামকে আমরা শ্রদ্ধা করি ভালোবাসি।
তিনি আমাদের জাতীয় কবি এ আমাদের মস্ত বড় গর্ব।
তাঁকে অনেকের সাথে তুলনা করতে তৎপর হই।
আমার দৃষ্টিতে তিনি অতুলনীয় এবং সম্পূর্ণ বিকশিত এক সত্ত্বা।
তাঁর তুলনা তিনি নিজেই।
কবি ও মানব সত্ত্বাকে পৃথিবীর সর্বক্ষেত্রে খুঁজে পাওয়ার আত্মগর্বে গর্বিত করেছেন তিনি আমাদের তথা গোটা মানব জাতিকে।
নিজেকে খুব ছোট মনে হয় যখন শুনতে পাই কবি নজরুলের লেখা বিভিন্ন ধর্মীয় গান যেমন হামদ, নাথ, শ্যামা সংগীত, কীর্তন অথবা ভজন পোষ্ট করলে লাইকে টিক দিতে দ্বিধাগ্রস্ত হন অনেকেই।
বিদ্রোহ , প্রেম, বিরহ, আশা অথবা হতাশা কিছুই বাদ দেয়ার অবকাশ নেই তাঁর লেখা থেকে।
এই মহান আত্মাকে একটা গণ্ডিতে বন্দি করার মত সীমাবদ্ধতা আর কি হতে পারে?
একজন সৃষ্টিকর্তা এই পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন তাঁর সমস্ত ভালোবাসা আর যত্ন দিয়ে।
আমরা নিজেদের মধ্যে নিজেদের বিভক্ত করছি আর আলাদা হয়ে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত।
কবি নজরুল তাঁর সমস্ত হৃদয় দিয়ে ভালবেসেছেন সমস্ত মানবজাতি তথা সৃষ্টিকে।
মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ নাই সারা জীবন ধরে এই চেতনা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন তিনি।
তাঁর কাছে থেকে আমাদের কতটুকু শেখার আছে বা আমরা কতটুকু শিখতে পারছি?
সারা পৃথিবীতে অসাম্যবাদের ঝড় উঠেছে।
মানুষকে ঘৃণা করছে মানুষ কেন?
শুধু কি সর্বশক্তিমানকে আমরা আল্লাহ্ অথবা ভগবান অথবা ঈশ্বর নামে ডাকি এই কারণে?
মসজিদ বা মন্দির বা গির্জায় যাওয়া এটাই কি আমাদের সবচেয়ে বড় পরিচয়?
তিনি হয়তো আগেই বুঝেছিলেন আমরা তাঁকে ভালোবাসি তাঁর আদর্শকে নয়।
তাই হয়তো তাঁর মনের চাওয়া আর না পাওয়ার ব্যর্থতার কথা গানের ভাষায় লিখেছেন-
আমরা শুধু তাঁর গান ভালোবাসি তাঁর চাওয়াকে ভালোবাসতে পারিনা অথবা তাঁর মনের কথা বুঝতে পারিনা...
‘সবাই তৃষ্ণা মেটায় নদীর জলে
কি তৃষা জাগে সে নদীর হিয়া তলে
বেদনার মহা সাগরের কাছে
করো করো সন্ধান’...
একটা মাত্র হৃদয় দিয়ে সর্বস্তরের মানুষকে ভালোবাসা সম্ভব তিনি আমাদের দেখিয়েছেন তাঁর কাজ, কথা আর সুরে সুরে।
সুন্দরকে সুন্দর বলতে না পারার গ্লানি থেকে মুক্ত করতে চেয়েছেন তিনি আমাদের।
কবি নিজেকে একের মাঝে নয় খুঁজে পেয়েছেন সকলের মাঝে।
তিনি কোন ভূখণ্ড নন তিনি অসীম খোলা আকাশ।
আমরা যেন তাঁকে শুধু আমাদের জাতীয় কবি হিসাবে নয় মানব জাতীর ভালোবাসার পথ প্রদর্শক হিসাবে পরিপূর্ণ ভাবে ভালবাসতে পারি।
তাঁর আজীবনের সাধনার আদর্শকে শ্রদ্ধা করে সাম্যের পথে এগিয়ে যেতে পারলেই তাঁর সাধনাকে আমরা মূল্যায়ন করতে পারবো। ‘বিদ্রোহী’ কবিতার নব্বই বছর পূর্তিতে এই হোক আমাদের ভালোবাসার অঙ্গীকার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।