আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন হুমায়ুন আহমেদ

খবরটা শুনে খুবই খারাপ লাগলো। অনেক্ষন সময় লাগলো নিজেকে বুঝাতে। কেন জানি মনে হচ্ছিল খুব আপন একজনকে হারালাম। আমার প্রথম বই পড়া শুরু হয় হুমায়ুন আহমেদ কে দিয়েই। আমার মামা আমার আপাকে একটি বই উপহার দিয়েছিলেন হিমু মামা।

বইটি কাহিনি আমার এখন আর তেমন মনে নেই তবে মনে আছে বইটি যেদিন পরছিলাম তার পরদিনি আমার কোন একটি পরীক্ষা ছিল। কিন্তু আমি বইটির প্রথম দুই এক পৄষ্টা পড়ে আমি কিছুতেই নিজেকে বইটি থেকে ফেরাতে পারছিলাম না। সেই থেকে শুরু। এখন আমি হিমু তেমন একটা পড়িনা। সামনে পেলে পড়ি নতুবা কিনে পড়ব সেই আগ্রহটা কেন জানি পাইনা।

কিন্তু যখন পড়ি তখন মনে হয় ইশশশ যদি হিমুর মত হতে পারতাম। তবে আমি মিসির আলির অনেক বড় একজন ভক্ত। মাঝে মাঝে নিজেও মিসির আলির মত চিন্তা করতে পছন্দ করি। আবার যখন শুভ্র পড়ি তখন মনে হয় শুভ্র এর মত হতে পারলে তো ভালই হত। তার রাবনের দেশে পড়ে মনে হয় এখনি যায়না ঘুরে আসি শ্রীলঙ্কা থেকে।

আমার মনে হয় উনি এমন একজন লেখক যিনি মানুষকে আলাদা এক জগতে নিয়ে যায়। জানি জ্যোৎস্না খাওয়া যায়না, তারপরও আকাশে জ্যোৎস্না দেখে হা করে থাকি!! এর কারন উনার লেখার প্রান। উনার লেখায় এই জিনিসটা আছে যেটা মানুষকে আটকে রাখে। শুরু করলে শেষ না করে উটতেই মন চাইনা। আমার মনে পড়ে প্রথম যখন বই মেলায় গিয়েছিলাম, গিয়ে দেখি বিশাল বড় এক লাইন।

সামনে গিয়ে দেখি হুমায়ুন স্যার বসে আছেন। অটোগ্রাফ দিচ্ছেন। আমিও লাইনে দাড়িয়ে পরলাম। প্রথমে আধাঘণ্টা লাইনে দাড়িয়ে উনার বই কিনলাম। এরপর আবার লাইন।

এটা আগেরটার চাইতে বড়। আবার এক ঘণ্টা লাইন। তারপর উনার সাক্ষাত। ভাল লেগেছিল উনার সাথে কথা বলতে পেরে। এখন ভাবতে কষ্ট লাগছে বই মেলায় গিয়ে আর বলতে পারবোনা, "হুমায়ুন আহমেদ এর নতুন কি বই এসেছে?" আর লাইন ধরতে হবেনা ভাবতেই কষ্ট লাগছে!!!!!! জানি হিমু আর খালি পায়ে হাটবেনা রাস্তায় রাস্তায়।

তার হলুদ পাঞ্জাবী ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। তার হারিয়ে যাওয়ার সময় হয়েছে। দূরে কোথাও, আর কখনো আসবেনা আমাদের মাঝে। মিসির আলি অনেক দিন ধরে চিন্তা করছিল, অনেকতো হয়েছে। বয়স হয়েছে, এখন একটু অবসর নেওয়া যাক।

অবশেষে মিসির আলির অবসর নেওয়ার সময় এসেছে। এখন থেকে রহস্য রহস্যই থেকে যাবে। শুভ্র এখন পুরোপুরি অন্ধ। চশমাও আর কাজ করেনা। সে আর জ্যোৎস্না দেখবেনা কোনদিন।

শেষ করব হুমায়ুন আহমেদ এর অসম্ভব সুন্দর একটি কবিতা দিয়ে- প্রতি পূর্নিমার মধ্যরাতে একবার আকাশের দিকে তাকাই গৃহত্যাগী হবার মত জোছনা কি উঠেছে ? বালিকা ভুলানো জোছনা নয়। যে জোছনায় বালিকারা ছাদের রেলিং ধরে ছুটাছুটি করতে করতে বলবে- ও মাগো, কি সুন্দর চাঁদ ! নবদম্পতির জোছনাও নয়। যে জোছনা দেখে স্বামী গাঢ় স্বরে স্ত্রীকে বলবেন- দেখ দেখ নীতু চাঁদটা তোমার মুখের মতই সুন্দর ! কাজলা দিদির স্যাঁতস্যাতে জোছনা নয়। যে জোছনা বাসি স্মৃতিপূর্ন ডাস্টবিন উল্টে দেয় আকাশে। কবির জোছনা নয়।

যে জোছনা দেখে কবি বলবেন- কি আশ্চর্য রূপার থালার মত চাঁদ ! আমি সিদ্ধার্থের মত গৃহত্যাগী জোছনার জন্য বসে আছি। যে জোছনা দেখামাত্র গৃহের সমস্ত দরজা খুলে যাবে- ঘরের ভেতরে ঢুকে পরবে বিস্তৃত প্রান্তর। প্রান্তরে হাঁটব, হাঁটব আর হাঁটব- পূর্নিমার চাঁদ স্থির হয়ে থাকবে মধ্য আকাশে। চারদিক থেকে বিবিধ কন্ঠ ডাকবে- আয় আয় আয়। হয়তো তিনি তার লেখার মাধ্যমে প্রমাণ করতে পারেননি তিনি কি ছিলেন।

হয়ত!!!! কিন্তু আমার মত হাজার বাঙালির চোখে অশ্রু এনে তিনি প্রমাণ করে গেছেন তিনি আসলে কি ছিলেন। জানি আপনার মৃত্যুতে বাংলাদেশ হয়তো থমকে যায়নি, কিন্তু আমি, আমার মত আরও অনেকেই কিছু সময়ের জন্য হলেও থমকে গিয়েছি। একটু হলেও ভেবেছি আমার আসলে কি হারালাম। ও আমার উড়াল পঙ্খীরে, যা যা তুই উড়াল দিয়া যা, আমি থাকবো মাটির পরে, আমার চোখে বৃষ্টি পড়ে তোর হইবে মেঘের উপরে বাসা, ও আমার উড়াল পঙ্খীরে, যা যা তুই উড়াল দিয়া যা, যা যা তুই উড়াল দিয়া যা......, ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.