আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঘুড়ি

inveterate to Create ঘুড়ি - মোঃ নেসার আহমেদ লিমন মাত্র ৩০ ঘন্টা আগে আমার জন্ম অথবা বলা যায় আমি সৃষ্ট । দুটো কিশোরের অব্যর্থ প্রচেষ্টায় জন্ম নেওয়া আমি কাগজের কোন এক খেলনা অথবা আনন্দ উৎস । আমার বুকের উপর অর্ধ-চন্দ্রাকৃতি একটি শক্ত কাঠি আর যার নিঁচ দিয়ে আমার আপাদমস্তক একটা লম্বা কাঠি বেঁধে দেওয়া হল। তারপর সুতো দিয়ে বেঁধে দেওয়া হলো আমাকে কাঠিগুলোর সাথে । এরপর আমাকে একটা অন্ধকার জায়গায় রেখে দিল ওরা।

আমি ঘুমিয়ে পড়লাম । বোধ করি তখন বিকেল, আমাকে খাঁটের নিঁচ থেকে বের করে আনলো । আমার তখনো ঘুমের রেশটা কাঁটেনি । দেখলাম আশেপাশে ওদের মত অনেক ওরা, আমার মতো অনেক আমিকে সুতো দিয়ে বেঁধে নীল-গম্বুজের গাঁয়ে টেনে-ধরে রেখেছে । ব্যপারগুলো দেখে আমার হাসি পাচ্ছিল।

কেন ওরা আমাদেরকে সৃষ্টি করে আর কেনই বা অতদুরে পাঁঠায়? পাঠিঁয়ে আবার বেধেঁই বা রাখে কেন ? এগুলো ভাবতে ভাবতে হঠাত খেয়াল করলাম আমাকে একজন ধরে বেশ-খানিকটা দূরে নিয়ে গেল। কিছুক্ষন পরপর বয়ে যাওয়া বাতাসের গায়ে নিজেকে এলিয়ে দিতে ইচ্ছে করছিল খুব। ছেলেটা বারবার আমাকে উপর দিকে ছুঁড়ে দিচ্ছিল। একটু খানি বাতাস, আর একবার করে নিঃক্ষেপ । ।

ছুটে যেতে ইচ্ছে করছিল । কিছুক্ষন পর সুযোগ পেয়ে গেলাম । আমার এই কাগজের শরীরটা কে নিয়ে ছুটে চললাম আকাশ পানে । বাতাস আমাকে নিয়ে গেল । ক্রমেই ছোট হতে লাগল দৃশ্যমান সব দৃশ্য ।

সুতোর হালকা নিম্নমুখী টান আর বাতাসের এই আকস্মিক উর্ধটানের দোটানায় মেজাজটা বিগরে গেল । “কিন্তু কোথায় যাব ? সব দিকেই তো আমি নিয়তির কোনো অনবদ্ধ খেয়াল । ” কিছুটা বাদেই মনে পড়ল সৃষ্টির পরে স্রষ্টা আমাকে খাটের নিচে রেখেছিলেন । সেখানে আমার বুকের উপর দিয়ে তেলাপোকা হেটেঁছে । ধুলা-বালি ছিল আর ছিল অন্ধকার ।

“আমি কি অন্ধকারে পরে থাকার জন্য জন্মেছি ? না, কখনোই না । তাহলে কেন তিনি আমার স্রষ্টা হয়েও আমাকে অন্ধকারে রেখেছেন ? না এ আমি মেনে নিতে পারিনা । আমি চলে যাব । আমি কোন নিয়ম মানিনা । আমি চলে যাবোই ।

কিন্তু কি করে ?” আশে-পাশে আমার আরও কয়েকটি বন্ধুকে দেখলাম । তারাও মনে মনে ক্রোধ জমা রেখেছে তাদের স্রষ্টাদের প্রতি । “আচ্ছা ওরা কি আমার বন্ধু ? হয়ত । আবার হয়ত না । ” ওরা আমার বন্ধু কিনা ভাবতে শুরু করব এমন সময় হঠাৎ করে এক দমকা হাওয়ায় আমি বেশ খানিকটা উপরে উঠে এলাম ।

সঙ্গে সঙ্গে সুতোয় টান । ক্রোধ আমার আরও বেড়ে গেল । মনে আমার অসীম সাহস, শরীরে বল নেই । আবার এক দমকা হাওয়া, আবার সুতোয় টান । এবার একমনে চাওয়া আর বাতাসের শক্তিতে পার করলাম সুতোর টান ।

মুক্ত হয়ে গেলাম আমি , ছুটে গেলাম আকাশ পানে । কিছুটা পিছুটান অনুভবে এল । হয়ত স্রষ্টার প্রতি করুণা অথবা ভালবাসা । এখনও উঠে চলেছি শীর্ষ থেকে শীর্ষে । কত বাড়ির উঠান, কত খেলার মাঠ, কত অনাবাদী জমি, আরও কত কিছু ।

সবচেয়ে অবাক হলাম অজস্র স্রষ্টাকে দেখে । কারন আমার ধারনা ছিল স্রষ্টা হয় সংখ্যালঘূ । আমি উড়ে চলেছি মুক্ত বিহঙ্গের মত । জীবনটাকে ঝিরিঝিরি বাতাসের উদ্বেলিত তরঙ্গের নিরবিচ্ছিন্ন আনন্দের উৎস মনে হচ্ছে । আবার মনে পড়ে গেল আমার সেই খুদে স্রষ্টাদের ।

আমি যাদের কাছে ছিলাম এক আনন্দের উৎস । একটু খারাপও লাগছে । “এভাবে তাদেরকে ফাঁকি দেওয়া কি আমার উচিত হল ?” উচিত আর অনুচিতের দোলাচলে আমি ভাবতে ভাবতে চলে এলাম মেঘের রাজ্য ছাড়িয়ে। এবার আমার সামনে সব কিছু ঝাপসা হয়ে আসল । আমার শরীরটা ভারি হয়ে আসছে ।

আমি ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছি । আমি আবার এক অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছি । “না, এ আমার কি হচ্ছে ? আমি নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছি । না, না, না , আমি বাচঁতে চাই । হে স্রষ্টা, আমাকে ফিরিয়ে নাও ।

আমায় দয়া কর । আমি তোমার কাছে ফিরতে চাই। আমাকে ক্ষমা করে,আমায় ফিরিয়ে নাও । আমি তোমার শাসন মেনে নিচ্ছি । তোমার আকাশেই আমি ঘুড়ি হয়ে উড়তে চাই ।

” ……………………………………………………………………………………………………… কিছু কালক্ষেপনের পর আমার এই কাগজের শরীরে সূর্যের এক আভা এসে পড়ল । [ বিঃ দ্রঃ কাহিনীর বিস্তারের জন্য উপমার আশ্রয় অগ্রগণ্য । ] ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।