আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পদ্মা সেতু

পদ্মা সেতুর মত কোন বৃহদায়তন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য এভাবে জনসাধারণের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহের প্রয়াস বাংলাদেশে নজিরবিহীন। এটা নেহাতই সরকারের একটি রাজনৈতিক চমক। বাস্তবতার সাথে এর কোন মিল নেই। বিশ্বব্যাংকের সহায়তা লাভে ব্যর্থ হওয়ার পর সরকার বাণিজ্যিক শর্তে ঋণ নিতে চেয়েছিল,তাতেও সফল না হওয়ায় সরকার তৃতীয় প্রচেষ্টা হিসেবে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের কথা বলছে। নির্বাচনী চিন্তা মাথায় রেখেই সরকার এ বিষয়ে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে এগুচ্ছে।

যমুনা সেতু তৈরিতে আমাদের প্রকৌশলীরা বিদেশি প্রকৌশলীদের কাজ দেখেছেন এবং অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন। বিশ্বব্যাংক চুক্তি বাতিল করায় পদ্মা সেতু নির্মাণে নিজেদের প্রকৌশলীদের মুখ্য ভূমিকা পালন করতে দেওয়ার জন্য অসাধারণ সুযোগ আমাদের হাতে এসেছে। “চীনা কোম্পানির প্রস্তাবের সবচেয়ে ভাল দিক হচ্ছে, ঋণের জন্য তাদের কোনো সুদ দিতে হবে না। প্রকল্পের মান নিশ্চিত করার সুযোগ থাকবে এবং সরকারের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভেও হাত দিতে হবে না। ”পদ্মা সেতু তৈরিতে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে, প্রকৃত বাস্তবায়নের সময় তা দেড় গুণ ছাড়িয়েও যেতে পারে।

এই ২২ হাজার কোটি টাকা দিয়ে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ থেকে বেশি জনসংখ্যাসমৃদ্ধ দক্ষিণাঞ্চলের জন্য বেশ কয়েকটি শিল্প ও হাসপাতাল তৈরি করা সম্ভব। তখন ওই অঞ্চলের রোগীদের ঢাকায় আসার প্রয়োজন হবে না। ওই টাকা দিয়ে হাজার দশেক ক্ষুদ্রশিল্প প্রতিষ্ঠা করা যায়, এতে করে এলাকার জমির কম দাম ও অন্যান্য সুবিধা কাজে লাগিয়ে স্বল্প বিনিয়োগে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান করা যায়। এর ফলে সম্ভবত দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিটি পরিবারই এই কর্মসংস্থানের সুফল ভোগ করতে পারবে। জাতীয় সংসদে বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন- ‘প্রবাসীরা কাজ শুরু করে দেওয়ার জন্য বলছেন।

তাঁরা আরও বেশি করে টাকা পাঠাবেন বলে জানিয়েছেন। এমনকি স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা টিফিনের টাকা দিতেও রাজি। গরিব কৃষকেরাও টাকা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। আমি দেশের মানুষের মধ্যে চেতনা দেখেছি। তাতে আমি আশাবাদী।

যুদ্ধ করে যে জাতি দেশ স্বাধীন করেছে, তারা মাথা নত করতে জানে না। ’ এ সময় সাংসদেরা তাঁদের বেতনের অংশ দেওয়ার কথা সমস্বরে জানান। প্রধা্নমন্ত্রী আরও বলেন- ‘বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির সম্ভাবনার কথা বলে ঋণচুক্তি বাতিল করল। তারা নিজেরাই চুক্তির মেয়াদ বাড়াল, আবার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তা বাতিল করে দেয়। যেখানে একটি পয়সাও খরচ হয়নি, সেখানে দুর্নীতির অভিযোগ আসে কী করে? ‘যখন ক্ষমতায় আসি তখন মনপ্রাণ দিয়ে চেষ্টা করি কীভাবে মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন করা যায়, নিজের ভাগ্য গড়তে আসিনি।

মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি। এটাই আমার চিন্তা। ’ গণতন্ত্র যতোদিন বিশ্বে চলমান থাকবে ততোদিন দুর্নীতিকে কেউ ত্যাগ করতে পারবে না। বাংলাদেশে যে দুর্নীতি হয় তা কে না জানে। পদ্মা সেতুর কি কোনো গতি হবে না?প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির অভিযোগ গ্রহণের জন্য নিজের মুঠোফোন নম্বর দেশবাসীর কাছে উন্মুক্ত করেছেন ।

আওয়ামীলীগ যদি নিজের ভালো, দেশের ভালো বুঝতে না চায় বা না পারে, তাহলে আগামী নির্বাচনে তার খেসারত তাদের দিতে হবে। বাংলাদেশে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের একটা সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে- আপাতত এটাই দরকার। দুর্নীতি কোথায় হয় না? দুর্নীতি হলেই কি সে দেশ একেবারে পানিতে ভেসে যায়? এই তো সেদিন থাইল্যান্ডের সাবেক ও সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা শত শত কোটি ডলার পাচার ও ব্যাপক দুর্নীতির দায়ে আদালতে দণ্ডিত হয়ে দেশান্তরিত হয়েছেন। দুর্নীতি ছিল, আছে, থাকবে। এটা মেনে নেওয়ার প্রশ্ন নয়।

কিন্তু এটাই বাস্তব। বিশ্বব্যাংক নিজেই কি এ ধরনের অভিযোগের ঊর্ধ্বে? তাদের বিরুদ্ধেও তো অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠেছে। আমরা গরিব দেশ, গরিবি হাল বজায় রেখেই চলতে হবে। প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী থেকে শুরু করে সবাইকেই বিশ্বব্যাংকের ব্যাপারে যুক্তির ভাষায় কথা বলতে হবে। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের অবহেলিত দক্ষিণাঞ্চলের জন্য, বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতি উন্নয়নের জন্য সর্বোপরি যোগাযোগ উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

আমরা কী নিজেরা এ সেতু তৈরি করতে পারি না? পাকিস্তান যদি নিজ অর্থায়নে পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারে তবে আমরা কেন পদ্মা সেতু করতে পারবো না। জুলফিকার আলী ভুট্টো যে বলেছিল, ‘ঘাস খেয়ে হলেও পাকিস্তান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করবে। ’ স্বৈরশাসক হিসেবে পরিচিত এরশাদ বলেছিল, ‘কোথাও অর্থ না পেলে নিজ সম্পদ ব্যবহার করে যমুনা সেতু তৈরি করবো। ’ দু’টি প্রকল্পই সফল হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২টি পদ্মা সেতু তৈরির কথা জনগণের কাছে হাস্যকর মনে হয়েছে।

‘বিরোধীদলীয় নেত্রীকে আমি জিজ্ঞেস করতে চাই আপনি কি সত্যিই দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, দুর্নীতির বিচার করতে চান? ’ আপনার দুই পুত্রের যে দুর্নীতির বিচার চলছে, আপনার দুর্নীতিবাজ পুত্র তারেক রহমান ও কোকো রহমান এবং আপনার দলের যারা বাংলাদেশের হাজার হাজার টাকা লুট করে বিদেশে নিয়ে গেছে তাদের বিচারকাজে অন্তত্য এ সরকারকে সহায়তা করেন। যাই হোক, ’আমি জানি, আমি বিশ্বাস করি- আমাদের দেশে পদ্মা সেতু তৈরী হবে । হবেই । বাঙ্গালী'রা আশাবাদী । বাঙ্গালীদের সব স্বপ্ন সত্যি হবেই ।

জয় বাংলা । ( তথ্যসুত্রঃ প্রথম আলো ) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.