আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন জামাল নজরুল ইসলাম (বাংলাদেশের গণিতবিদ বিজ্ঞানী)

মন্দটাই মনে রাখে মানুষ। ভালোটা হাড়গোড়ের সঙ্গে মাটিতে মিশে যায় তখন ২০০১ সাল। আমি তখন সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। গুঞ্জন উঠল আর কিছুদিনের মধ্যেই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে আমাদের চিরচেনা পৃথিবী। এ রকম একটা সংবাদে আতঙ্কিত বিশ্ববাসীকে অভয়ের বাণী শুনিয়ে যিনি শান্ত করলেন তিনি আর কেউ নন,এই বাংলার প্রথিতযশা গণিতবিদ বিজ্ঞানী ডঃ জামাল নজরুল ইসলাম (আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সবাই যাকে জে.এন ইসলাম নামে চেনে)৷পয়গাম্বরদের মত কোনো দৈবজ্ঞান নয়,বরং প্রকৃতির ভাষা গণিতের মার প্যাছ দেখিয়ে তিনি বিশ্ববাসীকে দেখিয়েছিলেন যে, ওই সময়ে আমাদের সৌরজগতের অধিকাংশ গ্রহ প্রাকৃতিক নিয়মেই একই সরলরেখা বরাবর এলেও এর প্রভাবে পৃথিবীতে অস্বাভাবিক কিছু ঘটার আশঙ্কা নেই৷ জন্ম ১৯৩৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি, ঝিনাইদহ জেলায় হলেও এই গুনীমানুষটার শৈশবের বেশিরভাগ সময়ই কেটেছে কলকাতায়৷কলকাতা থেকে এসে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হওয়ার সময় মেধা পরীক্ষায় তাঁর অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য কর্তৃপক্ষ ডাবল প্রমোশন দিয়ে তাঁকে সরাসরি ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি করে নিয়েছিল বলে তখনই অনেকের নজর কেড়েছিলেন তিনি৷কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে বিএসসি অনার্স করে যখন তিনি পড়তে গেলেন কেমব্রিজে ততদিনে গণিতের প্রতি তাঁর দুর্বলতা তৈরি হয়ে গেছে৷ কেমব্রিজে গিয়ে আবারও গ্রাজুয়েশন করার পর ট্রিনিটি কলেজ থেকে নিলেন এম এ ডিগ্রি।

কেমব্রিজ থেকেই ১৯৬৪ সালে প্রায়োগিক গণিত ও তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যা বিষয়ের ওপর পিএইচডি করলেন এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮২ সালে এসসিডি (ডক্টর অব সায়েন্স) ডিগ্রিও অর্জন করলেন৷ প্রিয় বন্ধুদের মধ্যে যেমন ছিলেন স্টিফেন হকিং ,আবদুস সালামের মত নামকরা বিজ্ঞানীরা তেমনি অমর্ত্য সেনের মত নোবেলবিজয়ী অর্থনীতিবিদও। বয়সে দুই বছরের ছোট হকিং এর সাথে জামাল নজরুল ইসলাম কাজ করতেন কেমব্রিজের ইনস্টিটিউট অব থিওরেটিক্যাল অ্যাস্ট্রোনমিতে (১৯৬৭ থেকে ১৯৭১.দুজনের কাজের প্রতি পরস্পরের আগ্রহ এমন ছিল যে হয়তো দেখা গেল জামাল নজরুল ইসলাম কোথাও লেকচার দিচ্ছেন সেখানে হকিং গিয়ে বসে আছেন তাঁর লেকচার শুনতে বা হকিং কোথাও লেকচার দিচ্ছেন সেখানে জামাল নজরুল ইসলাম গিয়েছেন তাঁর লেকচার শুনতে৷আর বয়োজ্যেষ্ঠ অমর্ত্য সেনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হওয়ার কারণ হতে পারে এদের দুজনেরই গণিতের প্রতি আগ্রহ বেশি৷ এতসব বন্ধুর বাইরে জামাল নজরুল ইসলামের প্রিয় বন্ধু হলো বই ৷ দিনের অনেকটা সময় কাটে তাঁর এসব বইয়ের সঙ্গে আর লেখালেখি করে৷তার লেখা ‘দ্য আল্টিমেট ফেট অব দি ইউনিভার্স’ (মহাবিশ্বের চূড়ান্ত পরিণতি) বইটি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস থেকে ১৯৮৩ সালে প্রকাশ হওয়ার পর বিজ্ঞানী মহলে বেশ হই চই পড়ে যায়৷ বইটি পরে জাপানি, ফ্রেঞ্চ, ইতালিয়ান, পর্তুগিজ ও যুগোস্লাভ ভাষায় প্রকাশিত হয়৷ঠিক পরের বছরেই ১৯৮৪ সালে W B Bonnor-এর সঙ্গে সম্পাদনা করেছেন ‘ক্লাসিক্যাল জেনারেল রিলেটিভিটি’ এবং ১৯৮৫ সালে ‘রোটেটিং ফিল্ডস ইন জেনারেল রিলেটিভিটি’৷এই তিনটি বইই কেমব্রিজ, অঙ্ফোর্ড, প্রিন্সটন, হার্ভার্ডসহ নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য৷এছাড়া ‘কৃষ্ণ বিবর’ (ব্ল্যাকহোল),’মাতৃভাষা ও বিজ্ঞান চর্চা এবং ‘শিল্প সাহিত্য ও সমাজ’ বইগুলি তাঁর লেখা বাংলা ভাষার বই। নিজের গবেষণা প্রবণতা সম্পর্কে তার নিজেরই উক্তি- “কোনো বিষয়ে গবেষণা করে ব্যর্থ হলে বা শেষ হলে সেটাকে একেবারে ছেড়ে দিইনি৷ আবার তাতে ফিরে এসেছি৷ আবার সেটা নিয়ে গবেষণা করেছি৷ এভাবে গবেষণা করতে আমার ভালো লাগে৷” কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অব থিওরেটিক্যাল এস্ট্রোনমির স্টাফ মেম্বার ছিলেন আমাদের জামাল নজরুল ইসলাম৷ কাজ করেছেন লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে আরম্ভ করে আমেরিকার প্রিন্সটন ইন্সটিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিসহ (যেখানে আইনস্টাইন তাঁর জীবনের শেষ বিশ বছর কাটিয়েছিলেন) অনেক খ্যাতনামা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রভাষক, ভিজিটিং অ্যাসোসিয়েট বা মেম্বার হিসেবে। দেশপ্রেমের টানেই ১৯৮৪ সালে কেমব্রিজের সোয়া লাখ টাকা বেতনের অধ্যাপনার চাকরীটি ছেড়ে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র হাজার তিনেক টাকা বেতনে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। আমাদের প্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবালকেও আমেরিকা থাকা অবস্থায় দেশে ফিরতে উতসাহ প্রদান করেন।

সারাজীবন প্রচারবিমুখ থাকা বাংলার এই কৃত্তি সন্তান কাজ করেছিলেন বাংলার স্বাধীনতার জন্যও। ১৯৭১ সালে চিঠি লিখেছিলেন বৃটেনের প্রধানমন্ত্রীকে পাক হানাদার বাহিনীর আক্রমণ বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে। ‘৭১এর যুদ্ধে সারাবিশ্ববাসীকে সচেতন করার উদ্যোগেও কাজ করেছেন প্রবাসীদের সাথে। এই মানুষটার জীবন হতে পারে আমাদের জন্য আদর্শ। সুত্রঃ গুনিজন.ও আর জি  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.