আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রলয়ের হাতছানি-৩য় কিস্তি

প্রথম থেকে পড়তে ক্লিক করুন পূর্বের অংশ পড়তে ক্লিক করুন পূর্বে যা ঘটেছেঃ রাশিয়ান এক টপ সিক্রেট রিসার্চ ফ্যাসিলিটিতে দশ বছরের গবেষণা সফলের পর ডঃ মিখাইল দব্রোভলস্কির আত্নহত্যা, তবে তিনি সেটাকে দুর্ঘটনা হিসেবে দেখাতে সফল হয়েছিলেন। তার মৃত্যুর পর তার ডায়রিগুলো তার ইচ্ছানুযায়ী তার এক বন্ধুর কাছে পাঠানোর আগে ক্রিপ্টোগ্রাফি বিভাগে চেক করা হয়। সব ঠিক দেখে সেগুলো তার গন্তব্যে যাওয়ার ক্লিয়ারেন্স পেয়ে যায়, তবে ক্রিপ্টোগ্রাফার দিমিত্রি মারকভ সেগুলোর এককপি নিজের কাছে রেখে দেয় অবসরে পড়ার জন্য, যা ক্রিপ্টোগ্রাফি বিভাগের এক ক্লিনার আইভানের মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ২৩শে জুন,২০১৪ অ্যালিসভিল, ডেভন কাউন্টি, ইংল্যান্ড সকালবেলা বাগানের টিউলিপ ফুলগুলোর পরিচর্যা করছে অ্যানা মিয়োস্কি। সে এ কাজটা খুবই ভালোবাসে।

প্রতিদিন কাজে বেরোবার আগে এ কাজটা তার করা একরকম চাই-ই চাই। অ্যানা মিয়োস্কির বয়স পঞ্চান্নর কোঠায়,চুলের রঙ ধূসরবর্ণ। মোটাসোটা মানুষ,ফ্যাকাশে চামড়া। জন্মসূত্রে এবং জন্মস্থানসূত্রে রাশিয়ান। মস্কোর কাছাকাছি একটা ছোট্ট গ্রামে অ্যানার শৈশব আর কৈশোর কাটে।

মা ছোটবেলাতেই মারা গিয়েছিলেন, বাবাই ছিলেন একাধারে বাবা আর মা। বাবার ছোট একটা খামার ছিলো,সেটা দিয়েই সংসার চলত। অ্যানার বয়স যখন সতেরো, তখন বাবার এক বন্ধু তার ছেলেকে নিয়ে তাদের খামারে বেড়াতে আসেন। ছেলেটার বয়স তখন বাইশের কিছু বেশি। মন দেয়া নেয়ার কিছু ব্যাপার ঘটে যায় দুজনের মধ্যে অল্প কদিনের মাথায়ই ।

তবে ততদিনে দুজনেই জানতো তাদের দেখা হওয়াটা ছিলো পূর্বপরিকল্পিত, তবে প্রেমের ব্যাপারটা আর তাদের একসময় আলাদা হয়ে যেতে হবে এটা তারা জানতো না তখন। বাবা ছোটবেলা থেকেই তাকে শিখিয়েছেন যেকোন পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেয়া, কারণ এটাই তার এবং তার মতো আরো অনেকের শ্রেষ্ঠ হাতিয়ার। ছোটবেলা থেকে দুজনেরই আবেগের ওপর নিয়ন্ত্রণ ছিলো,এটা তারা পেয়েছিলো বংশ পরম্পরায়। তারা দুজনেই ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে যাওয়া এক বংশের উত্তরসূরি। কাজেই যখন আলাদা হবার সময় হয়েছিলো তখন কেউই মনের আসল আবেগে অন্তত কাঁদেনি, মুখ বুজে পরিকল্পনামতো আলাদা হয়ে গিয়েছিলো।

অ্যানার বাবা প্রায়ই বলতো, তাদের বংশের মানুষদের জন্ম পরিবার করে সুখী হতে নয়, যদি হতে হয় তো সেটা তাদের পরিকল্পনার অংশ। সাড়ে পাঁচশো বছরের পুরনো এক অপমানের বদলা নেয়াই তাদের জীবনের উদ্দেশ্য। ছেলেটা যখন উচ্চ শিক্ষা শেষ করে, তখন তার বয়স ছিলো মোটামুটি ত্রিশের কাছাকাছি। বাবার বেশ পছন্দের ছেলে ছিলো সে, কিন্তু বাবা তাদের বিয়ের ব্যাপারে রাজি ছিলেন না, ছেলেটার বাবারো একই মত। তারা একত্রে ঘোরাঘুরি করার ব্যাপারটায় তাদের আপত্তি ছিলো না,কিন্তু বিয়ে করা যাবে না- এ কঠোর নিষেধাজ্ঞা ছিলো।

দুজনের বাবাই তাদেরকে তাদের লক্ষ্য সম্পর্কে অবগত করে দিয়েছিলেন, সেটা ছিলো- একলা চলো, অপেক্ষা কর এবং সুযোগ পেলে লুফে নাও। অবশেষে তাদের একটা নাটক করতে হয়, আলাদা হয়ে যাবার নাটক, পরিচিতদের বোঝানোর জন্য। তখন অ্যানার বয়স সাতাশ, ছেলেটার মোটামুটি বত্রিশ। ছেলেটা মস্কো ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষক হয়ে চলে যায়, সে সেইন্ট পিটার্সবার্গে একটা লাইব্রেরিতে চাকরি নেয়। সেখানে অ্যানার কিছু গুরুত্বপূর্ণ মিশন সম্পন্ন করতে হয়, তার মধ্যে একটা খুনও অন্তর্ভুক্ত ছিলো।

তবে সেই খুন কোনদিনই খুনের পরিচয় পায়নি, দুর্ঘটনা হিসেবেই সেটা এখনো সেখানকার লোকজন জানে। সেটা কিছু লোকের কাজকে সহজ করে দেয়। এবং সামরিক বাহিনীর একটা গুরুত্বপূর্ণ পদে তার দলের একজন বসে যায়। অ্যানা মাঝে মাঝে তার দলটাকে নিয়ে ভাবে। সেটা ঠিক তার দল বলা যায় না, সে নিছক সেটার এক সদস্য, দাবার বোর্ডের একপক্ষের এক নগণ্য ঘুঁটি।

দলটার সদস্যরা পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছে, তাদের পরিকল্পনা দুইশত বছরেরো বেশি পুরানো, বংশ পরম্পরায় তারা সে পরিকল্পনার অংশ হয়ে এসেছে। তাদের কথা এখন প্রায় কেউই জানে না, ব্যাপারটা তারাই নিশ্চিত করেছে। তবে একসময় জানবে, অ্যানা জানে সেটা। যখন আঠারো বছর আগে তাকে রাশিয়া ছেড়ে এখানে চলে আসতে হয়েছিলো তার প্রবাসী স্বামীহারা নিঃসন্তান ফুফুর কাছে, তখনই সে আন্দাজ করতে পেরেছিলো আর বেশি দেরি নেই। মাঝে মাঝে সে ভাবে, মানুষ এতো দূরের প্ল্যান কিভাবে করতে পারে।

তার কাছে একটা জিনিস আসার কথা কিছুদিনের মধ্যে, সে জিনিসটার জন্য সে আঠারো বছর অপেক্ষা করে আছে এই ছোট্ট গ্রামটাতে, গ্রামটার একমাত্র রেস্টুরেন্টটার মালিক এক সাদাসিধে মহিলার বেশে। তার এই বসবাস একটা বিশ্বাসযোগ্য কাহিনী তৈরী করার জন্য,যেন জিনিসটা কোন সন্দেহ ছাড়াই তার কাছে চলে আসতে পারে এবং তার পরের গন্তব্যে চলে যেতে পারে। সবাই জানবে সেটা তার এক পুরনো বন্ধুর তাকে পাঠানো শেষ উপহার। এমন সময় গ্রামের ডাকপিয়ন এসে হাজির। দু একটা কথা বলে তাকে একটা বড়সড় বাক্স ধরিয়ে দিয়ে গেলো, সে আজ ব্যস্ত,বেশ কিছু চিঠি তার ডেলিভারি দিতে হবে।

বাক্সের ওপর প্রেরকের ঠিকানাটা দেখে একটা শ্বাস ফেললো অ্যানা। লেখা আছে, Department of Defense Moscow,Russia On behalf of Dr. Mikhael Dobrovolsky পরের অংশ পড়তে ক্লিক করুন ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।