আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অসহায় মা অসহায় শিশু / মুহাম্মদ জাফর ইকবাল

We must not exist, our existance is the most impossible thing. জাফর স্যার একটু আগে রোহিঙ্গাদের নিয়ে লেখাটা লিখেছেন: ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী যখন পুরো দেশকে পৃথিবীর নৃশংসতম হত্যাকান্ড দিয়ে ছিন্নভিন্ন করে ফেলছে তখন আমরা একটি গ্রামের একজন অবস্থাপন্ন মানুষের বাসায় আশ্রয় নিয়েছিলাম। মে মাসের ৫ তারিখ পাকিস্তান সেনাবাহিনী আমার বাবাকে হত্যা করার পর আমাদের আশ্রয় দেয়া গৃহস্বামীর মনে হল যে মানুষটিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী হত্যা করেছে তার পরিবারকে আশ্রয় দেয়া বিপজ্জনক। তিনদিন পর বিকেল বেলা তিনি আমাদের পুরো পরিবারকে বাড়ি থেকে বের করে দিলেন। আমার মা ছোট ছোট দুটি নৌকা ভাড়া করে আমাদের ছয় ভাইবোনকে নিয়ে পুরোপুরি অনিশ্চিত পথে যাত্রা করলেন। যখন পদে পদে মৃত্যুর আশংকা তখন পুরোপুরি আশ্রয়হীন হয়ে নৌকা করে নদীতে ভেসে বেড়াতে কেমন লাগে তখন আমাদের সেই অভিজ্ঞতাটি হয়েছিল।

একজন মানুষের যখন সারা পৃথিবীতে কোথাও যাওয়ার যায়গা থাকে না তখন বুকের ভিতর যে অসহায় অনুভুতি হয় এবং জগত সংসারের প্রতি যেই অভিমানের জন্ম হয় তার চাইতে হৃদয় বিদারক কোন অনুভুতি আছে বলে আমার জানা নেই। প্রায় চল্লিশ বছর পর খবরের কাগজ খুলে আমি সেই অনুভুতিটি নুতন করে অনুভব করছি। নিজদেশে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে আশ্রয়ের আশায় রোহিঙ্গা শরনার্থীরা আমাদের দেশে আসছে। অসহায় আতংকে হকচকিত শিশু, আশ্রয়ের আশায় ব্যাকুল মা - হঠাৎ করে আমি খবরের কাগজের ছবিতে আমার নিজেকে, আমার ছয় ভাইবোনকে খুঁজে পেতে শুরু করেছি। ছবিগুলো অনেক নিষ্ঠুর কারন বাংলাদেশ সরকার সদম্ভে ঘোষনা করেছে কেউ এখানে আশ্রয় পাবে না।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি শরনার্থী ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল, আগরতলায় যত অধিবাসী ছিল শরনার্থীর সংখ্যা ছিল তার থেকে বেশি। যদি পার্শবর্তী দেশ ঘোষনা দিত সেই দেশে বাংলাদেশের কোন অসহায় মানুষ আশ্রয় পাবে না তাহলে নিশ্চিত ভাবেই ১৯৭১ সালের হত্যাকান্ডের সংখ্যা ত্রিশ লাখে থেমে না গিয়ে আরো কয়েকগুন বেড়ে যেত। পৃথিবীতে অনেক নিষ্ঠুরতা আছে তারপরেও আমরা পৃথিবীতে অনেক স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকি কারন আমরা জানি এখানে যতটুকু নিষ্ঠুরতা আছে তার থেকে অনেক বেশি রয়েছে মানুষের জন্য মানুষের ভালবাসা। বিপদগ্রস্থ রোহিঙ্গারা যখন আমাদের দেশে আশ্রয়ের জন্য ছুটে আসছে, আমরা অমানুষের মত বলছি এই দেশে তোমাদের স্থান নেই, তোমরা ফিরে যাও। আমার দেশ এরকম অমানবিক এরকম নিস্ঠুর - নিজের চোখে দেখেও বিশ্বাস হয় না।

একাত্তর সালে আশ্রয়হীন হয়ে যখন আমার মা তার অসহায় সন্তানদের নিয়ে নৌকায় ভেসে বেড়াচ্ছিলেন তখন একজন হতদরিদ্র মানুষ আশ্রয় দেওয়ার জন্য ছুটে এসেছিল। সেই ভয়ংকর বিপদে আশ্রয় পেয়েছিলাম বলে আমরা প্রানে বেঁচেছি, আমি সেই কথাটি এক মুহুর্তের জন্যও ভুলি না। আমি জীবনে কখনো মানুষের উপরে বিশ্বাস হারাইনি, আমি জানি এই পৃথিবিটা এত সুন্দর কারন মানুষের জন্য মানুষের ভালবাসা কখনো ফুরিয়ে যাবে না। তাহলে আমাদের সরকার কেমন করে এত নিষ্ঠুর হয়ে অসহায় রোহিঙ্গাদের মৃত্যুমুখে ঠেলে দিচ্ছে? আমরা কেমন করে এত সহজে ১৯৭১ ভুলে গেলাম? ১৪/৬/১২ মূল লেখা : Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.