আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

::টোকাই:: (শেষ পর্ব)

এই ছোট্ট সময়ে নিজেকেই চেনা যায় না... তাই বলে আমি বসে থাকতে শিখিনি...... আমাগো বস্তির পাশে রাস্তার লগে একটা পাইপ আছে। অইডা দিয়া দিন-রাইত পানি পড়ে। আমার মনে হয় আকাশের লগে অইডার কানেকশন আছে। বাপজান বাইচা থাকলে হেরে জিগাইতাম। মাইনষে কয় ওয়াসার পাইপ এইডা।

‘ওয়াসা’ যে কী জিনিস আল্লায় ভাল জানে। এইসব চিন্তা করতে করতে গসল কইরা উঠলাম ঐ পাইপের পানি দিয়া। অনেক ক্ষুধা লাগছিল তাই আর বেশিক্ষণ পানিতে ভিজলাম না। ঘরে আইস্যা করিমন খালার দেওয়া মুড়ি আর গুঁড় খাইলাম। ঘরে তো চাউল নাই, বইন্ডায় কী খাইবো কে জানে ! নাহঃ ! আইজকাই মহাজনের লগে কথা কইতে হইবো।

অল্প কিছু মুড়ি খাইলাম আর বাকি মুড়ি বইন ডা র লাইগা রাইখা দিলাম। খাওয়া শেষ কইরা বাইর হইলাম মহাজনের কাছে জামু ভাইবা । কিন্তু মহাজন সাবে তো দুপুরের ভাত খাইয়া ঘুমাইতাছে। এইটা একটা সুযোগ । এই সময় হের ছোট বউডা জাইগ্যা থাকে।

উনি আমারে অনেক আদর করেন। এই টাইমে গেলে ভাতও জুইট্যা যাইতে পারে কপালে। ভাত যদি খাইতে দেয় তাইলে মা আর বইনের লাইগ্যাও দিতে কমু। ওগোরে ছাড়া গলা দিয়া দানা নামবো না আমার। দুপুর গড়াইয়া বিকাল হইল।

মহাজনের ঘুম ভাঙ্গনের পর গেলাম হের গ্যারেজে। আল্লায় আমার কপালে ঐ দিন ভাত লিখছিল। ভাত লইয়া সোজা বাড়ি দৌড় দিছি। বাড়িতে মা আর বইনেরে ভাত খাওয়াইয়া বিকালে গেরেজে আইলাম। আমারে দেইখ্যা মহাজনে পরথমে কথা কইতে চায় নাই।

পরে আমি উনার পায় ধইরা মাফ চাইলাম। পায় ধইরা অনেক্ষন বইসা ছিলাম। পরে কী যানি কী হইল মহাজনে রাজী হইল। কইল, “কাইল থাইক্যা কাম শুরু কর, তয় আবার যদি আকাম করছস তাইলে আমি তোরে নিজের হাতে খুন করমু, মনে থাকে যেন !” আমি কইলাম, “আপনি কুনো চিন্তা কইরেন না, চাচা” । আল্লায় মনে হয় আমাগো দিকে মুখ তুইল্যা তাকাইছে ! আইজ ৫ দিন ধইরা কাম করতাছি মন দিয়া।

অস্তাদে আমার উপর খুব খুশি। মা- বইন ও খুশি। বইনডারে লাল এক জোড়া স্যান্ডেল কিন্যা দিছি। কী যে খুশি হইছে তা কওনের মত না। দিনে ৬ টার মত খ্যাপ মারি।

সেই দিন ৭ টা খ্যাপ মারমু দেইখ্যা অস্তাদ রে আগেই কইয়া রাখছিলাম। ঐ দিনের শেষ খ্যপের ফিরতি টাইমে ‘মহাখালী’ থাইকা ‘শ্যামলী’ আইছি। কিছু লোক নামলো । কিছু উঠতাছে, এক জন উঠতে গিয়া আমার কাটা পাওডায় পাড়া দিল। আমি কইতেই খেইপ্যা যাইয়া উল্টা গালাগালি দিতে লাগলো।

আমি আর কথা বাড়াই নাই। ঐ লোকে নামবো ‘বাংলা কলেজ’। নামনের আগে সিগনাল না দিয়াই আমারে মারলো ধাক্কা, তারপর নামলো। আমি আপন মনে ট্যাকা গুন্তাছিলাম। টাল সামলাইতে না পাইরা গেলাম পইড়া।

ট্যাকা গুলাও হাত থাইকা পইড়া গেল। আমাগোরটার পিছে পিছে আইতাছিল ‘মেট্রো’ বাস। আমি আচমকা পইড়া গেছি দেইখা মেট্রো’র অস্তাদে বেরেক করছে, কিন্তু ততোক্ষণে আমার পাও দুইডার উপর দিয়া মেট্রো’র চাকা পার হইয়া গেছে। আমি চিক্কুরও দিতে পারতেছিলাম না। কী থাইকা কী হইল কিছুই জানি না।

যখন জ্ঞান ফিরল তখন আমি হাসপাতালের বারান্দায়। মায়ে আমার পাশে বইসা আছে, বইনডায় একটু দূরে কী যেন করতাছে। মারে জিগাইলাম , “আমার কী হইছে?” মায়ে টপ টপ কইরা চোউখের পানি ফালাইয়া আমার পায়ে ঢাকা দেয়া চাদরডা উঠাইল । আমি দেখলাম আমার যেই জায়গায় পাও থাকনের কথা সেইহানে কিছুই নাই, আগের কাটা পাওডাও না। --------------- সমাপ্ত------------- প্রথম পর্ব...... ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।