আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাঁচটি কবিতা **

জীবনের মুহূর্তগুলো ভালবাসার স্পর্শে রঞ্জিত হোক,জীবনের মুহূর্তগুলো স্বাধীনতার স্পর্শে মুখরিত হোক ** যদি তুমি ফিরে না আসো – শামসুর রাহমান তুমি আমাকে ভুলে যাবে, আমি ভাবতেই পারি না। আমাকে মন থেকে মুছে ফেলে তুমি আছো এই সংসারে, হাঁটছো বারান্দায়, মুখ দেখছো আয়নায়, আঙুলে জড়াচ্ছো চুল, দেখছো তোমার সিঁথি দিয়ে বেরিয়ে গেছে অন্তুহীন উদ্যানের পথ, দেখছো তোমার হাতের তালুতে ঝলমল করছে রূপালি শহর, আমাকে মন থেকে মুছে ফেলে তুমি অসত্মিত্বের ভূভাগে ফোটাচ্ছো ফুল আমি ভাবতেই পারি না। যখনই ভাবি, হঠাৎ কোনো একদিন তুমি আমাকে ভুলে যেতে পারো, যেমন ভুলে গেছো অনেকদিন আগে পড়া কোনো উপন্যাস, তখন ভয় কালো কামিজ প’রে হাজির হয় আমার সামনে, পায়চারি করে ঘন ঘন মগজের মেঝেতে, তখন একটা বুনো ঘোড়া খুরের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করে আমাকে, আর আমার আর্তনাদ ঘুরপাক খেতে খেতে অবসন্ন হয়ে নিশ্চুপ এক সময়, যেমন ভ্রষ্ট পথিকের চিৎকার হারিয়ে যায় বিশাল মরুভূমিতে। তোমাকে ভুলতে চেয়ে - মহাদেব সাহা তোমাকে ভুলতে চেয়ে আরো বেশি ভালোবেসে ফেলি তোমাকে ছাড়াতে গিয়ে আরো বেশি গভীরে জড়াই, যতোই তোমাকে ছেড়ে যেতে চাই দূরে ততোই তোমার হাতে বন্দি হয়ে পড়ি তোমাকে এড়াতে গেলে এভাবেই আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা পড়ে যাই ... এভাবেই সম্পূর্ণ আড়ষ্ট হয়ে পড়ি; তোমাকে ছাড়াতে গেলে আরো ক্রমশ জড়িয়ে যাই আমি আমার কিছুই আর করার থাকে না তুমি এভাবেই বেঁধে ফেলো যদি দূরে যেতে চাই যদি ডুবে যেতে চাই তুমি দুহাতে জাগাও। এমন সাধ্য কী আছে তোমার চোখের সামান্য আড়াল হই, দুই হাত দূরে যাই যেখানেই যেতে চাই সেখানেই বিছিয়ে রেখেছো ডালপালা, তোমাকে কি অতিক্রম করা কখনও সম্ভব তুমি সমুদ্রের চেয়েও সমুদ্র আকাশের চেয়েও আকাশ তুমি আমার ভেতরে জেগে আছো।

তোমাকে ভুলতে চেয়ে তাই আরো বেশি ভালোবেসে ফেলি, তোমাকে ঠেলতে গিয়ে দূরে আরো কাছে টেনে নেই যতোই তোমার কাছ থেকে আমি দূরে যেতে চাই ততো মিশে যাই নি:ম্বাসে প্রশ্বাসে, ততোই তোমার আমি হয়ে পড়ি ছায়ার মতন; কোনোদিকে যাওয়ার আর একটুও জায়গা থাকে না তুমিই জড়িয়ে রাখো তোমার কাঁটায়। তোমাকে ছাড়তে গিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে আরো জড়িয়েছি তোমাকে ভুলতে গিয়ে আরো ভালোবেসেছি তোমাকে শুধু তোমার জন্য - নির্মলেন্দু গুণ তোমাকে স্পর্শ করতে গিয়েও কতবার যে আমি গুটিয়ে নিয়েছি হাত, সে-কথা আমার ঈশ্বর জানেন। তোমাকে আমার ভালোবাসার কথা বলতে গিয়েও কতবার যে বলিনি, সে-কথা আমার ঈশ্বর জানেন। তোমার হাতের মৃদু কড়া-নাড়ার শব্দ শুনবার জন্য দরোজার সঙ্গে চুম্বক-খন্ডের মতো আমার কর্ণযুগলকে গেথে রেখেছিলাম । কোন নির্জন মধ্যরাতে তুমি এসে ডেকে বলবেঃএই যে ওঠো, আমি এসেছি, আ-মি আর আ-মি এ-কি শুনলাম, এ-কি শুনলাম, এমন উল্লাসে নিজেকে ছুঁড়ে দিচ্ছি তোমার উদ্দেশ্যে-ঠিক এরকম একটি দৃশ্যের কথা কতবার যে আমি মনে-মনে কল্পনা করেছি, সে কথা শুধু আমার ঈশ্বর জানেন।

আমার ঈশ্বর জানেন, আমার চুল পেকেছে তোমার জন্য, আমার ঈশ্বর জানেন, আমার জ্বর এসেছে তোমার জন্য, আমার ঈশ্বর জানেন, আমার মৃত্যু হবে তোমার জন্য। তারপর ঐ ঈশ্বরের মতো কোন একদিন তুমিও জানবে আমি জন্মেছিলাম তোমার জন্য, শুধুই তোমার জন্য। অভিশাপ - কাজী নজরুল ইসলাম যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে, অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুছবে- বুঝবে সেদিন বুঝবে! ছবি আমার বুকে বেঁধে পাগল হ’লে কেঁদে কেঁদে ফিরবে মর” কানন গিরি, সাগর আকাশ বাতাস চিরি’ যেদিন আমায় খুঁজবে- বুঝবে সেদিন বুঝবে! স্বপন ভেঙে নিশুত্‌ রাতে জাগবে হঠাৎ চমকে, কাহার যেন চেনা-ছোঁওয়ায় উঠবে ও-বুকে ছমকে,- জাগবে হঠাৎ চমকে! ভাববে বুঝি আমিই এসে ব’সনু বুকের কোলটি ঘেঁষে, ধরতে গিয়ে দেখবে যখন শূন্য শয্যা! মিথ্যা স্বপন! বেদ্‌নাতে চোখ বুঁজবে- বুঝবে সেদিন বুজবে। গাইতে ব’সে কন্ঠ ছিঁড়ে আস্‌বে যখন কান্না, ব’লবে সবাই-“ সেই য পথিক তার শেখানো গান না?’’ আস্‌বে ভেঙে কান্না! প’ড়বে মনে আমার সোহাগ, কন্ঠে তোমার কাঁদবে বেহাগ! প’ড়বে মনে অনেক ফাঁকি অশ্র”-হারা কঠিন আঁখি ঘন ঘন মুছবে- বুঝ্‌বে সেদিন বুঝবে! আবার যেদিন শিউলি ফুটে ভ’রবে তোমার অঙ্গন, তুলতে সে ফুল গাঁথতে মালা কাঁপবে তোমার কঙ্কণ- কাঁদবে কুটীর-অঙ্গন! শিউলি ঢাকা মোর সমাধি প’ড়বে মনে, উঠবে কাঁদি’! বুকের মালা ক’রবে জ্বালা চোখের জলে সেদিন বালা মুখের হাসি ঘুচবে- বুঝবে সেদিন বুঝবে! আসবে আবার আশিন-হাওয়া, শিশির-ছেঁচা রাত্রি, থাকবে সবাই - থাকবে না এই মরণ-পথের যাত্রী! আসবে শিশির-রাত্রি! থাকবে পাশে বন্ধু স্বজন, থাকবে রাতে বাহুর বাঁধন, বঁধুর বুকের পরশনে আমার পরশ আনবে মনে- বিষিয়ে ও-বুক উঠবে- বুঝবে সেদিন বুঝবে! আসবে আবার শীতের রাতি, আসবে না ক আ সে- তোমার সুখে প’ড়ত বাধা থাকলে যে-জন পার্শ্বে, আসবে না ক’ আর সে! প’ড়বে মনে, মোর বাহুতে মাথা থুয়ে যে-দিন শুতে, মুখ ফিরিয়ে থাকতে ঘৃণায়! সেই স্মৃতি তো ঐ বিছানায় কাঁটা হ’য়ে ফুটবে- বুঝবে সেদিন বুঝবে! আবার গাঙে আসবে জোয়ার, দুলবে তরী রঙ্গে, সেই তরীতে হয়ত কেহ থাকবে তোমার সঙ্গে- দুলবে তরী রঙ্গে, প’ড়বে মনে সে কোন্‌ রাতে এক তরীতে ছিলেম সাথে, এমনি গাঙ ছিল জোয়ার, নদীর দু’ধার এমনি আঁধার তেম্‌নি তরী ছুটবে- বুঝবে সেদিন বুঝবে! তোমার সখার আসবে যেদিন এমনি কারা-বন্ধ, আমার মতন কেঁদে কেঁদে হয়ত হবে অন্ধ- সখার কারা-বন্ধ! বন্ধু তোমার হান্‌বে হেলা ভাঙবে তোমার সুখের মেলা; দীর্ঘ বেলা কাটবে না আর, বইতে প্রাণের শান- এ ভার মরণ-সনে বুঝ্‌বে- বুঝবে সেদিন বুঝ্‌বে! ফুট্‌বে আবার দোলন চাঁপা চৈতী-রাতের চাঁদনী, আকাশ-ছাওয়া তারায় তারায় বাজবে আমার কাঁদ্‌নী- চৈতী-রাতের চাঁদ্‌নী। ঋতুর পরে ফির্‌বে ঋতু, সেদিন-হে মোর সোহাগ-ভীতু! চাইবে কেঁদে নীল নভো গা’য়, আমার মতন চোখ ভ’রে চায় যে-তারা তা’য় খুঁজবে- বুঝ্‌বে সেদিন বুঝ্‌বে! আস্‌বে ঝড়, নাচবে তুফান, টুটবে সকল বন্ধন, কাঁপবে কুটীর সেদিন ত্রাসে, জাগবে বুকে ক্রন্দন- টুটবে যবে বন্ধন! পড়বে মনে, নেই সে সাথে বাঁধবে বুকে দুঃখ-রাতে- আপনি গালে যাচবে চুমা, চাইবে আদর, মাগ্‌বে ছোঁওয়া, আপনি যেচে চুমবে- বুঝবে সেদিন বুঝবে।

আমার বুকের যে কাঁটা-ঘা তোমায় ব্যথা হান্‌ত, সেই আঘাতই যাচবে আবার হয়ত হ’য়ে শ্রান– আসবে তখন পান’। হয়ত তখন আমার কোলে সোহাগ-লোভে প’ড়বে ঢ’লে, আপনি সেদিন সেধে কেঁদে চাপ্‌বে বুকে বাহু বেঁধে, চরণ চুমে পূজবে- বুঝবে সেদিন বুঝবে! অনেক কথা তোমার সাথে - রুদ্র গোস্বামী আঁকিবুকি আঁকিবুকি তোমার কাছে চিঠি লিখি। একটি ছিঁড়ি একটি জুড়ি আসল কথা বলা বাকি! চিঠি লিখি চিঠি লিখি চলকে পড়া চাঁদনী রাতে, অনেক কথা বুকের ভিতর অনেক কথা তোমার সাথে। অনেক কথা অনেক কথা, অনেক কথা তোমার সাথে; বুকের ভিতর কথার পাহাড় চিঠি লিখি চাঁদিম রাতে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।