আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চাকমা জাতির ইতিহাস : চম্পক নগর হতে বাঙ্গালা (১ম পর্ব)

(১) সময়টা আনুমানিক ষষ্ঠদশ শতাব্দীর শেষভাগ। চম্পক নগরের রাজা সাংবুদ্ধ। সাংবুদ্ধর দুই ছেলে- বড় ছেলের নাম বিজয়গিরি এবং ছোট ছেলের নাম সমরগিরি। যুবরাজ বিজয়গিরি যুদ্ধবিদ্যায় বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। ছেলেবেলা হতেই তিনি রাজ্য জয় ও রাজ্য বিস্তারের স্বপ্ন দেখতেন।

চম্পক নগরের ভাবি রাজা একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র গড়তে চেয়েছিলেন। ত্রিপুরার দক্ষিনে অবস্থিত মগ রাজ্য। মগরা ছিল দুস্য প্রকৃতির। তারা শহর ও গ্রামে লুন্ঠণ এবং মানুষের ওপর অত্যাচার করে বেড়াত । ত্রিপুরা রাজের অধিভূক্ত দক্ষিনাঞ্চলেও তাদের দৌরাত্ম্য থেকে মুক্ত ছিল না ।

এসময় ত্রিপুরা রাজ্যে অন্তঃবিপ্লবের সম্ভাবনা থাকায় রাজা মগদের দমনে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারেনি। যুবরাজ বিজয়গিরি তার সামরিক অভিযানের শিকার হিসেবে বেছে নিলেন এই মগ রাজ্যকে। এ উদ্দেশ্যে তিনি এক বিপুল সৈন্যবাহিনী গঠন করলেন। সেনাপতি নিযুক্ত করলেন রাধামনকে। বিজয়গিরি ত্রিপুরা রাজার সাথে সাক্ষাৎ করে সাহায্য কামনা করলে রাজা সানন্দে একদল ত্রিপুরা সৈন্য প্রদান করলেন।

বিজয়গিরি ত্রিপুরা সৈন্য বাহিনীর সেনাপতি কুঞ্জধনকে সেনাপতি রাধামনের সহকারী নিযুক্ত করলেন। অতঃপর শুরু হল দক্ষিণ অভিমুখে যাত্রা। (২) ত্রিপুরা রাজ্যের অধিভূক্ত দক্ষিণের প্রদেশ কালাবাঘা। কালাবাঘা প্রদেশের ঠেওয়া নদীর তীরে শিবির স্থাপন করলেন রাধামনের বাহিনী। রাধামন পাশ্ববর্তী সামান্ত মগ রাজার নিকট দূত প্রেরন করলেন আত্নসমর্পনের জন্য।

মগ রাজা আত্নসমর্পনে অস্বীকৃতি জানালেন। কর্ণফুলী নদীর মোহনায় ইধং পর্বতের কাছে দুপক্ষের মধ্যে শুরু হল যুদ্ধ। রাধামনের শক্তি ও রনকৌশলের নিকট পরাজিত হল মগবাহিনী। মগ রাজা বশ্যতা স্বীকার করলে রাধামন তাকে রাজ্য পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে আরো দক্ষিণে রোয়াং রাজ্য (বর্তমানে রামু)আক্রমন করলেন। যুদ্ধে মগ রাজা পরাজিত হয়ে রাধামনের নিকট প্রান ভিক্ষা ও রাজ্য ত্যাগের অনুমতি চাইলেন।

পর পর দুটি যুদ্ধে জয় লাভ করে রাধামনের সৈন্য বাহিনীর মনোবল বেড়ে গেল। এর পর তারা আক্রমন করেন নিম্ন আরাকানের অক্সাদেশে। শক্তিশালি অক্সাদেশের মগ সৈন্যদের সাথে ভীষন যুদ্ধে আহত হন রাধামন। সাহায্যে এগিয়ে আসেন সেনাপতি কুঞ্জধন। কুঞ্জধনের সহযোগিতায় রাধামন পরাজিত করে আক্সাদেশের মগ রাজাকে।

আক্সাদেশ জয়ের পর রাধামন সৈন্যদল নিয়ে পূর্বদিকে যাত্রা করেন। জয় করেন কাঞ্চন দেশ ও কালঞ্জ। কালঞ্জ জয়ের মাধ্য দিয়ে বিজয়গিরি তার সামরিক অভিযানের সমাপ্তি টানেন। (৩) দ্বিগ্বিজয়ী বিজয়গিরি কালঞ্জ জয়ের পর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ইচ্ছে পোষন করেন। এরই মধ্যে তিনি অনেকগুলো রাজ্য জয় করেন।

দীর্ঘ বছর পর চম্পক নগর প্রত্যাবর্তনের পথে কালাবাঘাই উপস্থিত হলে তিনি পিতার মৃ্ত্যুর দুঃসংবাদ পান। তিনি আরো জানতে পারেন দেশের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে ছোট ভাই সমরগিরি রাজ সিংহাসনে বসেছেন। অভিমান কিংবা ভ্রাতৃস্নেহের কারনে বিজয়গিরে চম্পক নগরে ফিরে গেলেন না। তিনি পূনরায় বিজিত রাজ্যে ফিরে এলেন। বিজয়গিরির অনুরক্ত সৈনাগণও তার সাথে রয়ে গেল।

বিজয়গিরি বিজিত রাজ্যেসমুহ নিয়ে প্রতিষ্ঠা করলেন এক নতুন রা্জ্য, রাজধানী সাপ্রাইকুল। তিনি সৈন্য ও অনুচরবর্গকে স্থানীয় রমনী বিয়ের অনুমতি প্রদান করলেন এবং নিজেও উচ্চ বংশীয় এক রমনী বিয়ে করলেন। শতাব্দীকাল রক্ত ও সংস্কৃতির মিশ্রনের ফলে সৃষ্টি হল এক নতুন জাতি। পরবর্তীতে এদের নাম হল চাকমা জাতি। তথ্যসূত্রঃ ১।

- চাকমা জাতির ইতিবৃত্ত – বিরাজ মোহন দেওয়ান। ২। - চাকমা রাজ বংশের ইতিহাস – রাজা ভূবন মোহন রায়। ৩। -চাকমা জাতি – সতীশ চন্দ্র ঘোষ।

৪। -চট্টগ্রামের ইতিহাস – মাহাবুব – উল - আলম। ২য় পর্ব ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.