আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্পটা শেষ পর্যন্ত উকুনের

সাদা শার্টে কালো তিলা পড়ার লাগান বৃষ্টি উড়ে। ‘আমার মুগ্ধতা উড়ে না, আমি উড়ি’ মনে পরে কন্যার কথটা। বৃষ্টি দেখে তাই মনে হচ্ছে,বৃষ্টি মুলত ঝড়ে না উড়ে। আর যা ঝড়ে পড়ে তা বৃষ্টির শরীরের ঘাম মাত্র। সেই ঘামের ঘ্রাণ খুঁজে পাওয়া মুশকিল ঢাকার তিন নম্বার রুটের বাসে।

মুহুর্তেই যেন ছেলেটি নাক কুচকায় ঘ্রাণ পাবার আশে। তেল চিটচিটে সিটে চোখ যেতেই সে হাসে, একটা ফোন নাম্বার দেখে। কায়দা করে লেখা আছে, কল মি...ভালোবাসা চাই..। সবাই ভালোবাসাই চায় এক জীবনে। ভালো বাসায় থাকতে চায়।

আহা কি আকুলতা পিরিতেরও লাগিয়া! বাসের ড্রাইভারের মাথায় উপর ঝুলে থাকা ভাঙা ঘড়িটায় চোখ রাখে ছেলিটি। এখনো রাত ৮টা বাজতে ২০ মিনিট বাকি। মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই সে পৌঁছে যাবে গন্তব্যে। এ কথা ভাবতেই শরীরের ভেতরের শরীর কেঁপে ওঠে। কইলজার পাতালে বইশাল হয়।

তারই মৃদু কস্পন আন্দাজ করে সে। বইশালের সময় যেভাবে মানুষ ঘর থিকা বের হইয়া আসে। তেমনি নিজের ভেতর থেকে বের হয়ে আসে ছেলেটি। প্রথম দেখা? ..হ্যাঁ, না থুক্কু স্মৃতি ভ্রস্ট হচ্ছে। তার সাথে ইতি মধ্যে আরো তিন কিস্তি দেখা হয়েছে।

তৃতীয়বার কথা হয়। তারও গন্ডি ছিল হাই হ্যালোতেই । এইটুকুনই? হুম. সেদিন বাড়ি ফিরতে ফিরতে কতবার নিজেকে বোকচোদ মনে হয়েছে। এমনটা করা উচিত হয়নি। খানিক সময় তো কথা বলাই যেত।

আফসোস বলে নিজের ঠোট কাটে ছেলেটি। আজ আনুষ্ঠানিক ভাব বিনিময় হবে। মত বিনিময় ও মদ বিনিময়। দুটোই। একটা কিছু কেনা দরকার।

শাহবাগের মোড়ে থেকে লাল গোলাপ কেনা যায়। না বিষয়টা টিএনজ হয়ে যাচ্ছে। জাদুঘরের সামনের কাঠগোলাপ তলা থেকে একটা কাঠগোলাপ নেওয়া যায়? বিষয়টা বেশি রোমান্টি হয়ে যাচ্ছে। এক খিলি পান নেওয়া যায়..বলে ছেলেটি পান দোকানের দিকে পা বাড়ালেও সে সিদ্বান্ত নেয় পান নেওয়াটা বেশি ছেলেমানুষি হয়ে যাবে। সে তো পান নাও খেতে পারে।

আর পান খেলে একটা সমস্যাও হতে পারে। কন্যার ঠোটের তিলটা পানের রঙে আড়াল হবার সম্ভাবনা থাকে। এটা কিছুতেই করা যাবে না। ভাবতে ভাবতে আশিক ভাইয়ের বইয়ের দোকান হয়ে লাবু ভাইয়ের বাঁশির করুণ সুর সঙ্গে লয়ে ছেলিটি পৌছে যায় জি স্ট্রিট এ। বরফ গলা বাতাস এসে ঠান্ডা করে দিয়ে যায় শরীর।

মনের তাপ বাড়তে থাকে। পা ঘামানো শুরু হয়েছে। কি বিছরি। পা ঘামানো কখনোই সয্য করতে পারে না ছেলেটি। কিন্তু বিশেষ মুহুর্তে তার পা ঘেমে যায়।

কথা ছিল সে আসবে জি স্ট্রিটে। মাছির চোখে ছেলেটি মানুষ দেখে। তার চোখ একটি নিদির্ষ্ট ফ্রেমে বন্ধি হতে পারে না। ‘আমরা চা সিগারেট খেতে পারি? কথা শুনে চমকে ওঠে ছেলেটি। তারই পাশে একজন বসে আছে।

তারই কপি। যেন কন্ট্রোল সি আর ভি এর কারসাজি। তারা গুরের চা খায়। সিগারেট ধরায়। একটি তর্কে মেতে ওঠে দুজনে না সে আসবে... না আসবে না আমি বললাম আসবে...না সে আসবে, তাকে আসতেই হবে, কোন কারন নেই আসার মন বলছে সে আসবে, সে কথা দিয়েছে আমাকে, চোখ ভর্তি কাজল আর হাত ভর্তি কাচের চুরি পিন্দা আসবে।

এত প্রেম কই থিকা পাও। ভাতের ফেনের লাগান প্রেম উতরাইয়া পরে। বাজে কথা বলবি না.. হা হা হা.. তর্কটা না বাড়িয়ে ছেলেটি চোখ বন্ধ করে। দুটো হাত চোখের প্রান্ত সীমানায় ধরে। ছোটবেলার মত দুই হাতের তর্জনির মিলন ঘটাতে চায় সে।

পরখ করে নিতে চায়। আদো সে আসবে কিনা। কিন্তু হায় ছেলেটিরই জয় হয়। দুই তর্জনির মিলন ঘটে। বৃষ্টি উড়ছে ফূর্তি নিয়ে।

ছেলেটির মনেও ফূর্তির রোদ উঠে। চাঁদের সঙ্গে কানামাছি খেলছে কালো সাদা মেঘ। সে বাতাসে কন্যার শরীরের ঘ্রাণ খুঁজে কুকুরের মত। কন্যার শরীরের ঘ্রাণ ছেলেটির মুখস্ত না। এটা ভাবতেই নিজেকে আবারো গাধা মনে হয়।

একজন মনিষি বলেছিলেন, প্রেমে পড়লে মানুষ গাধা হয়। আমরা দেখি নবজাতক সন্তানের কান্নার ডাক শোনার অপোয় যে পিতা ওটির বাইরে অস্থির সময় কাটান। ঠিক সেই দৃশ্যের মত ছেলেটি পায়চারি করে। না উদাহারনটা এমন হতে পাওে, ‘সে যে কেন এলো না, কিছু ভালো লাগে না’ গানটির আগ মুহুর্তে নায়িকা কবরীর যে অস্থিরতা আমরা দেখি, এখানেও তেমন দেখি তাকে। এতটা অস্থিরতা কি ঠিক? সে প্রশ্নও তার মনে দাগ টেনে যায়।

চাঁদ, বৃষ্টি, চা, সিগারেট, গাঞ্চা কোন কিছুতেই মনে তালা লাগে না। নির্ধারিত সময় পার হয়ে এক ঘন্টা ৪০ মিনিট। সেলফোনে চামে সময়টা দেখে নেয়। আহা! মেয়েটির ফোন নাম্বার না নিয়ে যে বোকামি করেছে তার জন্য নিজেকে গালাগালি দেয়। ঘাস ছিড়তে ছিড়তে সে স্থির করে সেই ম্যাজিক খেলাটা খেলবে।

যা বহুকাল আগে শিখিয়েছিল এক নারী। তার দেখা সবচে সুখি মানুষ। মেয়েটি বলেছিল.. ‘এ খেলায় যখন যে জিনিসটার অভাব দেখা দিবে, যদি তা না পাওয়া যায় মনে মনে ধরে নিতে হবে সেটা আছে। ধর তোমার একজনের সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে করছে। পারছো না।

বা কাউকে দেখতে ইচ্ছে করছে..তখন চোখ বন্ধ কর। চুপচাপ বসে থাকো। তারপর সে মানুষটিকে ভাবতে থাকো। তাকে খুঁজে আনো তোমার পাশে। কথা বল, দেখে নাউ তাকে’।

ছেলেটি মেয়েটির এ পদ্ধতির সফল প্রয়োগ করেছিল হাতমাড়ার কাজে। আজ অন্যরকম একটি নিরিা করে দেখা যায়। ঘটানাটা কি ঘটে। চোখ বন্ধ করে সে সিগারেটে আরামের টান দেয়। যেন গিলে গিলে সিগারেট খাচ্ছে।

আমরা দেখি সে একা একা কথা বলছে। কিন্তু সে দেখছে তারপাশেই মেয়েটি হাটুতে দুই হাত বেঁধে বসে আছে। তাদের কথা হয়.. কেমন আছেন? কি করেছেন সারাদিন? কোথায় থাকেন? বাসায় যান কখন?, চলুন একটু চা খাই, হ্যাঁ খাওয়া যায়, একটু ঝাল মুড়ি খাবেন, ঝাল মুড়ি খাওয়ার পর চা খেতে সেইরাম লাগে, এই টাইপের কথা চলে, কথার ফাঁকে দুজন দুজনাকে দেখে নেয় মন চোখে। বৃষ্টির জমে থাকা পানিতে চাঁদ যেন রাজহাস হয়ে সাঁতার কাটে। চোরাডুব দেয় মাঝে সাজে।

বকের সাদা ধবধবে বুকের লাগান বুক দেখাইয়া আচমকা জাইগা ওঠে চাঁদ। নতুন চরের লাগান মাথা তোলা দেয় তাদের কথার প্লট। তারা কথা বলেই চলে। মাঝে মাঝে চুপ আবার কথা ঝরে টুপ টুপ। যদিও আমরা দর্শক মুলত ছেলেটিকেই কথা কইতে দেখি।

মাঝে মধ্যে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয় যেন প্রকৃত অর্থেই তার পাশে একজন বসে আছে। জনশুন্য আশপাশ। যেন আরাফাতের ময়দানে দুইজন নর নরাী বসে আছে। আদম হাওয়াকে দেখে বা হাওয়া আদমকে দেখে যে সিন ক্রিয়েট হয়েছিল। হাজার প্রশ্নের ডালি নিয়ে দুজন দুজনার পাশে বসেছিল।

আজ তেমনি একটি দৃশ্য ভেবে নিতে পারি। নিতে পারি না, চলুন আমরা বিশ্বাস করি। ছেলেটির মুখে হাসি ফুটে। তাকে চা খেতে দেখি। যদিও সে দুকাপ চায়ের অর্ডার দিয়েছিল।

একটা কাপে চাঁদ ভাসে। আর এক কাপ ছেলেটির হাতে। সে হাটে নরম করে। কন্যার শরীরের ঘ্রাণ পায়। কথা কয় তারা।

‘জানেন আজ না আপনার জন্য পান আনবো ভাবছিলাম, ও মা আপনি হাছেন কেন, আশ্চর্য আমি কি হাসির কথা বলেছি..পান খাওয়া ভালো জিনিস। আমি একজন মেয়েকে চিনি যে প্রতিজ্ঞা করেছে তার সাবেক প্রেমিক যদি কোনদিন ফিরে আসে তাহলে সে পান খাওয়া ছেড়ে দিবে..বিশ্বাস হচ্ছে না..সত্যি কথারে ভাই..আপনি এখনও হাসছেন... দেখুন এটা কিন্তু ঠিক করছেন না.. আমরা ছেলেটির একতরফা আলাপ শুনে যাই। মুগ্ধ হয়ে সে কথা বলছে। মেয়েটির খোঁপায় চাঁদ বসায়। পৃথিবীর সেরা সুখি মানুষটি হয়ে ওঠে সে।

‘পান খাইবেন এক খিলি’ কি বিরবির করতাছেন খিচ্চু ভাই। এইবার ছেলেটি মানে আমাদের খিচ্চু নিজের মাঝে ফিরে আসে। হেসে কয় ‘আরে নারে রফিক, একটা হিসাব করছিলাম। ধর দুই কাপ চা দুজনে কেন খাবে, একজনেও তো খেতে পারে। এক যোগ এক সমান সমান দুই হয় কেন?, দুইটা কাপ যোগ করলে এক হবে, এ কারনে এক এর ঘরের নামতা আমার প্রিয় ছিল, এই ধর এক একে এক, দুই একে দুই, তিন একে তিন..কি মজা না? একবারে সহজ হিসাব।

ভাই কি আজ একটু বেশি খাইছেন নাকি? রফিকের কথাটি শুনে খিচ্চুর মুখের রং পরিবর্তন হয়। পান না খাওয়ার মতামত দিয়ে সে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। এই বেটা রফিক এখন তার মাথায় ভর করে। কি দরকার বেটা তোর আইসা মানুষরে ডিস্টার্ব করা, এইরকম কিছু মানুষ থাকেই যারা স্বপ্নের ঘরে হানা দেয়, এইজন্য জুনিয়ার পোলাপাইনরে মাথায় তুলতে হয় না, এইগুলানরে ধইরা সোজা জাদুঘরে পাঠানো দরকার। মেনার শিখে নাই।

শেষ বাসের পাদানিতে পা রেখে খিচ্চু ঘাড় ঘুরিয়ে শুন্য পথটা দেখে নেয় শেষ বারের মত। সে এখনো বিশ্বাস করতে চায় সে আসবে। কি রোমান্টিক দৃশ্য! মেয়েটির সাথে ছেলেটি ফিরতে চায়। পাশের খালি সিটে তাকে বসানোর জন্য সে খেলাটা পূর্ণরায় খেলতে চোখের ঝাপ ফেলায়। কিন্তু লাভ হয় না।

সে দেখে রফিককের চেহারাটা বার বার আসছে। ডির্স্টাবিং কম্পিউটারের ভাইরাসের মত। ডিলেক্ট কইরা লাভ হচ্ছে না। রিস্টাট দিতে হক্ষে। চোখ রাখে চাঁদের শরীরে।

৮ নাম্বার বাসটা এগিয়ে যায় বৃদ্ধ ঘোড়ার মত। খিচ্চুর মুখ দিয়ে বের হয়ে আসে গান..‘আইলা না আইলানরে বন্ধু আইলনা আইলানা, সুখ বসন্ত কালেরে বন্ধু দেখা তো দিলাই না’ হাসির শব্দ শুনে পাসের সিটে চোখ রাখতে নিজের কপি আরেকটা খিচ্চুকে দেখে সে। কপি খিচ্চু বলে ..‘বন্ধু আসে না, বন্ধুর বাড়ি যেতে হয়। আর সে বাড়ি গেলে আর ফেরা যায় না। শাহ আবদুল করিম বন্ধুর বাড়ি গেছেন।

এখন আর সে এ গান গায় না। কারা গায়? যারা এখনও বন্ধুর বাড়ি যেতে পারেনি। বন্ধুর বাড়ি যাও তার নাগাল পাইবা। শার্ট খুইলা বাসের ছাদে দাড়াও, তোমার উদাম শরীর ধুইয়া নিয়া যাইবো বাতাস, বুকের পশম ছিড়া ছুইড়া মারো যাদুকরের মত, যেন পায়রা হইয়া উইরা যায়। বন্ধুরে যানায় তোমার আগমনী বার্তা.. মামা ভাড়াটা দেন..শুনে নিজের চোখ কচলায় খিচ্চু।

ভাড়া পরিশোধ করে। মাথার চুলগুলো আলতো করে টানতে থাকে। চুলের গোড়া থেকে উকুন মারার মত শব্দ হয়। উকুনের কথা মনে পরতেই খিচ্চুর মনে পরে যায় সকালে বউ বলে দিয়েছিল উকুন নাশক শ্যাম্পু কিনে নিতে। আজও কেনা হবে না।

সব দোকানের সাটার টানা হয়ে গেছে। রুপনগর ৩০/১২/২০১২ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৯ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।