আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্মৃতিতে চির অম্লান - হুমায়ূন আহমেদ একটি নাম।

নূহাশ পল্লী একটু আগে বৃষ্টি হয়ে গেছে এক পশলা, অল্পক্ষণের ঝুম বৃষ্টি। মেঘ কেটে গেছে আকাশ থেকে, পঞ্চমীর চাঁদ হেসে উঠেছে আকাশে, গাছের ফাঁক গলে পঞ্চমীর জ্যোৎস্না চুইয়ে পড়ছে কবরের গাঁয়ে - হুমায়ূন আহমেদ স্যারের কবর। দুপুর বেলা ওনাকে চির নিদ্রার অন্ধকার ঘরে শুইয়ে গিয়েছিলেম আমরা সবাই মিলে। এমন একটি রাতের কথা ভেবেই স্যার হয়তো লিখেছিলেন - আসমান ভাইঙ্গা জ্যোৎস্না পড়ে আমার ঘরে জ্যোৎস্না কই আমার ঘরে এক হাটু জল পানিতে থৈ থৈ। কবরের চারিধার ধরে সার বেধে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছেন কতগুলো চরিত্র।

হলুদ পাঞ্জাবি পড়ে এসেছে হিমু তার দেখা দেখি আজ হলুদ পাঞ্জাবী গায়ে চড়িয়েছে বাদল। মাজেদা খালা নিথর হয়ে বসে আছেন কবরের এক মাথায়, খালুজান আজ আর তার বোতল খুলতে পারেন নি, চুপ করে দাঁড়িয়ে আছেন মাজেদা খালার পাশে। খালা একটু পর পর ডুকরে উঠছেন আর খালু পরম মমতায় তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। রূপা, টুনি আর তিথী বসে আছে কবরের আরেক ধার ঘেসে, টুনির চোখ ভিজে উঠছে একটু পর পর; তিথীর হাত থেকে নীল তোয়ালে নিয়ে চোখ মুছছে বার বার করে। জরী আর পরী আলুথালু বেশে বসে আছে তাদের পাশে।

শুভ্র আর মিসির আলী শুন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আকাশের দিকে চেয়ে কবরের আরেক কোনায় বসে। একে একে নতুন নতুন আগন্তুকের আগমন ঘটছে কবরকে ঘিরে। স্যার এর লেখার প্রতিটি চরিত্র যেন আজ স্যারকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছে নূহাশ পল্লীতে। মহামতি ফিহা এসেছেন অন্যভুবন থেকে, তার সাথে এসেছেন বদি, মজনু, বাকের ভাই। এভুবন থেকে কবরকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে কতগুলো চরিত্র - হুমায়ূন আহমেদ স্যার এর নাটক আর সিনামায় তৈরি করা কিছু বিখ্যাত চরিত্রের রূপদানকারী ব্যক্তিত্বরা।

বহুব্রিহীর মামা আলী যাকের, আয়োময়ের জমিদার মীর্জা সাহেব - আসাদুজ্জামান নূর, ছোট মীর্জার বৌ - সারা জাকের, কোথাও কেও নেই এর মুনা - সূবর্ণা মুস্তফা, এইসব দিনরাত্রির ভাবী ডলি জহুর, মিসির আলীরূপী আবুল হায়াত, দাদী দিলারা জামান তার বহু নাটকের নায়ক জাহিদ হাসান ও মাহফুজ আহমেদ। এছাড়া আছে অব্দুল কাদের, বিপাশা হায়াত, এজাজুল ইসলাম, সালেহ আহমেদ এবং আরো অনেকে। ওপারের ভুবন থেকে আজ কবর ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন হুমায়ুন ফরিদী, আবুল খায়ের, চ্যালেঞ্জার আর মোজাম্মেল হক। কারো মুখে কোন কথা নেই, সবার চোখেই জল। শুধু একটু পর পর শব্দ করে ডুকরে উঠছে বাদল।

আজ, স্যার এর যাত্রা অনন্ত নক্ষত্রবীথির দিকে। তার তৈরি করা চরিত্রগুলো বাকহারা আজ স্যারকে ছাড়া। কেও বুঝতে পারছে না কি করবে। এসেছেন গুলতেকিন, নোভা, শীলা সব ভেদাভেদ ভুলে। এসেছে শাওন তার দুই ছেলে নিশাত আর নিনিত এর হাত ধরে।

রাতের দ্বিপ্রহরে কবরের পাশে এসে দাড়ালো হলুদ পাঞ্জাবী পড়ে নূহাশ। সবাই তাকিয়ে আছে নূহাশের দিকে - যেন জানতে চায় "তারপর কি"? তারপর কেও কি আমরা বলতে পারি? নির্বাক নূহাশ অপলক চেয়ে থাকে বাবার কবরের দিকে...... “লোকশিল্পী গিয়াস উদ্দিনের লেখা 'মরিলে কান্দিস না আমার দায়' গানটি খুবই প্রিয় ছিল হুমায়ূন আহমেদ স্যার এর। তিনি তার জীবিত অবস্থায় কখনো চাননি কেও তার মৃত্যুতে চোখের পানি ফেলুক। অথচ আজ লক্ষ মানুষের চোখে কান্নার ঢল নামিয়ে দিয়ে তিনি চলে গেলেন অন্যভুবনে। তার অন্যভুবনে যাত্রা শুভ হোক।

"মরিলে কান্দিস না আমার দায়'" - http://youtu.be/hQkebCvpRXE ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।