আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অমূল্য মুহূর্ত

বাড়ি গিয়েছিলাম সপ্তাহ খানেকের ছুটিতে। নানান ঝামেলার মধ্যে পড়ে মেজাজ এতই বিক্ষিপ্ত ছিল যে একটা অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা থাকলেও যাইনি। বাসায় বসে বসে মেজাজ আরও খারাপ করছিলাম। এমন এক রাতের বেলা হঠাৎ করে টারজান বলে বসল, নাহ, বাসায় বসে বোর লাগছে, মেজাজও খারাপ হচ্ছে, চল কোথাও বেড়িয়ে আসি। আমি বলি, এত রাতে কই যাব বেড়াতে।

বলল, চল আমার শ্বশুরবাড়িতেই বেড়িয়ে আসি। তৈরি হয়ে নিলাম ঝটপট। বাসা থেকে বের হয়ে টারজান আম কিনবে বলল। কিন্তু পছন্দমত আম আর পাওয়া যায় না। অবশেষে অনেক ঘুরে পছন্দের কাছাকাছি পাওয়া গেল।

তাই নিয়ে রওনা হলাম। ঢাকা শহরের রাস্তার জ্যাম ঠেলেঠুলে মোটামুটি ভদ্র সময় পার করেই পৌঁছাতে হল। এত রাতে আমাদের দেখে সবাই টাশকিই খেয়ে গেল। না জানিয়ে গিয়েছি বলে আম্মা একটু গজগজও করল, জামাইয়ের জন্য রান্না-বান্না করার ব্যাপার আছে কি না। পিচ্চি তিনটার একটা ঘুমিয়ে গিয়েছিল ততক্ষণে।

সবচেয়ে পিচ্চি ভাগ্নীটার কথা বলছি। সে আবার 'আর্লি টু বেড, আর্লি টু রাইজ' মেইনটেইন করে। সেই সাথে বাপ-মাকেও মেইনটেইন করায়। বাকী দুই ভাগ্নের খোঁজ লাগালাম। তারা উপরতলায় গেম খেলতে ব্যস্ত।

মেজপাকে ফোন দিয়ে জানালাম। মেজপা পিচ্চিদের কাছে খবর পৌঁছে দিল। একটু পরেই দুই ভাগ্নের হুটোপুটির শব্দ পাওয়া গেল সিঁড়িকোঠায়, সেই সাথে পিচ্চি ভাগ্নের চিৎকার, ঐ আন্টিমনি, দরজা খুলোওওওওও। দরজা খুলতেই দুজন ঝাঁপিয়ে পড়ল। জানের জান ভাগ্নেতো আমার সাথে সুপার গ্লু হয়ে আটকেই থাকল।

পিচ্চিটা দৌড়াদৌড়ি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। পরদিন সকালে উঠে আর্লি রাইজার ভাগ্নীর সাথে মুলাকাত করলাম। ওরা বাইরে যাবে ঈদের শপিং করতে। টারজানকে বললাম, চল আমরাও যাই। সে কিছুতেই রাজী না।

আমি বিশ্রাম নিব, বলে মাসুদ রানার অন্ধ আক্রোশে ডুবে গেল। কি আর করা, ওদেরকে বললাম তোমরা যাও। আমি ভাগ্নেদের নিয়ে উপরতলায় গেম খেলতে চলে গেলাম। হ্যারী পটার "ওতুন" (ছোট ভাগ্নের ভাষায়) গেম নিয়ে বসলাম। গেম খেলে শেষ করে ভাবছি আর কি করা যায়, তখন নিচতলা থেকে বড়পা ফোন দিল।

বলল, সবাইকে নিয়ে এখুনি নিচে নেমে আসো। আমি ভাগ্নেদের নিয়ে নিচতলায় চলে আসলাম। বড়পা দরজা খুলে দিয়ে বলল, যাও দেখ গিয়ে ভিতরের ঘরে কে এসেছে। ভিতরের ঘরের দিকে যেতেই থমকে গেলাম। এ কে রে! এ তো আমাদের ছোট্ট ভাইটা।

হুট করে দেশে এসে আমাদের সারপ্রাইজ দিয়েছে। পিচ্চিরা কী চিল্লাবে, আমি নিজেই চিৎকার করতে করতে ছুটে গেলাম। ভাইটাকে বুকে জড়িয়ে ধরেও চিৎকার করতেই থাকলাম। এরপর মেজপাকে ফোন দিয়ে বললাম, এক্ষুনি আসো নিচে। মেজপাও এসে টাশকি খেয়ে গেল।

জানের জান ভাগ্নেও তার একমাত্র জানের জান মামাকে পেয়ে খুশি। কতদিন পর দেখল মামাকে। পিচ্চি ভাগ্নেটা আবার ভুলে গিয়েছে মামার কথা। যদিও মামা দেশের বাইরে চলে যাওয়ার পর সে অনেক দিন শপিং মলের জিনস-টিশার্ট পরা ডামিগুলো দেখে মামা-মামা করে ডেকেছে। এখন সে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে উঁকি মেরে দেখছিল আমাদের কান্ড।

তাকে বললাম, যাও না কেন কাছে, তোমার মামা তো। সে আরও সরে গেল। এরপর বড় ভাগ্নে পিচ্চির দুর্বল পয়েন্টে খোঁচা দিয়ে বলল, মামার কাছে যাও, তাহলে তোমাকে গেমের সিডি দিবে। সাথে সাথে ছুটে এসে মামার পেটে হাত রেখে বলল, মামা তুমি আমাকে গেমের সিডি দিবা? মামা হেসে বলল, আচ্ছা দিব। এরপর সারাদিনই একটু পর পর সে মামাকে ধরে জিজ্ঞেস করে, মামা, গেমের সিডি দিবা? মামা, গেমের সিডি দিবা তো? ছোট বোন তো সপরিবারে গেছে শপিং-এ।

ওদেরকে ফোন করে জানিয়ে দেয়া হল। কিছুক্ষণ পর ওরাও চলে এল। ছোট বোন ঘরে ঢুকেই ভাইটাকে বুকে জড়িয়ে ধরল। ওদিকে ভাগ্নী তখন বাবার কোলে। সে হা হয়ে এই দৃশ্য দেখছে।

একজন অপরিচিত লোককে এইভাবে তার মা জড়িয়ে ধরছে, কাহিনীটা কী? তার সেই হা আর বন্ধ হয় না। টারজান পরে বলে, আহা এই দৃশ্যটাই তো ভিডিও করে রাখা দরকার ছিল, সবচেয়ে বেশি সারপ্রাইজড তো হয়েছে এই পিচ্চিই। পিচ্চির হা অবশ্য খুব তাড়াতাড়িই হি হি-তে বদলে গেল। তার নতুন ঈদের জামা পরে সে মামাকে নেচে দেখাল। সে আবার ওয়াকা-ওয়াকা ড্যান্সে বিশেষ দক্ষ।

মামা যদি এক সেকেন্ডের জন্যও অন্যদিকে তাকায় সে 'অ্যাই অ্যাই' বলে চিৎকার করে ডাকতে থাকে। আবার তার দিকে তাকালেই হি হি করে হাসতে হাসতে নাচ দেখাতে থাকে। মামার ভক্ত হতে ভাগ্নীর সময় লাগে না। তবে 'মামা' ডাক দেয়াতে তার কিঞ্চিৎ আপত্তি দেখা গেল। কারণ হল সে তার মাকে ডাকে 'মাম্মা'।

এখন একই ডাক আরেকজনকে কেমনে ডাকা যায়। আপাতত 'অ্যাই' ডাকটাই নিরাপদ মনে হচ্ছে। সকালবেলা টারজানের উপর রাগ হচ্ছিল বের হতে চায়নি বলে। এখন মনে হল ভাগ্যিস বের হইনি। নইলে এই অমূল্য মুহূর্তগুলো মিস করতাম সবই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.