আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এলিজি: চুড়ী পড়া সিলেটি যুবকেরা ও স্মৃতিময় এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের জন্য... (বোনেরা জেগে উঠো..)

বিচ্যুত যৌবনে জোছনা আমায় করেছে উম্মাদ ১. আমার ছোট বোন গিয়েছিলো চুড়ি কিনতে। মেয়েদের চুড়ি কেনার জন্য সবচেয়ে ভালো জায়গা হচ্ছে জিন্দাবাজার। জিন্দাবাজার চিনেনতো। ঐ যে শাহজালালের পদধূলিতে ধন্য পুন্যভূমি সিলেটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন কেনাকাটার স্থান। জিন্দা পীর নামে এক বুজুর্গের মাজার আছে এই বাজারের হৃৎপিন্ডে।

তাই এই জায়গাটার নাম জিন্দা বাজার। তো বলছিলাম চুড়ি কেনার কথা। সেই জিন্দা বাজারে আমার ছোট বোন তন্ন তন্ন করে মেয়েদের চুড়ি বিক্রি করে এমন সব দোকান খুঁজে হ্য়রান হয়ে গেলো তবুও সে চুড়ি পেলোনা। আমার বোনের মনটা খুব খারাপ, চুড়ির দোকানে চুড়ি না পেলে কেমন লাগে বলেন তো। বিষয়টা এমন যে আপনি যদি গাউসিয়ামার্কেটে গিয়ে দেখেন তারা আর শাড়ী বিক্রি করছেনা।

বরং দোকানের তাক গুলি খালী রেখে বসে আছে তাহলে আপনার যেমন লাগবে তেমনি অনুভুতি হচ্ছে আমার ছোট বোনের। এমন সংকটময় পরিস্তিহতিতে আমার বোন আমাকে ফোন করেছে। বলছে ভাইয়া সিলেটের কোথায় চুড়ি পাওয়া যাচ্ছে না, আমার বান্ধবীর বিয়ে সামনে তাই এক সপ্তাহের মধ্যে আমার চুড়ি লাগবেই লাগবে। তুমি ঢাকা থেকে আমার জন্য চুড়ি কিনে কুরিয়ার করে পাঠাও। ২. যাইহোক চুড়ির না হয় একটা ব্যবস্থা করা যাবে, কিন্তু সিলেট শহরে ক্যানো চুড়ি পাওয়া যাচ্ছে না তা নি আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম।

যেহেতু আমি একজন বিশিষ্ট চিন্তাবিদ তাই আমি কঠিন সংকল্প করলাম যে আমাকে এই রহস্য উদঘাটন করতেই হবে। আমি আমার পরিচিত বন্ধু মহলে ফোন দিতে থাকলাম। জিঞ্জেস করলাম তোমরা কি জানো সিলেট শহরে চুড়ি পাওয়া যাচ্ছে না। সিলেট শহরের মেয়েদের কি হবে? এভাবে যদি টাউন থেকে চুড়ি নাই হয়ে যায় তাহলে মা-বোনেরা কি করবে? বিভিন্ন মহল থেকে বিভিন্ন জবাব পেলাম। যেমন, পরিচিত আওয়ামী সমর্থক এক বন্ধু জানালো, সিলেটের চুড়ি বাজার একটি দুষ্টু বাজার।

আরেকজন জানালো, চুড়ি খুব আন হাইজেনিক তাই ডা. প্রান গোপালের কথা অনুযায়ী চুড়ি পড়া ঠিক নয়। অন্যজন তার অভিব্যাক্তিতে জানায়, চুড়ি বাজারে কোন ব্যাবসায়ী নেই, সব জুয়াড়ী। এক সুশীল বন্ধু বললো, দ্যাখো, চুড়ি বাজার একটি প্রান্তিক বাজার, এ বাজারে মেযেদের জন্য চুড়ি বিক্রি করে তাদেরকে ঘরে বন্ধি করার একটা পাঁয়তারা এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যাবস্থার। কেউ বললো, এটা যুদ্ধাপরাধী বিচার বানচাল করার জন্য একটা ষড়যন্ত্র। কারন মেয়েরা চুড়ি না পেয়ে ক্ষেপে গিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে পারে।

তবে আমরা সজাগ আছি। বিএনপি পন্থি একজন বললো, সিলেটের চুড়ি বাজার থেকেই সরকার পতন শুরু হয়ে গেছে। জামায়াতি একজন জানালো, চুড়ি মেয়েদের সৌন্দর্যের প্রতিক, আমাদের ধর্ম ইসলামের অনেক মহীয়সী নারী চুড়ি পরতেন। আমাদের নেতা নিজামী-মুজাহিদের মুক্তির আন্দোলন নস্যাৎ কারার জন্যই সরকার এই ঘৃন্য পদক্ষেপ নিয়েছে। চুড়ি বাজার কোন নিষিদ্ধ বাজার নয়।

আমি ত্যাক্ত বিরক্ত হয়ে গেলাম। তবে এমন বিভিন্ন মন্তব্য শুনে আমার কাছে মনে হলো, সিলেটের চুড়ি মার্কেটে কিছু একটা হয়েছে নিঃসন্দেহে। অবশেষে শরনাপন্ন হলাম বন্ধু আগুন মজিদের, আগুন মজিদ আমাকে অত্যন্ত ক্ষোভের সংগে জানালো যে আমি নাকি দেশ ও জাতির কোন খবরই রাখিনা। হয়তো তাই। আসলে ৪০ বছরের আগের মৃত বাকশাল কে আবারও জীবিত হতে দেখে আমি প্রায় হতাশ হয়ে দেশের খবর নেয়া বন্ধ করে দিয়েছি।

তবুও তাকে রিকুয়েস্ট করলাম যে বন্ধু মজিদ, আমি ভুল করেছি। ক্ষমা চাচ্ছি। তবুও কি তুমি বলবে কি হয়েছে?? ক্যানো সিলেটের মার্কেটে চুড়ি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তখন সে অগ্নিমূর্তি ছেড়ে বেড়িয়ে তার স্বভাব সুলভ বেশে আমাকে জানালো। সিলেটের সব চুড়ি ছাত্রশিবির আর ছাত্রদলের ছেলেরা কিনে নিয়েছে।

তারা নাকি হাতে চুড়ি লাগিয়ে ঘরে বসে থাকে। আমি হেসে উড়িয়ে দিলাম, বললাম এটা হয় নাকি সিলেটে ছাত্রদল আর ছাত্রশিবিরের ছেলেরা কখনোই চুড়ি পড়তে পারেনা। আমি সিলেটে বড় হয়েছি তুমি সিলেটে বড় হয়েছো, আমরা দেখেছি এদের কি দাপট আর শক্তি। এটা হয়নাকি। চুড়ি তো পড়বে, সুলতান টুকু, আমীরুল ইসলাম আলীম এরা যারা কেন্দ্রে থাকে তারা, সিলেটের ছেলেরা ক্যানো চুড়ি পড়বে? আগুন মজিদ জানালো, উপপাদ্য, সেই দিন কি আর আছে।

আগুন মজিদের দিন আর সিলেটে নাই। দিন বদলাই গেছে। আর তাই ১০০ বছড়ের ঐতিহ্যবাহী ছাত্রাবাস পুড়িয়ে দিলো ছাত্রলীগের গুন্ডা বদমাইশগুলো ছাত্রদল চেয়ে চেয়ে দেখলো, আর শিবিরের রগকাটা বাহীনি লেজ তুলে বিড়ালের মতো পালালো। আমি এবার একটু ভাবনায় পরে গেলাম আসলেইতো। আমার প্রিয় শহরের সবচেয়ে গর্বের, সবচেয়ে দামী, সবচেয়ে সম্মানের, সবচেয়ে ভালবাসার সম্পদ শত বছরের ঐতিহ্য, পূর্ব পূরুষদের স্মৃতিময় চিহ্ন কোন দুষ্মন্ত জ্বালিয়ে ছারখার করে ছাই-ভস্ম বানিয়ে নিরাপদে পালিয়ে গেলো আর যাদের নিয়ে আমরা অহংকার করি, গর্ব করি সেই ছাত্র-যুব সম্প্রদায়ের বৃহত্তর অংশ চেয়ে চেয়ে দেখলো আর কিছু কাপুরুষ বালকের দল লেজ তুলে পালালো!!! সত্যিই আমি বিস্মিত, এবার আমার বিশ্বাস স্থির হলো, সিলেটের সব ছাত্রদল আর ছাত্রশিবিরের ছেলেরা মার্কেট থেকে সব চুড়ি কিনে নিয়ে হাতে দিয়ে ঘরের সোফায় বসে তারা হিন্দি সিরিয়েলের বউ শাশুড়ির দন্দ্বে ভরপূর কোন কাহানী ঘার ঘার কি দর্শনে মত্ত।

আর এদিকে কুকুরের দল জ্বালিয়ে দিয়ে গেলো আমার ভালোবাসা, আমার সম্পদ, আমার স্মৃতি। ৩. আমি আমার ছোট বোনকে ফোন ব্যাক করলাম, বললাম বোন আমার একটুও মন খারাপ করিসনা। বাজারে চুড়ি নেই তো কি হয়েছে। বাজারে আরো অনেক কিছু আছে। জিবনের জন্য, শান্তির জন্য, প্রেমের জন্য, ইতিহাস-ঐতিহ্যের জন্য, ধর্ম ও মানবতার জন্য আমাদের অনেক কিছু করতে হয়, অনেক কিছুর সাথে আপোষও করতে হয়।

তুই না হয় সামান্য চুড়ির সাথে আপোষ করলি। তোকে আর চুড়ি পড়তে হবে না, তুই বাজার থেকে আরো অনেক কিছু কিনতে পারিস, অনেক কিছু এই যেমন কবি সুকান্তের একটা দিশলাই কিনতে পারিস। আল মাহমুদের বখতিয়ারের ঘোড়া কিনতে পারিস। নজরুলের কান্ডারী হুঁশিয়ার কিনতে পারিস। তারপর সব কিছু ব্যাগে ভরে, কোমরে ঝুলিয়ে নিবি শাহজালালের তলোয়ার।

তারপর ঐযে তোর আর আমার প্রিয় ক্যাম্পাসের জাড়ুল তলায় যাবি। ব্যাগ থেকে একটা একটা করে তোর কেনা জিনিস গুলি বের করবি, দেখবি কেমন যেনো ঝিলিক ছড়াচ্ছে, তারপর আবৃত্তি করবি, মাঝে মাঝে হৃদয় যুদ্ধের জন্য হাহাকার করে উঠে মনে হয় রক্তই সমাধান বারুদেই অন্তিম তৃপ্তি, তোর আবৃত্তি শেষ করতে না করতেই দেখবি, তোর সব বান্ধবীরা গগন বিদারী আওয়াজ তুলেছে, কে আছো জোয়ান হও আগুয়ান হাকিছে ভবিষ্যৎ এ তুফান ভারী, দিতে হবে পারি.. তারপর একে একে তোর চারপাশে দেখবি হাজারো মেয়েদের সমাবেশ। পুরো জাড়ুল তলা দেখবি তারুন্যের উচ্ছাসে ভরে গেছে। হয়তো দেখবি দুয়েকটা চুড়ি পড়ে লুকিয়ে থাকা ছেলেও ভিড়েছে, দুএকটা পালিয়ে যাওয়া কাপুরুষও এসেছে। রাগ করিসনা তাদের দেখে... যেহেতু সিলেটের সব ছেলেরা চুড়ি পড়ে ঘরে বসে আছে।

সেহেতু তথাকথিত ছেলেদের কাজ তোদেরকেই করতে হবেরে আমার বোনেরা। তারপর তুই যে কাজটা করবি, সবার হাতে একটা করে সুকান্তের দিশলাই দিবি, আর শাহজালালের তলোয়ারটা কোমরে বেঁধে নিয়ে মিছিলে প্রকম্পিত করবি এম.সি কলেজ ক্যাম্পাস। ছুটে যাবি সেই সব দুষ্মন্তের ঘরে ঘরে আগুন জ্বালিয়ে দিবি তাদের অন্তরে অন্তরে যারা হত্যা করেছে আমাদের শত বছরের ঐতিহ্যকে। জ্বালিয়ে দিবি তাদের সবার ঘর-বাড়ি সব, যারা ছাই-ভস্ম করেছে আমাদের ভালোবাসার সম্পদ। ফালি ফালি করে দিবি তাদের কুৎসিত মন-মানসিকতা, যারা আমাদের পূর্বপুরুষদের স্মৃতিকে করেছে অঙ্গার।

তারপর সুরমার পবিত্র পানিতে ধুয়ে সাফ-সুতরো করবি সিলেটের কলুষিত পথ ঘাট। মুছে দিবি মানুষরূপি হায়েনাদের সব পাপের চিহ্ন। আর মনে রাখিস... কেবল মাত্র নূহের প্লাবনেই মুছে যাবে সব পাপ-পঙ্কিলতা। (অ.ট: শুনেছি সারাদেশেই নাকি চুড়ির আকাল পড়েছে। এবং বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা নিজেদের মধ্যে চুড়ি নিয়ে কাড়াকাড়ি করছে।

) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।