আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন নিরীহ মানুষের ৪ বছর জেলখাটা এবং বিখ্যাত নাটক: জোট সরকারের আমলনামা-৩

আমি কিছুই না..... আবার অনেক কিছু । ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট । বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে লীগের সমাবেশে । বক্তৃতা শেষ করে মঞ্চ থেকে নামেন শেখ হাসিনা। ঠিক এমন সময় শুরু হয় মঞ্চ লক্ষ্য করে গ্রেনেড হামলা।

দক্ষিণ দিক থেকে নিক্ষেপিত একটি গ্রেনেড মঞ্চের পাশে রাস্তার ওপর পড়ে প্রচন্ড শব্দে বিস্ফোরিত হয়। মাত্র দেড় মিনিটের মধ্যে বিস্ফোরিত হয় ১১টি শক্তিশালী গ্রেনেড। এতে ঘটনাস্থলেই ১২ জন এবং পরে হাসপাতালে আরও ১২ জন নিহত হন। হামলায় মারা যান আইভি রহমান । শেখ হাসিনা কে বাচাতে গিয়ে মারা যান নিরাপত্তারক্ষী মাহবুব।

নিজের দলের নেত্রী কে বাচানোর জন্য নিজের প্রানের মায়া তুচ্ছ করে নিরাপত্তা বলয় তৈরী করেন নেত্রী কে ঘিরে । মোহাম্মদ হানিফ ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও শেখ হাসিনার নিরাপত্তারক্ষীদের নেতৃত্বে সেদিন জননেত্রীকে বাঁচাতে মানববলয় সৃষ্টি করেন । শেখ হাসিনা কে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষন ও করা হয় । শেখ হাসিনা কে বাচাতে গিয়ে মারা যান নিরাপত্তারক্ষী মাহবুব ২১ আগষ্টের গ্রেনেড হামলার পর মতিঝিল থানায় একটি মামলা করা হয়। মতিঝিল থানার (তৎকালীন) এসআই মো. আমির হোসেন ২০০৪ সালের ২২ আগষ্ট থেকে ২৩ আগষ্ট পর্যন্ত মামলার তদন্ত করেন।

পরে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি ডিবি তদন্ত শুরু করতে না করতেই আবার তদন্তভার পরিবর্তন করে দেয়া হয় সিআইডির ওপর। সিআইডির এএসপি আবদুর রশিদ ২০০৪ সালের ২৩ আগষ্ট থেকে ২০০৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত মামলাটির তদন্ত করেন। এরপর তদন্তভার দেয়া হয় সিআইডির এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমানের ওপর। সিআইডিকে মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেয়ার পরপর সিআইডি ঢাকা মেট্রোনের সাবেক এসএস রুহুল আমিন মামলাটির তদারকির দায়িত্ব পান। তিনি জনগুরুত্বপূর্ণ এই মামলার বিষয়ে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়সহ সরকারের কয়েকজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর সঙ্গে ঘন ঘন বৈঠক করেছিলেন জজ মিয়া নাটক: পুলিশ ২০০৫ সালের ৯ জুন নোয়াখালীর সেনবাগ এলাকার একটি চায়ের দোকান থেকে জজ মিয়াকে গ্রেফতার করে গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে।

এ নাটকের মূলে ছিলেন সিআইডির তত্কালীন প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা এএসপি আবদুর রশিদ, তদারকি কর্মকর্তা বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন এবং সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান। তারা বড় বড় রাঘববোয়াল দের বাচাতেই গ্রেনেড বিস্ফোরণ মামলায় জজ মিয়াকে রাজসাক্ষী করার গোপন পরিকল্পনা করেন। ২০০৫ সালের ৯ জুন বাড়িতে গিয়ে বিকেলে বাড়ির সামনে রাজা মিয়ার চা দোকানে বসে চা খাচ্ছিলেন জজ মিয়া। তখন গ্রামের চৌকিদার মুখলেছুর রহমান তাঁকে বলেন, 'আপনার সঙ্গে কথা আছে। ' জজ মিয়া তাঁর সঙ্গে কিছু দূর গিয়ে দেখেন, সেনবাগ থানার এসআই কবির দাঁড়িয়ে।

কবির তাঁকে বলেন, 'আমার সঙ্গে একটু থানায় যেতে হবে। ' জজ মিয়া থানায় গেলেন। তারপর কুটিল রাজনীতি আর সিআইডির 'কল্যাণে' সাধারণ জজ মিয়ার জীবনে ঘটেছে ভয়ংকর সব ঘটনা। সিআইডির একটি দল জজ মিয়াকে ঢাকায় নিয়ে যায়। সিআইডির তৎকালীন বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন গ্রেনেড হামলা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১৭ দিনের রিমান্ডে নেন।

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার আসামি করে নির্যাতন চালিয়ে, লোভ দেখিয়ে তাঁর কাছ থেকে আদায় করা হয় স্বীকারোক্তি। জীবনে গ্রেনেড না দেখলেও তাঁর মুখ দিয়ে বলানো হয়, পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে বড় ভাইদের নির্দেশে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় তিনি অংশ নেন। বড় ভাই বলতে তিনি বলেন শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদের নাম। পরে এই গল্প ফাঁস হয়ে গেলে জজ মিয়াকে অন্য মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়। এরপর মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে জজ মিয়াকে দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেন।

জজ মিয়াকে দিয়ে আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে বলানো হয় শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন, জয়, মুকুলসহ কিছু বড়ভাই পুরো হামলা পরিচালনা করেন। জজ মিয়ার মূল স্বীকারোক্তি এখানে তার এ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বিনিময়ে জজ মিয়ার মা জোবেদা খাতুনকে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন মাস শেষে আড়াই হাজার টাকা দিতেন। প্রতিমাসে নোয়াখালীর সেনবাগ থেকে ঢাকায় এসে তিনি সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিনের কাছ থেকে আড়াই হাজার টাকা নিতেন। ওই সময় জজ মিয়াই ছিলেন গ্রেনেড হামলা মামলায় সিআইডির চাঞ্চল্যকর ট্রাম্পকার্ড। আবদুর রশিদের মতো সিআইডির দ্বিতীয় তদন্ত কর্মকর্তা মুন্সি আতিকুর রহমানও একই পথের পথিক ছিলেন।

আর তাদের তদারকি করতেন বিশেষ সুপার রুহুল আমিন। কিন্তু হিসাবে একটু ভুল হয়ে যায় , যখন গ্রামের বাড়ি তে সাংবাদিক রা যায় । বাড়ি তে জজমিয়ার মা না থাকায়, বোন কে জিজ্ঞাসা করা হয়, সংসার কিভাবে চলে । বোন ভুল করে বলে ফেলে সিআইডি মাসে মাসে টাকা পাঠায় । জজ মিয়ার বোনের কল্যাণে রেহাই পান জজ মিয়া।

তথ্য ফাঁস করে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হন সিআইডির তিন কর্মকর্তা। প্রতিহিংসাবশত জজ মিয়াকে একটি বিস্ফোরক মামলায়ও অভিযুক্ত করা হয়। গত ২০০৯ সালের ৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ভিত্তিতে বিচারক মাসদার হোসেন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় করা হত্যা ও বিস্ফোরক মামলার মধ্যে বিস্ফোরক মামলার পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেন। নির্দেশ অনুযায়ী তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পান সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহার আকন্দ। তদন্ত পেয়ে তিনি মামলাটিকে স্পর্শকাতর বিবেচনা করে গ্রেনেড হামলার পেছনে প্রভাবশালী কারও হাত ছিল কি না তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন।

তার তদন্তেই বেরিয়ে আসে জজ মিয়া, সফিক, রানা এবং হাজী মুখলেসুর রহমানের মতো কিছু অচেনা চরিত্র। তবে তার আগে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সিআইডির এএসপি ফজলুল কবীর এ মামলার নতুন ক্লু বের করেন এবং জজ মিয়া নাটক মঞ্চস্থ করার প্রক্রিয়ায় জড়িত সিআইডির তত্কালীন ওই তিন তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে নেওয়ার অভিযোগ এনে মামলা করেন। ২০০৬ সালে মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতারের পর বিনা অপরাধে জজ মিয়াকে চার বছর কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে কাটাতে হয়েছে। জজ মিয়া নাটকের রহস্য উন্মোচনের পর অভিযোগ থেকে রেহাই মেলে তার। এরপর ২০০৯ সালের ২৬ জুলাই কাশিমপুর কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পান।

একেক সময় একেক জায়গায় বসবাস করে জজ মিয়ার পরিবার। গত বছর জজ মিয়া তার মা জোবেদা, ছোট ভাই-বোনকে নিয়ে টঙ্গীতে বসবাস করেন। বর্তমানে তারা বসবাস করছেন নারায়ণগঞ্জে। বোন খোরশেদা কাপড়ের দোকানে কাজ করেন। জজ মিয়া ড্রাইভিং শিখে এখন গাড়ি চালাচ্ছেন।

জজ মিয়া বলেন, গ্রেফতারের পর সিআইডি কার্যালয়ে ভয়-ভীতি দেখিয়ে স্যারদের শিখিয়ে দেওয়া জবানবন্দি আদায় করা হয়। শেখানো কথা না বললে ক্রসফায়ার ও পরিবারের সবাইকে মামলায় জড়ানোর ভয় দেখানো হয়। কথামতো সাক্ষ্য দিলে মামলা শেষে তাকে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার লোভ দেখানো হয়। এ জন্যই তাদের কথামতো সাক্ষ্য দেই। বিনিময়ে তারা মাসে মাসে দুই-আড়াই হাজার টাকা করে তাদের পরিবারকে দিতেন।

মাঝে মধ্যে জেলে গিয়ে সিআইডি কর্মকর্তারা খাবার ও জামা-কাপড় দিয়ে আসতেন। জজ মিয়ার মা জোবেদা খাতুন জানান, ছেলেকে নিয়ে যে নাটক সাজানো হয়েছে, তা সামাল দিতে স্বামীর ভিটেমাটি বিক্রি করতে হয়েছে। বাবা আবদুর রশিদ ছোটকালেই মারা যান। চার ভাই এক বোনের মধ্যে জজ মিয়া দ্বিতীয়। বড় ভাই আলমগীর চট্টগ্রামে থাকেন।

মায়ের সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগ নেই। জজ মিয়া ঢাকায় বাবার পুরনো ভাঙারি ব্যবসার পাশাপাশি গুলিস্তানে একটি সিডির দোকানে কাজ করতেন। মাঝেমধ্যে তিনি বাড়িতে এসে দু-এক দিন মায়ের সঙ্গে থেকে চলে যেতেন। গ্রেনেড হামলা হামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। চার্জশিটে জোট সরকারের শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, নিষিদ্ধ ঘোষিত হরকাত-উল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানসহ ২২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেটের আদালতে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে মতিঝিল থানায় দায়ের করা পৃথক দুইটি মামলার চার্জশিট দাখিল করে তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি। চার্জশিট দাখিলের পর সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গ্রেনেড হামলা মামলার তদন্তে ২৮ জনের নাম পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে সঠিক তথ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় চার্জশিট দেয়া হয় ৬ জনকে বাদ দিয়ে। চার্জশিটভুক্ত ২২ জনের মধ্যে কারাগারে বন্দি ১৪ জন হলো জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, তার ছোট ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, নিষিদ্ধ হরকাত-উল জিহাদ (হুজি) নেতা মুফতি আবদুল হান্নান, তার ভাই মফিজুর রহমান ওরফে অভি, মাওলানা আবু তাহের, শরিফ শহিদুল ইসলাম ওরফে বিপুল, মাওলানা আবু সায়ীদ ওরফে ডাক্তার আবু জাফর, আবুল কালাম বুলবুল, জাহাঙ্গীর আলম, জুয়েল, হোসাইন আহমেদ ওরফে তামিম, মুফতি মঈন ওরফে আবু জান্দাল, আরিফ হাসান ওরফে সুমন, উজ্জ্বল ওরফে রতন। বাকি ৮ জন পলাতক রয়েছে।

বহুল আলোচিত জজ মিয়া বিনা অপরাধে তিন বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে দিন কাটিয়েছেন । পরবর্তী একটি সংবাদ যা আপনাকে নাড়া দেবে - তাজউদ্দিনকে পাকিস্তানে পাঠায় ডিজিএফআই, জানতেন খালেদা একজন নিরীহ মানুষকে বিনা দোষে জেলে প্রেরণের শাস্তি ১০ বছরের কারাদন্ড, একজন পরিবাককে বাস্তুচ্যুত করবার শাস্তি বিচারকের মর্জি অনুযায়ী নির্ধারিত হবে। কিন্তু যে দেশে নাটকের মাধ্যমে একজন নিরঅপরাধ মানুষ কে গ্রেনেড চার্জ করার অপরাধে ১৭ দিনের রিমান্ডে নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয় , সেখানে বিচার পাওয়া কত টা যৌক্তিক প্রশ্ন তা ভেবে দেখতে হয় বৈকি ।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.