আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হলিউডের চলচ্চিত্রে মার্কিন ত্রাণকর্তা

© এই ব্লগের সকল পোষ্ট,ছবি,থিম প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে কোথাও বিনা অনুমতিতে প্রকাশ করা নিষেধ । ২০১১ সালে চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য হলিউডের পুঁজি-বিনিয়োগের পরিমাণ অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। বড় বড় ফিল্ম কোম্পানিগুলো ব্যাপক ব্যবসা-সফল ও সুপারহিরো-ভিত্তিক বিশেষ কয়েকটি সুপারহিট ছায়াছবির পরবর্তী অংশ বা পরবর্তী সিরিজ নির্মাণের কাজ চলতি বছরই শুরু করবে। কল্পনাভিত্তিক মার্কিন সুপার-হিরো বা সুপারম্যান জাতীয় ছায়াছবিগুলোর পরবর্তী অংশ নির্মাণের জন্য সব সময়ই সক্রিয় থেকেছে হলিউড। চলতি বছরটিও তার ব্যতিক্রম নয়।

গত কয়েক দশক ধরেই কল্পনাশ্রয়ী গল্পে নতুন নতুন মাত্রা যোগ করে ওইসব ছায়াছবির কলেবর বাড়িয়ে চলেছে মার্কিন চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি। ন্যায় ও অন্যায় বা শুভ ও অশুভের লড়াই এবং অস্বাভাবিক বা আজগুবি শক্তির অধিকারী বীর নায়কেরা ওইসব গল্পের মূল উপজীব্য। কম্পিউটার প্রযুক্তি ও ভিডিও ক্যামেরার নানা কৌশলের ছোঁয়ায় এবং ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার সুবাদে ওইসব আষাঢ়ে গল্পগুলো হয়ে উঠছে কথিত সুপারহিট ছায়াছবি। এ প্রসঙ্গে চলতি বছরের , "হ্যারি পটার ""এ্যাভেন্চার","আয়রন ম্যান",ব্যাটম্যান","হাল্ক", "ম্যান অফ এক্স", "সুপার এইট", "ট্রান্সফর্মারস", এবং " অ্যামিরিকান ক্যাপ্টেন"-প্রভৃতি ছায়াছবির কথা উল্লেখ করা যায়। এসব ছায়াছবিতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মার্কিন নায়ক বা বীরকে ত্রাণকর্তা হিসেবে দেখানো হয়েছে।

মানুষের অভিজ্ঞতা ও স্বপ্ন-সাধ তুলে ধরার এক অনন্য এবং আধুনিক মাধ্যম চলচ্চিত্র। এ শিল্প হল-রূমে আলো-আঁধারের খেলায় রূপালি পর্দায় স্বপ্ন তুলে ধরার শিল্প। এখানে স্বপ্নের এক নতুন জগতে দর্শক-শ্রোতাদের নিয়ে যাওয়া ছায়াছবি নির্মাতার প্রধান লক্ষ্য। কল্পনার পাখায় বসিয়ে নির্মাতার পছন্দের বার্তাগুলো দর্শক-শ্রোতার মন-মগজে বদ্ধমূল করতে পারা ও না পারার ওপরই নির্ভর করে এ ধরনের ছায়াছবির সাফল্য বা ব্যর্থতা। অন্য কথায় দর্শক যদি ওইসব বার্তাকে সঠিক বলে মেনে নেয় তাহলে ছায়াছবিটি হয় সফল, আর যদি তারা সঠিক বলে মেনে না নেয় তাহলে ছায়াছবিটি হয় ব্যর্থ বা অসফল।

চলচ্চিত্র শিল্পের গোড়া থেকেই সব ধরনের দুর্বলতামূক্ত বীর নায়কের গল্প ছিল এই শিল্পের অন্যতম উপজীব্য। এ ধরনের বীর একাই মানব জাতি বা কোনো জাতিকে মুক্ত করে থাকেন। রবিনহুড, স্পাইডারম্যান, সুপারম্যান ও ব্যাটম্যান এ ধরনের ছায়াছবির কিছু দৃষ্টান্ত। গত কয়েক দশকে প্রদর্শিত আয়রনম্যান, র্রম্বো, টার্মিনেটর ও হ্যারি পটার এ ধরনের আরো কয়েকটি ছায়াছবির নাম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশেষ ধরনের রূপকথা বা মিথের লালনভূমি।

তবে অন্য জাতিগুলোর মত এখানকার রূপকথাগুলো স্থানীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সাহিত্যের মত সূত্রগুলো থেকে উৎসারিত হয়নি। বরং মার্কিন কল্পকথাগুলো উৎসারিত হয়েছে পপুলার কালচার বা পপ সংস্কৃতি ও গণমাধ্যম থেকে। আধুনিক মার্কিন জাতির প্রাচীন ও উজ্জ্বল ইতিহাস না থাকায় এমনটি ঘটেছে। মার্কিন মিথগুলো অন্য সব কিছুর চেয়ে এখন সরকারি নীতিরই বেশি সহযোগী। এসব গল্পের নায়ককে তৃতীয় সহস্রাব্দে মার্কিন জাতির উদ্ধার বা ত্রাণকর্তার ভূমিকায় দেখানো হয়েছে।

মার্কিন সরকার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কথিত যুদ্ধের শ্লোগান দেয়ায় দেশটিতে ভয়ের সংস্কৃতি চালু হয়। জর্জ ডাবলিও বুশের সরকার এই শ্লোগানকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পবিত্র বিষয়ে পরিণত করে। বিশেষ করে, ১১ ই সেপ্টেম্বরের হামলার ঘটনার পর ওই ভয়ের সংস্কৃতিকে আরো তীব্র করে বুশ প্রশাসন। মার্কিন সরকার চলচ্চিত্রকেও সুপরিকল্পিতভাবে ভয়ের সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেয়ার কাজে ব্যবহার করছে। মার্কিন ছায়াছবির স্বল্পায়ু নায়করা দীর্ঘায়ু এবং ত্রাণকর্তা হচ্ছেন।

এভাবে "সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ" শীর্ষক শ্লোগানের হোতারা চলচ্চিত্রকে ব্যবহার করে পুরনো গল্পের নায়কদেরকে ত্রাণকর্তার ভূমিকায় নতুন দায়িত্ব দিয়েছেন। মার্কিন জনগণ "সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ" শীর্ষক শ্লোগানের প্রচারণায় দীর্ঘকাল ধরে প্রভাবিত হওয়ায় ওই শ্লোগানের আড়ালে আরো কিছু বড় লক্ষ্য হাসিলের পথ সুগম হয়েছে। যেমন, ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার ফলে সৃষ্ট উত্তেজনা বা শক এবং ইরাকে ব্যাপক বিধ্বংসী মারণাস্ত্র থাকার দাবির মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তোলা হয়েছে প্রচারণার জোয়ারে। ওই দাবির সত্যতা সম্পর্কে কোনো বিচার-বিশ্লেষণ বা তদন্ত ছাড়াই মার্কিন কংগ্রেস ইরাকে মার্কিন হামলার অনুমতি দেয়। প্রচারণা-নির্ভর ভয়ের সংস্কৃতির হাওয়ায় ভর করে বুশ ২০০৪ সালে দ্বিতীয়বারের মত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হন।

"যুদ্ধরত কোনো দেশের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক পরিবর্তন করা উচিত নয়। " সে সময় রক্ষণশীল রিপাবলিকানরা নির্বাচনে এ শ্লোগানটি ব্যাপক মাত্রায় ব্যবহার করেছিল । ত্রাসের সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ায় মার্কিন জাতির আত্মবিশ্বাস দূর্বল হয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এখন নিরাপত্তাহীনতা ও মানসিক অসুস্থতার দেশ। ২০০৩ সালে মার্কিন কংগ্রেস বলেছে, দেশটির ১৬০ টি স্থান সন্ত্রাসী হামলার শিকার হতে পারে।

কিছু কাল পর ওই সংখ্যা ১৮০০-এ উন্নীত হয়। ২০০৫ সালের শেষের দিকে সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হামলার টার্গেট হিসেবে ৭০ হাজারেরও বেশি স্থান ও স্থাপনার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ভয়ের সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেয়ার কাজে মার্কিন সরকারের পরই দ্বিতীয় প্রধান ভূমিকা রাখছে বিনোদন ও গণমাধ্যম। গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু ত্রাণকর্তা সৃষ্টির কাজ করেছে হলিউড। মার্কিনীরা ওইসব নায়ক বা ত্রাণকর্তাদের বেশ ভক্ত এবং ওইসব ছায়াছবি বেশ সাড়া জাগিয়েছে তাদের মধ্যে।

কাল্পনিক ত্রাণকর্তার ব্যবহার চলচ্চিত্রে বেশ পুরনো। সেই ১৯৩০ এর দশকেই জটিল অঙ্গ-প্রতঙ্গ ও পিঠ থেকে হাটুর নীচ পর্যন্ত ঝোলানো চাদরধারী নায়কের কাল্পনিক গল্প নিয়ে ছায়াছবি নির্মিত হয়েছে। ওইসব নায়ক অশুভ শক্তি বা শয়তানদের সাথে যুদ্ধ করেন। ওইসব ছায়াছবির সাথে সুপারম্যান জাতীয় ছায়াছবির কিছু মিল রয়েছে। অনেক গবেষকের মতে ইহুদিবাদী চিন্তাধারার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে এ ধরনের ছায়াছবিতে।

ইহুদিবাদীরা মনে করে তারাই শ্রেষ্ঠ ও বিধাতার মনোনীত জাতি। তাই তারা মার্কিন জাতির ত্রাণকর্তাকেও অতিমানব হিসেবে অন্য সব মানুষের চেয়ে উর্দ্ধে তুলে ধরেছে। সম্প্রতি ইসরাইলের দৈনিক হারেৎজ লিখেছে, মার্কিন ছায়াছবির বেশিরভাগ সুপারহিরো ইহুদিবাদীদের বিশ্বাস বা স্বপ্নগুলো তুলে ধরছে। কাল্পনিক মার্কিন গল্পের মহানায়করা বাহ্যিকভাবে ইহুদি না হলেও তাদের বিশ্বাস ও বৈশিষ্ট্যগুলো ঠিকই ওই সুপার-নায়কদের মধ্যে দেখা যায়। ওইসব গল্প লেখায় পর্দার আড়ালের ইহুদিবাদী লেখকদের হাত থাকার বিষয়টি স্পষ্ট করেছে হারেৎজ।

ওইসব চরিত্রের স্রষ্টা লেখকদের বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী ইহুদি বলেও দৈনিকটি উল্লেখ করেছে। এসব গল্পে তারা যাদের সাথে যুদ্ধ করছেন তাদের শীর্ষে রয়েছেন হিটলার। এ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার ইহুদিবাদী স্বপ্নও দেখানো হয়েছে ওইসব মহানায়কের গল্পে। মার্কিন সরকারের নির্দেশে এক সময় কমিউনিস্ট বিরোধী ছায়াছবি তৈরি করত হলিউড। পরবর্তীতে হলিউড মার্কিন সরকারের ফরমায়েশে এই ধারণাভিত্তিক ছায়াছবি তৈরি করছে যে, বিশ্ব একজন ত্রাণকর্তার মুখাপেক্ষী এবং ওই সর্বশক্তিমান ত্রাণকর্তা বা মহানায়ক হল স্বয়ং মার্কিন সরকার।

এভাবে হলিউডের ছায়াছবি একদিকে মার্কিন সরকারের পছন্দের সংস্কৃতি ও যুদ্ধকামী নীতি তুলে ধরছে এবং একইসাথে নির্মাতাদের যোগাচ্ছে অঢেল অর্থ। অন্য কথায় হলিউডের ছায়াছবির ত্রাণকর্তারা আসলে ইহুদিবাদীদের আধিপত্যকামী রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থারই ত্রাণকর্তা ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.