আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রিকশা - মধ্যবিত্তের সহায়। রিকশাওয়ালা - মধ্যবিত্তের আতংক!

মনে প্রাণে ঘৃণা করি রাজাকার। পাকিস্তানের দালালি করার শখ থাকলে এখানে ল্যাদাতে না আসার জন্য বলা হচ্ছে। একটা বিষয় বেশ কিছুদিন ধরেই লক্ষ্য করছি... আজকাল লেখকরা তাদের প্রবন্ধে,পত্রিকার কলামে এমনকি ফেসবুক এ কোন লেখাতে দেশের কোন অসঙ্গতি, গরিবের দুর্দশা এমন সব প্রেক্ষাপট চিত্রায়নের জন্যে গরিব অসহায় রিক্সাওয়ালাদের উদাহরণ টেনে আনেন। যেমন ধরা যাক বিদ্যুৎ এর দাম বৃদ্ধি- একজন অসহায় রিক্সাওয়ালা কি করে বিজলি বাতির রোশনাই পাবেন? এতো বেশি চিকিৎসা খরচ দিয়ে একজন অসহায় রিক্সাওয়ালা কিভাবে তার ছোট্ট শিশুটির চিকিৎসা করাবেন? ইত্যাদি। বোধ করি এই লেখকেরা পাঠকদের সেন্টু (সেন্টিমেন্টাল ) করতে কিংবা লেখকের অসাধারণ কোমলমতি হৃদয়ের আভাস পাঠকের কাছে পৌঁছে দিতে এমনটি করে থাকেন।

আমি এদের দলে নই। দেশে কোন জিনিসের দাম বাড়লে আমার মতে এই রিকসাওয়ালাদের আসলে কিছুই যায় আসেনা। আগে যেখানে পাঁচ টাকা ভাড়া নিত এখন সেখানে তারা পনের টাকা নিবে... আপনি পাবলিক সেটা মেনেই রিক্সায় চড়তে বাধ্য। অথচ জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও যে লোক সকাল বিকেল খেটে মাস শেষে পনেরো হাজার টাকা বেতন পায়, তার রোজগার দুপয়সাও বাড়ে না। আপনি সকালে অফিসে যাবেন... একটা রিক্সা নেবেন রিক্সাওয়ালা বলবে-- আফনে পয়লা যাত্রি (শাইটের প্যাসেঞ্জার) ভাড়া কইলাম বেশি দেওন লাগব! দুপুরে রিক্সা নেবেন - এই রইদে ভাড়া বেশি লাগব! বিকেলে তারা বলবে- রাস্তায় জ্যাম, ভাড়া বাড়াইয়া দিতে অইব! আর সন্ধ্যাটা হতে না হতেই তাদের বক্তব্য- রাইতের ভাড়া ডাবল! লও ঠ্যালা! আর যদি আপনার দুর্ভাগ্য কে বিষমরূপ দিতে ভুল করে আকাশ থেকে দু-এক ফোঁটা বৃষ্টি নেমে আসে তবেই হয়েছে! যে পথটুকু আপনি রোজ পনেরো বা বিশ টাকায় যেয়ে থাকেন আপনাকে তখন তা পঞ্চাশ বা পঁয়তাল্লিশ টাকায় যেতে হবে।

আর তাছাড়া কোন নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার জন্যে একজন রিক্সাওয়ালার কাছে কেমন কাকুতি মিনতি করতে হয় তাতো প্রায় সবারই জানা। আমি ঢাকা শহরে এমন অনেক রিক্সাওয়ালা দেখেছি যারা 'বেনসন এন্ড হেজেস' সিগারেট পান করে থাকেন। একজন বুয়েট,মেডিক্যাল বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের হয়ত তার পড়াশোনার জন্য প্রায় অত্যাবশ্যক একটি কম্পিউটার নেই কিন্তু আপনি ভাল করে খোঁজ নিয়ে দেখুন এ দেশের(অন্তত বড় শহরগুলোতে) প্রায় প্রতিটি রিক্সাওয়ালার বাড়িতে একটা রঙ্গিন টিভি আর ভিসিডি প্লেয়ার আছে। অনেকে হয়ত ভাববেন এত কিছু থাকতে আমি রিক্সওয়ালাদের পিছনে কেন লাগলাম.. তাদের কে বলছি - না ভাই আমি গরীব রিক্সাওয়ালা গুলোর পিছনে লাগিনাই আমি বলতে চাইছি যে আমাদের প্রাণের দেশটা তো 'মহান দেশপ্রেমী' নেতা-নেত্রী আর আমলাদের হাতে অনেক আগে থেকেই বন্দি এমনকি এ দেশের সাধারণ মানুষগুলো সমাজের অতি ক্ষুদ্রতম স্তর গুলোতেও কি নিদারুণ ভাবে জিম্মি ! উপর মহলে তো সাধারণ মানুষের যাতায়াতের কোন সুযোগই নেই পথে ঘাটে হাটে বাজারে যে একটু দম নিবে সে উপায়ও নেই। আমার লেখাটি শেষ করব একটা আপাত হাস্যকর কিন্তু চরম বাস্তব একটি তুলোনা দিয়ে।

আপনারা কি জানেন যে ঢাকা শহরে একজন রিক্সাওয়ালার প্রতিদিনের গড় আয় এক হাজার টাকা, অর্থাৎ প্রতি মাসে ত্রিশ হাজার টাকা, ধরলাম এতটাও না, এর তিন ভাগের দুই ভাগ- বিশ হাজার টাকা...? আর খোঁজ নিলে দেখতে পাবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করে শত শত মেধাবী মুখ গার্মেন্টস, বিভিন্ন বায়িং হাউস এ আট দশ হাজার টাকায় চাকরি করতে বাধ্য হচ্ছে, ক্ষেত্র বিশেষে সেটাও পাচ্ছে না। বুয়েট থেকে সবেমাত্র পাশ করা একজন ইঞ্জিনিয়ার কোন প্রাইভেট ফার্মে চাকরিতে ঢুকতে বাধ্য হচ্ছে পনেরো থেকে আঠারো হাজার টাকায়! খোদ রাজধানী ঢাকাতেই একজন সদ্য পাশ করা এমবিবিএস ডাক্তার একটা ক্লিনিক এ আট ঘণ্টা 'ডিউটি ডক্টর' হিসেবে কাজ করে পায় চারশ টাকা! অর্থাৎ প্রতি মাসে বারো হাজার টাকা!! ... বলুন কি বলব একে? উপহাস নাকি নির্মমতা নাকি দুর্ভাগ্য? বিঃ দ্রঃ হ্যাঁ ব্যাতিক্রম অবশ্যই আছে, কিন্তু ব্যাতিক্রম কখনো উদাহরণ হয় না। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।