আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্ট জয় করলেন নিশাত মজুমদার

নি শা ত ম জু ম দা র সেই প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই মানুষ ভ্রমণপিপাসু। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও মানুষ জয় করেছে নানা দুর্যোগময় স্থান। শুধুমাত্র নতুনকে দেখার প্রাণান্তকর ইচ্ছা থেকেই এই ধরনের দুর্লভ ভ্রমণগুলো করা সম্ভবপর হয়েছে। পর্বতশৃঙ্গে ভ্রমণের ব্যাপারটি তেমনই একটি ভয়ঙ্কর সুন্দরের হাতছানি দিয়ে ডাকে ভ্রমণপিপাসুদের। যারা জীবনের তোয়াক্কা না করেই এই ভ্রমণের উদ্দেশে নিজেদের উত্সর্গ করে তেমনি একজন ভ্রমণপিয়াসী পর্বতারোহী নিশাত মজুমদার।

বিপদকে ভয় নয়, বরং মোকাবিলা করতেই ভালোবাসেন। নেপাল-বাংলাদেশ বন্ধু শিখর অভিযানে সর্বশেষ ২০০ ফুট খাঁড়া দেয়াল বেয়ে ওঠার এক পর্যায়ে এমনভাবে মাঝামাঝি পথে এসে আটকে যান যেন মনে হচ্ছিল এখানেই বুঝি তার অভিযান শেষ। আরও ভয় পেয়ে গেলেন, কারণ যদি পেছনে থাকা নূর মোহাম্মদ ও বিপ্লবদেরও তার কারণে অভিযান ব্যর্থ হয়ে যায়। সেই ভয় এখনো তাড়া করে ফেরে ১৯৮১ সালে জন্ম নেওয়া এই পর্বতারোহীকে। বর্তমানে তিনি ঢাকা ওয়াসাতে হিসাব রক্ষণ অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাপান স্ট্যাডিজ বিভাগে পড়াশোনা করছেন। তার মতে, পাহাড়কে ভালোবাসাই হচ্ছে পর্বতারোহণের মূলমন্ত্র। ২০০৩ থেকে এই মাধ্যমে যাত্রা শুরু করা নিশাত মৌলিক পর্যায়ের পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ নেন ভারতের দার্জিলিং থেকে। এ পর্যন্ত তিনি যাত্রা করেছেন নেপালের মেরা পিক, সিঙ্গুচুলি, মাকালু, ভারতের গঙ্গোত্রী এবং নেপাল বাংলাদেশ বন্ধুত্ব শিখরে। পর্বতারোহণের ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে এমন প্রশ্নের জবাবে নিশাত বলেন, ‘সাধারণত পর্বতারোহী হতে গেলে সবার প্রথমেই যে বিষয়টির উপর গুরুত্ব দিতে হয়, তা হচ্ছে কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করা।

কেননা পর্বতারোহণের সময় উচ্চতাজনিত শারীরিক কষ্ট, মাথাব্যথা, বুকব্যথা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই এই সমস্যাগুলো মোকাবিলার ক্ষেত্রে নিজেকে প্রথমেই সঠিকভাবে তৈরি করতে হবে। উচ্চতার সাথে শরীরকে খাপ খাওয়াতে হবে এবং ক্লাইম্বিংয়ের প্রতিটি পর্যায়ে সাবধান হতে হবে। ’ পর্বতারোহণ মানেই কঠিন এবং ভয়ঙ্কর সুন্দরের হাতছানি। নিশাত এই ট্র্যাকিং আইডিয়াটা পান বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের মশহুরুল আমিনের কাছে থেকে।

পর্বতারোহণকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পেশা হিসেবে নেওয়ার সুযোগ আছে কতটুকু? এমন প্রশ্নের উত্তরে নিশাত বলেন, ‘বাংলাদেশে যেহেতু তেমন কোনো পর্বত নেই, তাই বাংলাদেশে থেকে পর্বতারোহণকে পেশা হিসেবে নেওয়া সম্ভব নয়, তবে বাণিজ্যিকভাবে অভিযান পরিচালনা করা যেতে পারে অন্যান্য দেশে। এখন নতুন নতুন ছেলেমেয়েরা এই অ্যাডভেঞ্চারে আগ্রহী হচ্ছে কিন্তু এখনকার ছেলেমেয়েদের মধ্যে গভীরতা বা একাগ্রতা চর্চার প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয়। ’ আর পর্বতারোহণকে আমাদের দেশে কীভাবে মূল্যায়ন করা হয়? উত্তরে নিশাত বলেন, ‘পর্বতারোহণ কোনো বিলাসিতা নয়, বিশ্বকাপ ক্রিকেট বা বিশ্বকাপ ফুটবল বা খো খো খেলা যদি বিলাসিতা না হয়, তবে পর্বতারোহণ কেন বিলাসিতা হবে, এ ক্ষেত্রে কোনো সরকারি আর্থিক সহযোগিতা নেই, এটা খুবই দুঃখজনক। বেসরকারি আর্থিক সহযোগিতা পাওয়া যায়, তবে এরজন্য অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। কিন্তু কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যারা এ ক্ষেত্রে নিবেদিতপ্রাণ, যেমন—মাউন্টেন ডিউ।

এই প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে পর্বতারোহণের ভিত্তি গড়ে দিয়েছে, আরও আছে প্যারাগন গ্রুপ, কসমস গ্রুপ, কাজী ক্রাফট ইত্যাদি। ’ পর্বতারোহণে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে নিশাত বলেন, ‘২০০৯ সালে মাকালু অভিযানে আমাদের দলে থাকা একজন ঝানু পর্বতারোহী ঝুনা ঠাকুর উচ্চতাজনিত অসুস্থতায় মারা যান, তিনি ছিলেন হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট-এর একজন দক্ষ ইন্সস্ট্রাকটর। ’ ‘পর্বতকে অসম্মান করলে পর্বতারোহণে বিপর্যয় অনিবার্য’ ট্র্যাকিংয়ের এই প্রচলিত কুসংস্কার না-মানা নিশাতের কাছে সাফল্যের সংজ্ঞা হচ্ছে একাগ্রতা + পরিশ্রম = সাফল্য। যা পর্বতারোহণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচিত। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.