আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনুভূতির অপমান

আমার 'কলম' আজো আছে আমার সাথে, আমার কষ্টের সঙ্গী হয়ে,আমার সুখের ভাগ নিয়ে দেনা-পাওনা চুকিয়ে,এক চিলতে হাসি হয়ে... চেনা দিন গুলো ভীষন অচেনা মনে হয় তুমি পাশে নেই বলে, সুখী দিন গুলো বেদনা বিধূর হয়ে রয় তুমি পাশে নেই বলে, সময় যেন কাটেনা...... অনেক দিন পর আজ খুব প্রিয় একটা গান শুনতে পেল দিনা। নিউজ পেপার থেকে চোখ সরিয়ে খুঁজতে লাগল গানের উৎসটা,খেয়াল করে বুঝতে পারল ওর গাড়ি থেকে কিছুটা দূরের একটা গাড়ীতে গানটা বাজছে,খুব বেশি ভলিউম না হলেও দিনার কানে ঠিকই গানটা এসেছে। কিছুক্ষন তন্ময় হয়ে শুনলো গানটা। জ্যাম ছেড়ে গেছে,একটা সময় ঐ গাড়ীটাও চলে গেছে কিন্তু দিনার মনে সুরের আবেশ রয়ে যায়। শেষ কবে একমনে গান শুনেছিল দিনার ঠিক মনে পড়েনা,হবে বোধহয় পাঁচ বছর আগে...নাহ,পাঁচ বছর হবেনা,আপন মনেই বলে দিনা,আসিফ সাধারনত অবসর পেলেই গান শুনতো,ছুটিতে বাসায় আসলেই ছোট বোন আফরিনের কাছ থেকে লেটেস্ট গান গুলো নিজের ল্যাপটপে নিয়ে শুনতো,মাঝে মাঝে কাজ আর পড়ার ফাঁকে দিনাও শুনতো।

খুব সম্ভবত এই দুই বছরে আর কোন গান তেমন শুনা হয়নি। ছাত্র জীবনে দিনা নিজেও প্রচুর গান শুনতো,বলতে গেলে সারাক্ষনই ওর কানে হেড ফোন থাকতো,কিন্তু একটা সময় এসে সব কিছুই বদলে গেছে। বদলে গেছে সে নিজেও। এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে সিয়াম খুবই অবাক হলো!!!ব্যাপার কি?বাসা থেকে কেউ আসেনি এখনো?!!এমনতো হবার কথা না... কালকেও তো কথা বলেছে বাসায়,বড় দুলাভাই আর বন্ধু সাকিব গাড়ি নিয়ে আসবে বলেছে,তাহলে এখন সব কই?! পাশে দাঁড়ানো গার্ড এর কাছে সময় জিজ্ঞেস করল,টাইমতো ঠিকই আছে!কি করবে বুঝতে পারছে না সিয়াম!সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে সাকিবের গলা শুনতে পেল,ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখতে পেল সাকিব দৌড়ে আসছে পেছনে দুলাভাই আর ভাগ্নে ফুয়াদ। যাক,হাফ ছাড়ল সিয়াম,প্রায় চার বছর পর দেশে ফিরল সিয়াম।

চারপাশে আরেকবার তাকালো,হুম,বদলে গেছে অনেক কিছুই,সবার সাথে কুশলাদি বিনিময়ের পর সাকিব আর ফুয়াদ ল্যাগেজ গাড়িতে তুলল,সব শেষে গাড়িতে উঠতে যেয়ে আপনাতেই হঠাৎ চোখ সামনে কোথাও আটকে যায়...সিয়াম এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে,মেয়েটা পেছন দেখতে পাচ্ছে ও বুঝতে পারছে না কে,তাতে কিছু আসে যায় না,সিয়াম আসলে অবাক হয়েছে মেয়েটার হাসি শুনে,একদম দিনার হাসির শব্দের মতো... দিনা...কিছুটা অবাক হয় সিয়াম!দিনাকে সে কেন মনে করছে! ধ্যাৎ!কিছুটা বিরক্ত হয়ে গাড়িতে উঠে বসে সিয়াম। সারা পথ এর ওর খবর জিজ্ঞেস করতে করতে সময় পাড় হয়ে যায়,মেইন রোড থেকে বাসার গলিতে গাড়ি ঢুকতেই আবারো ধাক্কা খায় সিয়াম, গলির প্রথম বাড়িটা দেখে। একটু চুপ হয়ে যায় সিয়াম,কিছুক্ষন পর সাকিব কে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করে, --আমাদের এলাকা দেখি এখনো আগের মতোই আছেরে...বাড়ি ঘর সব সেই আগের মতোই দেখতে পাচ্ছি... সাকিব বুঝতে পারে সিয়াম কি বলছে,কথাটা শুনে সাকিবের মনের ভেতর কেমন জানি রাগ কাজ করে...সেটা কে সামলে রেখে বলে, --বাড়ি তো আর মানুষ না যে যখন তখন বদলে যাবে। সিয়াম আর কথা বাড়ায় না। বাসায় ফিরে দিনার খুব ক্লান্ত লাগছে দেখে লাইট অফ করে শুয়ে থাকে কিছুক্ষন।

কিন্তু শুয়েও শান্তি পায় না দিনা,কেমন জানি মনটা খুব অস্থির লাগছে...মাঝে মাঝেই এমন হয় কোন কারন ছাড়াই,অনেকক্ষন এপাশ ওপাশ করে উঠে পড়ে। লাইট অন করে রুম থেকে বের হয়,মা এর রুমে লাইট অফ,তার মানে নামায পড়ছেন তিনি,আফরিনের রুমের দরজা বন্ধ কিন্তু লাইট অন ,দরজার কাছে যেয়ে ওর পড়ার শব্দ শুনতে পায়। কিছু না বলে চলে আসে দিনা,আকিফের রুমের কাছে যায়,সেখানেও কথার আওয়াজ শুনতে পায়,সম্ভবত ওর টিচার এসেছে। কিচেনে ঢুকে নিজের জন্য কফি বানায় দিনা,তারপর বিস্কুট নিয়ে নিজের রুমের লাইট অফ করে বারান্দায় এসে বসে। আকাশের দিকে তাকায় দিনা, আজকের জোছনাটা অনেকটা আবছা হয়ে আছে,বোধহয় আজ মেঘ জেদ ধরেছে আর তাই জোছনা কে আড়াল করে রেখেছে,ভাবতে ভাবতে আনমনেই হেসে উঠে দিনা।

অনেকদিন আগে একবার সিয়ামকে বলেছিল,''আজকে আকাশে আবছা জোছনা''সিয়াম শুনে খুব অবাক কন্ঠে জিজ্ঞেস করেছিল,''জোছনা আবার আবছা হয় কি করে?!!''কথাটা মনে পড়ায় সেদিনের মতো আজকেও হেসে ফেলল। হঠাৎ সচকিত হয়,ধ্যাৎ কি মনে করছি এসব!গুন গুন করে গাইতে থাকে ''ও চাঁদ...সামলে রাখো জোছনা কে...'' বাসায় এসে সবার সাথে গল্প করতে করতে কখন যে রাত হয়ে গেছে টেরই পায়নি সিয়াম। এক সময় সবাই যে যার যার রুমে চলে যায়,সাকিব ও বাসায় চলে যায়,নিজের রুমে ঢুকে আরেকবার ফ্রেশ হয়ে টাওয়ালটা মেলে দিতে বারান্দায় এসে একটু থমকে দাঁড়ায় সিয়াম। আনমনেই গ্রিলে হাত দিয়ে কিছুক্ষন আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে,আজকের জোছনা টা সুন্দর কিন্তু কেমন জানি অস্পস্ট!এটা কে কি বলা যায়?!কিছুক্ষন ভেবেও উত্তর পেল না, দিনা হলে অবশ্য ভালো বলতে পারত,ওর তো আবার এসব ব্যাপার নলেজ ভালো!কথাটা মনে আসতেই আরেক দফা অবাক হয় সিয়াম!!আবারো দিনা?!নাহ...দেশে আসতে না আসতেই এমন কেন হচ্ছে?!বারবার দিনাকেই কেন মনে পড়ছে?!নিজের প্রতি খুব বিরক্ত হয় সিয়াম। হঠাৎ মোবাইল বেজে উঠে,হাতে নিয়ে দেখল লন্ডন থেকে সায়মার ফোন,কিছুক্ষন কথা বলে রেখে দিল।

শুক্রবার ছুটির দিন বলে দিনা বিকেলে বের হয়েছে। আজ অনেকদিন পর মায়ের বাসায় আসল,যদিও এ বাসায় আর তেমন কেউ থাকে না,তারপরেও আসল দিনা। ভাইয়ের ছেলেটা কে দেখতে। রিকসা থেকে নেমে বাসায় ঢুকতে যেয়ে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো দিনা!বাসার গেটের সামনে সিয়াম দাঁড়িয়ে আছে... দিনার মনে হলো চারপাশে প্রবলভাবে ভূমিকম্প হচ্ছে,নিজেকে অনুভূতু শূন্য মনে হচ্ছে...ও কাকে দেখছে সামনে?সিয়াম?!... এ কি করে সম্ভব!!কতক্ষন সময় এভাবে চলে গেল দিনা জানে না,একটা সময় মনে হলো,প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে ওর। ইচ্ছে হচ্ছে ছুটে যেয়ে সিয়ামের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়তে,ওকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদতে...গালের উপর গরম কিছু অনুভব করতেই চমকে উঠল দিনা,মাথা নিচু করে চোখের পানি কে আড়াল করার চেষ্টা করল,কিন্তু বাঁধ ভাঙ্গা জল যে কোন বাঁধা মানে না...তবু ও চোখের পানি মুছে,সামনে পা বাড়ালো।

ওকে সামনে এগিয়ে আসতে দেখে সিয়াম একপাশে সরে দাড়ালো,দিনা ওকে না দেখার ভান করে ভেতরে ঢুকে গেল,কিছুটা অবাক হলো সিয়াম,তাকিয়ে রইল দিনার চলে যাওয়ার দিকে হঠাৎ দেখল দিনা পেছন ফিরে তাকিয়েছে,সেই আগের মতো...দু'চোখ ভরা জল নিয়ে...যেনো কতো মায়া আর ভালোবাসা জমে আছে সেখানে... সিয়ামের হঠাৎ করেই নিজেকে খুব পাষান আর স্বার্থপর মনে হলো। সেদিন সারা রাত দু'জনের কেউই চোখের পাতা এক করতে পারল না। দিনার মনে হলো,ও সেই চার বছর আগের দুঃসহ দিন গুলোতে ফিরে গেছে,অসহ্য বেদনা ভরা সেই দিন গুলো,চারপাশে কত আয়োজন,আত্নীয় স্বজন এ বাড়ী ভর্তি,আর সব কিছু ছাঁপিয়ে দিনা একা একা রুমে বসে দিনের পর দিন কেঁদে চলছে...কাউকে বলতে পারছে না কি ওর কষ্ট,শুধু একা একা বুক চেপে কেঁদে চলছে। মোবাইলটা হাতে দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে আছে দিনা,কিন্তু নাহ...কোন ফোন আসে না। আসবে কোত্থেকে...?সিয়ামের হাতে তখন দিনা কে ফোন দেবার মতো সময় ছিল না।

সিয়ামের চোখে ভেসে উঠে সেই দিনটার কথা,দিনার সাথে শেষ দেখা হয়েছিল যেদিন,ছবিমেলার পাশে। বলা নেই কওয়া নেই হুট করে এসে দিনা বলল, --সিয়াম,খুব তাড়াতাড়ি মনে হচ্ছে আমাকে বিয়ে দিয়ে দিবে,তুমি কি কিছু করতে পারবে? কপাল কুঁচকে দিনার দিকে তাকায় সিয়াম, --ফালতু কথা বলার আর সময় পাওনা না?কিসের বিয়ে?কোন বিয়ে শাদী হবে না। ওর কথা শুনে কিছুক্ষন চুপ করে থাকে দিনা। তারপর সিয়ামের হাতটা খুব শক্ত করে ধরে রাখে,মনে হয় যেন এই বুঝি সিয়াম চলে যাবে...সিয়াম কিছুক্ষন পর ওর হাতের উপর হাত রেখে বলে, --চিন্তা করো না,সব ঠিক হয়ে যাবে,তোমার বাসায় তো কয়দিন পর পরই বিয়ের ঝড় উঠে তারপর আবার থেমে যায়,এবার ও এমনই হবে। --কিন্তু যদি বাঘ আসছে বাঘ আসছে করতে করতে সত্যি সত্যি বাঘ চলে আসে তখন? --আরে ধূর...অতো ভেবো না তো,এমন কিছু হলে সোজা আমার সাথে কাজী অফিস চলে যাবা,তারপর আমার বাসা।

ওর কথা শুনে হেসে ফেলে দিনা। এই কথাটুকুই ওর জন্য অনেক কিছু,সিয়াম কোন ভাবেই ওকে হারাতে চায় না,দরকার হলে সারা দুনিয়া থেকে আলাদা হবে এর বেশী আর কি চাই? আস্তে আস্তে পরম নির্ভরতায় সিয়ামের কাঁধে মাথা রাখে দিনা,সিয়াম ও ওর হাত শক্ত করে ধরে রাখে...ভালোবাসাটা কে এখানেই অনেক অসীম মনে হতো দু'জনের। কিন্তু সময় তো আর মানুষের হিসেব মতো চলে না,আর মানুষ যদি সেটা বুঝেও সজাগ না হয় তাহলে আর কি করা...দুর্ভাগ্য মেনে নিতেই হয়। কাল থেকে সিয়ামের ফোর্থ ইয়ার ফাইনাল পরিক্ষা শুরু,বরাবরের মতো এবার ও দিনা প্রমিজ করে নিজের সাথে,যে দিনে একবারের বেশী সিয়ামের সাথে কথা বলবে না,আর কোন এসএমএস ও করবে না,সিয়াম খুবই মনোযোগী ছাত্র,পড়তে বসলে দুনিয়াদারীর হুশ থাকে না,শুধু তাই না,ও মানুষটা এমনই যে তার হাতে এখন যেই কাজ আছে তারই মধ্যে তার সারা দুনিয়া। আর সে জন্যই দিনা পরীক্ষার সময় গুলোতে কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখে,কারন ও জানে ও চাইলেও সিয়াম ওর সাথে কন্ট্রাক্ট করতে পারবে না,হাজার বলেও রাগ করেও কাজ হবে না।

তাই আর কিছু বলে না দিনা। প্রথম প্রথম এ নিয়ে অনেক রাগারাগী হতো এখন আর হয়না,কিন্তু সিয়ামকে ছাড়া একেকটা মুহুর্ত অনেক কষ্টে কাটে দিনার। বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতোই বন্ধু সাকিবের কাছ থেকে দিনার বিয়ে ঠিক হওয়ার খবর শুনেছিল সিয়াম। হতভম্ব হয়েছিল কতক্ষন। পরীক্ষা,ল্যাব আর এসাইনমেন্টের চাপে গত চার-পাঁচ দিন ধরে দিনার সাথে কথা হয় না সিয়ামের।

ও জানে দিনা এ কয়দিন খুব কষ্ট পাচ্ছে,কিন্তু সিয়াম কোনভাবেই সুযোগ করতে পারছিল না। গত কাল থেকেই সাকিব ওকে কি যেন বলার চেষ্টা করছিল কিন্তু ও সুযোগ দিচ্ছিল না আজ তাই জোর করেই ওকে দাড় করিয়ে কথাটা বলল,সাকিব। সাকিব এ ও জানালো দিনা গত কয়েকদিন ধরে পাগলের মতো ওর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে যাচ্ছে,কিন্তু কোন ভাবেই পারছেনা আর তাই সাকিবকে খুব করে অনুরোধ করেছে। সিয়াম চোখে সর্ষে ফুল দেখতে থাকে,করতে করতে মুখস্থ করে ফেলা সার্কিটের ম্যাথ গুলো ওর চোখে ভাসা ভাসা লাগে...কি করবে ও এখন?বাসায় এই মুহুর্তে নিজের বিয়ের কথা বলার কোন মানে নেই,যেখানে বড় আপুর এখনো বিয়ে হয়নি,আর তার উপর এখন ওর ফাইনাল পরীক্ষা চলছে,সারা জীবনের সাধনা এখন শেষ হওয়ার পথে...এই সময় সরে দাড়ানো?নাহ,কোন ভাবেই সম্ভব না। তাহলে দিনার কি হবে?...মেয়েটা তো ওকে মন উজার করে ভালোবেসেছে,চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করে আছে।

নাহ,নিজের কাছে আর কোন উত্তর খুঁজে পায় না সিয়াম। ''আমাকে ক্ষমা করে দিও দিনা,সব ভুলে নতুন করে জীবন সাজিয়ে নাও,আমি অপরাগ। আমার সারা জীবনের সাধনা ছিল ভালো ইঞ্জিনিয়ার হওয়া,আর তা পূরনের শেষ সময়ে এসে আমি তা ব্যার্থ হতে দিতে পারিনা। আমাকে মাফ করে দিও। '' ম্যাসেজটা সেনড করে দিয়ে মোবাইল থেকে যখন সিমটা খুলে ফেলল,তখন নিজেকে অনেক কাপুরুষ মনে হচ্ছিল সিয়ামের।

মনের আয়নায় নিজের চেয়ে আর বড় বিশ্বাসঘাতক কাউকে দেখতে পাচ্ছিল না...একটা সময় মনে হলো আয়নাটা ভেঙ্গে গেছে। বিয়ের বধু হয়ে স্টেজে বসেছিল বলে মনে হয়না দিনার,মনে হয়েছিল কাফনের কাপড় পড়ে কবরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। ওর কান্না দেখে বড় আপু অনেকবার জিজ্ঞেস করছিল,ওর কি এই বিয়েতে অমত আছে কি না?নাকি ওর কোন পছন্দ আছে থাকলে যেন বলে উনারা তার সাথেই ওকে বিয়ে দিবে...কিন্তু দিনা কিছুই বলতে পারেনি,বোবার মতো বসে বসে শুধু চোখের পানি ফেলেছে। এই কি ছিল ওর ভাগ্যে?!কিসের শাস্তি দিল ওকে সিয়াম?জানে না দিনা। শুধু এত টুকুই জানে ও সিয়ামকেই ভালোবাসে আর কাউকে না।

মনটা কোন শ্লেট না,চাইলেই সব মুছে ফেলবে,যে মানুষটা ওর সারা দুনিয়ার সাথে লড়ার ওয়াদা দিয়েছিল সেই ই কি না আজ নিজের জন্য ওকে ছেড়ে চলে গেল?!!একটা বার ও কি পারল না ওর মুখোমুখি হতে? আজ কেন জানি দিনার মনে হচ্ছে মন থেকে সিয়ামকে এতটা ভালোবাসা ওর উচিত হয়নি,এতটা বিশ্বাস করা উচিত হয়নি। জিনিয়ার মতো মুখে ভালোবাসার কথা বলে অন্য কাউকে বিয়ে করলেই ভালো হতো!! আবারো বুক ফেঁটে কান্না আসে দিনার...সব কিছু ফিঁকে মনে হয়... আযানের শব্দে প্রচন্ড ভাবে চমকে উঠে দিনা,সে কি...?ভোর হয়ে গেছে?...অতীত নিয়ে ভাবতে ভাবতে কখন যে সময় চলে গেছে টেরই পায়নি। অযু করে ফ্রেশ হয়ে এসে আয়নার সামনে দাঁড়ায় দিনা। নিজের চেহারা দেখে অবাক হয়,কেন এই অবস্থা করে আছে নিজের সে? কার জন্য?সিয়ামের কথা ভেবে?...কেন সে সিয়ামের কথা ভাবছে? কোন দুঃখে?...ওর জন্য নিজের আবেগ দেখানো অর্থহীন। ওর ভালোবাসার কাছে বলি হয়ে আজ সে বিধবার জীবন পাড় করছে,আর ও?সে তো দিব্বি লন্ডন যেয়ে এমএস করে নিজের ক্যারিয়ার গড়েছে,বিয়ে করেছে,সুন্দর সময় পাড় করছে...ও কি পারত না আরেকবার ফিরে এসে নিজের অন্যায়ের প্রায়শ্চিত্ব করতে?পারত না নিজের অপূর্ণ ওয়াদা গুলো পূরন করতে? পারত না ওকে নিয়ে আরেকবার নতুন করে স্বপ্ন দেখতে?নাহ... কিছুই করেনি সিয়াম।

স্রেফ নিজের বাস্তবতা,নিজের সুখটাই দেখেছে। দিনা জানে,ও ভেতরে ভেতরে অনেক পস্তায় কিন্তু কাউকে বুঝতে দেয় না,কিন্তু তাতে কি?...সময় তো আর ফিরে আসবে না আর দিনাও কোন দিন ওকে মাফ করতে পারবে না। অনেক দিন পর ভোর দেখে দিনা,সদ্য নীড় ছাড়া পাখীদের দেখে বুকটা হাহাকার করে উঠে,ইশ,আমিও যদি পারতাম ওদের মতো উড়ে যেতে... আপন মনেই গেয়ে উঠে, ''তুমি চলে যাও,একা...বাঁচা কি শেখাও... পৃথিবীটা কার?তোমার না আমার বলে যাও...''  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।