আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি বট গাছের আত্মকাহীনি (স্মৃতিচারন)

তালহা বিন জসিম: গাছ নিয়ে লিখেছেন অনকে কবি সাহিত্যিক লেখক, পড়ে মুগ্ধ হয়েছি আবার কখনো হয়েছি স্মৃতি কাতর। আমার জীবনের স্মৃতি বিচরনে অনেক গাছ স্মৃতির ভীরে ঘুড়ে ফিরে আসে কয়েকটি বট গাছ। ভাবতেই কেমন আনমনা হয়ে যাই, ফিরে যেতে ইচ্ছে করে সেই ভাবনা হীন ছোট সময়ে। কিশোর বয়সে রচনার বইতে পড়েছি একটি বটগাছের আত্মকাহীনি, সেদিন হয়তো এই আত্মকাহীনির মর্ম কথা বুঝিনি আজ বয়সের এই পর্যায়ে গাছের জমে থাকা মনের কথা আমার কথা হয়ে ফিরে আসে নিজের কানে, মনে, চোখে। ছোট সময়ে গ্রামের বাড়ির (দাশপাড়া, বিশ্বাস বাড়ি) ঢোকার পথে একটি বট গাছের কথা আজ খুব মনে পড়ছে।

অনেক মোটাতাজা, আর বিশাল ডালপালা নিয়ে দাড়িয়ে ছিলো পকুরের পাড়ে। কিশোর বয়সের দুরন্তপনার কতো সাক্ষী এই গাছ। বড় বড় সবুজ পাতার মাঝে গোল গোল লাল ফলে ছেয়ে থাকতো শাখা প্রশাখা। পাখির ঠোকরের নির্যাতনে লাল ফলগুলো হলুদ লালের কাচা গোল্লার মতো এবরো থেবরো হয়ে পড়ে থাকতো গাছের নিচে। দুপুরে গোসল করার সময় পুকুর পাড়ের এই গাছের ডাল থেকে লাফিযে পড়তাম পানিতে, আবার গাছে চড়তাম আবার পানিতে লাফ দিতাম, এভাবে চলতো কমপক্ষে ঘন্টাখানিক, পকুরের পাড়ে বটগাছের মোটা মোটা ছাল তোলা সাদা সাদা শিকড়গুলো ছিলো আমাদের ঘাট, এখানে বসেই লাফালাফির ফাকে জিড়িয়ে নিতাম,কাদায় মাখামাখি শরীর ডলতাম, যারা সাতার জানতো না শিকড় ধরেই পানিতে পা নাড়িয়ে তাদের আনন্দ, সে কি উচ্ছাস।

পকুরের উত্তর পাড়ে টিনের মসজিদ, তারপর একটা ছোট বারান্দা তার পর একটু ফাকা জায়গার পাশেই বিশাল বিশাল ডাল দিয়ে পুরো ফাকা জায়গাটা ঢেকে দাড়িয়ে এই বটগাছ। নিরব দুপুরে পাখিরা খেতো লাল বটফল, গাছটির গা ঘেষে বসানো ছিলো একটি কাঠের বেঞ্চ, বিকেলে পুকুরের ওপারের ধান ক্ষেতের বয়ে যাওয়া বাতাস সরাসরি ভিজিয়ে দিতো মন। চাচা দাদারা বসে বসে কতো গল্প করতো এই বেঞ্চিতে, বাড়ির ঢোকার সময় এই গাছের নিচে জিড়িয়ে নিতো হাট থেকে আসা ছেলে বুড়ো সবাই। শীতের পাতা শুন্য ফাকা ডালে ঝুলে থাকতো লালফল, বট পাতা ছিড়ে সাদা কশ বের করে খেলতাম, এই কশ দিয়ে বাশের কঞ্চির মাথায় লাগিয়ে ঝি ঝি পোকা ধরতে কতো বাড়ির বাগানে বাগানে ঘুড়ে বেরিয়েছি। বিকেলবেলা গাছটির নিচ বরাবর ফাকা জায়গায় ক্রিকেট খেলেছি কতো দিন।

আমার বয়সী চাচা আর ছোট ভাইদের নিয়ে গাছের ডালে ডালে ঘুড়ে বেড়াতাম, উপরের ডাল থেকে নেমে আসা লম্বা শিকড়ই ছিলো গাছে উঠার আমাদের সিড়ি। তড়তড় করে সিড়ি বেয়ে উঠে যেতাম গাছের ডালে। সময়ের সাথে সাথে আমিও বেড়ে উঠি, গা গতরে যেমন বেড়ে উঠি তেমনি মানসিকতায়ও, গ্রাম থেকে শহুরে জীবন, আস্তে আস্তে মন থেকে দূরে চলে যায় বট গাছ, ঈদ ছাড়া বাড়িতে তেমন যাওয়া হতো না, সময়ের সাথে বাড়ির রুপের অনেক পরিবর্তন হতে থাকে, টিনের মসজিদ থেকে ইটের দেয়ালের মসজিদ, কিশোর স্মৃতি বিজড়িত গাছটির মরন ঘটে মানুষের হাতে। আমাদের প্রিয় শিকড়ের ঘাটের বদলে লাল ইটের ঘাট শুয়ে আছে পুকুরের পাশে, এই দিনে এসে মনে হয় গাছের বাহ্যিক মৃত্যু ঘটেছে কিন্তু আমার মনের মাঝে দাড়িয়ে আছে পুর্ন শক্তিতে দিন দিন তা সীমাহীন বেড়ে উঠছে। আমি তা জানি না কতো খানি বেড়ে উঠেছে, জানতেও চাই না……… বেড়ে উঠুক যেমন মনে চায়।

শহুরের বাসা থেকে গ্রামের বাড়িতে যেতে তিন রাস্তার মোড়ে ছিলো একটি বটগাছ, একপাশে খালের উপর পুল বরাবর রাস্তা, পুল বরাবর রাস্তা দিয়ে আসলে সড়াসড়ি চোখে পড়তো গাছটি, গাছের আশে পাশে ছিলো ঝোপঝাড়ে ভরপুর,ছোট সময়ে নিরব তিন রাস্তার পাশে দাড়িয়ে থাকা বটগাছটির দিকে তাকাতাম ভয়ে ভয়ে, এখনো স্বপ্নে দেখি এই জায়গাটাকে, ভেসে থাকে চোখের সামনে, আমি জানি না কেনো ভয় পেতাম এই গাছটিকে, আধো আধো স্মৃতি ঘষে মনে হয়, তিন রাস্তার মোড়ে দাড়িয়ে থাকা কুসংস্কাররের কারনে ভয় পেতাম, আবার তার পাশে বয়ে চলা খাল, আশে পাশে বাড়ি ঘর নেই, দুরে চোখে পড়ে খাজুর বাড়িয়া স্কুল, গা গা ছমছম করে উঠে, আড় চোখে তাকিয়ে কোন রকম দৌড়ে পালাতাম এই গাছটিকে, গুজব ছিলো এই গাছের নিচে ছিলো গুপ্তধন, কারা যেনো টাকার কলস পেয়েছে গাছের শিকরের নিচে, কোনভাবে পাড় হতে পারলেই এ যাত্রায় বেচে যেতাম, সময়ের সাথে জীবনেরও বয়স বেড়ে যায়। শহুরে আদিখ্যতায় গ্রামে আর যাওয়া হলো না, অনেক দিন পরে দেখলাম গাছটি কেটে ফেলা হয়েছে, ঝোপঝাড় তো দুরের কথা মাঠের মধ্যে খা খা করছে শুন্য জায়গাটা । তালহা বিন জসিম শেরে বাংলা রোড বাউফল পৌরসভা ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.