আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে সক্রেটিস (২)

আগের পর্ব সক্রেটিসঃ এখন আমার মাননীয় বিচারকবৃন্দ আমি তোমাদের প্রশ্নের জবাব দিব এবং দেখাব যে একজন সত্যিকারের দার্শনিকের মৃত্যুকালে উল্লসিত হবার কারণ আছে, মৃত্যু পরবর্তী জীবনে সে সর্বোত্তম পুরষ্কারের আশা করতে পারে। সিবিস এবং সিমিয়াস কিভাবে সেটা সম্ভব তা আমি তোমাদের নিকট ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করব। আমি মনে করি একজন সত্যিকারে দর্শনের ছাত্রকে অন্যেরা ভুল বুঝতে পারে। তারা বুঝতে পারে না যে সে সবসময় মৃত্যু কামনা করছে। এটা যদি সত্য হয় তবে কেন মৃত্যু উপস্থিত হলে সে দুঃখিত হবে যা সে সারাজীবন ধরে চেয়েছে, কামনা করেছে? সিমিয়াসঃ যদিও হাসার বিষয় না, তারপরেও না হেসে পারছি না যখন আমি ভাবি দুনিয়ার মানুষজন এসব শুনলে কি বলবে।

তারা বলবে এটা খুবই সত্য এবং আমাদের নিজেদের লোকেরা তাদের সাথে একমত হবে, দার্শনিকেরা যে জীবন চায় তা আসলে মৃত্যু , তারা সবসময় দেখেছে তাদের প্রাপ্য মৃত্যু পেতে যা তারা সবসময় কামনা করে। সক্রেটিসঃ এবং তারা যা বলেছে সেটা সঠিক , ব্যতিক্রম শুধু 'তারা দেখেছে' এ শব্দগুলোয়। তারা জানে না দার্শনিকের মৃত্যুর স্বরুপ কি যেটা সত্যকারে দার্শনিক কামনা করে। কিন্তু তাদের কথা বাদ দাও, আমাদের নিজেদের নিয়ে কিছু বলা যাকঃ আমরা কি বিশ্বাস করি যে মৃত্যু বলে কিছু একটা আছে? সিমিয়াসঃ নিশ্চিত হবার জন্য বলা। মৃত্যু কি দেহ এবং আত্মার পৃথক হবার বাইরে অন্য কিছু? মৃত্যু মানে এ পৃথকীকরণ সম্পূর্ণ হওয়া; যখন আত্মা স্বয়ং বিরাজমান এবং শরীর হতে পৃথক এবং শরীর আত্মা হতে পৃথক- সেটাই মৃত্যু? সক্রেটিসঃ এক্সাক্টলি সেটাই, অন্যকিছু নয়।

আরেকটা প্রশ্নের ব্যাপারে তোমাদের অভিমত জানা দরকার যেটা আমাদের বর্তমান প্রশ্নের উত্তর দিতে আলোকপাত করবে। তোমরা কি মনে কর দার্শনিকদের আনন্দ-উল্লাসের ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়া উচিত- যেমন খাবার এবং পানের আনন্দ? সিমিয়াসঃ অবশ্যই না। সক্রেটিসঃ প্রেমের যে আনন্দ সে ব্যাপারে কি তাদের গুরুত্ব দেয়া উচিত? সিমিয়াসঃ অবশ্যই না। সক্রেটিসঃ শারীরিক অন্যান্য ভোগবিলাস যেমন দামী পোষাক, স্যান্ডাল বা অলংকারের প্রতি কি তাদের মোহ থাকা উচিত? প্রাকৃতিক প্রয়োজন ব্যতীত অতিরিক্ত জিনিসে ঘৃণাই কি তার উচিত কর্ম নয়? তোমরা কি বল? সিমিয়াসঃ আমার মতে সত্যিকারের দার্শনিক এসব ঘৃণা করা উচিত। সক্রেটিসঃ তোমরা কি তাহলে বলবে না, সে সম্পূর্ণভাবে আত্মায় নিমগ্ন শরীরে তার মন নেই? সে যতদূর সম্ভব শারীরিক বিষয় বাদ দিয়ে আত্মায় রত হয়ে থাকবে।

সিমিয়াসঃ সেটা সত্য। এরকম বিষয়ের ক্ষেত্রে, অন্যসব মানুষের চেয়ে দার্শনিকেরা চাইবে শরীর থেকে আত্মাকে বিচ্ছিন্ন করতে। সক্রেটিসঃ খুবই খাঁটি কথা। কিন্তু সিমিয়াস বাকি দুনিয়া মনে করে যে জীবনে শরীরের সুখ নাই সেটা কোন জীবনই নয়। কিন্তু যে শরীরের সুখের চিন্তা করে না সে তাদের কাছে মৃতের মত।

সিমিয়াসঃ খুবই সত্য কথা। সক্রেটিসঃ তাহলে সত্য জ্ঞানার্জনের শরীর কি সহায়ক না বাধা ? আমি বলতে চাচ্ছি দৃষ্টি এবং শ্রবণ ক্ষমতার মাধ্যমে কোন সত্য পাওয়া যায় কি? কবিরা যেমন আমাদের সবসময় বলে, এগুলো কি আমাদের অযথার্থ সাক্ষ্য দেয় না? এবং এরা যদি অসঠিক এবং নির্ভরযোগ্য না হয় তাহলে অন্যান্য ইন্দ্রিয় সম্বন্ধে কি বলা যায়? তোমরা কি বলবে ওগুলো সবার সেরা? সিমিয়াসঃ অবশ্যই সক্রেটিসঃ তাহলে আত্মা যখন শরীরে অবস্থান করে সত্য জানে সে অবশ্যই ইন্দ্রিয় দ্বারা প্রতারিত হয়। সিমিয়াসঃ হ্যা সেটা সত্য। সক্রেটিসঃ তাহলে যদি জানান দিতে হয় কেবলমাত্র চিন্তায় তা সম্ভব? সিমিয়াসঃ হ্যাঁ। সক্রেটিসঃ এবং চিন্তা তখনই সর্বোত্তম যখন মন নিজেতে নিবদ্ধ হয়, অর্থাৎ একমন হয়, যখন কোন শব্দ, চিত্র, ব্যথা , আনন্দ কোনকিছুই তাকে বিচলিত করে না।

শরীর নিয়ে যখন কিছু করার থাকে না, কোন শারীরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বোধ হয় না, সমস্ত চেতনা আত্মরত। সিমিয়াসঃ এটা সত্য কথা। সক্রেটিসঃ এবং এভাবে দার্শনিক তার শরীরকে অসম্মান করে; তার আত্মা শরীর থেকে দূরে সরে যায় এবং একাকী নিজে রত থাকতে চায়? সিমিয়াসঃ সেটা সত্য। সক্রেটিসঃ কিন্তু আরেকটা কথা আছে সিমিয়াসঃ চুড়ান্ত ন্যায়বিচার বলে কিছু আছে কি? সিমিয়াসঃ নিশ্চিতভাবে আছে। সক্রেটিসঃ এবং পরম সুন্দর এবং পরম ভাল? সিময়াসঃ অবশ্যই।

সক্রেটিসঃ তুমি নিজে এসব দেখেছ? সিমিয়াসঃ অবশ্যই না। সক্রেটিসঃ তুমি শরীরের অন্যকোন ইন্দ্রিয় দিয়ে এদের উপলদ্ধি করেছ? আমি শুধু এসব নিয়েই বলছি না, পরম মহত্ত্ব, শক্তি, স্বাস্থ্য এবং অন্যসবকিছুর পরম অবস্থা নিয়েও একই প্রশ্ন। শারীরিক অঙ্গ দিয়ে এদের বাস্তব অবস্থা কি তুমি কখনও উপলদ্ধি করেছ? অথবা এসবের জ্ঞানার্জনের প্রক্রিয়ায় বাস্তবতার বিভিন্ন অবস্থার কাছাকাছি যা মানসিক দৃষ্টিতে সম্ভব? সিমিয়াসঃ অবশ্যই। সক্রেটিসঃ যে শুধুমাত্র মন নিয়ে এদের (পরম সত্য, পরম ভাল) কাছে যায় একমাত্র তাদের কাছেই সত্য তার সর্বোচ্চ বিশুদ্ধতা নিয়ে ধরা দেয়। যখন দৃষ্টি বা শ্রবণ শক্তি বা অন্যকোন ইন্দ্রিয় কোন রকম ঝামেলা পাকায় না, তখন মনের আলো তার স্বচ্ছতায় সত্যকে দেখতে পায়।

শারীরিক অনুভূতি এবং শরীর তখন শুধুমাত্র বিরক্তিকর উপাদান, শুধুমাত্র আত্মাকে জ্ঞানার্জনে বাধা দেয়। যদি মানুষের পক্ষে সম্ভব হয় তবে এই ধরণের লোকই একমাত্র অস্তিত্বের জ্ঞান অর্জনে সক্ষম নয় কি? সিমিয়াসঃ এর মধ্যে প্রশংসণীয় সত্য রয়েছে। (ক্রমশ...) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.