আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সক্রেটিস - পর্ব ৭

এসো নীপবনে সক্রেটিস পর্ব- ১ সক্রেটিস পর্ব- ২ সক্রেটিস পর্ব- ৩ সক্রেটিস - পর্ব ৪ (এটাকে প্রেম পর্বও বলা যায়) সক্রেটিস পর্ব- ৫ সক্রেটিস পর্ব- ৬ শায়মা আপিকে কথা দিয়েছিলাম, আমি সক্রেটিস নিয়ে লিখবো। সেই কথা রাখতেই এই লেখা শুরু করা। এই পর্বে একটু মজা করা যাক। সক্রেটিস যেমন সারাজীবন সবাইকে সত্য এবং সুন্দরের পথে ডেকেছেন। তেমনি তার অদ্ভুত অদ্ভুত কিছু কথাও প্রচলন আছে।

অবশ্য এগুলো সক্রেটিসের কথা না প্লেটোর কথা তা স্পষ্ট না। কেননা প্লেটোর 'রিপাবলিক' এ প্লেটো যে সক্রেটিস কে এঁকেছেন তা অনেকের মতে প্রকৃত সক্রেটিসের চেয়ে প্লেটোর কাল্পনিক সক্রেটিস বলে মনে করেন। সে যাই হোক। তাঁর মতে কুকুর একজন দার্শনিক। কিভাবে? সক্রেটিস বলছেন, 'নতুন যে গুণের কাথা আম বলছি, কুকুরের চরিত্রে তারও আমরা সাক্ষাৎ পাই।

' গ্লকন বললেন, নতুন কী গুণের কথা বলছ তুমি? ঃআমি বুঝিয়ে বলছি। কুকুরের স্বভাবটি লক্ষ করো। অপরিচিত কাউকে যখন কুকুর দেখে তখন সে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে; আবার পরিচিত কাউকে যখন কুকুর দেখে তখন সে আহ্লাদে আটখানা হয়ে পড়ে। অথচ অপরিচিত লোকটি যে তার কোনো ক্ষতি করেছে এমন নয়, আর পরিচিত ব্যক্তিও হয়তো তার কোনো উপকার সাধন করেনি। কুকুরের-চরিত্রের এই বৈশিষ্ট্য কি তোমার চোখে অদ্ভুত বলে বোধ হয়নি? ঃ বিষয়টিকে আমি পূর্বে অবশ্য এভাবে দেখিনি।

কিন্তু তোমার বক্তব্যের যথার্থ্যকে আমি স্বীকার করি সক্রেটিস। ঃ কুকুরের সহজাত এই বোধশক্তিকে অবশ্যই তুমি উত্তম বলবে। আমি বলব, এ-কারণে সে একজন খাঁটি দার্শনিক বলে পরিগণিত হতে পারে। ঃ কুকুরটা তোমার দার্শনিক হয়ে গেল! ঃ হ্যাঁ, আশ্চর্যের কী আছে? কুকুর কেবল মুখ দেখেই জানা-অজানার ভিত্তিতে সুহৃদ আর শত্রুতে পার্থক্য করে ফেলে-এটা তার কম গুণের কথা! যে পশু জানা-অজানার ভিত্তিতে তার পছন্দ এবং অপছন্দকে নির্দিষ্ট করে সে যে জ্ঞানের একজন প্রেমিক, একথা আমাদের মানতে হবে। ঃ হ্যাঁ, সক্রেটিস, সে নিশ্চয়ই জ্ঞানপ্রেমিক।

ঃ আবার দেখো জানা বা শিক্ষার আগ্রহ হচ্ছে জ্ঞানের প্রতি প্রেমস্বরূপ। এবং জ্ঞানের প্রেমিকই হচ্ছে দার্শনিক। সুতরাং কুকুর ও দার্শনিক। এটা আসলে উদাহরণ দেয়ার জন্য । কুকুরকে দার্শনিক বানিয়ে তো সক্রেটিসের তেমন লাভ নেই।

কিন্তু এই একই গুণ যদি মানুষের থাকে, বন্ধুজনের প্রতি যে বিনম্র, স্বভাবগতভাবে জ্ঞানেরও সে প্রেমিক হতে বাধ্য। কিন্তু এই স্বভাব, শুধু মুখ দেখেই জানা-অজানার ভিত্তিতে সুহৃদ আর শত্রুতে পার্থক্য করতে পারার গুণ মানুষের মধ্যে কার আছে? আছে পুলিশের। তবে পুলিশও কি দার্শনিক? সক্রেটিসের তত্ত্ব অনুযায়ি বলতে হচ্ছে অবশ্যই পুলিশ দার্শনিক। কিন্তু এই কাজটি যদি সে করতে না পারে তবে সে দার্শনিকও নয়, পুলিশও নয়। আবার, দেখুন, আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতারা যে হর হামেশাই মিথ্যা কথা বলেন, কেন? কারণ, তারা সক্রেটিস এর কথা অক্ষরে অক্ষরে মান্য করেন।

সক্রেটিস নিজেই বলেছেন, 'মানুষের মধ্যে কারু যদি মিথ্যা বলার অধিকার থাকে তবে সে-অধিকার কেবল রাষ্ট্রের শাসকবর্গেরই থাকতে পারে। রাষ্ট্রের শাসক শত্রুর মোকাবেলায় কিংবা নাগরিকদের শাসনের ক্ষেত্রে জনস্বার্থে মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করতে পারবে। মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণের অধিকার অপর কারুর থাকবে না। ' এখানে আমরা আমজনতা যারা শাসিত তাদের আবার মিথ্যা বলার কোনো সুযোগ নেই। শুধু তাই নয়, সক্রেটিস বলেছেন, 'শাসক যদি দেখে, সে ছাড়া অপর কেউ মিথ্যা বলছে তা হলে তাকে রাষ্ট্রবিরোধী হিসাবে দন্ডদানের তার অধিকার থাকবে।

' তবে বুঝুন ঠেলা। প্লেটোর রাষ্ট্রে কবিদের কোনো স্থান নেই। কেন? কারণ কবিরা একই সাথে অনেক চরিত্র চিত্রন করেন। কিন্তু, চরিত্র চিত্রনের সময় কবিকে বিভিন্ন চরিত্র আঁকতে হয়। যা একজন মানুষের পক্ষে বিভিন্ন মানুষের চরিত্র অনুধাবন করা অসম্ভব।

আবার কবি একই সাথে মিলনান্তক আবার বিয়োগান্তক রচনা করছেন। যেহেতু একটি মানুষ কেবল একটি কাজই সুচারুরূপে সম্পন্ন করতে পারে, একাধিক কাজ নয়, সেহেতু যদি কেউ একাধিক কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করে তা হলে সে কোনোটিতেই তেমন সুনাম অর্জনে সক্ষম হবে না। আবার, এই যে মিলনান্তক বা বিয়োগান্তক নাটক সবই অনুকারী কাব্য। আর এই অনুকারী কাব্য নিয়ে সক্রেটিসের কথা হলো, 'অনুকারী কাব্যকলা সম্পর্কে আমাদের একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে। ঘটনার বর্ণনায় কবিদের কি অনুকারী রীতি অনুসরণ করতে দেওয়া হবে? যদি কবিদের তা করতে দেওয়া হয় তবে তা কি সমগ্র রচনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে, না তার অংশবিশেষের উপর? যদি অংশবিশেষের উপর হয় তা হলে রচনার কোন অংশে এ-রীতি ব্যবহৃত হবে? অথবা অনুকারী-রীতি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করে দেওয়া হবে?' এর মানে কি দাড়াল? এর মানে দাড়ালো কবির কোনো প্রয়োজন নেই সক্রেটিসের রাষ্ট্রে (অনেকেই বলেছেন এটা আসলে সক্রেটিসের নয়, প্লেটোর রাষ্ট্র)।

আজ এই পর্যন্তই থাক। প্রচন্ড খিদে পেয়েছে। আরো মজার মজার জিনিস আছে। তবে পরবর্তী পর্বে আমরা তার বিখ্যাত উক্তি গুলো কি, দেখার চেষ্টা করবো।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।