আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুর্বিষহ

দুর্বিষহ প্রচণ্ড একটা চাপ শরীরে মনে, চারপাশে বিপদ যে কোন সময় একটা কিছু হয়ে যেতে পারে। ভয়ে হাত পা পেটের ভিতর ঢুকে আছে। বাড়ির হাবভাব ভালো না। বাড়ি থেকে পালানার চেষ্টা করছি বার বার। পারছি না।

চারপাশের সবটাই অপরিচিত। যে বাড়িতে আছি বিশাল বাড়ি, অনেক ঘর। বেশ খানদানী ভাব কিন্তু খোলামেলা, পরিচ্ছন্ন নয়। সারি সারি দোকানপাটের মতন বাড়ি পিছনে টানা লম্বা উঠান তার পাশে উঁচু দেয়াল লম্বা হয়ে চলে গেছে কতদূর কে জানে। নিজের বাড়ি তবু অচেনা।

চারপাশ মেঘলা অন্ধকার সারাক্ষণ। বাবা, মা ভাই এরা আমার আপন কিন্তু কোন জন্মে তাদের চেহারা দেখিনি আগে। কী এক অদ্ভুত অজানা ভয়ের শিহরণ খেলে চারপাশে। মা এর চেহারা দেখাই হয়নি কখনও। একটা পোটলার মতন কাপড় চোপড়? মাঝে বিছানায় বসে নামাজ বন্দেগীতে ব্যস্ত।

নির্ঝঞ্ঝাট সরল সোজা টাইপ মানুষ। ভাইটা হাবলা মতন। মোটাসোটা চুপচাপ। বাবা মানুষটি বদের হাড্ডি, রাজাকার, মুখে চাপ দাঁড়ি, চোখে ক্রোর দৃষ্টি। এছাড়া বাড়িতে অনেক লোক।

নাটক করতে এসেছে শহর থেকে নামি একটা দল। তারা সব ব্যস্ত মহড়া নিয়ে। বাড়ির সামনের দুটো ঘরে আছে বেশ ক’দিন ধরে। দেশে চলছে যুদ্ধ। যুদ্ধ শুরুর সময়টা।

সামরিক বাহিনী ছড়িয়ে যাচ্ছে দেশে। সে সময় আমাদের শহরে এলো এই নাটক দল। কেউ আমাকে ভয়ের কোন খবর দিচ্ছে না কিন্তু আমার মনে ভয় আর ভয়। ভয়ে লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করছি কিন্তু কিছুতেই লুকাতে পারছি না। কোন জায়গা খুঁজে পাইনা এই বিশাল বাড়িতে লুকিয়ে থাকার।

আবার মনে হলো আমার চির পরিচিত বাড়ি পুকুর পাড় দিয়ে পাশের বাড়িতে গিয়ে লুকিয়ে থাকতে চাইছি কিন্তু ওরা আমাকে রাখছে না। বাবা সামরিক বাহিনী নিয়ে বেশী ব্যস্ত নয় জানে ওরা ওকে কিছুই করবে না ওদের সাথে বেশ ভাব করে চলছে। ওদের হয়ে কাজ করছে। সামনের দুটো ঘরে নাটকের লোকগুলো আপন মনে আছে। ওরা টার্গেট বাবার যে কোন সময় শেষ করে দিতে পারে বাবা।

ধরিয়ে দিতে পারে আর্মির কাছে তবু ইচ্ছে করে সময় দিচ্ছে। যেন খেলছে বিড়ালের মতন ফাঁদে পরা ইঁদুর নিয়ে। ওরা আছে হাতের নাগালে পালিয়ে যাবে কোথায় এমন ভাব। আমি শুধু সব বুঝে যাচ্ছি মনে মনে আমার ভয় করছে। বাবার কার্যক্রম একদম পছন্দ নয়।

ওদের জানিয়ে দিতে চাই, চলে যাও, বাবা আর্মি লুকিয়ে রেখেছে বাড়ির ভিতর। কিন্ত বলা হয় না সুযোগ আসে না। দেশের এই পরিস্থিতি ওরা কী কিছুই জানেনা? এ সময়ে নাটকের পালা করতে চলে এসেছে এই শহরে, নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে, কেমন অবাক লাগে ওদের ব্যবহার। ভাই আমাকে সাহায্য করে না, ও কিছু বুঝেই না ভিষন বোকা। জবুথুবু এক মোটা সরল মানুষ।

মা সাহায্য করতে চায় কিন্তু কিছু করতে অপরাগ। ভয় পায় বাবাকে ভীষণ। ওরা নির্ভয় বাবার অধীনে চুপচাপ বসে থাকে কোন প্রতিবাদ নাই। আমি শুধু সহ্য করতে পারছি না বাবার অসহ্য আচরণ। আমার শরীর, মন যন্ত্রনায়, ঘৃণায় ফালাফালা।

আমি পালিয়ে যেতে চাচ্ছি। আমি টের পাচ্ছি কি হবে পরবর্তী মুহূর্তে। আরো আর্মি আসছে শহরে আমি পালাচ্ছি। বাড়ির তিন চারটা গেইটে পাহারাদার ওরা আটকে ফেলছে আমাকে। আমি ওদের সাথে হাসি হাসি মুখে কথা বলি, অভিনয় করি আপন হওয়ার।

ওরা তত আপন হয়ে আমাকে রক্ষা করায় ব্যস্ত বাইরে গেলে বিপদ হবে তাই আমাকে গেইটের বাইরে বের হতে দিল না কিছুতেই। বাড়ির ভিতর পাঠিয়ে দিল। বাবার বড়ই নিষ্ঠাবান চাকর। রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে। বাবার সামনে বসে আছি আমি আর আমার বান্ধবী।

বাবার লোলুপ চোখ বান্ধবীর মুখে। ওর মনের অশ্লীল সব চিন্তা আমি পড়ে ফেলতে পারছি। শরীর অসাড় হয়ে উঠছে যন্ত্রনায়। বাবা একটা গ্লাস তুলে দেয় বান্ধবীর হাতে, মুখে বলে খাও খাও। ও স্থির চোখে তাকিয়ে আছে বাবার মুখে আশ্চর্য দৃষ্টি! আমি ভেবে পাইনা বাবা কিভাবে আমার বান্ধবীর মুখে মদের গ্লাস তুলে দিচ্ছে আমার সামনে! হঠাৎ বাবার মুখে, বুকে হাতে ধরা গ্লাসের তরল পদার্থ ঢেলে দেয় বান্ধবী।

বাবা হিসহিস করে উঠে রাগে, যন্ত্রণায় । এক ঝলক বেকুব হয়ে বসে থাকে এই সুযোগে বান্ধাবী আর আমি মিলে প্রাণপণে দৌড়াই বাঁচার তাগিদে। বাবা আক্রমণ করতে লাফিয়ে উঠে এই সময় সাইরেন বাজে। প্রচণ্ড চাপ মনে শরীরে নিয়ে জেগে উঠি। উহ্! এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম।

ভাবতে পারি না আমার ওরকম একজন বাবা কখোনো হতে পারে না। তাকে বাবা বলবই না কিছুতেই। বড়বড় নিঃশ্বাস নিয়ে ফিরে আসি বাস্তবে আপন ঘরে। তবু কেমন ভয়ভয় লাগে। যুদ্ধ সে তো শেষ হয়েছে কত আগে তবু কেন যুদ্ধের ডামাডোল স্বপ্নের ঘোরে তাড়িয়ে বেড়ায় এমন ? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.