আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মোদী ও মমতা: শুধুই কী একতরফা?

গুজরাট গণহত্যা র পর গোটা দেশে তিনি যখন একঘরে, তখনও তাঁর জন্মদিনে তিনি ফুল পাঠাতে ভোলেননি। তাঁর নেতৃত্বেই সিঙ্গুর থেকে টাটারা উৎখাত হয়ে গুজরাটের সানন্দে আশ্রয় নিয়েছে, সেরাজ্যে গড়ে উঠেছে অটোমোবাইল হাব। এই সেদিনও মিলনমেলা প্রাঙ্গণে ‘বেঙ্গল লীডস্‌’ শিল্পসম্মেলনে ‘গুজরাট মডেল’-এর অকুন্ঠ প্রশংসা করেছেন তিনি। গত ৯ই এপ্রিল কলকাতায় এসে তাই তাঁর এই শুভাকাঙ্খী ‘মমতা বহিন’-এর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী। না হয় তিনি এখন আনুষ্ঠানিকভাবে এন ডি এ-তে নেই, আবার তিনি তো আবার ঘোষণা করে ইউ পি এ-ও ছেড়েছেন।

আর তাঁর কখনো এন ডি এ, কখনো ইউ পি এ, কখনো ত্রিশঙ্কু থাকার দোলাচলের কথা তো কারো অজানা নেই। জোটসঙ্গী তিনি যে আবার হবেন না, এমন বিরোধিতার কথাও তো কেউ শোনেননি গত এক বছরে। আর অনাগত ভবিষ্যতের কথা কে বলতে পারে! বিশেষ করে লোকসভা নির্বাচন যখন অদুরেই এবং জোটের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবেও বাড়তি সমর্থন আদায়ের চাপ তাঁর কাঁধে রয়েছে। হয়তো সেদিকে চেয়েই মঙ্গলবার গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী, গুজরাট গণহত্যারর কলঙ্কিত মুখ নরেন্দ্র মোদী রাজ্যের শিল্পপতিদের সামনে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যাহনার্জির প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন। রাজ্যের তিনটি বণিকসভা যৌথ উদ্যোগে কলকাতা মহানগরীর একটি পাঁচতারা হোটেলে ‘গুজরাট মডেল’ নিয়ে শিল্পপতিদের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর এই আলোচনার আয়োজন করেছিল।

আলোচনার গোড়াতেই মোদী স্পষ্ট করে দেন, পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে গুজরাটের কোনো তুলনামূলক আলোচনা করতে তিনি আসেননি। ক্ষমতায় আসার মাত্র দু’বছরের মধ্যেই মমতা ব্যা নার্জির নেতৃত্বে তৃণমূল সরকার যে জনসাধারণের প্রশ্নের মুখে পড়ে গেছে, সম্ভবত সে সম্পর্কে পুরোদস্তুর ওয়াকিবহাল রয়েছেন মোদী। তাই কতকটা মমতার হয়ে সাফাই গাইতেই তিনি বলেন, ‘গুজরাটে কংগ্রেস আমলে যে গর্ত তৈরি হয়েছিল, তা পূরণ করতে আমার দশ বছর লেগেছে। আর পশ্চিমবঙ্গে গত ৩৪ বছরে যে গর্ত তৈরি হয়েছে, তা মাত্র দু’বছরের মধ্যেই তা পূরণ করা সম্ভব নয়। ’ একই সঙ্গে মমতা সরকারের প্রতি যে তাঁর পূর্ণ আস্থা আছে, সেকথা জানিয়ে দেন তিনি।

মোদী এদিন বলেন, ‘এই সরকার যেভাবে কাজ করছে, তাতে আমার বিশ্বাস আছে যে এরা নিশ্চয়ই পশ্চিমবঙ্গের মানুষের স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে। ’ শুধু শিল্পপতিদের সঙ্গে আলোচনাতেই নয়, দলীয় কর্মীসভাতেও তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে একটি শব্দও ব্যয় করেননি নরেন্দ্র মোদী। সেদিন বিকালে মহাজাতি সদনে বি জে পি-র রাজ্য শাখার পক্ষ থেকে একটি কর্মীসভার আয়োজন করা হয়েছিল। দলের রাজ্য নেতাদের অভিযোগ, মোদীকে নিয়ে তাঁদের এই সভার জন্য নেতাজী ইনডোর স্টেডিয়ামের অনুমতি চাওয়া সত্ত্বেও তৃণমূল সরকার তা দেয়নি। কিন্তু রাজ্যের দলীয় নেতা ও কর্মীদের খানিকটা আশাহত করেই মোদী তাঁর বক্তব্য মূলত সীমাবদ্ধ রাখেন সংগঠনকে কিভাবে আরো শক্তিশালী করা যায় তার ওপরেই।

এমনকি, শিল্পপতিদের নিয়ে আলোচনার শুরুতেই সভার একটি অংশ থেকে ‘রিমুভ মমতা, ব্রিঙ মোদী’ আওয়াজ উঠলেও বক্তৃতার শুরুতেই তার তীব্র সমালোচনা করে খন্ডন করেন মোদী। শুধু মমতা ব্যা নার্জির সরকারেরই প্রশংসা নয়, সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্যের প্রতি বঞ্চনার যে অভিযোগ তিনি করেছেন, সেদিন কতকটা সেই তালে তাল মেলান মোদী। তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘দিল্লিতে কংগ্রেসের নেতৃত্বে সরকার রাজ্যগুলির সঙ্গে ইউ পি এ এবং ইউ পি এ-নয় বলে বিভাজনের রাজনীতি করছে। ইউ পি এ জোটের মধ্যে নেই, এমন রাজ্যগুলি বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। বাংলার সঙ্গে এটাই হচ্ছে।

’ মোদী দাবি করেন, ‘এন ডি এ আমলে বাজপেয়ী সরকার নাকি এমন বৈষম্য কখনো করেনি!’ যথারীতি এখানেও তিনি তোপ দাগেন কেন্দ্রের সরকারের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, ‘দিল্লিতে এখন কোনো কাজই হচ্ছে না, সবকিছুই স্তব্ধ হয়ে আছে। কার্যত এই সরকার এখন ক্যা লেন্ডার দেখে নয়, ঘড়ি দেখে চলছে, কখন সন্ধ্যাআ নামবে!’ কলকাতার শিল্পপতিদের সামনে ‘গুজরাট মডেল’-এর কথা তুলে ধরতে মোদী মূলত কৃষিক্ষেত্রে এবং কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে তাঁর সরকারের সাফল্যের কথাই উল্লেখ করেন। বক্তব্যে একবার গুজরাটে অটোমোবাইল হাব গড়ে ওঠার কথা অবশ্য তিনি ছুঁয়ে যান। বোধহয়, যেহেতু সিঙ্গুর থেকে টাটা মোটরস্‌ চলে যাওয়ার কারণেই যে গুজরাটে এই হাব গড়ে ওঠতে পেরেছে, তাই তা নিয়ে তিনি বেশি আলোচনা করতে চাননি।

ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স, ভারত চেম্বার অব কমার্স ও মার্চেন্টস চেম্বার অব কমার্সের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই শিল্প সম্মেলনে সঞ্জীব গোয়েঙ্কা, হর্ষবর্ধন নেওয়াটিয়া, সঞ্জয় বুধিয়াসহ বেশ কিছু তারকা শিল্পপতির অনুপস্থিতি চোখে পড়েছে। ‘গুজরাট মডেল’ নিয়ে এরাজ্যের শিল্পপতিদের খুব একটা আগ্রহ রয়েছে বলে মনে হয়নি। বরং ফিকি-র প্রাক্তন সভাপতি সুধীর জালান-এর মতো শিল্পপতির প্রশ্ন ছিল মোদীর প্রতি, ‘গুজরাট তো পর্যটনে খুবই উন্নতি করেছে। আমাদের মুখ্যমন্ত্রীও তো এরাজ্যে ‘সুইজারল্যাুন্ড’, ‘লন্ডন’ ইত্যা্দি বানানোর কথা বলছেন। আপনি কি তাঁকে এবিষয়ে কিছু পরামর্শ দিয়ে যেতে পারেন।

’ কিন্তু বিতর্কিত বুঝে যথারীতি এই প্রশ্নও এড়িয়ে যান মোদী। তিনি বলেন, ‘বাঙালীরাই তো সবচেয়ে ভালো পর্যটক। দেশের যে কোনো প্রান্তে গিয়েই আপনি বাঙালী পর্যটকের দেখা পাবেন। আর আমি আজ এখানে ছাত্র হিসাবে শিখতে এসেছি, যাতে গুজরাটে গিয়ে কিছু করতে পারি। ’ এমনকি ‘গুজরাট মডেল’ নিয়ে তিনি নিজেও বলেন, দেশের ৬০০টি জেলার কোনো একটি জেলায় অন্য জেলার মডেল হুবহু প্রয়োগ করা সম্ভব নয়।

তবে নীতি ও কৌশলকে অনুসরণ করা যেতেই পারে। তাঁর বক্তব্য, পরিস্থিতি অনুযায়ী ‘মোদী-ফিকেশন’ নয়, ‘মডিফিকেশন’ করতে হবে। শুধু শিল্পপতিদের মমতা ও তাঁর সরকার সংক্রান্ত প্রশ্নেরই নয়, ‘প্রধানমন্ত্রী’ পদের প্রার্থী হিসাবে তাঁর নাম যে আলোচিত হচ্ছে সেই প্রশ্নও তিনি এড়িয়ে যান। একই কারণে কলকাতার সাংবাদিকদেরও এড়িয়ে যান মোদী। শিল্পপতিদের আলোচনার শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে যাতে সাংবাদিকরা প্রশ্ন না করেন, তার জন্য মোদী জানান, তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাদাভাবে মিলিত হবেন।

কিন্তু প্রায় দু’ঘন্টা অপেক্ষা করিয়ে রাখার পরে সাংবাদিকদের না জানিয়েই তিনি পিছনের দরজা দিয়ে হল থেকে বেরিয়ে যান। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.