আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাসের শেষে , আবার হলিউডে !

ঝামেলা ভাল লাগে না বাঙ্গালি নাকি দাত থাকতে দাতের মর্যাদা বুঝে না , কথাটা যে কে বলেছে জানি না ; কিন্তু শালা একটা জিনিয়াস । আমিও দাত থাকতে দাতের মর্যাদা বুঝি না তো, তাই । প্রতি মাসের শেষে আমি মরণ-প্রান প্রতিজ্ঞা করি ; আর না , অনেক হইছে , বয়স তো আর কম হল না – আর হুদাই মানুষের কাছে টাকা-টুকা ধার করব না । কি কি ভাবে খরচ কমাবো গত মাসে তার একটা লিস্ট তৈরি করেছিলাম , তাই মনে হয় এই মাসে অবস্থা আরও করুণ হয়েছে । ধার যা করেছি তা তো শেষ, বেতন যদি বৃহঃস্পতিবার দেয় তাহলে ভাল , না হলে আবার সেই রবিবার কি যে যন্ত্রণা ! মাসের শুরুতে বাসে উঠতে ইচ্ছাই করে না , অবশ্য আমার দোষ এখানে খুব কম ।

ঢাকা শহরের সবচেয়ে খারাপ বাসটাই আমার সম্বল , বাসের নাম আবার চ্যাম্পিয়ান(একটা কথা আছে না ; চোরের মায়ের বড় গলা ) , হাইসা আর বাঁচি না । আজকে আমার পকেটে সকাল থেকেই মাত্র ৩০ টাকা ছিল , তাই মনে মনে ঠিক করেছিলাম আজকে বাসেই যাব । কিন্তু বাসা থেকে বের হয়েই দেখি ঝির ঝির বৃষ্টি হচ্ছে , বাসের জন্য রাস্তায় দাঁড়ালাম , বাসও আসলো ,কিন্তু এত ভিড় , উঠার সাহস করলাম না । পরের বাসটারও একই অবস্থা , আর কিছুক্ষণ দেরি করলে অফিসের দেরি হয়ে যাবে , তাই বাধ্য হয়ে রিস্কা নিলাম । ঠিক করলাম এক নাম্বার পর্যন্ত যাব , তারপর বাসে ।

কে জানি বলেছিল , মানুষ পরিকল্পনা করে আর ঈশ্বর সেসব ভেস্তে দেন । আজকে মনে হয় আমার ভাগ্যটাই খারাপ , তাই বৃষ্টি কমার কোন লক্ষণ নাই , অগত্যা রিস্কা করেই অফিস পর্যন্ত গেলাম । পকেটের টাকা সব শেষ । চিন্তা করলাম এত কষ্ট করে অফিসে এসে যদি একটা চা-বিড়ি না খেয়ে অফিসে ঢুকি , তাহলে ব্যাটারটা ভাল হবে না । তাই পরিচিত চায়ের দোকানে একটা বেনসন আর দুধ চা দিতে বললাম ।

দোকানদার কয় , ভাইজানের বেতন বাড়ছে নাকি? গোল্ড লিভ বাদ দিয়া বেনসন । মনে মনে হাসলাম , অই ব্যাটা তো বাঙ্গালির মূলমন্ত্র জানে না , ধার করে হলেও ঘি খাইতে হবে । আরাম করে চা-বিড়ি খেয়ে অফিসে গেলাম আর সুযোগে থাকলাম , কার কাছ থেকে বাসা যাওয়ার ভাড়াটা যোগার করা যায় । শেষ পর্যন্ত এক কলিগ কে চা –বিড়ির দোকানে নিয়ে গিয়ে ৫০ টাকা ধার করলাম । বাকিসহ মোট ২৫ টাকা বিল দিলাম ।

বাড়ি আসার সময় অবশ্য ৩ টাকায় চ্যাম্পিয়ানে করে চলে আসলাম । ভাগ্য ভাল , খালা না আসলেও এক রুমমেট ভাত রান্না করেছে , তার দীর্ঘায়ু কামনা করে খেতে বসলাম(জানি না , এইটা আশীর্বাদ না অভিশাপ !)। ভাত খাওয়া শেষ করে দেখি বিড়ি নাই , কি আর করা হাতের পাচ ২০ টি টাকা দিয়ে বিড়ি কিনে আনলাম । সন্ধ্যা পর্যন্ত ভালই চলল । তারপর দেখি , আর বিড়ি নাই , টাকাও নাই ।

এইরকম সময়েই মনে হয় বিড়ি খাবার বেশি ইচ্ছা করে । কি আর করা টেবিল , ড্রয়ার , কলমদানি সব খুজে ৫ টি টাকা খুজে পেলাম , সেই টাকা দিয়ে ৫ টা হলিউড কেনার জন্য দোকানে গেলাম । গিয়াই বুঝলাম মুহিত কি মাল , হলিউডের দামও বাড়ায় দিছে , ৩ টা পেলাম । মাসের শেষে এরকম হলিউডে অবশ্য আমাকে প্রায়ই যেতে হয় , সেজন্য দুঃখ পাই না , খারাপও লাগে না । মেঘর আড়ালে সূর্য হাসে , সামনের বৃহঃস্পতিবার যদি বেতন পাইরে............ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.