আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রোহিঙ্গারা যদি উগ্র, অপরাধপ্রবণ হয়ে থাকে তবে আমরা স্রেফ একেকটা জানোয়ার!

মনে প্রাণে ঘৃণা করি রাজাকার। পাকিস্তানের দালালি করার শখ থাকলে এখানে ল্যাদাতে না আসার জন্য বলা হচ্ছে। ছবিটি বড় করে দেখতে এখানে ক্লিক করুন। মায়ানমারের রোহিঙ্গাদের দিয়ে আজ পত্রিকায় একটা খবর পড়ার পর এই বিষয়ে আর না লিখে থাকা গেল না। একটা মানবিক, করুণ ও মর্মান্তিক ইস্যু নিয়ে আমরা বাংলাদেশীরা কিভাবে নিজেদের ভিতর কাঁদা ছোড়াছুড়ি করতে পারি, কতটা নীচে নামতে পারি তা আবারো একবার প্রমাণিত হল।

এখানে কিছু ব্লগারকে দেখেছি যারা অসহায় এই মানুষগুলোকে নিয়ে আন্তরিক ভাবে লিখেছেন, লোকগুলোর ভীতিকর অবস্থাটা নিজের মাঝে উপলব্ধি করেছেন যা ফুটে উঠেছে তাদের লেখনিতে। তারা বলতে চেয়েছেন যে একটা সভ্য জাতি হিসেবে আমাদের উচিত হাতে জীবন নিয়ে পালাতে থাকা এই ‘মানুষগুলো’কে আমাদের অবশ্যই আশ্রয় দেয়া উচিৎ এই মুহূর্তে। আবার মুদ্রার উল্টো পীঠও দেখেছি, কিছু মানুষ এই লোকগুলোকে আশ্রয় দেয়ার সরাসরি বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। আরেকটি শ্রেণীর কথা না বললেই নয়। আমাদের মাঝে মাঝে কেউ কেউ আছেন যারা মনে করেন মায়ানমারে যেহেতু বিধর্মী হায়ানারা ‘মুসলিম’ জাতির উপর হামলা চালিয়েছে সেহেতু একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের ফরজ কাজ হল মুসলিম এই রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানো।

এখানে কিছু যুক্তি খণ্ডানোর অবকাস বোধহয় থেকে যায়। যেসকল ব্যক্তি মনে করেন এদেরকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়া উচিৎ না তাদের যুক্তিগুলো অনেকটা এইরকম- ১। আমরা একটি গরিব দেশ, নিজেদেরই খাওয়া পড়ার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই এই অবস্থায় নতুন করে একদল রোহিঙ্গা এদেশে আশ্রয় দিলে আমাদেরি ক্ষতি। ২। রোহিঙ্গারা অপরাধ পরায়ণ, উগ্র।

৩। অতীতে অসংখ্য রোহিঙ্গা এদেশে এসে এখানেই স্থায়ী হয়ে গেছে। ফিরে যায়নি। ৪। তারা অনেকে বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের নানা দেশে বিশেষ করে সৌদি আরবে যেয়ে বাংলাদেশের ইমেজের ফালুদা বানাচ্ছে।

তাদের প্রতি আমার কিছু কথা ও জিজ্ঞাসা আছে। আমরা অবশ্যই একটা গরিব দেশ কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু আমরা কি এতোটাই গরিব যে একটা অস্থায়ী ক্যাম্প করে কয়েক হাজার মানুষকে অল্প কিছু দিনের জন্য আশ্রয় দিতে পারি না? আমরা কি এই সত্যটা সবাই জানি যে অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে বর্তমানে বাংলাদশ উৎপাদিত খাদ্যে অনেক বেশী স্বয়ংসম্পূর্ণ? কিছু লোককে কয়েকদিন খাওয়ালেই আমাদের ধানের গোলায় টান পড়বে যাবে কি? হতে পারে এই রোহিঙ্গা জাতিটা উগ্র, তারা হয়তো অনেক বেশী অপরাধ পরায়ণ। কিন্তু কেউ আমাকে একটু বলুন জাতি হিসেবে আমরা নিজেরা কতটা উন্নত? ভাল করে একবার চারদিকে তাকিয়ে তারপর বলুন। রোহিঙ্গারা অপরাধ যদি অতীতে এদেশে এসে করে থাকে তবে সেই দায়ভার এখনকার পাঁচ বছরের একটি মুমূর্ষু শিশুকে, তার অভুক্ত মাকে কেন ভোগ করতে হবে? যে সাহায্য আমারা অতীতে অন্য কোন দেশের কাছ থেকে পেয়েছিলাম সেই একই সাহায্য তারা কেন আমাদের কাছ থেকে পাবে না? অনেকে বলেন যে আগে থেকেই অনেক রোহিঙ্গা এদেশে বসবাস করছে স্থায়ীভাবে তাদেরকে বলছি- আপনি যদি এমন একটা নিরাপদ জায়গায় আগের চেয়ে ভাল ভাবে বসবাস করার উপায় খুঁজে পান আপনি কি তা গ্রহন করবেন না? নিশ্চয় করবেন।

তাহলে তাদেরই বা দোষটা কোথায়? তারা দেখেছে যে এই দেশে চাইলে সহজেই কিছু উপার্জন করে ছেলেমেয়ের মুখে খাবার তুলে দিতে পারে, কয়েকশ টাকা ঘুষ দিলেই এই দেশের মহান পুলিশরা তাদের নানা রকম অন্যায় কাজে হাসিমুখে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। তারা ইয়াবা সহ অনেক মাদক এই দেশে নিয়ে আসছে, মেনে নিলাম। কিন্তু কিভাবে? আমাদের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তখন কি নাকে সরিষার তেল দিয়ে ঘুমায়? না, তারা নিজেরাও চালানের বস্তাটা ঠেলতে হাত লাগায়। মাদকের যে চালান এই মুহূর্তে বাংলাদেশে ঢুকল তার পিছনে ওদের চেয়ে আমাদের স্বদেশী অনেক সোনার মানুষের অবদান কোন অংশেই কম নয়। আমি খুবই অবাক হই যখন দেখি আমাদের নিজেদের কূটনৈতিক ব্যর্থতাটা কারো একদমই চোখে পড়ে না, বরং প্রতিনিয়ত গালাগালির বান ছুটিয়ে দিচ্ছি এদেশে স্থায়ী হয়ে যাওয়া ঐ বিদেশী গুলোর দিকে।

ঠিক একই ভাবে বলা যায় বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে রোহিঙ্গাদের বিদেশে অবস্থান করার বিষয়টি নিয়েও। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের পাসপোর্ট পায় কি করে? দোষটা কাদের? মানুষ তো চাইবেই নিজের স্বার্থ, নিজের উন্নতি করতে। আজকে যদি আমাদের দেশের কাউকে বলা হয় যে সে চাইলে এখনি অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের মত কোন একটা দেশে যেয়ে থাকতে পারবে, সেখানে যেয়ে সে একটু চেষ্টা তদবির করলেই ওখানকার পাসপোর্টও পেয়ে যাবে তাহলে কি সে এই সুযোগ হাতছাড়া করবে বলে মনে হয়? কখনো করবে না। রোহিঙ্গারা এদেশি পাসপোর্ট পেয়েছে এদেশেরই কিছু আচোা পুলিশ, দালাল এদের কারনে। দোষ তো ওদের চেয়ে আমাদের দেশী লোকেরই বেশী! এখন সেই দোষের প্রায়শ্চিত্ত কি অসহায়, মরন ভয়ে কাঁপতে থাকা ছোট ছোট বাচ্চাগুলোকে ভোগ করতে হবে? আর এই জন্যেই কি আমরা বাংলাদেশীরা তাদের বহনকারী ট্রলারকে মাঝ নদীতে ভাসিয়ে রেখে একদম বীরের পরিতৃপ্তিতে ঢেঁকুর তুলছি? কিছু মানুষকে দেখেছি এই সুযোগে নতুন করে তাদের মজ্জায় মিশে থাকা ধর্মান্ধ অনুভূত টাকে নতুন করে ঝালিয়ে নেবার সুযোগ পেয়ে তা কাজে লাগাচ্ছেন পুরো দমে! ব্লগে, ফেসবুকে তারা নানা রকম বীভৎস ছবি আপলোড করে নীচে লিখে দিচ্ছেন- "অসভ্য বৌদ্ধদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান, আমাদের মুসলিম ভাইদের সাহায্যে এগিয়ে আসুন, তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন।

" এই লোকগুলো হল সবচেয়ে বড় ধান্দাবাজ, সবচেয়ে ছোট মানসিকতার। ধর্মের মত সংবেদনশীল একটা বিষয় নিয়ে মানুষের আবেগকে নিজেদের ইচ্ছেমত, স্বার্থমত পরিচালিত করার ন্যায় নোংরা কাজ আর পৃথিবীতে আছে বলে আমার মনে হয় না। কেনরে ভাই? এরা মুসলিম বলেই তাদের সাহায্য করতে হবে? অন্য ধর্মের যদি হত তবে? আচ্ছা মনে করুণ আরাকানের রোহিঙ্গাদের স্থলে বৌদ্ধরা আর তাদের জায়গায় রোহিঙ্গারা, এবার বলুন আপনার অবস্থান কি? আচ্ছা বলুন তো সারা দুনিয়ার গণ্যমান্য মুসলিম দেশগুলো কোথায় এখন? যাদের রাষ্ট্রীয় নেতাদের বগলের নীচে ছেঁড়া ফাটা কাপড় দেখে আপনারা মুগ্ধ হয়ে কমেন্ট, শেয়ার আর লাইকের বন্যা বানিয়ে দেন তারা এখন কোথায়? কারো তো টুঁ শব্দটাও শুনলাম না একবারও। তারা কি এখন তাদের গণ্ডা গণ্ডা বিবিদের সাথে মুরগীর রোষ্ট আর খাশির রেজালার বিশাল গামলা সামনে নিয়ে আহারে মগ্ন? নাকি সহবতে? তাদেরকে মুসলিম ভাবার আগে একটু মানুষ হিসেবে কি ভাবা যায় না? একজন ‘মানুষ’ এর শরীর থেকে রক্ত ঝরছে, একজন ‘মানুষ’ কাঁদছে চিৎকার করে, একজন ‘মানুষ’ কাতরাতে কাতরাতে মরে যাচ্ছে- এভাবে একটু ভেবে কি দেখা যায় না? কোথায় থাকেন আপনারা যখন আমাদের স্বদেশী মুসলমান ভাইরা পাঁচ বছরের উপজাতি মেয়ে কে ধর্ষণ করে মেরে ফেলে, তার বোনকে ধর্ষণ করে মুখে এসিড দিয়ে ঝলসে দেয়? একদিনও তো শুনলাম না আপনাদের গলা বাংলাদেশের উপজাতিদের উপর প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া অসংখ্য শোষণ নিপীড়নের বিরুদ্ধে উঁচু হতে, আপনাদের কলমের কালি তখন কি অদ্ভুত রহস্যে শুকিয়ে যায়? লেখার শুরুতে পত্রিকার একটা খবরের কথা বলেছিলাম, শেষ করবো সেটা বলে- “ অভিযোগ উঠেছে, ঘোলারচর এলাকায় নোঙর করা একটি ট্রলারের রোহিঙ্গারা লুটপাটের শিকার হয়েছে। স্থানীয় কিছু লোক প্রথমে তাদের তীরে উঠতে সহায়তা করে।

পরে তারাই ট্রলারটিতে লুটপাট চালায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাহপরীর দ্বীপের কয়েকজন বাসিন্দার ভাষ্যমতে, দিনের বেলায় দক্ষিণপাড়ায় আটক থাকার সময় ঐ ট্রলারে থাকা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি সখ্য গরে তোলে। তারা রোহিঙ্গাদের একটি মুঠোফোন সরবরাহ করে। গভীর রাতে রোহিঙ্গারা মুঠোফোনের মাধ্যমে স্থানীয় ঐ লোকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাদের সহযোগিতার কারনেই ত্রলারতি ঘোলারচরে ভিড়তে পারে।

এ সময় সাহায্যকারী হিসেবে আসা লোকজন ট্রলারে লুটপাট চালায়। বিজিবি সদস্যরা লুটপাটের সঙ্গে জড়িত চারজনকে ঘোলারচর এলাকা থেকে আটক করে। তাদের নামঃ মোঃ হাশিম, আমির হোসেন, মোঃ ইসমাইল, ও মোঃ আব্দুল্লাহ। তাদের বাড়ি স্থানীয় মিস্ত্রি পাড়ায় ” । একবার ভাবুন এবার কতটা নীচে নামলে এই ধরনের একটা কাজ করতে পারে মানুষ? নিজের জীবনটা হাতে নিয়ে যে মানুষগুলো নদীতে ভেসে বেড়াচ্ছে দিনের পর দিন, ছোট ছোট ছেলেমেয়ে গুলোকে নিয়ে জীবন মৃত্যুর মাঝামাঝি একধরনের ঘোরের ভিতর দিন কাটাচ্ছে সেই মানুষগুলোকে আদর করে, পরিকল্পনা করে ডেকে এনে তাদের উপর লুটপাট করতে পারে কিভাবে মানুষ? এদেরকে মানুষ না বলে জানোয়ার বললে খুব কি অন্যায় করা হবে? একজন রোহিঙ্গা বিদশে যেয়ে যদি বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করে ফেলে তবে আমাদের কতই না রাগ, ঘৃণা এই পুরো জাতটার প্রতি দেখাই আমরা।

ঐসব রোহিঙ্গারা কতটা বদনাম করেছে দেশের বলুন? এইসব সোনার বঙ্গসন্তানদের সুকীর্তির তুলনায় সেগুলোকি নেহায়েত তুচ্ছ নয় ?!? আজকে যে রোহিঙ্গা দুধের শিশু তার মায়ের কোলে ঢলে পড়ছে মৃতপ্রায়, সন্তান হারা যে মা বিলাপ করছে গগনবিদারী, মাঝরাতে যে বাবা তার পরিবার নিয়ে একটা নৌকায় করে ভেসে বেড়াচ্ছে নদীর এক পাড়ে রক্তাক্ত মরণ, আরেক পাড়ে মেশিনগানের রক্তচক্ষু নিয়ে তাদের সবার কাছে আমি ক্ষমা চাচ্ছি, একজন সভ্য বাংলাদেশী হিসেবে, একজন সুবিবেচক বাংলাদেশী ‘মানুষ’ হিসেবে আমি ক্ষমা চাই তোমাদের সবার কাছে। তোমাদের মত অসভ্য ও বিপদজনক শিশু, নারী, পুরুষদের আমরা কখনোই আমাদের দেশে এক মুহূর্তের জন্যেও আশ্রয় দিতে পারি না। তোমাদের মত কিছু জীবন্মৃত মানুষকে আশ্রয় দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের উপর এতো বড় একটা ঝুঁকি আমরা কখনোই নিতে পারি না। আমাদের ক্ষমা কর।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.