আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিড়ি বিক্রেতা সেই সুরুজ মিয়ার কোটিপতি বনে যাওয়ার নেপথ্যে

চোখে যা দেখি, কানে যা শুনি, তা নিয়ে কথা বলবোই ! ১৯৮০ সালের গোড়ার দিকে বন্দরের মদনপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে চৌকি পেতে আকিজ বিড়ি, বিস্কুট, চকোলেট বিক্রি করতেন সুরুজ মিয়া। এলাকাটি মহাসড়কের পাশে হওয়ায় যানবাহনে ছিনতাই-ডাকাতি সংঘটিত করতে তাঁর মদদে গড়ে ওঠে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী। যাদের নেতৃত্বে ছিল সুরুত আলী, কামু, কাবিলসহ ভয়ংকর সন্ত্রাসীরা। নিজের স্বার্থে একপর্যায়ে সুরুজ এ বাহিনীকে উসকানি দিয়ে বিভক্ত করে দেন। এক গ্রুপের নেতৃত্ব দেয় সন্ত্রাসী কামু ও অন্য গ্রুপের সুরুত আলী।

তাদের ভয়ে ওই এলাকার মানুষ সব সময় তটস্থ থাকত। মদনপুর, চানপুর, মাধবপুর, কুড়িপাড়া, দেওয়ানবাড়ী, কেওঢালা প্রভৃতি এলাকা তারা দাবড়ে বেড়াত। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, খুন, রাহাজানি_এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা তাদের দ্বারা হতো না। আর এসব অপকর্মে পেছন থেকে উসকানি ও মদদ দিতেন সুরুজ মিয়া। জানা যায়, সুরুজ মিয়া ১৯৮৪ সালের দিকে আকিজ বিড়ির ডিলারশিপ লাভ করেন।

এরপর নাটকীয় আচরণ দ্বারা আকিজ গ্রুপেরও সুনজরে আসেন তিনি। ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় গুদামে রক্ষিত বিপুল পরিমাণ বিড়ি নষ্ট হয়ে গেছে_অজুহাত দেখিয়ে কম্পানির কাছ থেকে বিশাল অঙ্কের ক্ষতিপূরণ আদায় করেন। এ ছাড়া একই সময়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আকিজ বিড়িবাহী একটি ট্রাক ছিনতাই হয়। সুরুজ মিয়ার ঘনিষ্ঠরা জানায়, এটাও তাঁর কাজ। পরে ওই মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে প্রথমে ঢাকা-দাউদকান্দি রুটে কয়েকটি পরিবহন ছাড়েন।

এরপর গড়ে তোলেন সুরুজ মিয়া স্পিনিং মিল। সেই সুরুজ মিয়া এখন গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের কর্ণধার। হাজার কোটি টাকার মালিক। এলাকাবাসী আরো জানায়, সুরুজ মিয়ার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খুললেই তাদের ওপর অত্যাচারের খৰ নেমে আসে। তাঁর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে এ পর্যন্ত ১০-১২টি খুন হয়েছে।

এলাকাবাসীর বদ্ধমূল ধারণা, বিএনপির আমলে ১০ ট্রাক অস্ত্রের চোরাচালানের সঙ্গেও সুরুজ মিয়ার সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মদনপুর বাসস্ট্যান্ড বাজারের এক মুরগি ব্যবসায়ী জানান, সুরুজ মিয়া যখন অর্থবিত্তে দাপুটে হয়ে উঠছিলেন তখনই বিদ্রোহ করে বসে তাঁরই বিশ্বস্ত সুরুত আলী। তাকে শিক্ষা দিতে পেছনে লেলিয়ে দেওয়া হয় সুরুত আলীরই আত্মীয় কামু বাহিনীকে। এক সময় তারা একে অন্যকে ঘায়েল করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় সাত বছর আগে সুরুত আলী নিহত হয় কামু বাহিনীর হাতে।

অন্যদিকে এর প্রতিশোধ নিতে কামুর বোন রেহেনাকে হত্যা করে প্রতিপক্ষ। এ ছাড়া কামু বাহিনীর দুই সহোদর ভাই র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয়। এসব কর্মকাণ্ডে সুরুজ মিয়ার পরোক্ষ মদদ রয়েছে। প্রশাসনের কাছে সাধু সাজতে এবং তাঁর গোপন অপকর্ম যাতে ফাঁস না হতে পারে এ জন্য সন্ত্রাসী কামুকে বছরের পর বছর জেলহাজতে থাকতে হচ্ছে। জানা যায়, কয়েক বছর ধরে সুরুজ মিয়া টাইটানিক হাউজিং ব্যবসা করতে গিয়ে মদনপুর এলাকার গরিব কৃষকদের শত শত বিঘা ফসলি জমি জবরদখল করে চলেছেন।

নামমাত্র মূল্যে ওই সব জমি কৃষকদের কাছ থেকে কিনে নিলেও কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না। মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠার আড়ালে তিনি বেপরোয়াভাবে জমি দখল করে চলেছেন। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বন্দরের মদনপুরে জমিয়তে রহমানিয়া মাইজভাণ্ডারিয়া দায়রা শরিফের জন্য লিজপ্রাপ্ত সম্পত্তিতে শিল্পপতি সুরুজ মিয়া জবরদখলের জন্য সাইনবোর্ড লাগানোর ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন দায়রা শরিফের তত্ত্বাবধায়ক হুমায়ূন কবির ভাণ্ডারী। এ ব্যাপারে দায়রা শরিফের তত্ত্বাবধায়ক হুমায়ূন কবীর ভাণ্ডারী কালের কণ্ঠকে জানান, সুরুজ মিয়ার জবরদখলের প্রতিবাদ করতে গেলে তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। বন্দর থানায় এ ব্যাপারে জিডি করার পরও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় অবশেষে আদালতে মামলা করি।

হুমায়ূন কবীর আরো জানান, শিল্পপতি সুরুজ মিয়া ভয়ভীতি দেখিয়ে নিরীহ লোকজনের ফসলি জমি নামমাত্র মূল্যে জোরপূর্বক জমি দখল করে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিচ্ছেন। হয়রানির ভয়ে সাধারণ মানুষ তাঁর এ অপকর্মের প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। বিশিষ্ট কবি ও বন্দর মদনপুর এলাকার সন্তান বাতেন বাহার কালের কণ্ঠকে জানান, সামছুল হক, নজরুলসহ প্রায় ১৩টি মানুষ খুনের সঙ্গে সুরুজ মিয়া প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। তিনি জানান, সুরুজ মিয়া মেডিক্যাল কলেজ করবেন ফুলহারে, অথচ তিনি জবরদখল করে চলেছেন কেওঢালা, মদনপুর, কুশাবো, উত্তর চানপুর মৌজার শত শত বিঘা জমি। সরকারকে ট্যাক্স ফাঁকি দিতে ও টাইটানিক হাউজিং ব্যবসা বাড়াতেই সুরুজ মেডিক্যালের নামে গরিব কৃষকদের এসব সম্পত্তি হাতিয়ে নিচ্ছে।

মুরাদপুর এলাকার আলী আহমেদ তাঁর দুই ছেলে মকবুল ও সুমনকে হত্যার দায়ে সুরুজ মিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করে জীবননাশের হুমকির মধ্যে রয়েছেন। তিনি জানান, পাওনা টাকা চাওয়ার অপরাধে সুরুজ তাঁর দুই ছেলেকে খুন করেছেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বন্দর থানার মদনপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার ভেতরে চানপুর এলাকায় এশিয়ান হাইওয়ের পাশেই শত শত বিঘা জমির ওপর গড়ে উঠেছে সুরুজ মিয়া গ্রুপ। সেখানে রয়েছে সুরুজ মিয়া স্পিনিং মিল, সুরুজ মিয়া জুট স্পিনিং মিল, সুরুজ মিয়া প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ, টাইটানিক অয়েল মিলস, টাইটানিক সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজ, টাইটানিক ও মাস্টার্ড অয়েল মিলস। পুরো এলাকায় রয়েছে নিরাপত্তার চাদর।

আকিজ বিড়ি ও আকিজ সিমেন্টের ডিলারশিপ ছাড়াও সেখানে রয়েছে তাঁর বিশাল জমির ব্যবসা। অভিযোগ আছে, এসব জমি গরিব কৃষকদের কাছ থেকে নামমাত্র মূল্যে জোর করে লিখে নিয়েছেন সুরুজ মিয়া। সব ব্যবসা মনিটরিংয়ের জন্য ঢাকায় সেনাকল্যাণ ভবনে নেওয়া হয়েছে অফিস। সেখানে বসেই সুরুজ মিয়া ব্যবসাসহ নানা অপকর্মের দেখভাল করেন। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য মদনপুর-চানপুর এলাকায় সুরুজ মিয়া গ্রুপের ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করতে গেলে মিলগেটে সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই উপস্থিত সবাই সটকে পড়ে।

এ সময় নিরাপত্তা কর্মকর্তা খোরশেদ আলম বলেন, 'এখানে কারো সঙ্গে দেখা করা বা কথা বলা যাবে না। সাহেবের নিষেধ আছে। ' মালিক সুরুজ মিয়ার মোবাইল ফোন নম্বর চাইলে তিনি বলেন, 'আমার কাছে নেই। আপনাদের কথা বলার থাকলে ঢাকায় সেনাকল্যাণ ভবনের অফিসে গিয়ে দেখা করেন। ' এ ব্যাপারে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আকতার হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'শুনেছি সুরুজ মিয়া শিল্পপতি হলেও মানুষ ভালো নন।

হোয়াইট ক্রিমিনাল প্রকৃতির। তিনি জানান, তাঁর বিরুদ্ধে থানায় দু-একটি জিডি থাকলেও কোনো মামলা নেই। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।