আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাড়ছে বখাটেদের উৎপাত, বাড়ছে আত্মহনন

বাড়ছে বখাটেদের উৎপাত, বাড়ছে আত্মহনন দেশের বিভিন্ন স্থানে আবারো বাড়ছে বখাটেদের উৎপাত। তাদের অপমান ও নির্যাতনে কিশোরী ও তরুণীদের আত্মহননও বাড়তে শুরু করেছে। সবশেষ শনিবার যশোরের অভয়নগর উপজেলার সুন্দলী এসটি স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণীর ছাত্রী সঙ্গীতা ম-ল স্থানীয় বখাটেদের নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বৃহস্পতিবার সকালে যশোর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে ফোন করে অবিলম্বে যেকোনো অবস্থায় বখাটেদের আইনের হাতে সোপর্দ করার নির্দেশ দেন।

এর আগে গত ১৪ আগস্ট রংপুরের সমাজকল্যাণ বিদ্যাবীথি বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী মাসুদা আক্তার মণিষাকে বখাটেরা এসিড নিক্ষেপ করে। এতে তার দুই চোখ, মাথা, মুখ ও ঘাড় ঝলসে গেছে। এসিড সন্ত্রাসের শিকার মণিষা বর্তমানে ঢাকার বনানীতে এসিড সারভাইভাল ফাউন্ডেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ২০১০ সালে সিমি, তৃষা, ফাহিমা ও পিংকিসহ বখাটেদের নির্যাতনে আত্মহনন করে বহু কিশোরী ও তরুণী। সমাজের বিভ্রান্ত ও বিপথগামী কিছু যুবক ও নরপশুরা হামলা, নিপীড়ন ও যৌন হয়রানির মাধ্যমে অসহায় কিশোরী ও তরুণীদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।

শুধু তাই নয়, বখাটেদের অব্যাহত হয়রানি ও অপকর্মের প্রতিবাদ করতে গিয়ে বখাটেদের হাতেই প্রাণ গেছে অনেক শিক্ষক ও অভিভাবকের। এ অবস্থায় সারাদেশে যৌন হয়রানি বন্ধে সামাজিক আন্দোলনও চাঙ্গা হয়ে উঠে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষক-শিক্ষাবিদ, কর্মকর্তা, সমাজকর্মী ও সংস্কৃতিসেবীসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে সভা, সমাবেশ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লক্ষাধিক ছাত্রছাত্রী-শিক্ষকের সমাবেশ, সারাদেশে লিফলেট-পোস্টার বিতরণ, স্কুল-কলেজে প্রতিরোধ কমিটি গঠনসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। স্কুল-কলেজে নির্বাচন করা হয়েছে কাউন্সেলিং শিক্ষক। সারাদেশে চালানো হয় মোবাইলকোর্ট।

সার্বিক সচেতনতা সৃষ্টির ফলে বখাটে কর্তৃক কিশোরী, তরুণী, ছাত্রী নির্যাতনের হার কিছুটা কমে আসলেও ইদানীং তা আবারো বেড়ে গেছে। 'শিশু সুরক্ষায় আমরা' ও 'সেভ দ্য চিলড্রেন' আয়োজিত 'জাতীয় শিক্ষানীতিতে নিরাপত্তা শিক্ষা সংযুক্তকরণ' শীর্ষক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশে ৮১ ভাগ মেয়ে কোনো না কোনোভাবে ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছে। গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, শুধুমাত্র বখাটেদের হয়রানি থেকে বাঁচাতে শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের অভিভাবকরা ১৫ বছর বয়সের মধ্যেই দেশের অর্ধেকসংখ্যক মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। ফলে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সের মধ্যে কিশোরীরা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় সন্তান ধারণ করছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, যৌন হয়রানি প্রতিরোধে হাইকোর্টের দেয়া রায় এখনো পুরোপুরি কার্যকর করা হয়নি।

এছাড়া সারাদেশে যৌন হয়রানি বন্ধে গৃহীত পদক্ষেপগুলোও চলমান ছিল না। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দেশের আইনে ইভটিজিংসহ অন্যান্য যৌন হয়রানিমূলক অপরাধের জন্য দ-ের বিধান থাকলেও সেসব আইনের প্রয়োগ নেই। তার ওপর শাস্তিও তেমন কঠিন নয়। তাই খুব সহজেই অপরাধীরা আইনের ফাঁকফোকড় দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। প্রসঙ্গত, ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৮ সালে সংগঠিত ছাত্রী নিপীড়নের ঘটনার প্রেক্ষিতে ওই বছর ৮ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি।

পরের বছর ১৪ মে কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি রোধে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের রায়ে ঘোষিত নীতিমালায় যৌন হয়রানির সংজ্ঞা দেয়া হয়। তাতে বলা হয়েছে, মেয়েদের উত্ত্যক্ত ও তাদের উদ্দেশে অশোভন অঙ্গভঙ্গি করা, রাস্তায় অপরিচিত কাউকে সুন্দরী বলা, ই-মেইল বা ফোনে বিরক্ত করা ও অশ্লীল বার্তা পাঠানো এসব যৌন হয়রানির মধ্যে পড়বে। হাইকোর্টের রায়ে আরো বলা হয়, যৌন হয়রানি রোধে এ সম্পর্কিত কোনো সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন না করা পর্যন্ত এই নীতিমালা বাধ্যতামূলকভাবে মেনে চলতে হবে। রায়ে কয়েক দফা নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

হাইকোর্টের ঘোষিত নীতিমালায় বলা হয়েছে, কর্মক্ষেত্র বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনো যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এলে একটি কমিটি গঠন করে দিতে হবে। এই কমিটিতে নারী সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকবে। যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত অভিযোগকারী ও অভিযুক্তের পরিচয় গোপন রাখতে হবে। দোষী প্রমাণিত হওয়ার পর অভিযুক্তের পরিচয় প্রকাশ করতে হবে এবং যথাযথ আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ছাত্রীরা আমাদের কারো মেয়ে, কারো বোন, কারো আত্মীয়।

ওরা জাতির ভবিষ্যৎ শিক্ষিত মা, দক্ষ প্রশাসক, দূরদর্শী সমাজ বিনির্মাতা। ওদের সুষ্ঠুভাবে বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করা আমাদের সবার দায়িত্ব। মন্ত্রী নাহিদ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, এ ধরনের সামাজিক ব্যাধি নির্মূলে সরকারি উদ্যোগ ও আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি জনসচেতনতা সৃষ্টি খুবই জরুরি বিষয়। তিনি স্কুল-কলেজের প্রতিরোধ কমিটি, কাউন্সেলিং শিক্ষকদের তৎপরতা আরো বৃদ্ধি ও মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি ছাত্র-শিক্ষক, অভিভাবক, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতাকর্মী, সংস্কৃতিসেবী ও খেলোয়াড়সহ সর্বস্তরের জনগণকে এই সামাজিক ব্যাধি নির্মূলে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.