আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ম্যানহোল নয়, মৃত্যু ফাঁদ!

যেমন কর্ম তেমন ফল। রাজধানীর পয়ঃপ্রনালীতে মানুষ নামার উপযোগী মুখ বা ম্যানহোল এখন পরিণত হয়েছে মৃত্যু ফাঁদে! রাজপথ থেকে গলি উপগলি সব সড়কের ম্যানহোলের একই দশা। কোন ম্যানহোল সড়কের চেয়ে অনেক উচু, কোনটি অনেক নিচু, কোনটির ঢাকনা নেই। সড়কের লেভেল অনুযায়ী কিছু থাকলেও তার সংখ্যা বেশি নয়। ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে নানা দূর্ঘটনা।

মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে পথ চলতে হচ্ছে নগরবাসীকে। চিকিত্সা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যানবাহনে চলাচলের সময় ম্যানহোলের ঝাঁকি খেয়ে নগরবাসীর দূরারোগ্য বাঁধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। পরিণতি মৃত্যুও ঘটছে। সরেজমিনে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অভিজাত এলাকা থেকে বস্তি এলাকা পর্যন্ত সব সড়কের ম্যানহোলের একই চিত্র। রামপুরা-কুঁড়িল বিশ্বরোডে প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনা ঘটছে।

এ সড়কের বেশির ভাগ ম্যানহোল সড়কের চেয়ে অনেক নিচু। তেঁজগাঁও বিজয় সরণি সংযোগ সড়কের দু’পাশে উঠা-নামার পথে সড়কের চেয়ে অনেক উচুঁ ৩টি ম্যানহোল রয়েছে। গত কয়েক মাস আগে একটি প্রাইভেটকার ম্যানহোলের উপর গাড়ি উঠাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশ দিয়ে হেঁটে চলা পথচারীর গায়ে উঠিয়ে দেয়। এতে পথচারীর মৃত্যু ঘটে। শাহবাগ-এয়ারপোর্ট সড়কে বেশির ভাগ ম্যানহোলের অত্যন্ত খারাপ।

কোনটি অনেক উচু, কোনটি রুপ নিয়েছে গর্তে, কোনটির আবার ঢাকনা নেই। পুরান ঢাকার লালবাগ, শহীদ নগর, ইসলামবাগ, চকবাজার, নয়াবাজার, সূত্রপুর এলাকা ঘুরে দেখাগেছে বেশির ভাগ ম্যানহোলের কোন ঢাকনা নেই। পুরো নগরীর চিত্র এমনি। যানবাহনে চলাচলের সময় ম্যানহোলের ঝাঁকুনি মানব শরীরে কি ধরনের ক্ষতিকরে জানতে কথা হয় জাতীয় পঙ্গু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আব্দুল আউয়াল রিজভীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ম্যানহোলের ঝাঁকুনি মানব শরীরে নানা ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।

এ ধরনের ঝাঁকুনি মেরুদন্ডে মারাত্মক আঘাত লাগে। ৪৫-৫০ বছরের মহিলা এবং ৫৫-৬০ বছরের পুরুষের মেরুদন্ডে অন্ত্রোসপসি (হাঁড় জমে যাওয়া) হতে পারে। একটু জোরে আঘাত লাগলে মরুদন্ডের হাঁড়ও ভেঙ্গে যেতে পারে। যে কেউ হঠাত্ করে ব্রেক কষলে ঘাঁড়ে মারাত্মক আঘাত লাগে। ঝাঁকুনির মাত্রা বেশি হলে ঘাঁড়ের শিরা ছিড়ে গিয়ে মৃত্যুও ঘটতে পারে।

নগর বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, ম্যানহোলের অব্যবস্থাপনা প্রথম বড় ধরনের দূর্ঘটনার কারণ হতে পারে। যে সব ম্যানহোলের ঢাকনা খোলা থাকে। সে সব ড্রেনে ময়লা পড়ে ড্রেনেজ সিস্টেম নষ্ট হয়ে পয়ঃনিষ্কাশন বাঁধাগ্রস্ত হয়। ফলে বর্ষার মৌসুমে রাজধানী জলজটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ডিসিসির প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর ১৮০০ কিলোমিটার সড়ক-উপসড়কে প্রায় ১০ হাজার ম্যানহোল রয়েছে।

এর বেশির ভাগ ঢাকা ওয়াসার। এছাড়াও ম্যানহোল রয়েছে ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি), বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানির (বিটিসিএল), তিতাস গ্যাস কোম্পানির। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নগরীতে ম্যানহোল তৈরি করেছে গ্রামীণ ফোন, বাংলালিংক, সামিট গ্রুপ, ফাইবার এট কমসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। নগর সড়ক খনন নীতিমায় বলা আছে, যে কোন সরকারি, বেসরকারি সংস্থা বা ব্যক্তিমালিকদের প্রয়োজনে নগরীর সড়ক খনন করতে পারবে। এর জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হয়।

ম্যানহোল করলে তার রক্ষণাবেক্ষণ করার বিধান রয়েছে সংশ্লিষ্টদের নিজেদের। এসবের সমন্বয় করার দায়িত্ব ডিসিসির। কিন্তু কেউই নিজ নিজ দায়িত্বের ব্যাপারে সচেতন নয়। প্রধান নগর সংস্থা ডিসিসিও এ ব্যাপারটি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। ফলে দিনদিন ম্যানহোল অব্যবস্থাপনা বাড়ছে।

ফলে ম্যানহোলগুলো এখন নগরবাসীর মৃত্যু ফাঁদে রপান্তরিত হচ্ছে। যোগাযোগ করা হলে ডিসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী-১ আবুল হাসনাত বলেন, আমাদের কাজ হলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের যেসব ম্যানহোল আছে সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণ সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করা। ডিসিসির পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হলেও তারা এ ব্যাপারে কোন কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছেনা। তাছাড়া ডিসিসির জনবল সংকট থাকায় সঠিকভাবে মনিটরিং করা যাচ্ছেনা বলে জানান তিনি। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।