আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বৃটেনের শিক্ষাব্যবস্থা - ৬ : পরীক্ষা ও মূল্যায়ন পদ্ধতি

বৃটেনে সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীকে জাতীয় পাঠ্যক্রমের নির্দিষ্ট পঠিতব্য বিষয়ের উপর এক সিরিজ টেস্টে অংশ নিতে হয়। এগুলো Key Stage National Curriculum Tests নামে পরিচিত। এসব টেস্ট ১ম থেকে ৪র্থ কী স্টেজের প্রতিটিতে হয়ে থাকে। কী স্টেজ ১ (KS 1)-এ পুরো দু শিক্ষাবর্ষ ব্যাপী এ টেস্ট অনুষ্ঠিত হয়। কী স্টেজ ২ (KS 2)-এ ৬ষ্ঠ শিক্ষাবর্ষ শেষে হয়ে থাকে।

কী স্টেজ ৩ (KS 3)-এ ৯ম শিক্ষাবর্ষ শেষে হয়ে থাকে। কী স্টেজ ৪ (KS 4)-এ ১০ম ও ১১শ শিক্ষাবর্ষ ব্যাপী হয়ে থাকে। তবে ১১শ শিক্ষাবর্ষ শেষে বিশেষভাবে একটি টেস্ট অনুষ্ঠিত হয়, যা এঈঝঊ পরীক্ষার সাথে যুক্ত হয়ে থাকে। এসব কি স্টেজ পরীক্ষা ঝ SATs (Standard Assesment Tests)নামেও পরিচিত। তবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবর্তিত SATs -এর সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই।

ক. বোর্ডসমূহ জিসিএসই পরীক্ষা ৬ টি বোর্ডের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বের যে স্থানেই জিসিএসই পরীক্ষা হোক না কেন তারা এই ৬টি বোর্ডের কোন না কোনটির সাথে সম্পৃক্ত। বোর্ডগুলো হচ্ছে- ১. Assessment and Qualifications Alliance (AQA) ২. Oxford Cambridge and RSA Examinations (OCR) ৩. Edexcel Limited ৪. Council for the Curriculum, Examinations and Assessment (CCEA) ৫. Welsh Joint Education Committee (WJEC) ৬. Cambridge International Examinations খ. মূল্যায়ন ও পরীক্ষা পদ্ধতি সাধারণভাবে শিক্ষার্থীকে মূল্যায়ন করা হয় কোন বিষয় সম্পর্কে তার ধারণা ও বোধ কতটুকু তা বোঝার জন্য। কোন বিষয়ের তথ্য-উপাত্ত কতটুকু জানে বা মুখস্ত করেছে, তার চেয়ে মুখ্য বিষয় হলো এই তথ্য-উপাত্ত নির্দিষ্ট বিষয়কে কিভাবে প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত করে তা সে বুঝে কিনা বা ব্যাখ্যা করতে পারে কি না। এ জন্য বৃটিশ শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা কোন বিষয় মুখস্ত করতে খুব কষ্টবোধ করে।

শ্রেণী শিক্ষকরা সাধারণত প্রতিটা ক্লাসের একটা মূল্যায়ন করেন এবং তা টার্ম শেষের মূল্যায়নের সাথে যুক্ত করেন। কি স্টেজ-৩ পর্যন্ত ৩ বার SATs পরীক্ষা হয় কেন্দ্রীয়ভাবে, যা সরকার নিয়ন্ত্রিত একটি প্রতিষ্ঠান (QCA- Quality Control Agency) পরিচালনা করে। GCSE এবং A Level পরীক্ষা হয় বিভিন্ন বোর্ডের অধীন। এ সমস্ত বোর্ডগুলো বেসরকারী অলাভজনক প্রতিষ্ঠান, তবে সরকারী কর্তৃপক্ষ তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করে। সকল বোর্ডের সিলেবাস ও প্রশ্ন পত্র সমান নয়।

একই ন্যাশনাল কারিকুলামের আওতায় তারা সিলেবাস প্রণয়ন করে, তবে এর ধরণ ও প্রকৃতি ভিন্নতর হতে পারে। যুক্তরাজ্যের ৬টি শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে ইংলান্ডে তিনটি শিক্ষাবোর্ডের কার্যক্রম ব্যাপক, তা হচ্ছে : EDEXCEL, AQA এবং OCR. একটি স্কুলে যে কোন বোর্ডের অধীনে সমস্ত অথবা এক বা একাধিক বিষয়ের পরীক্ষা দিতে পারে। সাধারণতঃ সাবজেক্ট টিচার প্রধান শিক্ষকের সাথে পরামর্শ করে যে কোন বোর্ডের অধীনে পরীক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। সাধারণত প্রতিটা স্কুলই একটি পরীক্ষা কেন্দ্র। প্রধান শিক্ষক অথবা তার প্রতিনিধিসহ এক সিনিয়র শিক্ষক পরীক্ষা কর্মকর্তা হিসাবে সকল পরীক্ষা তত্ত্বাবধান করেন।

উপরিউক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ ছাড়া একই স্কুলের বিভিন্ন বিষয় শিক্ষকগণ ইনভিজিলেটর হিসাবে দায়িত্বপালন করেন। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ের যে কোন সময় একজন সরকারী কর্মকর্তা হঠাৎ ইন্সপেকশনে আসতে পারেন। কোন পরীক্ষা কেন্দ্রে কখনও কোন পুলিশ বা বাইরের কোন ব্যক্তি আসেন না। পরীক্ষার প্রায় ২ সপ্তাহ পূর্বেই কেন্দ্রে প্রশ্নপত্রগুলো পোস্টের মাধ্যমে চলে আসে। পরীক্ষা হলে পরীক্ষার্থীদের সামনে প্লাস্টিকে মোড়া প্রশ্নপত্রের প্যাকেটগুলো স্পেশাল ডেলিভারীর মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

পরীক্ষা শেষ হওয়ার প্রায় দুইমাসের মাথায় বিভিন্ন বোর্ড পোস্টের মাধ্যমে রেজাল্ট পাঠিয়ে দেয়। সকল পরীক্ষায় সাবজেক্ট হিসাবে ফিস দিতে হয় (সাবজেক্ট প্রতি গড়ে ২০ পাউন্ড)। সরকারী স্কুলগুলোতে স্কুল কর্তৃপক্ষ ফিস দিয়ে দেয়, আর বেসরকারী স্কুলগুলোতে ছাত্রছাত্রীরা দেয়। জিসিএসি এবং এ লেভেলে অধিকাংশ বিষয়ের কেন্দ্রীয় বোর্ড পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীকে কোর্স ওয়ার্ক করতে হয়, যা ১০০% এর ২০ থেকে ৪০ ভাগ পর্যন্ত হয়ে থাকে। একেকটা সাবজেক্টে একাধিক কোর্স ওয়ার্ক জমা দিতে হয়।

এবং একেকটা কোর্স ওয়ার্ক ২০০ পৃষ্ঠা পর্যন্তও হতে পারে। কোর্স ওয়ার্ক সংশ্লিষ্ট স্কুলের সাবজেক্ট টিচার মূল্যায়ন করে মার্ক দেন। তবে বোর্ড কর্তৃক নিয়োজিত আরেকজন পরীক্ষক বাছাইকৃত কিছু পেপার পুনর্মূল্যায়ন করেন। কোর্স ওয়ার্কের ক্ষেত্রে ওই বিষয়ের লিখিত পরীক্ষার নম্বর থাকে আনুপাতিক। বিভিন্ন বিষয়ের পরীক্ষা হয় বিভিন্ন লেভেলে।

যেমন অংকে দুইটা লেভেল আছে ঃ ইনটারমিডিয়েট ও হায়ার। ইনটারমিডিটের প্রশ্নপত্র সহজ। তবে তারা বি গ্রেডের ওপর পাবে না। এই লেভেলে যারা ৯০-১০০ পাবে তাদের গ্রেড হলো বি। আর যারা হায়ার লেভেলে পরীক্ষা দিবে, তারা যদি ৮০% পায়, সেটা হবে বি গ্রেড।

সি হলো পাস গ্রেড। সে ক্ষেত্রে ইনটারমিডিয়েট গ্রুপের শিক্ষার্থীকে সি পেতে হলে পরীক্ষায় কমপক্ষে ৬০ পেতে হবে, অথচ হায়ার গ্রুপের শিক্ষার্থী ২৩% পেলে সি গ্রেড দেওয়া হবে। মজার বিষয় হলো, ৫-১৬ বছর বয়সী সকল শিশুর জন্য নিয়মিত স্কুলে যাওয়া আইনতঃ বিধান, তবে তাদের জন্য সর্বশেষ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা আবশ্যকীয় নয়। ফলে, পিতা-মাতা, অভিভাবকের সম্মতি সাপেক্ষে স্কুল একজন শিশুকে সকল পরীক্ষা অথবা নির্দিষ্ট কোন বিষয়ের পরীক্ষা থেকে বিরত রাখতে পারে। তবে, স্কুলের সার্বিক পাশের হার হিসাব করা হয় কতজন ১৬ বছর বয়সী ছাত্রছাত্রী হাজিরা খাতায় রেজিস্ট্রার্ড আছে তার ওপর, কতজন কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে তার ওপর নয়।

কি স্টেজ-৩ পর্যন্ত প্রতিটি স্তরের শেষে জাতীয়ভাবে সমন্বিত মূল্যায়ন পরীক্ষা হয় যাকে বলা হয় SAT. কি স্টেজ-৪ শেষে হয় ও লেভেল পরীক্ষা, যাকে এখন বলা হয় GCSE (General Certificate of Secondary Education), এটা বাংলাদেশের SSC (ম্যাট্রিক)-এর সমান। এর পর হলো দুই বছরের কোর্স ‘এ’ লেভেল। সাধারণতঃ কলেজগুলো ‘এ’ লেভেল অফার করে। আর যে সমস্ত সেকেন্ডারী স্কুল ‘এ’ লেভেল অফার করে সেগুলো ‘সিক্সথ ফরম কলেজ’ হিসাবে পরিচিত। গ. পরীক্ষার বিভিন্ন গ্রেড ও পাশের বিবেচনা নবম শ্রেণী পর্যন্ত তিনটি লেভেল আছে- ফাউন্ডেশন লেভেল, ইনটারমিডিয়েট লেভেল ও হায়ার লেভেল।

তিনটি লেভেলের সিলেবাস ও প্রশ্নপত্র আলাদা। একেকটা কি স্টেজের জন্য প্রতিটা সাবজেক্ট ঊর্ধলেভেলে কোন শিশু লেভেল ৩ পেলে বুঝতে হবে সে এক্সিলেন্ট! কি স্টেজ-২ এ এসে লেভেল ৫ পেলে বুঝতে হবে সে খুবই ভালো; পাশ লেভেল হলো ৩। কি স্টেজ-৩, অর্থাৎ ক্লাস নাইনের স্যাটস পরীক্ষায় অংক ও বিজ্ঞানে সবচেয়ে ভালো হলো লেভেল-৮ আর ইংরেজীতে হলো লেভেল-৭, পাশ লেভেল হলো ৫। কোন শিক্ষার্থী পাশ লেভেল না পেলে তার ব্যাপারে শিক্ষকদেরকে বিশেষ যতœ নিতে হয়। প্রয়োজন হলে তার জন্য ক্লাসেই একজন মেনটর নিয়োগ করা হয়, যাতে সে দ্রুত উন্নতি করতে পারে।

ঘ. বিভিন্ন গ্রেডিং পদ্ধতি জিসিএসই পরীক্ষার সাধারণ গ্রেডিং হলো নি¤œরূপ ঃ ৯০-১০০% A* ৮০-৮৯% A ৭০-৭৯% B ৬০-৬৯% C , সি পর্যন্ত হলো পাস মার্ক। তবে পরীক্ষা উত্তরপত্র মার্ক করার পর এই প্রান্তিক মার্কগুলো আবার পুনর্বিবেচনা করা হয়। যদি দেখা যায় কোন বিষয়ের পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা খুব ভালো মার্ক পায়নি, সে ক্ষেত্রে প্রান্তিক মান কমানো হয়। অর্থাৎ ক্ষেত্রবিশেষে কখনও কখনও ৮৫% মার্ক পেলে A* দেয়া হয়। পরীক্ষার পর সার্বিক রেজাল্ট বিশ্লেষণ করে প্রধান পরীক্ষকবৃন্দ ও মূল্যায়ন কর্মকর্তারা এ ব্যাপার সিদ্ধান্ত নেন।

জিসিএসি পর্যায়ের পরীক্ষায় অনন্তপক্ষে ৫টি বিষয়ে (ন্যাশনাল কারিকুলাম সাবজেক্টের যে কোন তিনটি সহ আরো দুই সাবজেক্টে) সি গ্রেড পেলে তাকে পাস ধরা হয়। এর কম হলে তারা কলেজে ভর্তি হতে পারবে, তবে পরের বছর আবার সেই সাবজেক্টে পরীক্ষা দিতে হবে। এ লেভেলে A হলো উচ্চ গ্রেড। এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য কমপক্ষে তিনটি বিষয়ে পাস মার্ক থাকতে হয়। এ লেভেল ফাইনাল পরীক্ষাতে জিসিএসই’র মত কোর্স ওয়ার্ক থাকে এবং ছাত্রছাত্রীদেরকে ভীষণ ব্যস্ত রাখে।

ঙ. বৃটেনের বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষা বিষয়ক কর্তৃপক্ষ বৃটেনের বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষা বিষয়ক কর্তৃপক্ষগুলো হচ্ছে - ১. Department for Education and Skills (DfES) ২. Qualifications and Curriculum Authority (QCA) ৩. National Assessment Agency (NAA) ৪. Joint Council For Qualifications (JCQ) চ. বিভিন্ন রাজ্যের স্কুল পরিদর্শক কর্তৃপক্ষ স্কুল মান যথাযথভাবে রক্ষিত হচ্ছে কিনা তা দেখার জন্য প্রত্যেক রাজ্যেও রয়েছে একটি কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ। এ সংস্থাগুলো হচ্ছে : ১. Office for Standards in Education (OFSTED) (England) ২. Estyn (Wales) ৩. Her Majesty's Inspectorate of Education (Scotland) ৪. Education and Training Inspectorate (Northern Ireland) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.