আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

'শিরোনামহীন' একটি গানের দল-'জামিল' একজন স্বপ্নচারী

অর্থ নয়, কীর্তি নয়...আরো এক বিপন্ন বিস্ময়/আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভেতরে খেলা করে আমার নাম জামিল/এটা আমার অফিস/এখানে আমি বছর দিন সপ্তাহে ৬ দিন কাজ করি/অফিসে আসতে হয় ১০ টায়/শ্যামলী থেকে মহাখালি আসার খুব সহজ উপায় নেই/এই সময়টা গাড়ীগুলোতে অসম্ভব ভীড়/মানুষগুলো ঝুলে ঝুলে ছোটে/প্রতিদিন/দেখি/আর একটা মানুষও ওঠার জায়গা নেই/আমি দাঁড়িয়ে থাকি/জায়গা হয়ে যায় আরো অনেকের/দেখি/বাসের ভীড়ে দু'এক জন সুযোগ বুঝে পকেট হাতড়ে নেয়/মাঝে মধ্যে ধরা ও পড়ে যায়/দেখি/ফুটপাতে বসা ভিখারিনী মুখ গুঁজে হাত পেতে থাকে/কেউ দেয়/কেউ দেয় না/দেখি/বিলবোর্ডের ভেতর থেকে প্রতীক হাসি মুখ করে তাকিয়ে থাকে/আমি ও তাকিয়ে থাকি/রিক্সার বেল শুনে খেয়াল ভাঙ্গে/ফুটপাত ধরে হাঁটি/গরম মশলার সিডি বিক্রেতা ইশারা করে/রঙ বেরঙের সিডি দেখি/এই যে দেখলেন কাণ্ডটা/পানের পিক ফেলে ধোয়া শার্টটা নষ্টই করে দিল/আমি কিছু বলতে পারি না/আমি দেখি/ক'দিন হল ফ্লাই ওভারের নিচে দু"টো শিশু একটা কেরোসিনের স্টোভ দু'টো ছেঁড়া ব্যাগ আর কয়েকটা পাতিল/বয়স এক কি দেড়/আপন মনে খেলে/মাথার উপর ঊড়াল সেতু বৃষ্টি আড়াল করে দাঁড়িয়ে থাকে/দেখি/অফিসটা এখানে আসার পর বেশ অসুবিধায় পড়া গেল/কিচ্ছু করার নেই/বৈশিষ্ট্যহীন একটা বছর পার হওয়ার মুহুর্তে একটা অফিস একটা ঠিকানা একটা আস্তানা আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল/কিন্তু আমি বোধ হয় অনেক খানি দায়িত্বহীন/না হলে অফিস বন্ধু পরিবার এর কোন একটা দায়িত্ব ছাড়তে পারলেই বেঁচে যাই এমন মনে হবে কেন/সহপাঠীরা অনেকেই অনেক উঁচু উঁচু পদ আঁকড়ে ধরে আছে/আমি পারি না/আমি দেখি/সন্ধায় বাসায় ফিরে এন টিভি তে করপোরেট মেয়েদের লড়াই দেখি/বেশ লাগে/খাবার পরে সিগারেটে টান দিতে দিতে পর পর অনেক গুলো পুলিশের গাড়ি খুব সাদা চোখে আমার তিনটা জীবন/শৈশব এখন আর খুব বেশি তাড়িত করে না/কিন্তু সদ্য ফেলে আসা রূপকথা স্মৃতির মত ক্ষত বেঁধে আছে/আর যে জীবন ইচ্ছায় অনিচ্ছায় সবাইকেই বেছে নিতে হয় তাতে বোধ হয় ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছি/যদিও প্রতিটা দিন শুরু হয় প্রচণ্ড টেনশান নিয়ে/শেষ পর্যন্ত দিনটা ভাল যাবে তো/রূপকথার দেশটা এখনো কেন যেন পিছু ছাড়ে না/উদ্বোধনের প্রথম মন্ত্র ওখানেই/মানবী/প্রকৃতি/বন্ধুরা/গীটার/ফিল্ম/কমন রুমে খেলা দেখা এবং অবশ্যই আমার নিজের সাথে কাটানো রোমান্টিক সময়গুলো থেকে যা পাওয়া ওখানেই/তখন সকালের যেন একটা গন্ধ ছিল/দুপুরের যেন একটা ছন্দ ছিল/বিকেলটা কেমন উদাস-অলস-আপন/কোন এক বৃষ্টিভেজা রাতে হয়তো জনহীন চেনা রাস্তায় হাঁটছি/মনের ভেতর এক অন্য গ্রহের অনুভূতি/মাথার ভেতর কলের চাকা ঘোরে/ইতিহাস ভূগোল দর্শন/মনে হয় ব্রহ্মাণ্ডের ঘটনাপঞ্জী এক সুতোয় গাঁথা/তাই তো একই মঞ্চে যুগে যুগে ক্ষতবিক্ষত হয় মানবতা/মনে মনে রক্তাক্ত হয় মনসিজ কীর্তি/কোন কোন সন্ধ্যায় হই গন্তব্যহীন/আর মুখে মুখে বদলে যায় জীবনের দার্শনিক ভাষ্য/তার পর ও কোন এক রহস্যময় কারণে নিজের সাথে নিজের দূরত্ব ছিল/সম্ভবত জীবনের সহজ সমীকরণের সাথে বিশ্ব বিধানের সহজ যোগাযোগ নেই/তাই অনেক বোধগম্য নিজস্ব প্রহরও আচানক হয়ে ওঠে দুর্বোধ্য/আত্মপ্রবঞ্চনা হয়ে ওঠে প্রবোধের ভাষা/তখন প্রবোধের প্রয়োজনে “ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে” হাওয়ার পাখায় ভর করে নিঃসীম আকাশে সহচর হন জীবনানন্দ/জীবনের সহজ সমীকরণে সহজে নেমে আসে “উদার বৈরাগ্যময় বিশাল বিশ্রাম” বিশ্রাম বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না/নাগরিক কোলাহল থামেনা।গাড়ি/হর্ণ/কোলাহল/ছোটাছুটি/ধাওয়া পালটা ধাওয়া/মানুষ/অনেক মানুষ/সহজ মানুষ/জটিল মানুষ/জটিলেশ্বর/ঈশ্বর থাকেন ওইখানে ভদ্র পল্লীতে/একটা দশ ফিট বাই দশ ফিট বন্ধ দরজার ঘর/দেড় হাত বর্গের গরাদ দেওয়া জানালা খোলা/কোথাও পৃথিবীকে আকাশ থেকে দেখার ষড়যন্ত্র/আকুল হয়ে মেঝেতে একটা গর্ত খুঁড়তে থাকি/ধীরে ধীরে তলিয়ে যাই অন্ধকারের অতল গহীনে/আরো গহ্বরে/খুঁড়তে খুঁড়তে দেখি অনেক বাতি দিয়ে তৈরি একটা সাজানো রাত/অন্ধকার তা ও বেশ অলংকারে জ়ড়ানো/কিছু অন্ধকার আবার বেশ বিশ্রী/সেখানে সোডিয়াম দিয়ে অন্ধকারের মুখে পাফ বুলিয়ে দেওয়া আছে/হুশ হাশ গাড়ি যায়/ফুটপাত জমে ওটে ঘুমের আড্ডায়/আমি হেঁটে যাই/প্রহরীর বাঁশি উপেক্ষা করে/পেরিয়ে যাই উঁচু উঁচু ল্যাম্পপোস্ট/সারাটা পথ একা হেঁটে এসে আচমকাই এক রূপসী নগরী/সেখানে আচম্বিতে দেখা হয় এক দল স্বপ্নচারীর সাথে/ওরা বলে নিয়ন আলোয় স্বাগতম

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।