আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রলয়ের হাতছানি-২য় কিস্তি

পূর্বের অংশ পড়তে ক্লিক করুন পূর্বে যা ঘটেছেঃ রাশিয়ান এক টপ সিক্রেট রিসার্চ ফ্যাসিলিটিতে দশ বছরের গবেষণা সফলের পর ডঃ মিখাইল দব্রোভলস্কির আত্নহত্যা, তবে তিনি সেটাকে দুর্ঘটনা হিসেবে দেখাতে সফল হয়েছিলেন। ২০শে জুন, ২০১৪ ক্রিপ্টোগ্রাফি বিভাগ, ডিপার্টমেন্ট অফ ডিফেন্স, মস্কো, রাশিয়া রাত প্রায় আটটা বাজে। নিজের ডেস্কে বসে মনিটরের দিকে তাকিয়ে আছে দিমিত্রি মারকভ। অলস ভঙ্গিতে মাঝে মাঝে কফিতে চুমুক দিচ্ছে। তার সামনের মনিটরে ডিসাইফারিং প্রক্রিয়ার অগ্রগতি দেখাচ্ছে।

একটু পর মনিটরে রিপোর্ট ভেসে উঠলো। মারকভ এবার একটা শ্বাস ফেললো। অর্থপূর্ণ কোন ডাটা নয়। তার মানে আসলে যে লেখাটাকে স্ক্যান করা হচ্ছে তাতে গোপন কোন মেসেজ নেই,অন্তত গত উনিশদিনের অ্যানালাইসিস তাই বলে। উনিশদিন আগে ডিপার্টমেন্ট অফ ডিফেন্সের ক্রিপ্টোগ্রাফি বিভাগে দশটা ডায়রি আসে।

সেগুলো কোন এক মৃত বিজ্ঞানীর,তিনি বিশদিন আগে অ্যাক্সিডেন্টে মারা যান। ডায়রিগুলো বিজ্ঞানীর ইচ্ছা অনুসারে তার কোন এক বন্ধুর কাছে চলে যাবে,তার আগে রুটিন চেক এর জন্য এখানে পাঠানো হয়। কাজটা কোন কোডরেড কাজ না, আর সেই বিজ্ঞানী কোন সন্দেহজনক লোকও নন, তবুও সেই বিজ্ঞানী নাকি খুব গোপনীয় কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন,তাই একবার ডায়রিগুলো চেক করার সিদ্ধান্ত নেয় ডিপার্টমেন্ট অফ ডিফেন্স। কিন্তু অফিসে আরো কাজ আছে,তাই অফিস এই রুটিন চেকের জন্য একজনকেই নিয়োগ দেয়। সেই একজনটা মারকভের বন্ধু ভাসিল আন্তনেভ,দুজনে একই সাথে মস্কো ইউনিভার্সিটি থেকে ক্রিপ্টোগ্রাফিতে ডিগ্রি নিয়ে তিন বছর আগে এখানে যোগ দেয়।

সেই ব্যাটাই আজ দুপুর পর্যন্ত এই কাজে লেগে ছিলো। মারকভ ছুটিতে ছিলো এ কয়দিন, আজ তাকে পেয়ে যেনো আকাশের চাঁদ হাতে পেলো ভাসিল। গার্লফ্রেন্ডের জন্মদিন তার। মারকভকে তেল টেল মেরে অনুরোধের ঢেঁকি গিলিয়ে পাঁচটার দিকেই ভেগেছে সেজন্য। গত উনিশদিন ধরে বিভিন্নভাবে ডায়রিগুলো স্ক্যান করেছে ভাসিল।

কাজে লাগিয়েছে ক্রিপ্টোগ্রাফি বিভাগের নতুন সুপার কম্পিউটার অয়লার-১ কে। ২ দশমিক ৫ পেটাফ্লপ গতির এই কম্পিউটার ক্রিপ্টোগ্রাফি বিভাগের গর্ব। গত দেড় বছরে অনেক জাদুই দেখিয়েছে এটা। গতবছর ভাসিল আর মারকভ এটা ব্যবহার করে একটা অত্যন্ত জটিল ২৫৬ বিটের এনক্রিপটেড দলিলের তথ্য বের করে, যেটা মস্কোতে অনেক বড় একটা সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা ছিলো। ওই তথ্য বের করতে ওদের লেগেছিলো মাত্র দুদিন।

দশটা চারশো পাতার ডায়রি,এতোদিন এজন্যই লাগলো। আজ অ্যানালাইসিস শেষ হলো। কাল সেগুলো তাদের গন্তব্যে চলে যাবে। ডায়রিগুলো উল্টেপাল্টে দেখলো মারকভ। বিজ্ঞানীর নাম মিখাইল দব্রোভলস্কি।

ডায়রিগুলোর কিছু অংশ পড়ে ওর কেন যেনো ভালো লেগে গেলো। ভেতরে খটমটে হিসাবপত্র লেখা নেই, নিছকই ব্যক্তিগত কথা,বন্ধুদের কথা, কিছু গল্প আর কবিতা। ও ডায়রিগুলো পড়বে বলে মনস্থির করলো। ডিজিটাল কপি আর্কাইভে আছে,ও ইউ এস বি ড্রাইভে কপি করে নিলো। কাজটা ঠিক আইনসম্মত না, তবে এটা কোন কোড রেড ডকুমেন্ট না, নিছক ব্যক্তিগত কথাবার্তা।

ওর বস ব্যাপারটা জানতে পারবে সিস্টেম থেকে, জানলে একটু বিরক্ত হলেও কিছু বলবে না হয়তো। ও এরপর ডায়রিগুলোর সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স দিয়ে ডেস্ক থেকে উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। ওগুলো এখন জায়গামতো চলে যেতে পারবে। খেয়াল করলো না যে ঘরের ছাদ থেকে ঝুলে থাকা একটা ছোট্ট রোবটের ক্যামেরা ওর সবকাজ দেখছে। নিচতলায় নেমে ওর সাথে অফিসের একজন বয়স্ক ক্লিনার আইভানের দেখা হলো।

তাকে গুড নাইট জানিয়ে ও বের হয়ে গেলো। পেছনে তাকালে দেখতে পেতো আইভানের চোখদুটো তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। রাত বারোটা। আইভান ওর কাজ শেষ করে অফিস থেকে বেশ দূরে একটা সস্তা বার এ চলে এলো। এখানে ও কালেভদ্রে আসে।

এসে এক বড়গ্লাস ভদকা নিয়ে একটা টেবিলে বসলো। তারপর ঠোঁটের এককোণা দিয়ে গ্লাসে চুমুক দিতে লাগলো। এটা পাশের টেবিলে বসে থাকা লম্বা পেশিবহুল লোকটার জন্য একটা সংকেত,এর অর্থ সমস্যা আছে, আলোচনা দরকার। পেশিবহুল লোকটা এতক্ষণ তাকে না দেখার ভান করছিলো, এবার হঠাৎ দেখার ভান করে হেসে ওর টেবিলে এসে বসলো। তারপর ওর কাঁধে চাপড় মেরে বলল,"কিহে আইভান,কি খবর বল তোমার" আইভানও হেসে বলল,"আরে সাখারভ,তুমি এখানে?মজার ঘটনা হয়েছে শোন।

" বলে একটু থেমে বলল,"বাসায় অনেক ইঁদুর হয়েছে। পরশু দেখলাম একটা চিলে নিলো গতকাল আরেকটা বিড়ালে মুখে করে নিয়ে গেলো,দুটোই আমার চোখের সামনে। আহা! বিড়ালটা যেনো আজো এভাবে ইঁদুর নেয়" এর অর্থ , ডায়রি জায়গামতো পৌঁছানোর ব্যবস্থা হয়ে গেছে কিন্তু এর একটা কপি এক বিড়াল মানে ক্রিপ্টোগ্রাফার নিয়ে গেছে। শেষ লাইনের অর্থ ক্রিপ্টোগ্রাফার ব্যাটা মনে হয় কিছু আঁচ করতে পারে নি এখনও। সাখারভ একটু হেসে বলল,"মজার ব্যাপার তো।

তা বিড়ালটাকে পারলে বাগে আনো। তোমার বাসার ইঁদুর সাফ করে দেবে। আর তোমার সাদা ইঁদুরটা কেমন আছে?ওটাকে সামলে রেখো,নইলে ওটাকেও সাবাড় করে দেবে। " অর্থাৎ , ব্যাটাকে নজরে রাখো। সাদা ইঁদুর বলতে রোবটটাকে বোঝানো হয়েছে।

আইভান হেসে বলল,"সে চালাক আছে,জায়গামতোই থাকবে। বিড়ালটা ইঁদুর ধরতে এলে এমন পালাবে যে ওই ব্যাটা ওর নাগালও পাবে না। আমি বাসায় গেলে ঠিকই আবার আমার গায়ে উঠে পড়বে। " অর্থ রোবটটাকে মারকভের অ্যাপার্টমেন্টে ছেড়ে দিয়ে এসেছে আইভান। ওই ক্রিপ্টোগ্রাফার কিছু আঁচ করলেই সে জানতে পারবে।

সাখারভ এরপর উঠে দাঁড়ালো। বলল,"চলি হে বুড়ো। তোমার ঘরের দরজা ঠিক করাবে বলেছিলে। দরকার লাগলে খবর দিয়ো। " মানে, প্রয়োজন পড়লে ডাক দিয়ো।

আইভান বলল," সে আর তোমার বলতে হবে না। এখন যাও দেখি। আমি কিছু সুন্দরী মেয়ে দেখি। " "তুমি আর বদলালে না বুড়ো" বলে সাখারভ হাসতে হাসতে চলে গেলো। আইভান ভদকার গ্লাসে চুমুক দিতে লাগলো।

অলসভাবে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে একটা বোতামে চাপ দিলো। সাথে সাথে মারকভের অ্যাপার্টমেন্টের ছবি ভেসে এলো। মারকভ শিস দিচ্ছে আর রান্না করছে। আইভান বোতামটা চাপ দিয়ে আবার ভদকার গ্লাসে চুমুক দিলো। মনে মনে বলল, "ডায়রিগুলো নিয়ে বেশি ঘাঁটিও না মারকভ বাছা।

তোমার জন্য ভালো হবে না। " ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।