আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো ... ট্রিবিউট টু রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ

মনে ভেতর দ্বিধা, পা বাড়াতে বাঁধা, শেকল পড়া পায়, কদিন বাঁচা যায় । বেঁচে থাকা যে দায়। দ্বিধা দ্বন্দ্ব ভুল, মনের আগল খোল, রক্ত আবির অঙ্গে মেখে " সূর্যস্নানে চল " রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ । নামটা শুনলেই কানে বেজে ওঠে " ভালো আছি ভালো থেকো / আকাশের ঠিকানায় চিঠি লেখো / দিও তোমার মালা খানি / বাউলের ঐ মনটারে / আমার ভেতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে / আছো তুমি হৃদয় জুড়ে … । " গতকাল ছিল ২১ শে জুন ।

বছরের বড় দিন । ১৯৯১ সালের আজকের এই দিনে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে আমাদের ছেঁড়ে চলে গিয়েছিলেন ” প্রতিবাদী রোম্যান্টিক ” এই কবি । যিনি চালু করেছিলেন “ জিন্স-পাঞ্জাবীর ” কম্বিনেশন । হুইস্কির বাংলা নাম দিয়েছিলাম ” সোনালি শিশির “। সব থেকে বড় কথা ১৯৭৫ থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিবাদ করেছেন।

যার হাত ধরেই ১৯৮৭ সালে শুরু হয়েছিল ” জাতীয় কবিতা উৎসব “। রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫৬ সালে ১৬ অক্টোবর। মূল বাড়ি বাগেরহাট জেলার মংলা উপজেলার মিঠেখালি গ্রামে । ১৯৭৩ সালে এসএসসি এবং ১৯৭৫ সালে এইচএসসি পাস করেন তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় অনার্স এবং মাস্টার্স করেন । ১৯৮১ সালে বর্তমানে তুমুল জনপ্রিয় নারীবাদী লেখিকা ” তসলিমা নাসরিনকে ” ভালোবেসে বিয়ে করেন ।

১৯৮৬ সালে ইতি টানেন সেই দাম্পত্য জীবনের । নিজেকে বাঁধেননি কোন ভাবেই। একটা সময় আইনি ভাবে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে ” মানবধর্ম ” গ্রহন করার জন্য কথা হয় উকিলের সাথে। যা শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি । মৃত্যু তাকে গ্রাস কর ফেলেছে ।

আলসারের রোগ দানা বাঁধে শরীরে। ১৯৯১ সালের ২০ জুন হসপিটাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাসায় ফিরে আসলেও পরদিন ২১ জুন সকালেই নিঃসঙ্গ জীবনের ইতি টেনেছিলেন এই ” প্রতিবাদী রোম্যান্টিক কবি ” । এরশাদ বিরোধী ” সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ” গড়ে তোলেন রুদ্র। ছাত্র ইউনিয়নের সাথে জড়িত ছিলেন ওতপ্রোত ভাবে । কবিতার মাধ্যমে এবং সশরীরে অন্যায়ের বিরুদ্ধে করেছেন প্রতিবাদ।

চাকরির বন্ধনে নিজেকে বাঁধেননি রুদ্র। বড্ড বাউন্ডুলে ছিলেন। জীবন নিয়ে ছিল তার খেলা। যেমন ইচ্ছা জীবনকে চালিয়ে নিয়ে গেছেন। তাই মনে হয় কবিতার কাছে এখনো বাঁধা, মানুষের জীবনের সাথে তাইতো বেঁধে দিয়েছেন নিজের জীবন ।

হুইস্কির বাংলা নাম দিয়েছিলেন ” সোনালি শিশির ” তারপর সোনালি শিশির নামে একটা ছোট গল্প লিখেছিলেন । লিখেছেন অনেক প্রতিবাদী কবিতা, রোম্যানটিক কবিতা। প্রকাশিত হয় কবিতার বই উপদ্রুত উপকূল (১৯৭৯) ফিরে পাই স্বর্ণগ্রাম ( ১৯৮২ ) মানুষের মানচিত্র ( ১৯৮৪ ) ছোবল (১৯৮৬) গল্প (১৯৮৭) দিয়েছিলে সকল আকাশ (১৯৮৮) মৌলিক মুখোশ (১৯৯০) ইউটিউব ভিডিও ঃ ভালো আছি ভালো থেকো চিঠি অভিমানের খেয়া রুদ্রকে নিয়ে তসলিমা নাসরিনের লেখা " চিঠি " ______________________________________________________________ রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ’র কয়েকটি কবিতা । আমার ভিতরে বাহিরে অন্তরে অন্তরে আমার ভিতরে বাহিরে অন্তরে অন্তরে , আছো তুমি হৃদয় জুড়ে। ঢেকে রাখে যেমন কুসুম, পাপড়ির আবডালে ফসলের ঘুম।

তেমনি তোমার নিবিঢ় চলা, মরমের মূল পথ ধরে। পুষে রাখে যেমন কুসুম, খোলসের আবরণে মুক্তোর ঘুম। তেমনি তোমার গভীর ছোঁয়া, ভিতরের নীল বন্দরে। ভাল আছি ভাল থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো। দিয়ো তোমার মালাখানি, বাউলের এই মনটারে।

আমার ভিতরে বাহিরে…… ____________________________________________________________ ভালবাসার সময় তো নেই ভালবাসার সময় তো নেই ব্যস্ত ভীষন কাজে, হাত রেখো না বুকের গাড় ভাজে। ঘামের জলে ভিজে সাবাড় করাল রৌদ্দুরে, কাছএ পাই না, হৃদয়- রোদ দূরে। কাজের মাঝে দিন কেটে যায় কাজের কোলাহল তৃষ্নাকে ছোয় ঘড়ায় তোলা জল। নদী আমার বয় না পাশে স্রোতের দেখা নেই, আটকে রাখে গেরস্থালির লেই। তোমার দিকে ফিরবো কখন বন্দী আমার চোখ পাহারা দেয় খল সামাজিক নখ _____________________________________________________________ দূরে আছো দূরে তোমাকে পারিনি ছুঁতে, তোমার তোমাকে- উষ্ণ দেহ ছেনে ছেনে কুড়িয়েছি সুখ, পরস্পর খুড়ে খুড়ে নিভৃতি খুঁজেছি।

তোমার তোমাকে আমি ছুঁতে পারি নাই। যেভাবে ঝিনুক খুলে মুক্ত খোঁজে লোকে আমাকে খুলেই তুমি পেয়েছো অসুখ, পেয়েছো কিনারাহীন আগুনের নদী। শরীরের তীব্রতম গভীর উল্লাসে তোমার চোখের ভাষা বিস্ময়ে পড়েছি- তোমার তোমাকে আমি ছুঁতে পারি নাই। জীবনের প’রে রাখা বিশ্বাসের হাত কখন শিথিল হয়ে ঝ’রে গেছে পাতা। কখন হৃদয় ফেলে হৃদপিন্ড ছুঁয়ে বোসে আছি উদাসীন আনন্দ মেলায়- তোমাকে পারিনি ছুঁতে-আমার তোমাকে, ক্ষাপাটে গ্রীবাজ যেন, নীল পটভূমি তছ নছ কোরে গেছি শান্ত আকাশের।

অঝোর বৃষ্টিতে আমি ভিজিয়েছি হিয়া- তোমার তোমাকে আমি ছুঁতে পারি নাই। । ____________________________________________________________ এক গ্লাস অন্ধকার হাতে এক গ্লাস অন্ধকার হাতে নিয়ে বসে আছি। শুন্যতার দিকে চোখ, শুন্যতা চোখের ভেতরও– এক গ্লাস অন্ধকার হাতে নিয়ে বসে আছি। বিলুপ্ত বনস্পতির ছায়া, বিলুপ্ত হরিণ।

মৌসুমী পাখির ঝাঁক পালকের অন্তরালে তুষারের গহন সৌরভ ব’য়ে আর আনে না এখন। দৃশ্যমান প্রযুক্তির জটাজুটে অবরুদ্ব কাল, পূর্ণিমার চাঁদ থেকে ঝ’রে পড়ে সোনালী অসুখ। ডাক শুনে পেছনে তাকাই– কেউ নেই। এক গ্লাস অন্ধকার হাতে নিয়ে বসে আছি একা…. সমকালীন সুন্দরীগণ অতিদ্রুত উঠে যাচ্ছে অভিজাত বেডরুমে, মূল্যবান আসবাবপত্রের মতন নির্বিকার। সভ্যতা তাকিয়ে আছে তার অন্তর্গত ক্ষয় আর প্রশংসিত পচনের দিকে।

উজ্জ্বলতার দিকে চোখ, চেয়ে আছি– ডীপ ফ্রিজে হিমায়িত কষ্টের পাশেই প্রলোভন, অতৃপ্ত শরীরগুলো খুঁজে নিচ্ছে চোরাপথ– সেক্সড্রেন। রুগ্নতার কাঁধে হাত রেখে সান্ত্বনা বিলাচ্ছে অপচয়– মায়াবী আলোর নিচে চমৎকার হৈ চৈ, নীল রক্ত, নীল ছবি জেগে ওঠে একখন্ড ধারালো ইস্পাত–চকচকে, খুলির ভেতরে তার নড়াচড়া টের পাই শুধু। ইতিমধ্যে ককটেলে ছিন্নভিন্ন পরিচয়,সম্পর্ক,পদবী– উজ্জ্বলতার ভেতরে ফণা তুলে আর এক ভিন্ন অন্ধকার। গ্লাসভর্তি অন্ধকার উল্টে দিই এই অন্ধকারে। ____________________________________________________________ বাতাসে লাশের গন্ধ আজো আমি বাতাসে লাশের গন্ধ পাই আজো আমি মাটিতে মৃত্যূর নগ্ননৃত্য দেখি, ধর্ষিতার কাতর চিৎকার শুনি আজো আমি তন্দ্রার ভেতরে… এ দেশ কি ভুলে গেছে সেই দু:স্বপ্নের রাত, সেই রক্তাক্ত সময় ? বাতাসে লাশের গন্ধ ভাসে মাটিতে লেগে আছে রক্তের দাগ।

এই রক্তমাখা মটির ললাট ছুঁয়ে একদিন যারা বুক বেঁধেছিলো। জীর্ণ জীবনের পুঁজে তারা খুঁজে নেয় নিষিদ্ধ আধাঁর, আজ তারা আলোহীন খাঁচা ভালোবেসে জেগে থাকে রাত্রির গুহায়। এ যেন নষ্ট জন্মের লজ্জায় আরষ্ট কুমারী জননী, স্বাধীনতা – একি হবে নষ্ট জন্ম ? একি তবে পিতাহীন জননীর লজ্জার ফসল ? জাতির পতাকা খামচে ধরেছে আজ পুরোনো শকুন। বাতাশে লাশের গন্ধ নিয়ন আলোয় তবু নর্তকীর দেহে দুলে মাংসের তুফান। মাটিতে রক্তের দাগ - চালের গুদামে তবু জমা হয় অনাহারী মানুষের হাড় এ চোখে ঘুম আসেনা।

সারারাত আমার ঘুম আসেনা- তন্দ্রার ভেতরে আমি শুনি ধর্ষিতার করুণ চিৎকার, নদীতে পানার মতো ভেসে থাকা মানুষের পচা লাশ মুন্ডহীন বালিকার কুকুরে খাওয়া বিভৎস্য শরীর ভেসে ওঠে চোখের ভেতরে। আমি ঘুমুতে পারিনা, আমি ঘুমুতে পারিনা… রক্তের কাফনে মোড়া – কুকুরে খেয়েছে যারে, শকুনে খেয়েছে যারে সে আমার ভাই, সে আমার মা, সে আমার প্রিয়তম পিতা। স্বাধীনতা, সে আমার – স্বজন, হারিয়ে পাওয়া একমাত্র স্বজন - স্বাধীনতা – আমার প্রিয় মানুষের রক্তে কেনা অমূল্য ফসল। ধর্ষিতা বোনের শাড়ী ওই আমার রক্তাক্ত জাতির পতাকা। ____________________________________________________________ শ্রদ্ধা জানাই এই কবিকে ।

নিজেকে সমর্পণ করেছিলেন পরিবর্তনের জন্য … এখানে একটা ফটোকপি রেখে দিলাম ।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৩৫ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।