আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দারিদ্র্য আর ক্ষুধা হার মেনেছে মেধাবী এমরানের সুদৃঢ় প্রত্যয়ের কাছে...

দুচোখে তার স্বপ্ন কিন্তু মুখটা মলিন। ঝালমুড়ি বিক্রেতা বাবার পাশে দাঁড়িয়ে সে আনমনে কী যেন ভাবছে? বন্ধুদের সাথে আড্ডায় তার মলিন মুখের হাসি দেখলেই মনে হয় রাজ্যেও যত কষ্ট তার বুকে বাসা বেধে আছে। দারিদ্রের বিরোদ্ধে সংগ্রাম করে বিজয়ী হলেও সংগ্রামের কষ্ট সে ভুলতে পারছেনা কোন ভাবেই। কারণ সামনে যে, তাকে আরও অনেক সংগ্রাম করতে হবে। সে কী পারবে সে সব সংগ্রামে জয়ী হতে?- এ প্রশ্ন তাড়া করে বেড়াচ্ছে তাকে।

ছেলেটির নাম এমরান আহমদ। সে সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা উপজেলার ডুংশ্রী গ্রামের এক হত দরিদ্র ঝালমুড়ি বিক্রেতা বাবুল মিয়ার ছেলে। ৩ ভাই ১ বোনের মধ্যে বড় সে। এমরান এবারের এস, এস, সি পরীক্ষায় স্থানীয় সৈয়দ কুতুব জালাল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়েছে। বাবুল মিয়ার একচিলতে ভিটা ছাড়া আবাদযোগ্য কোন জমিজমা নেই।

বাধ্য হয়েই জীবন ধারণের তাগিদে তাকে ঝালমুড়ি বিক্রি করতে হয়। প্রথম প্রথম তিনি কোন বিদ্যালয়ের সামনে গলায় গামছা দিয়ে ঝুড়ি বেধে ঝালমুড়ি বিক্রি করতেন। ইদানিং একটি হাতা গাড়ি এ কাজে ব্যবহার করেন তিনি। স্থানীয় ছোট্ট একটি বাজার (“বৈরাগীবাজার”) যেখানে সপ্তাহে দুদিন হাট বসে। বাকী দিনগুলোতে বিকেলের আড্ডা প্রিয় মানুষ যায় চা পান করে সময় পার করতে তেমনি একটি বাজারে নিয়মিত তিনি ঝালমুড়ি বিক্রি করে চলেছেন দীর্ঘদিন থেকে।

মাঝে মধ্যে এলাকায় কোন খেলাধুলার অনুষ্ঠানেও বিক্রি করেন ঝালমুড়ি। এ সময় এমরানকে ও কখনো কখনো তাকে সহযোগিতা করত। আর এ ঝালমুড়ি বিক্রি করে যা পান তা থেকে সংসার চালান কোনমতে। ছেলেমেয়ের পড়ালেখার খরচ যোগাতে তিনি হিমশিম খান রীতিমতো। স্থানীয় বৈরাগী বাজারে এ প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় এমরানের বাবা বাবুল মিয়ার ।

তিনি বলেন- এমরান পড়ালেখায় ভাল হওয়ায় বিদ্যালয়ের শিক্ষকমন্ডলী তাকে ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকেই বিনা বেতনে অধ্যয়নের সুযোগ করে দিয়েছেন। তাছাড়া অষ্টম শ্রেণিতে সে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ করায় বিদ্যালয়ের শিক্ষকমন্ডলী আলাদাভাবে তাকে যতœ নিতেন। ফ্রি কোচিং করাতেন। তাই অধিকাংশ খরচ তাকে বহন করতে হয়নি। এজন্য তিনি বিদ্যালয়ের শিক্ষকমন্ডলীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

ছেলের এ সাফল্যে আনন্দাশ্রুতে ভাসছে তার গাল। পরক্ষণেই প্রশ্ন করেন- আমার দারিদ্রতা আমার ছেলের পথ চলার অন্তরায় হয়ে দাড়াবে না তো? কথা হয় মেধাবী এমরান আহমদের সাথে। লাজুক প্রকৃতির এ ছেলেটি তার বাবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলে, এত কষ্টে বাবা সংসার চালালেও সবসময় তিনি আমাকে পড়ালেখায় উৎসাহ যোগাতেন। নিয়মিত আমার লেখাপড়ার খুজখবর নিতেন। যত রাত করে বাড়ি ফিরেন না কেন তিনি আমার সাথে কথা না বলে ঘুমাতেন না।

বাবার কষ্ট আর উৎসাহ অনুপ্রেরণাই আমার এ সাফল্যের মূল চাবিকাটি। বিদ্যালয়ের শিক্ষকমন্ডলীর প্রতি কৃতঞ্জতা জানাতে একটুও কার্পন্য করেনি সে। শুধু বিদ্যালয়ের বেতন মওকুফই নয় বিদ্যালয়ের শিক্ষকমন্ডলী তাকে ফ্রি কোচিং দিয়েছেন জানিয়ে সে বলে আমি শিক্ষকমন্ডলীর ঋণ কখনও শোধ করতে পারব না। সৈয়দ কুতুব জালাল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনাব মোঃ আব্দুল করিম জানান, এমরান অত্যন্ত বিনয়ী ও মেধাবী ছাত্র। দারিদ্রতার মধ্যেও তার মাঝে ছিল ভাল ফল করার দৃঢ় প্রত্যয়।

তাই সে শুধু বিদ্যালয়ের সুনামই বয়ে আনেনি, এলাকার ছাত্রছাত্রীদের জন্য সে এক উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পেলে এমরান ভবিষ্যতে আরও ভাল ফল করবে বলে তিনি আশাবাদী। দারিদ্রের নির্মম কষাঘাতে নিষ্পেষিত এমরান আহমদ ভবিষ্যতে একজন ডাক্তার হতে চায়। এ জন্য তার বাবা বাবুল মিয়া এলাকার বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেছেন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.