আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রলয়ের হাতছানি-৬ষ্ঠ কিস্তি

প্রথম থেকে পড়তে ক্লিক করুন পূর্বের অংশ পড়তে ক্লিক করুন পূর্বে যা ঘটেছেঃ রাশিয়ান এক টপ সিক্রেট রিসার্চ ফ্যাসিলিটিতে দশ বছরের গবেষণা সফলের পর ডঃ মিখাইল দব্রোভলস্কির আত্নহত্যা, তবে তিনি সেটাকে দুর্ঘটনা হিসেবে দেখাতে সফল হয়েছিলেন। তার মৃত্যুর পর তার ডায়রিগুলো তার ইচ্ছানুযায়ী তার এক বন্ধুর কাছে পাঠানোর আগে ক্রিপ্টোগ্রাফি বিভাগে চেক করা হয়। সব ঠিক দেখে সেগুলো তার গন্তব্যে যাওয়ার ক্লিয়ারেন্স পেয়ে যায়, তবে ক্রিপ্টোগ্রাফার দিমিত্রি মারকভ সেগুলোর এককপি নিজের কাছে রেখে দেয় অবসরে পড়ার জন্য, যা ক্রিপ্টোগ্রাফি বিভাগের এক ক্লিনার আইভানের মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ডায়রিগুলো অবশেষে ইংল্যান্ডের ডেভন কাউন্টির এক রাশিয়ান বংশদ্ভুত গ্রাম্য মহিলার হাতে এসে পৌঁছায়। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের অতি গোপনীয় এক বিমানের নকশা সফলভাবে পাচার করতে সক্ষম হয় ওই বিমানের প্রজেক্টের চিফ সুপারভাইজার।

আর সার্বিয়ার ভেতেরনিকে এক রহস্যময় যুবক নিজের ভুলে যাওয়া অতীতকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাবার স্বপ্ন দেখছে। ১৫ জুলাই, ইওহান গ্রাম, রাশিয়া মস্কো থেকে ৫০০ কিলোমিটার দূরে ছোট ছিমছাম গ্রাম ইওহান। জনসংখ্যা মোটামুটি ২৫০০। ভলগা নদীর তীরে অবস্থিত গ্রামটা ছবির মতো সুন্দর, রাশিয়ান কিছু কিছু পোস্টকার্ডেও গ্রামটার ছবি, বিশেষত গ্রামের গির্জাটার ছবি দেখা যায়। চারপাশের গাছপালা,বাড়িঘর ইত্যাদি মিলিয়ে গ্রামটা অসাধারণ।

গ্রামের রাস্তা দিয়ে হাঁটছে মারকভ। একটু পরপরই বুক ভরে তাজা হাওয়া নিচ্ছে। গতরাতে গ্রামে এসে পৌঁছেছে সে। এখানে ওর মামার বাড়ি। মামা কৃষক মানুষ,তার নিজের বেশ কিছু জমি আছে,ছোট একটা ডেয়ারি ফার্মও আছে; সবমিলিয়ে বেশ ভালোই চলছে তার।

দুই ছেলের একজন নিঝনি নভগরদ শহরে ভালো চাকরি করে,আরেকজন বাবার সাথেই এখানকার সম্পত্তি দেখাশোনা করে। এক মেয়ে আছে,সে বিয়ে করে চেলিয়াবিন্সক শহরে থাকে। মামী খুবই ভালোমানুষ,মারকভকে নিজের ছেলের মতোই দেখেন। গত কয়েকদিন মারকভের প্রায় দুঃস্বপ্নের মতোই গেছে। মোটামুটি ৩ তারিখ থেকে সে আর ভাসিল একটা এনক্রিপ্টেড দলিলের পাঠোদ্ধারের কাজে লেগে ছিলো।

মোটামুটি বাসায় যাওয়া হয়নি দুজনেরই এ কয়দিন। ঘুম হয়েছে বড়জোর ১৫ ঘন্টা। দলিলটার পাঠোদ্ধার করার পর দুজনই ছুটির দরখাস্ত করে বিশ্রামের জন্য। তাদের বস দুজনের ছুটিই মঞ্জুর করেন,তবে ভাসিল দশদিন আর মারকভ পায় সাতদিন,কারণ সে কয়েকদিন আগেই একবার ছুটি নিয়েছিলো। মারকভ ছুটি পেয়ে বাসায় গিয়ে একটা লম্বা ঘুম দিয়ে গতকাল ইওহানের ট্রেনে উঠে পড়ে।

মারকভ প্রায় একবছর পর ইওহানে এসেছে। তাকে দেখে মামাবাড়ির সবাই খুব খুশি,বিশেষত মামাতো ভাই আলেক্সান্দরের ১০ বছরের ছেলে ছেলে আন্দ্রেই তো মনে হয় আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে,পারলে ওর সাথেই থাকে সবসময়। মারকভও ওকে পছন্দ করে। হাঁটতে হাঁটতে একটা পুকুরের কাছে এসে থামল মারকভ। পুকুরের পাড়ে একটা বেঞ্চে বসে নিজের ছোট ব্যাগটা থেকে ল্যাপটপটা বের করে মিখাইলের একটা ডায়রি আবার পড়া শুরু করলো।

কাজের চাপে একদমই পড়া হয়নি ডায়রিটা। মানুষের ব্যাক্তিগত ডায়রি পড়া মোটেও ঠিক না,কিন্তু ওর মধ্যে একটা আকর্ষণ কাজ করে এই ডায়রিটার প্রতি। ছোটবড় গল্প,কবিতা লেখা ডায়রিটায়। কিছু জায়গায় দিনপঞ্জি লেখা। কোথাও কোথাও এক মহিলার ব্যাপারে লেখা, বিজ্ঞানী মহিলাকে খুব ভালোবাসতেন, এটুকুই বোঝা যায়।

মারকভ ডায়রিটা পড়তে থাকে। মিখাইল আঁকতেও ভালোবাসতেন। বিভিন্ন জায়গায় ছবি আঁকা আছে। ডায়রির কিছু জায়গা থেকে আরেকটা ব্যাপার জানা গেছে। ভদ্রলোক গণিতে বলতে গেলে প্রডিজি পর্যায়ের ছিলেন,তার সংখ্যা নিয়ে খেলার শখ ছিলো।

ডায়রির কিছু জায়গাতে সংখ্যা নিয়ে কিছু পাজল গেম খেলা হয়েছে,বেশ কঠিন। সবমিলিয়ে একজন বহুপ্রতিভাবান মানুষের দিনপঞ্জি। মারকভ একটা শ্বাস ফেলে ডায়রিটা পড়তে লাগলো। বেঞ্চের সাথেই একটা হোয়াইট বার্চ গাছ। গাছের একটা ডালে একটা স্কেটক্রো(এক ধরণের কাক) বসে আছে।

স্বাভাবিক ব্যাপার,কিন্তু আসলে মোটেও তা নয়। কাকটা আসলে একটা রোবট। এক কিলোমিটার দূরে একটা সরাইখানার একটা ঘরে বসে আছে সাখারভ। খবরের কাগজে চোখ, যদিও সেটা ভান। বন্ধ ঘরে কেউ দেখার কথা না,কিন্তু তাও এই সতর্কতা পালন করা তাদের জন্য বাধ্যতামূলক।

কাগজটা বিছানায় রাখা, কাগজের উপর বামহাত। হাতের ঘড়ির খুদে পর্দায় দেখা যাচ্ছে মারকভকে, মিখাইলের ডায়রি পড়ছে। সাখারভের ইচ্ছা হচ্ছে ব্যাটাকে এখনি পুকুরে চুবিয়ে মেরে মস্কোর দিকে দৌড় মারতে। এর জন্য মস্কো ছেড়ে এতদুর আসা লাগলো, তাও এই গাঁওগেরামে। গ্রামগঞ্জ সাখারভের একেবারেই পছন্দ না, কিন্তু কিছুই করার নেই।

এদিকে সংঘের কেউ নেই আর আইভানকে মারকভ চেনে,দেখলে সন্দেহও করতে পারে। তাই অনুরোধে নয়, আদেশে ঢেঁকি গিলে চলে এসেছে এখানে, ট্যুরিস্ট হিসেবে। ভোল পালটাতে নকল গোঁফ লাগিয়েছে, চোখে চশমা। এমন সময় মোবাইলটা বেজে উঠলো। গ্রামগঞ্জ হলেও মোবাইল নেটওয়ার্কটা ভালই আছে, ইন্টারনেটও আছে।

মোবাইলটা কানে তুলে অলস গলায় বললো,"হ্যালো" ওপাশ থেকে ভারী কন্ঠ ভেসে এলো,"কি খবর হে ইউরি,আছো কেমন?" আইভানের গলা। সেও মিথ্যা পরিচয়ে অন্য নাম্বার থেকে ফোন করেছে। সাখারভ একটু হেসে উত্তর দিলো,"আরে মিশকভ যে। অবস্থা আর কি, ছুটি পেলাম,ঘুরছি আর পাখি দেখছি। "ওপাশ থেকে আইভান বললো,"ভালো ভালো।

জানো মাঝে মাঝে ভাবুক হয়ে যাই আজকাল। মনে হয় পাখির চোখে দুনিয়াটা কেমন লাগবে। আজব খেয়াল" সাখারভ একটু হাসল,বলল,"কেমন আর লাগবে। গাছের ডালে বসে নিচ দিয়ে চলা আর নিচে বসা দু-পেয়েদের বিচিত্র কাজ দেখতে মনে হয় খারাপ লাগবে না। দু-পেয়েদের আজব আজব সব কাজকর্ম দেখতে হয়তো ওদের মজাই লাগে।

বই পড়তে দেখলে অবশ্য বেশি আজব লাগার কথা। কতগুলো কালো কালো জিনিসের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে হয়তো পাগলও ভাবতে পারে,যদি ওরা পাগল বোঝে। " বলে জোরে হেসে উঠলো সাখারভ। আইভানও হাসল। বললো,"গাছের নিচে বসে বই পড়ার মজাই আলাদা।

তা সব ঠিকঠাক তো তোমার?" সাখারভ বলল,"তা আছে বটে। " আইভান বলল,"হুম। তা ফিরে এসে তোমার যাত্রার কথা জানিয়ো। আর সুন্দর পাখির ছবি টবি তুললে একটু মেইল কোরো। জানোই তো আমার পাখিপ্রেম।

" আসল কথাটা হলো, কিছু ঘটলে আমাকে জানিয়ো। সাখারভ বিদায় জানিয়ে ফোনটা রেখে দিলো। তারপর একটা শ্বাস ফেলে খবরের কাগজটা ভাঁজ করে রেখে ঘর থেকে বের হলো। একটু ছবি তোলার ভানটান করা দরকার। ট্যুরিস্ট তো আর সারাদিন ঘরে বসে পেপার পড়তে পারে না।

এদিকে বেশ কিছুক্ষণ পর মারকভ ল্যাপটপটা বন্ধ করে উঠলো। ঘড়ি দেখলো। প্রায় ২টা বাজে। আন্দ্রেই এর স্কুল ছুটি হবার কথা একটু পরই। আজকে আন্দ্রেইকে সে প্রমিস করেছে যে ওর স্কুলে যাবে।

আন্দ্রেই ওর বন্ধুদের সাথে পরিচয় করাবে মারকভের । স্কুল থেকে বাড়ি আসতে আসতে প্রায় পৌনে ৩টা বেজে গেল। বাড়িতে ঢুকতেই আন্দ্রেই তার স্বভাবমতো দাদীকে,অর্থাৎ মারকভের মামীকে জড়িয়ে ধরলো। মামী মারকভের দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন,"আয় মারকভ,তোর সাথে আমার এক চাচাতো ভাইয়ের পরিচয় করিয়ে দেই। ও সার্বিয়াতে থাকে।

পাশের গ্রামে নিজের আদিবাড়িতে বেড়াতে এসেছে। " বসার ঘরে একজন বয়স্ক পুরুষমানুষ আর একজন মহিলা বসে আছে। মারকভের মামী তাদের কাছে মারকভকে নিয়ে গেলো। মারকভের পরিচয় মামী করিয়ে দেয়ার পর বয়স্ক ভদ্রলোক হেসে নিজের হাত বাড়িয়ে দিলেন,"হ্যালো ইয়াংম্যান। আমি ইউজিন পেরেলমান,আর এ আমার স্ত্রী ইভা পেরেলমান" ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।