আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঢাকার কী হবে?

রিয়াজ রিপন একটু বৃষ্টি হলে রাজধানীতে জলাবদ্ধতা। আর বছরব্যাপী যানজট। বাড়ি ভাড়ায় নৈরাজ্য। নগর পরিবহণে নৈরাজ্য। চাঁদাবাজি।

অপরিকল্পিত ভবন যেকোন সময় ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা। চুরি-চিনতাই-রাহাজানি-খুন-ধর্ষণ-লুটপাট। সবমিলিয়ে প্রতিষ্ঠার মাত্র চারশ’বছরের মধ্যেই অচল হয়ে যাচ্ছে ঢাকা। এই শহরে যারা বসবাস করছেন তারা যে খুব আনন্দের সঙ্গে বসবাস করছেন তা নয়। বরঞ্চ জ্বলন্ত উনুনের উপর বাস করার মতো অবস্থা হয়েছে নগরবাসীর।

ইতিহাস বলছে, ১৬০৮ বা ১৬১০ সালে সম্রাট জাহাঙ্গীর বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে বর্তমান ঢাকা নগরীর পত্তন করেন। তারপর থেকে ঢাকা দ্রুত বাড়তে থাকে। তবে ঢাকায় মানুষ বাড়া শুরু হয়েছে মূলত বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর থেকে। পাকিস্তান আমলেও ঢাকার জনসংখ্যার আয়তনের তুলনায় সহনীয় ছিল। ১৯৭১ সালের ঢাকার জনসংখ্যা ছিল মাত্র সাড়ে সাত লাখ।

সেই জনসংখ্যা গত ৪০ বছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে দেড় কোটি। ঢাকার মানুষ সবচেয়ে বেশি যে যে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে তা হলো বাড়ি ভাড়া। এই শহরে বেশির ভাগ মানুষের কোন বাড়িঘর নাই। তারা ভাড়া থাকে। দেড়কোট মানুষের মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ মানুষের বাড়ি রয়েছে।

বাঁকি ৯০ শতাংশ মানুষই গৃহহীন। এই বিপুল সংখ্যক মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে মাত্র ১০ শতাংম মানুষ যাদের বাড়ি আছে। ঢাকা শহরে জনসংখ্যার তুলনায় আবাসন ব্যাপক সীমিত হওয়ার কারণেই এই জিম্মিদশা। বাড়িওয়ালারা আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে ইচছামতো ভাড়া বাড়িয়ে ভাড়াটিয়াদের শোষণ করছে। অবশ্য ভাড়াটিয়াদের স্বার্থ রক্ষাকারী তেমন আইনও এ দেশের কোন ‘জনগণের সরকার’ করেনি।

ফলে অবস্থা এমন হয়েছে যে যে মানুষটি ১০ হাজার টাকা বেতন পান তাকে বাড়ি ভাড়াই দিতে হয় সাত হাজার টাকা। বাঁকি তিন হাজার টাকা দিয়ে হয় তাকে মানবেতন জীবনযাপন করতে হয় অথবা টাকা কামাতে তাকে কুপথে-বিপথে ধাবিত হতে হয়। এমতাবস্থায় ভাড়াটিয়ারাও ঐক্যবদ্ধ নয়। সম্প্রতি ভাড়াটিয়াদের কিছু সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। এরা বাড়িওয়ালাদের দৌরাত্ম কমাতে বিচ্ছিন্নভাবে ‍আন্দোলন করে যাচ্ছে।

তবে এখন পর্যন্ত এসব আন্দোলন বাড়িওয়ালা বা সরকারের ওপর কোন ধরনের চাপ সৃষ্টি করতে পেরেছে বলে মনে হয় না। দ্বিতীয় যে সমস্যাটা ঢাকাবাসীর কাছে প্রকট তাহলো যানজট। নগরীর যানজট এত তীব্র যে এই শহরে গাড়ির চেয়ে মানুষের হাঁটার গতি বেশি। শহরের গতি মাত্র আট কিলোমিটার। ভাবতে ‍অবাক লাগে ঢাকার মতো একটি মেগাসিটির গতি ঘন্টায় মাত্র আট কিলোমিটার!! ঢাকার যানজটের মূল কারণ দুর্নীতিবাজ শাসকগোষ্ঠী।

শাসকগোষ্ঠীর ভাষায় তাদের ‘জনগণের সরকার’ যদি সামান্য উদ্যোগ নিত তাহলে ঢাকাবাসীকে এই দুর্বিষহ অবস্থা থেকে মুক্তি দেওয়া সহজ হতো। কিন্তু শাসকগোষ্ঠীর পেটোয়া বাহিনীকে সুবিধা দিতে ঢাকাবাসী জিম্মি হয়ে পড়েছে। নগর পরিবহণকে বিকশিত হতে দেওয়া হয়নি গুটিকয়েক বাস মালিকের (এরা আবার আওয়ামী লীগ-বিএনপির নেতা) স্বার্থে। গুটিকয় বাস মালিকের কাছে জিম্মি হয়ে আছে পুরো রাজধানীবাসী। একবার সরকার গাজীপুর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ট্রেন চালু করলে বাস মালিকরা ভাড়াটে সন্ত্রসাী দিয়ে ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল।

এছাড়া ঢাকাবাসী যেকোন সময় মৃত্যু-ঝুঁকির মধ্যে আছে। রাজউক বলছে, রাজধানীর ৯৯ ভাগ ভবনই নিয়মনীতি না মেনে নির্মাণ করা হয়েছে। আর ভূতত্ববিদরা বলছেন, নগরীতে যেকোন সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানবে। কাজেই বড় ধরনের ভূমিকম্প যদি আঘাত হানে তবে ঢাকা ধূলিষ্মাৎ হয়ে যাবে। লাখ লাখ মানুষ মারা পড়বে।

তাই এটুকু জোর দিয়েই বলা যায়, ঢাকাবাসীকে দেওয়ার মতো কোন সুখবর নাই। বরঞ্চ দিনদিন দুঃসংবাদের পাল্লা ভারি হবে। আমাদের (জনগণ) কোন নিস্তার নাই। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।