আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বঘোষিত নেতা আর যত কিংস পার্টি!!

এদেশে যে কেউ হঠাৎ করেই স্বঘোষিত নেতা বনে যেতে পারেন। এসব নেতা নিজেদের অসততা আড়াল করার জন্য সারাক্ষণ সততার কথা বলেন। তারা করেন একটা আর বলেন অন্যটা। বিশ্বাস করেন একটা, বলেন উল্টোটা। তাদের নিজেদের দোষ নেই, মনে করেন তারা সবসময় দোষত্রুটির ঊর্ধ্বে।

স্বঘোষিত নেতারা কোনো নির্বাচন এলে বা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেখা দিলে মাঠে নামেন। আন্দোলন বা নির্বাচন শেষ হলে এরা অনেকটাই কর্পূরের মতো হারিয়ে যান। বাংলাদেশের রাজনীতিতে পেছনের দরজা দিয়ে বন্দুক উঁচিয়ে নেতা বনে রাষ্ট্র শাসন করেছেন দুজন সামরিক শাসক। তারা হলেন জিয়াউর রহমান ও এইচএম এরশাদ। তারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে দল গড়েছেন, রাজনীতিও করেছেন।

তাদের শাসনামলে এবং পরবর্তী সময়ে গণতান্ত্রিক যুগে অনেকেই ¯স্বঘোষিত নেতা সেজে ক্ষমতায় যেতে চেয়েছেন কিন্তু পারেননি। এদের অনেকেই রাজনীতির চোরাবালিতে হারিয়ে গেছেন। কেউ কেউ বিদেশে পালিয়ে গেছেন। কেউ কেউ নানা সংস্থার স্পোকসম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বলে অভিযোগ আছে। ২০০৭ সালের জুন মাসে ‘কিংস পার্টি’ গঠন করে আলোচনায় আসেন সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি ও বিএনপি নেতা ড. ফেরদৌস আহমদ কোরেশী।

সেনাসমর্থিত তত্তাবধায়ক সরকারের সময় অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কর্মৎপরতা নিষিদ্ধ থাকলেও তারা বহাল তবিয়তে মোটরসাইকেল-মোটরগাড়ি শোডাউন করে কর্মতৎপরতা শুরু করে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ছেড়ে অনেকে পিডিবি নামক রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়েছিলেন। এই দলের কার্যালয় নেয়া হয় সেগুনবাগিচায়। সেনাসমর্থিত সরকারের দুই বছর তৎপর থাকলেও ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচন ঘিরে হারিয়ে যায়। বর্তমানে পিডিবি নামে দল আছে, কার্যালয় আছে, প্রতিষ্ঠা সময়ের মতো সক্রিয় অস্তিত্ব নেই।

আছেন শুধু ফেরদৌস আহমদ কোরেশী। তাকেও কোথাও দেখা যায় না। তৎকালীন সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ ২০০৭ সালের ২৩ জুন যুক্তরাষ্ট্রে একটি ডিনার পার্টির আহবান করে নতুন ব্র্যান্ডের গণতন্ত্র ‘জাগো বাংলাদেশ’ গড়ার ঘোষণা দেন। বিদেশে এই দলের তৎপরতাও শুরু হয়। নতুন গণতন্ত্রের ঝাণ্ডা উড়িয়ে মাঠে তারা নামলেও কিছুদিনের মধ্যেই হারিয়ে যান।

এ দলের কোনো ঠিকানা নেই, শুধু বিদেশেই তারা তৎপর হয়েছিল। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে স্বঘোষিত নেতা হয়েছিলেন এফবিসিসিআই সভাপতি ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমান। তিনি ‘সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আন্দোলন’ নামে দলও গঠন করেন। নির্বাচনে অংশ নেন। তিনিসহ তার দলের সব প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।

পরে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তৎকালীন বিডিআর প্রধান হন মেজর জেনারেল আলম ফজলুর রহমান। পাদুয়ায় তার ভূমিকা আলোচনায় আসে। পরবর্তী সময়ে তিনি চাকরি থেকে অবসর নিয়ে হঠাৎ স্বঘোষিত নেতা বনে যান। তিনিও দল গঠন করেন।

যার নাম দেন ‘নির্দলীয় জন আন্দোলন’। অবশ্য সামরিক এই কর্মকর্তার দল আলোর মুখ দেখেনি। কোনো নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করেননি। ওয়ান-ইলেভেন ঘিরে তৎপর হয়েছিলেন সেনা কর্মকর্তা কর্নেল (অব.) ফরিদ। সম্প্রতি তিনি আবার তৎপর হয়েছেন।

নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে রাজধানীর দেয়ালে পোস্টার দিয়েছেন। তাতে বলা আছে আমি কর্নেল (অব.) ফরিদ বলছি…। ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এরশাদের জাতীয় পার্টির পাশাপাশি নির্বাচনে অংশ নেয় আ স ম রবের ২৩ দলীয় জোট। এই জোটের আ স ম রব ছাড়া বাকি প্রায় সবাই এ রকম স্বঘোষিত নেতা। ২৩ দলীয় জোটের কেউ কেউ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে আবার কেউ কেউ বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটে অবস্থান নিয়েছে।

এই জোটের জাসদ (রব) কোনো জোটেই নেই। জাসদ (শাজাহান) বিএনপিতে, ফ্রিডম পার্টি অস্তিত্ব সঙ্কটে, ভাসানী ন্যাপ, লেবার পার্টি, বাংলাদেশ পিপলস পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে অবস্থান করছে। গণআজাদী লীগ, গণতন্ত্রী পার্টি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে অবস্থান করছে। বাকি দলগুলোর কোনো রাজনৈতিক অবস্থান নেই। ১৮ দলীয় জোটে অধিকাংশ দলের অবস্থা স্বঘোষিত নেতাদের মতো।

এখানে বিএনপি, জামায়াত ইসলামী মূল চালিকাশক্তি। ইসলামী ঐক্যজোট (আমিনী), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), এলডিপি, খেলাফত মজলিস, জাগপা একটি আসনভিত্তিক দল। সারাদেশে তাদের অবস্থান নেই। এনপিপি ও কল্যাণ পার্টি এক নেতার দল। তাদেরও কর্মী ও সমর্থক নেই।

এছাড়া মুসলিম লীগ, লেবার পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাপ, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি, ইসলামিক পার্টি, ডেমোক্রেটিক লীগ, পিপলস লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও ভাসানী ন্যাপ অনেকটা প্যাড ও রাবার স্ট্যাম্পসর্বস্ব দল। এসব দলের নেতাদের স্বঘোষিত নেতা বললে অত্যুক্তি হবে না। ১৮ দলীয় জোটের সমাবেশ, মিছিল, মিটিংয়ে এসব দলের ব্যানারে কোনো কর্মী-সমর্থক দেখা যায় না। ১৮ দলীয় জোটের চারটি দল বাদে বাকি ১৪টি দলের ভোটের অবস্থান খুবই করুণ। ’৯১, ’৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যালোচনায় এই ১৪ দল ভোট পেয়েছে মোট প্রাপ্ত ভোটের শতকরা হিসাবে ১ দশমিক ২৩ ভাগ (তথ্যসূত্র : বাংলাদেশে নির্বাচন ১৯৭০ থেকে ২০০৮, এএসএম শামসুল আরেফিন)।

ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে একাধিক স্বঘোষিত নেতার আবির্ভাব ঘটে। এদের মধ্যে রয়েছেন ড. তুহিন মালিক, দেশপ্রেমিক জনগণের মঞ্চের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক, গড়ব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও মরহুম বিএনপি নেতা ওবায়দুর রহমানের স্ত্রী প্রফেসর শাহেদা, ফরওয়ার্ড পার্টির আহ্বায়ক আ ব ম মোস্তফা আমিন। তারা সবাই রাজধানীর দেয়ালে পোস্টার দিয়েছেন। এদের মধ্যে ডক্টর তুহিন মালিক প্রার্থী হয়েছিলেন সম্মিলিত নাগরিক কমিটির ব্যানারে। তিনি পোস্টারে তার পরিচয় বর্ণনা করেছেন।

পোস্টারে লেখা আছে ডক্টর তুহিন মালিক, সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী, ব্রিটিশ সরকারের স্কলার, আমেরিকান ডক্টরেট, সাবেক জিএস, ডাকসু সংগ্রহশালা, সভাপতি ওল্ড ঢাকা কমিউনিটি, সাবেক উপ-মহাসচিব ঢাকা সমিতি, সাবেক ডিরেক্টর, ঢাকা চেম্বার অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, কো-চেয়ারম্যান পুরান ঢাকা উন্নয়ন বিষয়ক স্পেশাল কমিটি, মানবাধিকার স্বর্ণপদক ২০০৭ প্রাপ্ত, সভাপতি ঢাকা যুব ফোরাম, সাবেক সমণ্নয়কারী বাংলাদেশ বার কাউন্সিল, সাবেক কনসালট্যান্ট বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল। আইনি বাধ্যবাধকতায় ডিসিসি নির্বাচন স্থগিত হয়ে পড়ায় তার দলের কোনো তৎপরতা দেখা যায় না। তার ব্যক্তিগত তৎপরতাও বন্ধ হয়ে গেছে। ফরওয়ার্ড পার্টির আহবায়ক আ ব ম মোস্তফা আমিন তার পোস্টারে লিখেছেন ‘জনকল্যাণে অঙ্গীকারাবদ্ধ প্রগতিশীল রাজনীতি’। তার প্রচারাভিযান হচ্ছে ‘মারমুখী দ্বিদলীয় জোটের রাজনীতি পরিহার করুন।

’ তিনি অবশ্য তার রাজনৈতিক দলের ঠিকানা দিয়েছেন- বাড়ি-১, রোড-২, ধানমন্ডি। স্বঘোষিত নেতা হিসেবে মাঠে নেমেছেন বিএনপির সাবেক মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মরহুম কেএম ওবায়দুর রহমানের স্ত্রী প্রফেসর শাহেদা ওবায়েদ। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হন। মনোনয়ন পান তার কন্যা শ্যামা ওবায়েদ। এর পরই তিনি বিএনপি ছেড়ে নতুন দল গড়েন।

যার নাম দেন ‘গড়ব বাংলাদেশ’। রাজধানীতে মাঝে মাঝে পোস্টার সাঁটানো ও টক শোতে উপস্থিত হওয়া ছাড়া তার কোনো অবস্থান খুঁজে পাওয়া যায় না। গড়ব বাংলাদেশে শাহেদা ওবায়েদ ছাড়া দ্বিতীয় নেতার নাম কামরুল হাসান নাসিম। এ দলে কোনো কর্মী নেই বললেই চলে। ‘দেশপ্রেমিক জনগণের মঞ্চের’ ব্যানারে তৎপর হয়েছেন প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক।

তিনি এই দলের চেয়ারম্যান। ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে তার রাজনীতিতে আগমন। টক শোতে উপস্থিতি ছাড়া তার কোনো রাজনৈতিক তৎপরতা খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে ব্যক্তিগতভাবে তিনি যেখানেই যান সেখানেই আগামী নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে দোয়া চান। আলোচিত নির্বাচনপাগল স্বঘোষিত নেতা কৃষক মোঃ সাদেক।

গত জোট সরকারের সময় তিনি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন। তিনি অবশ্য রাজনীতি করেন কৃষকের মুক্তির স্লোগান দিয়ে। জাতীয় সংসদের সব উপনির্বাচনে তিনি প্রার্থী হন। বিশেষ করে বিরোধী দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে তিনি সেই সুযোগ নিয়ে নির্বাচন করেন। এ পর্যন্ত ৯টি উপনির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।

সব নির্বাচনে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। তার দলের কোনো ঠিকানা নেই। পাবলিক হেলপ পার্টির (পিএইচপি) ব্যানারে রাজধানীতে দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার লাগিয়েছেন এম এ সবুর। হাইওয়ে প্যালেস ডেভেলপার কোম্পানির মাধ্যমে মাত্র ২০ লাখ টাকায় ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিতে ইচ্ছা প্রকাশ করে পোস্টার ছেপেছেন। রাজধানীর মানুষের দুঃখ-দুর্দশার কথা মাথায় রেখে তিনি মাত্র ২০ লাখ টাকায় ৭০০ বিশ্ববাসীকে ফ্ল্যাট দিতে চান।

এই ফ্ল্যাটের দামের ১০ লাখ টাকা অগ্রিম আর ১০ লাখ টাকা কিস্তিতে পেমেন্ট দিতে হবে। রাজউক সূত্রে জানা যায়, হাইওয়ে প্যালেস প্রকল্পে ৭০০ বিশ্ববাসীর বসবাসের সুযোগ হবে। এমন প্রকল্পের কোনো অনুমোদন তারা দেননি। রাজউকের অনুমোদন নেই অথচ তারপরও তার প্রচারণা থেমে নেই। এ সংক্রান্ত ব্যাপারে দুবার সমাবেশ করার ইচ্ছাও প্রকাশ করেন।

কিন্তু একবারও সমাবেশ করতে পারেননি। বিস্তারিত:  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.