আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মানসিক চাপ

আমরা সবাই জীবনে কখন না কখনও মানসিক চাপের মুখমুখি হই। এমন কি যে সারা জীবন নিরাপদ জীবন যাপন করেছেন তিনিও কখন না কখনও মানসিক চাপের মুখমুখি হয়েছেন। জীবনে মানসিক চাপের প্রবেশ হয় না বাচক পরিস্থিতি থেকে। যা আমাদের জীবনের স্বাভাবিকতা কে ব্যাহত করে। মানসিক চাপের ফলে সবচেয়ে ব্যাহত হয় কর্মজীবন।

সমিক্ষায় দেখা গেছে যে, কাজে মানসিক চাপের জন্য বছরে প্রায় ২০০০ কোটি টাকার অপচয় হয়। আর মানসিক চাপ মানুষকে অসুস্থ বা আহত করে ব্যাপক ভাবে। এই লেখায় আমরা উপস্থাপন করার চেষ্টা করব মানসিক চাপ কিভাবে চিহ্নিত করব, জানার চেষ্টা করব কিভাবে এর সাথে মানিয়ে চলব, আর এটাকে অন্যখাতে প্রভাহিত করা যাবে। সুতরাং চেষ্টা করি লেখার বাকি অংশে কিছুটা মনোযোগ দিতে। এখন দেখা যাক আমরা কিভাবে মানসিক চাপ ও দূর্দশার হাত থেকে পরিত্রান পেতে পারি।

মানসিক চাপ হচ্ছে এমন একটা ঘটনা যা আমাদের মানসিক দন্দ যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট। মজার ব্যাপার হচ্ছে মানসিক চাপের ভাল এবং খারাপ দুইটি দিকই আছে। দেখা যাক এর ভাল দিক কেমন। আমাদের মাঝে এমন অনেক কেই পাওয়া যাবে যারা মানসিক চাপের মধ্যে থেকে ভাল ভাবে তাদের কাজ সম্পাদন করতে পারেন। কাজের মধ্যে চ্যালেঞ্জ না থাকলে কাজ করে মজা পান না।

এসব ক্ষেত্রে আমরা বলব মানসিক চাপের ভাল দিকও আছে। এসব ক্ষেত্রে দেখা যায় এই ধরনের মানসিকতার লোকেরা খুব দৃড়চিত্তের অধিকারী হয়। এদের মানসিক তৃপ্তির পরিমানও অনেক উচুমানের এরা সাধারণত পরমুখাপেক্ষি হয় না। এখন দেখা যাক এর খারাপ দিক কি হতে পারে। কিছুকিছু মাসনিক চাপ দীর্ঘমেয়াদী হয় এটি তখন ভাল না হয়ে খারাপ দিকে মোড় নেয়।

মানসিক চাপ তখন দূর্দশার দিকে ধাবিত হয়। যেটা তার, কর্মক্ষেত্র, সংসার, পরিমন্ডল সর্বত্রই ক্ষতি করে। যখনই মানসিক চাপ সৃষ্টি হয় তখন শরীর এর জন্য প্রতিকারে চেষ্টা করে। শরীর তখন প্রতিরোধ্যে মত্ত হয় বা পলায়নরত হয়। শরীরে মাংস পেশী শক্ত হয়ে যায়, হৃদযন্ত্র অনেক দ্রুত কাজ করতে থাকে বা বিট বেড়ে যায়, শরীরে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়।

আর এই অবস্থা বেশীক্ষন চলতে থাকলে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা লোপ পায়। কাজ সংক্রান্ত মানসিক চাপের সৃষ্টি হয় নিদৃষ্ট ও অল্প সময়ে কাজ সম্পাদন করা, অতিরিক্ত কাজের চাপ। উদুর্তন কর্তৃপক্ষের অযাচিত প্ররোচনা, হঠাৎ হঠাৎ কাজের ধারা পরিবর্তন হওয়া, কাজের মধ্যে ভিন্ন ধরনের আরও কাজ আসা, এগুলি থেকেই কাজ সংক্রান্ত মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়। ফলে উক্ত ব্যক্তি কি করবে এই দ্বিধার মধ্যে পতিত হয়। এছাড়াও টাকা পয়সা সংক্রান্ত সমস্য, সংসার ও বাচ্চাদের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হওয়া বয়স্ক বাবা- মায়ের জন্য উদ্বিগ্ন থাকাও মানসিক চাপের অন্যতম কারণ।

যে কোন অবস্থার পরিবর্তনই মানসিক চাপের প্রধান কারণ গুলির একটি। কখনও কখনও ভাল পরিবর্তন খারাপ পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। এমনকি চাহিদা অনুযায়ী পরিবর্তন না হলেও মানসিক চাপ সৃষ্টি হতে পারে। আবার দেখা যায় কোন ঘটনার খারাপ দিক চিন্তা করে ঘটনা ঘটার আগেই মানসিক চাপ হয়। এখন নিজেরা পর্যালোচনা করে দেখি আমাদের মানসিক চাপ কোথায় আছে এর মাত্র কেমন, কাজের অশান্তি, ঘরে অশান্তি, অর্থ সংক্রান্ত অশান্তি, স্বাস্থ্য নিয়ে অশান্তি এই রকম আর হাজারটা অশান্তি আমাদেরকে প্রতিদিন অশান্ত করে তোলে।

এই মানসিক চাপ আমাদেরকে শুধু কর্ম বিমুখ বা একাকি করা অথবা অসুস্থ করে তিল তিল করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। মানসিক চাপের কারণ ও ফলাফল বহুবিধ হতে পারে। আবেগের কথা যদি বলি, রাগ, ভয়, দুঃখ্য থেকে মানসিক অশান্তির দিন পেরিয়ে মাসও গড়িয়ে যেতে পারে। মানসিক অশান্তি আপনাকে অস্থির চিত্ততার দিকে, সিদ্ধান্তহীনতার দিকে ঠেলে দেয়। ভুল সিদ্ধান্তের কারনে মানসিক বৈকল্যতা অবাস্তব কিছু নয়।

মানসিক চাপের কারনে সমাজে আপনার চলাচল ব্যাপক ভাবে ব্যাহত হয়, আপনি ক্রমেই সঙ্গিহীন হয়ে পড়েন। অপরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনে ব্যার্থ হয়। ফলে সমাজচূত্য হয়ে পড়েন। আপনার আচরনের উপর প্রভাব পড়ে। আপনি অমনোযোগি হয়ে পড়েন, অসংলগ্ন হয়ে যান।

শুধু যে বাইরে তা নয় ঘরেও আপনি অপরিচিতের মত ব্যাবহার করেন । ক্রমে এটা বাসা বাধে অসুস্থতা হয় আপনার শরীরে, রক্তচাপ বেড়ে যায়, মাথা থরা অব্যাহত থাকে, অবসাদ গ্রস্ত হওয়া, অনিদ্রা হওয়া, হতবুদ্ধি হওয়া, শ্বাসপ্রম্বাস ঘন হওয়া, আলাসার হওয়া, কোষ্ঠ কাঠিন্য হওয়া, হৃদরোগের অক্রান্ত হওয়া খুবই সাভাবিক। মানসিক চাপ থেকে বাঁচার প্রথম উপায় হচ্ছে আপনি যে, মানসিক চাপে আছেন সেটা অনুভব করা। আর এই অনুভবই আপনার যুদ্ধের প্রধান হাতিয়ার। বিয়টি লোক লজ্জার ভয়ে চেপে থাকলে তা আপনার উপর জেকে বসবে।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন বোঝার চেষ্টা করেন সমস্যার সুত্রপাত কোথা থেকে। মানসিক চাপের ভয়ে ভিত না হয়ে আলোচনা করেন সংসারে, বন্ধুমহলে, আত্মিয় স্বজনদের মাঝে তুলে ধরেন। কর্মক্ষেত্রে হলে উদ্ধর্তন কতপৃপক্ষের সাথে অথবা মানব সম্পদ দপ্তরে আলোচনা করেন। বন্ধুভাপন্নদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ধর্ম গুরুদের সরনাপন্ন হওয়া যেতে পারে।

কথা বলতে পারেন মনরোগ বিষেশজ্ঞদের সাথে। আজ কাল মেডিটেশন এর বেশ চল হয়েছে, সেখানে ক্লাস করতে পারেন। এটা লক্ষ করা গেছে যে সুস্বাস্থের অধিকারিরা মানষিক চাপে কম ভোগেন। এদের মানষিক দৃড়া বেশ নির্ভরযোগ্য। মানসিক চাপ দূরিকরনের জন্য শরীর চর্চা খুবই উপকারী এবং দ্রুত নিরাময়ক।

উল্লেখযোগ্য শরীর চর্চার জন্য বেশ অনেক কাযকর পদ্ধতি আছে, যেমন: নিয়মিত হাটা, দৌড়ান, সাতার, সাইকেল চালনা, নৌকা চালনা, যোগব্যায়ম ইত্যাদি। প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ থেকে ৪৫ মিনিট শরীর চর্চা করা উচিত। তবে যে ধরনের শরীর চর্চা করবেন অবশ্যই চিকিৎসক বা বিষেশজ্ঞের মতামত নিয়ে করবেন না হলে হিতে বিপরীত হতে পারে। খাদ্যাভাসের দিকেও নজর দিতে হবে। সব সময় পরিমিত আহার করা বাঞ্চনিয়।

চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে সেই সাথে লাল মাংস, মাছ খাবেন, প্রচুর শাক-সবজী খাবেন। আশযুক্ত খাবার বেশী খাবেন, অতিরিক্ত লবন ও চিনি যুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। শরীর নিজেই কিছু ক্যাফেইন তৈরি করে বা অলসতা কাটাতে সাহায্য করে। তাই বাইরের অতিরিক্ত ক্যফেইন কম খেতে অভস্ত হতে হবে। যেমন দিনে মাত্র দুইকাপ চা বা কফি অথবা কোক খেতে পারেন।

অ্যালকোহল াবশ্যই পরিহার করতে হবে। এটা আপনার শরীরের প্রয়োজনীয় ভাইটামিন নষ্ট করে দেয়। আর মানসিক চাপের মাত্র বাড়িয়ে দেয়। সেই সাথে পর্যাপ্ত বিশ্রাম একান্ত প্রয়োজন। প্রতিদিন নিদৃষ্ট সময়ে বিছানায় যেতে অব্যাস করুন।

ঘুমানোর আগে মন ভাল করা কিছু পড়তে পারার অভ্যাস ভাল। হালকা মিউজিক শুনতে পারেন। সবচেয়ে ভাল হয় ঘুমানোর আগে ইসদ উষ্ণ পানিতে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে ঘুমান। অবসাদ দূর করার জন্য যোগব্যায়াম, মেডিটেশন, ম্যাসেজ খুবই উপকারী। কখনও একাকি বেশীক্ষন থাকবেন না।

পরিবারের সবার মধ্যে থাকুন, সবাইকে নিয়ে মজা কতরুন। প্রমদ ভ্রমনে বের হন কিছুদিন পরপর। আর অহেতুক সন্দেহ করে নিজেকে কষ্ট দেবেন না। এই একটাইত জীবন এত মানসিক চাপ কি ভাল না আনন্দ ভাল। ভাল থাকবেন সবাই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.