আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মানিক, ম্যানিকিন ও প্রিন্সেস ডায়ানা (ভালবাসার গল্প)

"You may like a situation which is not good for you And You may dislike a situation which is good for you." (Al- Quran) ১. ধানমন্ডি গভঃ বয়েজ স্কুলের সামনের রাস্তাটি আজ তুলনামূলক ফাঁকা। সাপ্তহিক ছুটির দিন তার উপর শীতের রাত। দোকানের ডিসপ্লে গ্লাসের ভেতর দিয়ে মানিক বাইরে তাকিয়ে ছিল। আজ তার জীবনের একটি স্মরণীয় দিন । এতদিন ধরে ঢাকায় আছে কিন্তু তার স্বপ্নের নারীটিকে আজকের আগ পর্যন্ত সে কোথাও দেখেনি।

তার স্বপ্নের নারী দোকানের কোন কাস্টমার নয় । “বাংলার নারী” দোকানে কত বিখ্যাত নায়িকা মডেল এল গেল কিন্তু কাউকেই তার কখনো ভাল লাগেনি। কিন্তু আজ তার স্বপের নারীমুখটি দোকানে এসেছে... না সে কোন মডেল, নায়িকা কিংবা রক্তমাংসের কাস্টমার নয়...সে হচ্ছে একটি ম্যানিকিন (ডিসপ্লে ডল)! শাড়ী পরিয়ে ডিসপ্লে করার জন্যই এ ডলের আগমন। ডলটি নিয়ে যখন ওদের কর্মচারী আলম যখন দোকানে ঢুকল তখন চোখ পড়তেই মানিক চমকে ওঠে! আরে এ ধরণের চেহারার একটি মেয়েই তো সে এতদিন খুঁজছে! সে অবাক হয়ে চেয়েছিল... কর্মচারী আলম বলে ‘কী দেখেন স্যার ! এর চাইতে সুন্দর আর পাইলাম না। বড় স্যারে যে কী কয়?” ঃ না কী বলবে! ডলটা তো খুবই সুন্দর! এটা আমাদের দোকানের সেরা ডল... ঃ স্যারে যে কী কন! এর চাইতে কত সুন্দর ডল আমগো দোকানে আছে! ঐ যে পশ্চিমে দিক থেকে দ্বিতীয় ডলটা দেখেন স্যার... আমার মাঝে মধ্যে মনে হয় শাড়ী পইরা নায়িকা মৌসুমি দাঁড়ায়া আছে! ঃ তোমারে বলছে! নায়িকা মৌসুমি তো আমাদের দোকানে আসছিল।

সে রকম হলে তো তিনি তো ডলটা চেয়ে নিয়ে যেতেন। ঃ তাইলে স্যার বলতেছেন ডল ঠিকই আছে? বড় স্যারে কিছু বলবে না? ঃ তুমি নিশ্চিন্ত থাকো। কিছু বললে আমি সামলাব। তুমি এখন এক কাজ কর... তোমার নায়িকা মৌসুমির শাড়ীটা খুলে নতুন ডলটাকে পরিয়ে দাও! ঃ আচ্ছা ঠিক আছে স্যার! আলম শাড়ী পরাতে থাকে। মানিক মুগ্ধ হয়ে দেখতে থাকে! আহা এরকম একটি মেয়েই তো সে খুঁজছে! কতদিন পর সে তার চাঁদমুখ দেখল! যদিও এটা একটা ডল কিন্তু তাতে কোন সমস্যা নাই।

এখন দোকানে বাইরে সে এধরণের মেয়েই খুঁজতে থাকবে। দেখতে দেখতেই একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সে নিয়ে নেয়। এরকম চেহারার মেয়ে না পেলে সে বিয়েই করবে না! মনে মনে সে চিন্তা করে “পাক্কা”। হঠাৎ আলম বলে ওঠে “স্যার শাড়ী পরানোর পর ভালই লাগতেছে! তবু স্যার এইটা আমগো দোকানের সবচে” সুন্দর থুক্কু সুন্দরী না!’ ঃ তাই? না... আমার কাছে এটাই সবচে’ সুন্দরী। ঃ স্যার একেকজনের এক এক রুচি।

এই যে ধরেন আমার বউ... ওরে আমার আব্বা-অম্মার কাছে এমন সুন্দর লাগছে আমারে ফোন কইরা কয় আলম তোর লাইগা নায়িকা ঠিক করছি! আমি মনে করলাম নায়িকা যখন কইছে তখন মোটামুটি সুন্দর তো হইবই। মাইয়ার বাড়ীত যাইয়া দেখি কই নায়িকা? এ যে দেহি এসটা! ঃ এসটা কী? ঃ বুঝলেন না স্যার বাংলা সিনেমার এসটা আছে না এসটা ! ওইযে নায়িকার পিছে নাচানাচি করে... ঃ ও আচ্ছা এক্সট্রা... হা হা হা তারপর কী হল ? ঃ তারপর আর কী... মা-বাবার মনে তো আর দু:খ দিতে পারি না। আর আমার চেহারাও তো সালমান শাহ্ বা ওমর সানীর মতো না... এসটা ছাড়া আমার ভাগ্যে তো আর মৌসুমি থাকবো না! ঃ তাহলে তুমি বলছ তোমার চেহারা সালমান শাহ্ বা ওমর সানীর মতো হলেই তুমি মৌসুমিকে বিয়ে করতে পারতে? ঃ হ তাইতো... ধরেন আমার চেহারা যদি সালমান শাহ’র মতো হইত তাইলে নায়িকা মৌসুমি যেইদিন আমগো দোকানে আইছিল হেইদিনই আমারে দেইখ্যাই মৌসুমি আমার হাত ধইরা কইত “ আলম তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচব না। চল আমরা পালিয়ে যাই!” ঃ তখন তুমি কী করতা? সেদিনের বহু আগেই তো তুমি বিয়ে করেছ... ঃ স্যারে যে কী কন! একটা এসটার লাইগা নায়িকা মৌসুমিরে ছাইড়া দিমু? মৌসুমি আমারে যেখানে নিতে চাইত আমি সেখানেই যাইতাম... পরের দিন পত্রিকায় খবর আইত “সামান্য দোকানের কর্মচারী কে নিয়ে নায়িকা মৌসুমি উধাও!” আলমের কথা শুনে মানিকের হাসতে হাসতে প্রায় পড়ে যাবার অবস্থা ! এভাবে নানা রকম হাসি ঠাট্টার মধ্য দিয়েই সে দিনের মত দোকান বন্ধ করার সময় হয়ে যায়... ২. আজকের রাতটি অন্যরাতগুলোর মত নয়। আজ রাতে কল্পনা করার মত একটি মেয়ে তার মস্তিষ্কে আছে।

আহা! কী সুন্দর মুখশ্রী ! মানিক ভেবে পায় না আজকাল মানুষ ঐশ্বরিয়া রায় কে নিয়ে এত মাতামাতি করে কেন? ওর কাছে মোটেও ভাল লাগে না! অমিতাভ বচ্চন তো তারে বিধাতার নিখুঁত সৃষ্টি বলেছে। ওর কাছে মনে হয় ব্যাটা নির্ঘাত বুড়া বয়সে প্রেমে পড়েছে... নিজে তো আর বিয়ে করতে পারবে না তাই ছেলেকে বিয়ে করিয়েছে... এখন অবশ্য এসব ভাবার কোন মানে হয় না। এখন তার হৃদয়ের রাণী ম্যানিকিন টি মানে ডিসপ্লে ডলটি কে নিয়ে ভাবাই ভাল। ওটাকে ম্যানিকিন ভাবতে ভাল লাগছে না... ঐ ডলটার একটা নাম দেয়া দরকার। আলমের মৌসুমি ডলটার মতন... বাংলাদেশের কারো নামে দেয়া যাবে না... তাহলে কী নাম দেয়া যায়? কী নাম দেয়া যায়... হুঁ “ডায়ানা” দিলেই হয়! প্রিন্সেস ডায়ানার নামে দেয়াই ভাল।

প্রিন্সেস ডায়ানাকে তার ভালই লাগত। ঠিক আছে তাহলে ম্যানিকিন বা ডলটির নাম দেয়া হল “ডায়ানা”। সে মনে মনে ঠিক করে “পাক্কা”... ওরা ছোটবেলায় বন্ধুরা কেউ পাক্কা বলার অর্থ ছিল কথাটি রাখতেই হবে। এভাবে আর একটি জিনিস গতকাল সে পাক্কা করেছে আর তা হল ঐ ডায়ানা ডলটার মতো চেহারার মেয়ে না পেলে সে বিয়েই করবে না। হ্যাঁ এরকম চেহারার মেয়ে না পেলে বিয়ে করা ঠিক হবে না ।

কারণ অন্যকাউকে বিয়ে করলে তার চেহারায় শুধু ডায়ানা ডলের মুখছবি ভাসতে থাকবে আর এই ধরণের ভাবনা নিয়ে আর যাই হোক সংসার করা যাবে না। এভাবে সে সাতপাঁচ ভাবতে থাকে...একটা জিনিস নিশ্চিত, সে যে পুরোপুরি একটা প্রেমে পড়েছে জীবনে প্রথম বারের মত তাতে কোন সন্দেহ নেই! নিঃসন্দেহ নিশ্চিন্ত হয়ে সে ঘুমের গভীরে তলিয়ে যায়... ৩. আজ দোকনে ঢুকেই দেখে মিজান স্যার বসে আছে... ঃ আজ একটু দেরী হয়ে গেল মনে হয় মানিক? ঃ জ্বী ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেল... ঃ কাল তো আলমকে একটা ডল আনতে পাঠিয়েছিলাম । এনেছে তো ঠিকমতো? ঃ জ্বি ঐ যে শাড়ীও পরিয়ে দিয়েছি... পশ্চিম দিক থেকে তৃতীয়টা। ঃ কই ... ও... আলমটা একটা অপদার্থ! এটা কী ডল এনেছে! ওকে বললাম একটু সুন্দরী দেখে ডল আনার জন্য... আরে মহিলারা নিজের চেহারা ভুইলা যে ডলটারে বেশি মানায় ঐটার পরণের জিনিস কিনা নিয়া যায়... এর কারণ কী জান মানিক? ঃ জ্বি না... ঃ এর কারণ হইল বেশিরভাগ মহিলাই নিজেরে সুন্দরী মনে করে...হা হা এই যে তোমাদের ভাবী তার চেহারা খারাপ না কিন্তুু সে নিজেরে ঐশ্বরিয়া মনে করে । ঐশ্বরিয়া যে ধরণের জিনিস ব্যবহার করে তারও সে ধরণের জিনিস চাই।

বল এটা কী হয়? আরে আমি কী অভিষেক বচ্চন? আমি ক্যামনে তারে এইসব জিনিস কিনা দিই কও? তবে অনেকে অভিষেকের চাইতে আমারেই বেশি হ্যান্ডসাম কয়... হা হা হা। মানিকের মন একদমই খারাপই হয়ে গেল দুটো কারনে.. প্রথমত তার ডায়ানা ডলটাকে ভাল না বলায় আর এশ্বরিয়ার নাম শুনায়... এই মেয়েটার নাম শুনলেই তার গা জ্বালা করে! মানিক নিজের কাজে মন দেয়। শুরুতেই সে তার ডলটিকে মুছতে থাকে... দুপুর পর্যন্ত কিছু কাস্টমার এসেছিল। সব মহিলাকেই সে তার ডলটির কাছে নিয়ে যেতে চেষ্টা করে ... “আপা এইটা দেখেন” এই বলে... কিন্তু মানিক লক্ষ্য করে কোন মহিলাই এই ডলটির কাছে বেশিক্ষণ থাকে না! তাহলে কী ডলটি সুন্দর নয়? না না তা কী করে হয়? এমন টা হতেই পারে না... মহিলাগুলার কোন রুচিই নাই! ২ টার দিকে আলম আসে খাবার নিয়ে... ঃ বড় স্যারে কই? ঃ বাইরে গেছে। ঃ ওহ্ বাঁচলাম।

ডলটা লইয়া কিছু কইছিল? ঃ না তেমন কিছু বলল না শুধু বলল তুমি একটা অপদার্থ... ঃ দেখছেন স্যার আমি কইছি না এই ডল বড় স্যারের পছন্দ হইবো না। আর আপনে কন এইটা সবচে’ সুন্দরী! ঃ হ্যাঁ সুন্দরীই তো... তুমি যেরকম একটার নাম দিলা মৌসুমি আমিও এটার নাম দিয়েছি “ডায়ানা” ঃ কন কী স্যার! এই কথা আমারে কইলেন আর কাউরে কইয়েন না স্যার! আপনারে পাগল কইব... আপনার কাছে ডায়ানার মত লাগে এইটারে! আমার কাছে মনে হয় “ডাইনী”! ঃ এই বের হ বের হ দোকান থেকে বের হ... ঃ কী কন স্যার... খাওয়া দাওয়া? ঃ আমি বের হলে তারপর এসে খাবি! আর খবরদার এই ডলটারে ডাইনী বলবি না! আলম কিছুই না বুঝে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দোকান থেকে বের হয়ে যায়... ৪. সন্ধ্যার দিকে মানিকের মোবাইলে ফোন আসে বাড়ী থেকে। ঃ হ্যালো বাবা মানিক কেমন আছস তুই? ঃ জ্বি আম্মা আমি ভালই আছি.. তোমরা সবাই কেমন আছ? ঃ আল্লায় রাখছে। তুই কতদিন বাড়ীত আসস না! তোর কী ছুটি টুটি নাই? ঃ না মা দোকানে কাজ বেশি আর দুইমাস পরে ঈদ... ঈদের পরদিন আসব আম্মা। ঃ ঈদের আগে কী কোনভাবেই আসতে পারবি না? ঃ না মা...ঈদের আগে কেন? ঃ ঐ যে হামিদ মুহুরীর বড় মেয়ে পারুল আছে না, ওর বিয়ের সম্মন্ধ আসতেছে.. কিন্তু ওনারা আমাদের সাথে সম্মন্ধ করতে চায়।

সেদিন তোর আব্বারে তোর কথা জিজ্ঞেস করছিল... বলছে আমাদের আপত্তি না থাকলে এবার ঈদের আগেই বিয়েটা সেরে ফেলতে চায়। তুই ও ত ওরে ছোটবেলায় দেখছিলি... ঃ না মা এখন বিয়ে করব না । আর গ্রামের কোন মেয়ে বিয়ে করব না। ঃ কী বলস! গ্রামের মেয়ে বিয়ে করবি না? তুই কী শহরে কাউকে পছন্দ করস? ঃ (মানিক একটু ভেবে বলে...) হ্যাঁ মা। ঃ বাবা আমার কথা শোন শহরের মেয়ে গুলা ভাল হয় না তুই বাড়ী আয় পারূল রে দেখে যা... ও মাশাল্লাহ্ এখন অনেক সুন্দর হইছে।

ঃ না মা এখন তো আসাই যাবে না। আর বিয়ে শাদী তো অনেক দূরের ব্যাপার! ঃ তুই কী শহরে কাউরে কথা দিছস বাবা? ঃ না মা কথা দিই নাই... ঃ তাহলে একাজ করি পারূলের একটা ছবি পাঠাই। তুই না আসতে পারলেও ছবি দেখে তোর মতামত জানা। আমার মনে হয় তোর পছন্দ হবে। ঃ না মা ছবি পাঠানোর দরকার নেই।

ঃ না আমি পাঠাবই... এই বলেই তার মা কল কেটে দেয়। ৫. সপ্তাহ খানেক পরেই মানিকের মায়ের চিঠি আসে। মানিক চিঠিটি হাতে নিয়ে চেয়ে থাকে । না সে এটা খুলবে না। তার মাথায় ডায়ানা ডল ছাড়া অন্য কারো চিন্তা সে নিতে চায় না।

সে চিঠিটি ড্রয়ারে ঢুকিয়ে ফেলে... দুদিন বাদে আবার তার মায়ের ফোন আসে... ঃ বাবা মানিক চিঠি পাইছস? ঃ জ্বী মা। ঃ পারুল রে কেমন লাগল বাবা? ওর আব্বা বলছে এ সপ্তাহের মধ্যেই আমাদের মতামত জানাইতে। ঃ মা পারুলরে ভাল লাগে নাই। (চিঠি যে খোলেনি এটা সে গোপন করল) ঃ (তার মা দীর্ঘশ্বাস ফেলল) ঠিক আছে বাবা কী আর করা! পছন্দ হওয়া না হওয়াই আসল কথা। তুই তাইলে ঈদের আগে আসবি না? ঃ না মা।

ঃ ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করিছ বাবা। ঃআচ্ছা ঠিক আছে মা তুমি কোন চিন্তা কোর না। ফোন রেখে মানিক চিন্তা করে এবার তো ঈদের আগে যাওয়াই যাবে না! প্রতিবার ঈদে ওদের দোকানে কত কাস্টমার আসে! এবার তার ডায়ানা ডলের মতো কোন মেয়েকে সে অবশ্যই দেখবে। ৬. মানুষের মন যে কী বিচিত্র! বিশেষ করে পুরুষ মানুষের মন বেশি বিচিত্র হয়ে যায় যখন তারা প্রেমে পড়ে। পুরুষ মানুষ একরকম অন্ধই হয়ে যায় প্রথম প্রেমের বেলায়! মানিক নামের গ্রামের সহজ সরল ছেলেটি তার অবচেতন মনের প্রিয় মুখছবিটি একটি ম্যানিকিন (ডিসপ্লে ডল) এর মধ্যে দেখেই তার প্রেমে পড়ে গেল।

সে ঈদের মার্কেটে এমন চেহারার কোন মেয়ে অবশ্যই দেখবে এই আশায় দিন গুজরান করছে। অন্যকোন মেয়ে কিংবা অন্য কোন বিষয়ের চিন্তাই সে মাথায় স্থান দিচ্ছে না । সে এটাও চিন্তা করছে না যে, সে যদি ঐরকম চেহারার কোন মেয়ে দ্যাখেও তাহলে ঐ মেয়েটি তাকে পছন্দ করবে কী না ! আর সেই বা কীভাবে তাকে বলবে তার ভাললাগার কথা? ঢাকা শহরের মেয়েরা কোন সেল্সম্যান কে বিয়ে করবে কী না তাও তার ভাবনায় নাই! এই প্রেমের কারণেই মায়ের বাধ্যগত সন্তানটি জীবনে প্রথমবারের মত মায়ের সাথে মিথ্যা বলেছে... ৭. কোরবানী ঈদের বাকী আর একমাস। মানিকের যেন আর তর সয় না। যদিও ঈদের মার্কেট মোটামুটি শুরু হয়েছে ।

সে মহিলা মেয়ে সবাইকে এক পলকে বিচার করে নেয় যে দেখতে তার ডায়ানা ডলের মত কী না! গত একসপ্তাহ ধরেই তাকে হতাশ হতে হচ্ছে। একইরকম চেহারা তো দূরে থাক... বিন্দুমাত্র মিলও নাই! অবচেতন মনে হতাশা বাসা বাঁধতে থাকে... আজ বৃহস্পতিবার রাতটি তার খুব খারাপ ভাবে কাটে। রাতে ভাল ঘুম হয়নি। সে এখন মোটামুটি ভয়ানক দুঃশ্চিন্তায় পড়ে গেছে! এরকম মেয়ে না পেলে কী হবে? রাতে ঘুম না হওয়ায় ঘুম ভাঙল একটু দেরিকরে। অবশ্য সমস্যা নেই আজ সে ছুটি নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঘুরতে যাওয়ার জন্য।

সে ব্রাশ করে এসেই একটি জিনিস খেয়াল করে... তার রুমটি বেশ অগোছালো আর ধূলোবালিতে পরিপূর্ণ হয়ে রয়েছে । ডায়ানা ডলের প্রেমে পড়ার পর থেকেই সে আর কোন কাজই রুটিন মাফিক করতে পারেনি। সব শুক্রবার সকালে সে তার রুম পরিষ্কার করত তাই সে আজ তার রুম পরিষ্কার করার সিন্ধান্ত নেয়। ধূলোবালি মুছতে মুছতে প্রায় ১২ টা বেজে যায়। এবার পত্রিকা ম্যাগাজিন গোছগাছ শুরু করে তারপর অপ্রয়োজনীয় কাগজপত্র সে এক জায়গায় জড়ো করতে থাকে।

এবার সে ড্রয়ারটি খোলে... ড্রয়ারে অনেক হাবিজাবি কাগজপত্র। সে সব একসাথে নিচে ফেলে... একটি অছেঁড়া খাম কাগজপত্রগুলোর উপর বসে রয়েছে... সে বুঝতে পারে তার মায়ের পাঠানো চিঠি এটি যার ভেতর পারুলের ছবি রয়েছে... সে মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে মন দেয়। কিন্তু বেশিক্ষণ কাজে মন বসাতে পারে না। তার মায়ের সাথে মিথ্যা বলার কারণে প্রথমবারের মত তার মনে অপরাধবোধ দেখা দেয়। সে হঠাৎই চিঠিটি খোলার সিন্ধান্ত নেয়... মানিক ধীরে ধীরে চিঠিটি খুলতে থাকে...সাদা কাগজে লেখা চিঠি আর আর একটি কাগজে মোড়া কী যেন... মানিক বুঝতে পারে ওর ভেতর পারুলের ছবি।

সে প্রথমে চিঠিটি পড়ার সিন্ধান্ত নেয়। সাদা কাগজে মায়ের লেখা। বেশিরভাগই পারুল মেয়েটিকে নিয়ে লেখা। ও এবার অন্যকাগজটি বের করে। সেখানে একটি ছবির সাদা উল্টো পিঠ দেখা যাচ্ছে... ছবিটি ওল্টাতেই ওর মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে! এ কাকে দেখছে সে? এ তো পারূল নয়! এতো ডায়ানা ডল! এটা কীভাবে হল!! মা তো পারুলেরই ছবি পাঠিয়েছে! তাহলে? ব্যাপার কী!... পরক্ষণেই মানিক ঠিক করে ফেলে তাকে কী করতে হবে! সে ব্যাগ গোছাতে থাকে।

পুরো রুমটি অগোছালো রেখেই সে বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়... ৮. মানিক যখন বাড়ীতে পৌঁছল তখন বিকাল । সে বাড়ীর সামনে এসে স্তব্ধ হয়ে যায়! ওদের মূল দরজায় তালা ঝুলছে! সে বুঝতে পারে না... ব্যাপার কী? পাশেই তার খালারা থাকে। খালার বাড়ীতে গিয়ে ছোট খালাকে সালাম করে কুশলাদি বিনিময় করেই জিজ্ঞেস করে তার আব্বা-আম্মার কথা... ঃ অ আপা আর দুলাভাই তো পারুলদের বাড়ীতে। তুই জানস না আজ পারূলের বিয়ে ? ওরা তো তোর সাথেই চাইছিল কিন্তু শুনলাম তোর না কী পছন্দ হয় না। তা তোর পছন্দ হয় নাই কেন? পারূল তো সুন্দরী মেয়ে... মানিকের তখন জবাব দেয়ার অবস্থা নাই ।

তার মাথা ঘুরছে মনে হচ্ছে যে কোন সময় মাথা ঘুরে পড়ে যাবে! খালাকে কোন জবাব না দিয়েই সে পারুলদের বাড়ীর দিকে দৌড়াচ্ছে! টানা পাঁচ মিনিট দৌড়ে সে পারুলদের বাড়ীতে উপস্থিত হয়... ৯. এই বাড়ীতে আজ সাজ সাজ রব। মানিক ঢুকেই দ্যাখে সব মানুষগুলো যেন বাড়ীর বড় উঠানে এক জায়গায় গোল হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সে ও ভীড় ঠেলে এগিয়ে যায়। কমিনিউটি সেন্টারের মত করে মঞ্চ তৈরী করা হয়েছে... সেই মঞ্চে পারুল ও তার বর বসে আছে । বিয়ের পরবর্তী আনুষ্ঠানিকতা চলছে... মানিক স্তম্ভিত! বাকরুদ্ধ! অলক্ষ্যে চোখ মুছে সে একদৃষ্টে পারুলের দিকে তাকিয়ে আছে... ওর কাছে মনে হল ওটা যেন পারুল নয়...ওর ডায়ানা ডল... যেন শাড়ি জড়িয়ে বসে আছে! পাশে বসা ওর বর কে “বাংলার নারী” দোকানের কাস্টমার বলেই ওর মনে হয়! যে কাস্টমার আজ শাাড়ী সহ ডলটি নিয়ে যাবে! এক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রিন্সেস ডায়ানা পৃথিবী থেকে হারিয়ে গিয়েছিলেন, মায়ের কথা না শোনা জনিত দুর্ঘটনায় মানিক তার ডায়ানা ডলের বাস্তব মেয়েটিকে হারিয়ে ফেলল... ************ (সংশোধিত পুনঃলিখন) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।