আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চিঠি কবিতা বদল!

আমার ভিতরে আমি স্বতন্ত্র জীবন যাপন করি। বসে আছি, হাতে নিয়োগপত্র। মাকে ফোন দিয়ে জানানো হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। সায়ন্তিকে ডায়াল করলাম -হ্যালো এটা কি ২৪৪১১৩৯ -নাহ! ধন্যবাদ রং নম্বর -কোন রঙের? -কি বলবে বলো,ব্যস্ত আছি -চাকরীটা আমি পেয়ে গেছি সায়ন্তি শুনছো,হবু জামাইকে বলে দাও বিয়ে তুমি আর করছো না -সত্যিই? -না ভাব নিচ্ছি!চলো বিয়ে করে ফেলি। পালিয়ে,অনিমেষের বাসায় উঠবো! সায়ন্তি হেসে দিলো, আমি উত্তর না পেয়ে বিকালে চা খাবার দাওয়াত দিয়ে ফোন ছাড়লাম।

আপাতত চা সই,পরে না হয় বিয়েতে একবারে কোরমা পোলাও হবে। এরকমই কথা দিলাম সায়ন্তিকে। তবে সেলারীর অংকটা শুনলো সায়ন্তি হার্ট এটাক করে তার হবু বরকেই বিয়ে করবে। বলেছি অবশ্য একটা আইটি ফার্মে। বেচারী ভালোই বোকা।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়ে আইটি ফার্মে কোন পদের জব পেয়েছি এই ব্যাপারে কিছুই হিসেব না করেই খুশী হয়ে গেছে। অবশ্যই খুশী হয়েছে এটা আমার ধারনা। কন্ঠে খুশী পাইনি!মাত্র পাঁচ আগেই এক বিকেলে মাথায় বেকারত্ব গলায় সামান্য ঘোর নিয়েই হুট করেই বলেছিলাম “সায়ন্তি চলো বিয়ে করে ফেলি”। বেচারী থতমত খেয়ে বলেছিলো “মানে কি? -মানে বিয়ে করে ফেলবো আরকি! -কি বলতে চাচ্ছ তুমি? -আরে বাবা কি বলবো,তুমি তোমার বরকে বিয়ে করবে,আমি আমার বউকে! সায়ন্তি চুপ থেকেছিলো,আমার হো হো শব্দের হাসি দেখে কে। তবে কথা কিন্তু সত্য সায়ন্তিকে সেটা দুষ্টামি করেই বলেছিলাম।

আমার মনে এতটুকু দুর্বলতা ছিলো না ওর জন্য। তবে এখনকার ব্যাপার ভিন্ন। খুব যে ভালোবাসি তা কিন্তু না,তবে চাই। সেও কখনও আমাকে ভালোবাসে এরকম কিছু বলেনি,তবে বিয়ে করার মৌন সম্মতি আমি বেশ বুঝতে পারি। কিন্তু ঝামেলা হলো তার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে প্রায়।

যেদিন ওকে পাত্র পক্ষ প্রথম দেখতে আসে সেদিন চা পান করতে করতে বলেছিলাম “আচ্ছা কোনটা ভালো হবে বলতো বান্দারবান না রাঙামাটি? -বান্দারবান -হুম পাহাড়ের পাদদেশে বেশ হবে! -হুম বেশ হবে,চারিদিকে সবুজ আর সবুজ -প্রিয় সায়ন্তি চলো পালিয়ে বিয়ে করে বান্দরবানে যাই! ভেবেছিলাম এমন অ্যাডভ্যাঞ্চেরিয়াস প্রস্তাবে সায়ন্তি মুসা ইব্রাহীমের মত প্রত্যয় নিয়ে বলবে “চলো ভালোবেসে পাহাড় জয় করে আসি”। কিন্তু ঘটলো তার উল্টোটা “এত শখ হয়নি আমার! এত ভালোবাসা আমার নেই” আমিও কম যাই কিসে “শখ সারিকা বাদ দাও,মডেলদের নিয়ে আলোচনার সময় এটা না। দড়ি লাগবে,বেশ শুকনো খাবার লাগবে,মনে করে একটা লাঠি নিবে,ও হ্যাঁ কার্বোলিক এসিড নিতে হবে ওখানে সাপের বেশ উপদ্রব”। অন্যান্যবারের মত এবারও হাসির পাত্র হলাম। অসুবিধা নাই এসবে আমার অভ্যাস আছে।

গত বেশ কিছুদিন ক্রমান্বয়ে এসব করে আসছি। কিন্তু বিকেল হতে বেশ সময় বাকি কি করি এতক্ষন। অনিমেষকে ফোন করি বরং। -দোস্ত অনিমেষ,তোর মেসে একটা রুম হবে? -একটা খালি আছে,ব্যাটা এক মাসের জন্য দেশের বাইরে গেছে! -বাহ! একটা কাজ কর তাহলে ওখানকার খাটটা মজবুত কর। -মানে? -তোর ভাবী নিয়ে আসবোরে ব্যাটা,থাকবো এক সাথে মিলেমিশে।

ওহো টয়লেটটা পরিস্কার রাখিস। সায়ন্তি তোদের টয়লেট দেখলে বমি করে দিবে। ওর বমি করার বাতিক আছে! অদ্ভুতুড়ে ব্যাপার অনিমেষ বিশ্বাস করে বসলো। মজা নেবার সময় এইতো। মাত্র দুপুর বারোটা বাজে।

চা পান করতে করতে পাকস্থলি সিলেটের চা বাগান হয়ে গেছে। তবুও ঘড়ি শালা একটু দয়ামায়া দেখায় না। অন্য আট দশদিন এই সময় ঘুমাই বলে টের পাই না সময়টা কত ধীর। রাস্তার পাশের চা দোকান একটা বিদ্যালয়। এখানে নানান জাতের মানুষ আসে।

একটা ভিক্ষুক এসে হাত ধরে বলল “বাবাজী দুইটা ট্যাকা দ্যান না”। পকেটে খুব বেশী টাকা নাই। আড়াইশ টাকার মত আছে। সায়ন্তি আসবে,রিকশায় ঘুরতে হবে। সবকিছু ভেবে বললাম “চাচা মাফ কইরেন না,আগামী মাসের ৭ তারিখে আসবেন এখানে,তখন পকেটে বেতন থাকবে” চাচা মনে হয় রাগ করলে,ভিলেনের মত বাজে দৃষ্টি দিয়ে হনহন করে হাঁটা দিলেন।

শুভ দিনে কাউকে মনে কষ্ট দিতে নেই। দৌড় লাগালাম চাচাকে ধরতে,সমস্যা হলো চা দোকানদার পিছনে ভাই ভাই বলে দৌড় শুরু করলো। ভেবেছে তার চা সিগারেটের বিল না দিয়ে পালাচ্ছে। আরে ব্যাটা নিয়োগপত্র তোর টেবিলে রেখে এসেছি। যদি পালিয়ে যাই অফিসে গিয়ে তুই জয়েন করিস।

ভিক্ষুক চাচাকে দশটাকা ধরিয়ে দিয়ে দোকানে এসে বসলাম। সীমান্ত আমার কাছের বন্ধু। আজ বরং বিশ্ব ফোন কল দিবস হোক। ডায়াল করেই ফেললাম -চাকরী পেয়েছি দোস্ত! -কংগ্রাচুলেশন্স। তা পার্টি কবে দিচ্ছি।

-দিবো ভালো কথা তোর পরিচিত ফুলের দোকান আছে? বাকিতে ব্যবস্থা করা যাবে এমন! -আছে! কেন? -বাসর ঘর কি ফুল ছাড়া করবো নাকি? বাসর হবে অনিমেষের বাসায়। -মানে কি? -তাহলে ফোন পেলেই ব্যবস্থা করে রাখিস,ও হ্যাঁ কালো গোলাপ আনবি না। এটার সাথে নাকি বিড়ালের কি একটা মিল আছে। সায়ন্তি বলেছিলো,ও পছন্দ করে না। সীমান্ত মোটামুটি বোকা হয়ে আছে।

ততক্ষনে আমি ফোন কেটে দিয়েছি। বারবার ফোন দিয়ে যাচ্ছে। অসাধারণ পাশবিক আনন্দ,বারবারই কেটে দিচ্ছি। সায়ন্তিকে ফোন দিবো কিনা ভাবছি! থাক না দিই। বারবার ফোন দিলে বিরক্ত হবে।

ওর বিরক্ত হবার বাতিক আছে। সবকিছুতেই বিরক্ত হয়। সেবার অনার্সের রেজাল্ট দিলো। ওকে ফোন দিয়ে বললাম “রেজাল্ট দিয়েছে,দুই মার্কের জন্য ফার্ষ্ট ক্লাস মিস হয়েছে”। খুব বিরক্ত হয়ে বলল “অনার্সের রেজাল্ট দিয়েছে এটা বলার মত খবর? আজকাল ইন্টারমেডিয়েটের রেজাল্ট নিয়েও বাচ্চারা উৎসাহ দেখায় না”।

সেদিন আবার ওকে প্রথমবারের মত কোন পাত্র পক্ষ দেখতে এসেছিলো। কথা পাল্টে বললাম “পাত্র কি করে? -ডাক্তার,একটা বড় হাসপাতালের। -ডাক্তার? হাতের লেখাতো ভালো না। তোমাকে প্রেমের চিঠি লিখবে,তুমি বুঝবে না কিন্তু। পরে বুঝার জন্য যেতে হবে ফার্মেসিতে।

ফার্মেসীর লোকজন হেসে হেসে তোমাকে প্রেমের চিঠি অনুবাদ করে দিবে। এটা দেখতে ভালো দেখাবে? -চুপ থাকো! -না মানে আরো সমস্যা আছে! -আর কি সমস্যা? -ধরো সে তোমাকে নিয়ে কবিতা লিখবে সেখানে শব্দের বদলে বিভিন্ন টেষ্টের নাম চলে আসবে। আবার ধরো তাকে তুমি রোমান্টিক স্বরে বলবে “তোমার জন্য বুক ব্যাথা করছে। সে আদরের বদলে হার্ট এটাক হয়েছে ভেবে তোমাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিবে। -আবীর তুমি চুপ করবে না ফোন কেটে দিবো? সেবারের মত ডাক্তারকে বিয়ে করা লাগেনি।

তবে এবারের ব্যাপারটা ভিন্ন। পাত্র লন্ডন ফেরত। ব্যবসায়ের উপর কি না কি ডিগ্রী নিয়ে এসেছে। দেশপ্রেমের অভাব আছে। এই ছেলেকে বিয়ে করা কোন মতেই উচিত হবে না।

যার মধ্যে দেশপ্রেম নেই তার মধ্যে বউ প্রেম কিভাবে থাকবে। তাছাড়া সে নিশ্চয় সায়ন্তিকে নিয়ে কবিতা লিখবে না। আমিতো দৈনিক একটা করে লিখতাম। অবশ্য খুব একটা সুবিধার হতো না। ফোনে প্রায় চেপে ধরে শোনাতাম।

ওকে নিয়ে লেখা সেরা কবিতাটা ছিলো এরকম ‘”চোখের কাজল অন্ধকার,ঠোঁটের গোলাপ ফুল দৈনিক পথিকও পথ হারিয়ে করবে ভুল” আমি কোন ছাড়,ভয় নেই রাত পোহাবার সায়ন্তির চোখে ডুবে মরি অজস্রবার” সায়ন্তিকে শুনিয়ে মুগ্ধ হয়ে অপেক্ষা করছিলাম মন্তব্যের জন্য। সায়ন্তি বলেছিলো “জঘন্য,অতি জঘন্য” -জ্বি ধন্যবাদ! আবার লিখবো। এছাড়া অনেক কবিতা লিখে দিয়েছিলাম কাগজে। আমি নিশ্চিত সেসব কাগজ বিক্রি হয়ে গেছে পত্রিকার সাথে। কবিতা আসলে ব্যাপার না।

তারচে দশ হাজার টাকার চাকরীটা কার্যকরী। চা দোকানদার মাছি মারছিলো। এসব ভাবতে ভাবতে আর তার মাছি মারার দৃশ্য দেখতে দেখতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। সায়ন্তির ফোনেই জেগে উঠলাম। -আমি বাসা থেকে বেরুচ্ছি।

কোথায় আসবো? -কোথায় আবার? টিএসসিতে -নাহ ওখানে আসবো না! -তাহলে কোথায়? -কল্যাণপুর! -হায়হায় ওখানে কোথায়? বসে চা খাবার জায়গাটাতোও নাই। -ওখানেই আসো। এক ঘন্টার মধ্যে আমি পৌছে যাবো। কি আর করা। মহামানবীদের আদেশ মানা বোকা ছেলেদের কাজ।

সায়ন্তি আদেশ দিলে আমি লক্ষী ছেলে। চা বিল মিটিয়ে রওনা দিলাম। সময় যেন কাটেনা গানটা কার ঠিক মনে পড়ছে না। গানটা বেশ ভালো, তবে শুনলে সত্যি সত্যিই সময় একদম কাটে না। কল্যানপুর অতি বিশ্রী একটা জায়গা।

হাজার হাজার বাস ট্রাক এদিক ওদিক যাচ্ছে,কোন কারন ছাড়াই বেয়াদবের মত হর্ণ বাজায় আবার। মনের অবস্থা কি করি আজ ভেবে না পাই । চাকরী পেয়েছি,প্রেমিকা নাতো প্রেমিকা না যাকগে কিছু একটা সে খবর পেয়ে ছুটে আসছে। এটা বিরাট প্রাপ্তি। একি! সায়ন্তি হাজির।

কপালে তীব্র কালো টিপ,পরনে লাল পাড়ের সাদাশাড়ী,ঠোঁটে সেই গোলাপ ফুলের পাপড়ী। বাস ট্রাকদের হর্ণগুলোও যেন মধু!রিকশা থেকে নেমেই হেঁটে আমার কাছে এসেই বলল “চলো” -কোথায়? -প্রথমে অনিমেষের মেসে,তারপর সেখানে আমাকে রেখে তুমি বাস কাউন্টারে এসে বান্দরবানের টিকিট কাটবে। সন্ধ্যায় আমরা বিয়ে করবো কাজী অফিসে তারপর রাতে ডিনার শেষে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে রওনা দিবো। নির্বাক হবারও যোগ্যতা লাগে। আমি শালা নির্বাকও হলাম না ঠিকমত।

নির্বাক হয়ে গোঙানীর মত শব্দ বেরুচ্ছে। -চুপ করো রিকশা ডাকো! তার আগে অনিমেষকে ফোন দিয়ে বলো আসছি! -সীমান্তকে ফোন দিয়ে ফুলের ব্যবস্থা করতে বলি? -ফুল দিয়ে কি হবে? আমাদের বাসরতো আজ হবে না! -বাসের সিটে লাগিয়ে দিবো! -শোন তিনদিন পর আমরা ফিরে আসবো। তিনদিনের মধ্যে তোমার বন্ধুদের বলবে থাকার ব্যবস্থা করতে। এই মাসের টাকা আমার কাছে আছে। পরে বাবা মাদের বুঝানো যাবে।

-আচ্ছা! রিকশায় বসে গান গাইতে ইচ্ছা হচ্ছে। রাতের খাবারের ম্যানু ঠিক করবো না বাসের সিট পছন্দ করবো বুঝতে পারছি না। কিন্তু………. -সায়ন্তি! -কি? -একটা সমস্যা হয়ে গেছে। তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না -কেন? -আমার নিয়োগপত্র হারিয়ে ফেলেছি,মনে হয় যে চায়ের দোকানে অপেক্ষা করছিলাম সেখানে ফেলে এসেছি! -গাধা কোথাকার! রিকশাকে সে দোকানে নিয়ে চলো! -আচ্ছা দুজন সংসার পাতার আগে সংসারের চাবি খুজতে রওনা দিলাম! জীবনটা শেষ পর্যন্ত সুন্দর। সায়ন্তি কাঁদছে! -বাসার জন্য খারাপ লাগছে? চলে যাবা? ওকে আমার সমস্যা নাই।

বাবা মা আগে,চলো দিয়ে আসি তোমাকে। -গাধা কোথাকার! তোমার ৭৭টা কবিতা, ৭টা চিঠি বাসায় ভুল করে ফেলে এসেছি! উৎসর্গপত্র: যাকে দেখে অবাক হই, ব্লগে এমন ধারাবাহিক মনযোগ দেয় কিভাবে। তার গল্পের কথা নাইবা বললাম। ভালো থাকবেন হামা ভাই। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.