আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভার্সিটি রক্ষার সস্তা ইগো এবং আমাদের বিবর্জিত মনুষ্যত্ব

স্বপ্ন ছুঁয়ে মানুষ হিসেবে আমরা বাঙালীরা আসলেই খুব অদ্ভুত! এবং সবচেয়ে অদ্ভুততম হচ্ছে আমাদের ইগো প্রবলেম! এই ইগো যে কখন কোথায় ঠোকর খেয়ে উলটে পড়ে চিত হয়ে কোঁকাতে থাকে তার চিন্তায় এতটাই আমরা বুঁদ যে মনুষ্যত্ব ও এখানে তুচ্ছ! ইগো রক্ষার যৌবন জোয়ারে সাম্প্রতিককালের সংযোজন হচ্ছে পাবলিক ভার্সিটি বনাম প্রাইভেট ভার্সিটি ক্যাঁচাল! খুবই মজার এই ক্যাঁচাল! এই ক্যাঁচালে যেই দুই পক্ষ অংশ নিয়ে থাকেন তাদের উভয়েরই উদ্দেশ্য হচ্ছে এই সত্য প্রতিষ্ঠা যে তারাই সেরা, আর অন্যরা গোমূত্রের ফেনা! এর জন্য ব্লগ হয় হিট, কমেন্ট কমেন্টে চলে শ্লীল (!) ভাষার অসাধারন প্রয়োগ আর মাল্টি নিক নিয়ে মাঠ দখলের প্রচেষ্টা! মজার ব্যাপার হচ্ছে এনারা প্রত্যেকেই তাদের নিজ নিজ অংশের ভার্সিটিকে সেরা বানানোর জন্য ব্লগে প্রানপাত করলেও বাস্তব জীবনে নিজের ভার্সিটির হাজারো অসামঞ্জস্যের কোনটা বিন্দুমাত্র সমাধানে কোন ভূমিকা রাখেন না! নিজের ভার্সিটির সকল ব্যর্থতা-অযোগ্যতা ধামা চাপা দিয়ে ব্লগে জোর গলায় কিছু বললেই যেন, সব সমস্যার সমাধান! একটা দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের শিক্ষার্থী যারা তাদের মধ্যে সচে্তনতম একটা অংশ যখন এরকম মানসিক বিকার গ্রস্থতায় ভোগে তখন এর ফলাফল যে খুব ভালো হবে না, তা সহজেই অনুমেয়। আর এর প্রমান পাওয়া যাচ্ছে ব্লগে গত দুই দিনে কিছু ব্লগারের কর্মকান্ডে। সমস্যার শুরু স্টিকি পোষ্টকে ঘিরে। যেখানে বর্ননা আছে কিভাবে একজন তরুনী চরম হয়রানির শিকার হন, আমাদের একজন সহব্লগার কিভাবে তার প্রতিবাদ করেন এবং কিভাবে সেই হয়রানি করা জানোয়ারদের পরিচয় সম্পর্কে সূত্র পাওয়া যায়। মজা শুরু হলো এরপর! প্রথম প্রথম বেশ কিছু গঠনমূলক মন্তব্য এলো।

এরপর শুরু হলো ভার্সিটি রক্ষার ইগোর সংগ্রা্ম! আবার কেউবা শুরু করলেন এই সুযোগে সেই ভার্সিটিকে ( জানোয়ারগুলো যেই ভার্সিটির বলে সন্দেহ করা হচ্ছে) সহ সকল প্রাইভেট ভার্সিটির গুষ্টী উদ্ধার। ! যারা ভার্সিটি রক্ষার ইগোর সংগ্রামে নামলেন তারাই এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেপোরোয়া হয়ে উঠলেন! এর প্রমান দেখতে পাই ঐ পোষ্টেই যখন এক আপাত সুশীল এসে ঘোষনা দিয়ে বসেন যে এই ঘটনা নাকি "চিলে কান নিয়েছের মত ঘটনা" এবং এরকম কিছু নাকি ঘটেই নাই!!!!!!!!! এরপর শুরু হলো এই বিষয়ে একের পর এক পোষ্ট আসা! ভার্সিটির ইগো রক্ষার যোদ্ধারা এমন সব পোষ্ট প্রসব করতে লাগলেন, যার কোনটায় দাবি করা হলো এরকম ঘটনা ঘটে নি, কোনটায় ভিক্টিমকে নিয়ে কুৎসিত কথা বলা হলো, কোনটায় বা এই ঘটনার প্রতিবাদ করলে নাকি তাদের ভার্সিটির মান -সম্মান যাবে এরকম কান্নাকাটি ও শুরু হলো! সেই সাথে তারা কেউ কেউ তৎপর হলেন এই ঘটনাকে পাবলিক-প্রাইভেট ক্যাচালে রুপান্তরিত করতে! নিজের ভার্সিটির তথাকথিত ইগো রক্ষায় কিছু জানোয়ারের পক্ষ নিতেও তারা পিছপা না! নিজের ভার্সিটির কোন জানোয়ার কোন কুকর্ম করলে সেটা নিয়ে যদি কেউ কিছু বলে, আর তাহলেই যদি ভার্সিটির মান সম্মান যায় তাহলে তো বলতে হবে এই দেশে কারো কোন অন্যায় নিয়েই কিছু বলা যাবে না!নিজের ভার্সিটির কোন জানোয়ারকে বাঁচানোর মধ্যেই তাদের সব সম্মান নিহিত! কোন স্তরের অমানুষ তাহলে আমরা???????? আজ যদি আমার ভার্সিটির কেউ কোন কুকর্ম করে তবে কি আমি তার প্রতিবাদ করবো না নিজের ভার্সিটির সম্মান যাবে বলে???? এভাবে কি আমার ভার্সিটি রক্ষা হবে, নাকি ধ্বংস হবে??? আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই , যারা এরকম ভার্সিটি রক্ষার ধুয়া তুলে কিছু জানোয়ারের দালালি করতে চাইছে আর ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চাই্ছে ভার্সিটির সম্মানকে , তারাও একই ধরনের জানোয়ার । এরা কোন ভার্সিটিতে পড়ার যোগ্য না। এদেরকেও বিচারের আওতায় আনা হোক, সামাজিকভাবে বর্জন করা হোক। স্টিকি পোষ্টে বিন্দুমাত্র ও "ইউল্যাব" কে বিষোদগার করে কোন লেখা নেই।

এরপর ও কেন স্টিকি পোষ্টের বিরুদ্ধে এত জ্বালা কিছু মানুষ (!) এর? স্টিকি পোষ্টে কিছু অর্বাচীন সুযোগ নিয়ে প্রাইভেট ভার্সিটি নিয়ে কিছু বাজে কথা বলেছে, কিন্তু তার জন্য স্টিকি পোষ্টকে কেন আক্রমন করতে হবে? নিজের ভার্সিটির সম্মান রক্ষার জন্য কেন আমাকে কতগুলো জানোয়ারের পক্ষ নিতে হবে?? এই শিক্ষাই বুঝি আমরা পাই , আমাদের সর্বোচ্চ স্তরের বিদ্যাপীঠ গুলো থেকে?????? তাই যদি হয়, তবে বলতে হবে সামনে আমাদের জন্য কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। আজ যারা ব্লগে সুযোগে প্রাইভেট ভার্সিটিকে গালাগাল করে নিজেদের ধন্য করছেন , তাদের জন্য বলি অন্যকে ছোট করে নিজে বড় হওয়া যায় না। আর অমানুষের কোন ভার্সিটি ভেদাভেদ নেই। কাজেই এই ইস্যুতে আপনারা যারা এরকম অর্বাচীনের মত কথা বলছেন তাদেরকে ধিক্কার। প্রাইভেট ভার্সিটি নিয়ে অনেক বড় গলায় আপনারা গাল দিতে সিদ্ধহস্ত, কিন্তু নিজের ভার্সিটির সীমাবদ্ধতা গুলো নিয়ে কি কখনো ভেবেছেন? আর প্রাইভেট ভার্সিটির একমাত্র যে মহান রক্ষকেরা (!) , যারা নিজের ভার্সিটি রক্ষার ধুয়ো তুলে কিছু জানোয়ার-ইভটীজারের পক্ষ নিচ্ছেন, ভার্সিটির ইগো রক্ষার জন্য প্রকারান্তরে (দুই একজন সচেতনভাবে) অমানুষগুলোকে সমর্থন করছেন, তাদের উদ্দেশ্যে বলি, এই জানোয়ারদের হাত থেকে আপনার কাছের মানুষগুলো ও কিন্তু নিরাপদ নয়।

এই জানোয়ারগুলো যখন আপনার কাছের মানুষের এরকম অসহায় মুহুর্তের সুযোগ নিবে তখন কিন্তু মনে রাখবে না, আপনি আর সে একই ভার্সিটির কিনা। অন্যায়কে অন্যায় বলতে শিখুন, জানোয়ারের বিরুদ্ধে কথা বলতে শিখুন। নাহলে আপনাদের এই সস্তা ইগো রক্ষার যুদ্ধ এখন যেমন সবার তিরস্কার পাচ্ছে তেমনি ভবিষ্যতে তা আপনার প্রিয় ভার্সিটিকে ধ্বংস করবে। অন্যায়কে প্রতিরোধ করতে হয়, চাপা দিতে হয় না। আর পাবলিক ভার্সিটিকে গাল দিয়ে নিজেকে উদ্ধার না করে নিজের ভার্সিটির অসংখ্য সীমাবদ্ধতা, সমস্যা এসব সমাধান করতে চেষ্টা করুন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.