আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়: ২

(চলমান) সুনীল বলতে থাকলেন, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এয়াকুবের সাথে ফরিদপুরের মাইজাপাড়া ইশকুলে ক্লাশ টু/ থ্রিতে পড়েছেন। এয়াকুব যেনো পণ করেছিলো- কখনও সত্য কথা বলবেনা। আর সেই পণ পালন করেছে অক্ষরে অক্ষরে। সে ছিলো বাপে খেদানো, মায়ে তাড়ানো, বাঁদরামি করে বেড়ানো অপাক্তেয় কিশোর। প্রতিটি ক্লাশে মার খাওয়া ছিলো তার অবধারিত।

সে ছিলো সহপাঠীদের চেয়ে বয়সে ও উচ্চতায় বড়ো। সে বলে বেড়াতো-সে ছিলো সিলেটের এক রাজপুত্র্র। ডাকাতদল তাদের বাড়ি লুট করে তাকেও নিয়ে আসে। পাহাড়ের গুহায় তাকে পাহারা দিতো বুনো শেয়াল। তার এখনকার পোস্ট মাস্টার বাবার কাছে তাকে রেখে তস্করেরা অন্য অভিযানে যায়।

তারা আর ফিরে আসেনি। রাজপুত্রের গৌরবর্ণ সাধারণ পরিবেশে ছাইবর্ণ হয়ে গেছে। ক্লাশে আসতে তার প্রায়ই দেরি হতো। রাগি পণ্ডিতমশায়ের কাছে তার কৈফিয়ত ছিলো একরাশ মিথ্যের ফুলঝুড়ি। একদিন বললো- পথে তাকে ভালুকে তাড়া করেছে।

সুনীল ছাড়া সবার কাছে তার কথা আষাঢ়ে গল্প বলে মনে হতো। তার পিঠে পড়তো শিক্ষকের মার। ক্লাশশেষে সুনীলের পীড়াপীড়িতে এয়াকুব সহপাঠীদেরকে নিয়ে ভালুক দেখাতে বের হতো। বয়স্ক পথিক উৎসাহী কিশোরদলকে জানালো, ভালুক তো দূরের কথা, সেপথে কোনোদিন বনবিড়াল কি কাঠবিড়ালি পর্যন্ত দেখা যায়নি। সে আরেকদিন বললো-তার পোষা ময়না অবিকল মানুষের মতো কথা বলে।

তার কথা কেউ বিশ্বাস করেনা। সুনীলের কাছে তার প্রতিটি গল্পকে আকর্ষণীয় বিশ্বাসযোগ্য মনে হতো। বিশ্বাসী কিশোরদল গিয়ে দেখে-এয়াকুবের জী্র্ণ খাঁচায় একটি রুগ্ন শালিক লাফাচ্ছে। চারুবাক এয়াকুবের হাসি-ময়না পালিয়েছে। এক বৃষ্টির দিনে বললো-ঝুম ঝুম বৃষ্টির ফাঁকে তাদের নির্জন বাঙলো ঘরের দিকে পরী নেমেছে।

পরীর খিলখিল হাসি সে নিজকানে শুনেছে। বালক সুনীলের পরীর আশায় বৃষ্টিতে ভিজে জ্বরই বা্ঁধল শুধু। কথাশিল্পী এয়াকুবের নুতন ঘোষণা-তার চাচা সুন্দরবন থেকে জীবিত হরিণ ধরে এনেছে। হরিণটি তার দিকে মায়া মায়া চোখে তাকায়। অবিশ্বাসী সহপাঠীরা তার এ ধাপ্পাবাজি বুঝতে পারে।

শুধু মুগ্ধ কিশোর সুনীল এক ছুটির দিনে এয়াকুবের বাড়িতে গিয়ে দেখতে পেলো-তার কল্পনাবিলাসি সহপাঠীটি একটি ছাগলছানাকে আনমনে গাছের পাতা খাওয়াচ্ছে। সুনীলের এ গল্প আমাদের মোহাবিস্ট করে রাখলো দীর্ঘক্ষণ। সুনীলের মতে, সেই মিথ্যক বন্ধুটির প্রতিটি গল্পই তার শিশুচিত্ত দখল করে নিয়েছিলো, তার কল্পনাশক্তিকে উসকে দিয়েছিলো-যা পরবর্তিতে তাকে লেখালেখিতে বেশ সহায়তা করেছিলো। (সমাপ্ত) জ্যৈষ্ঠ ১৪১৯, আইন অনুষদ, কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।