আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিদেশী অতিথির আগমন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর ইঁদুর দৌড়।

সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে গেলেন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্বই তার স্বার্থ নিশ্চিত করতে চায় তার Super-Power status রক্ষার তাগিদে। গোটা বিশ্বে তাদের প্রভাব প্রতিপত্তি বৃদ্ধি করে নিজের অর্থনীতিক স্বার্থ উদ্ধার করতে। এ কথা ঠিক যে অন্যান্য শক্তিশালী দেশ যেমন, রাশিয়া, চীন, ভারত ও এমনটি করে। কিন্তু অন্যান্য দেশ গুলোর সাথে মার্কিনীদের পার্থক্য বিস্তর।

পররাষ্ট্রনীতি ও কূটনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই সেরা এবং সেই পররাষ্ট্রনীতি প্রনয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে তাদের সামরিক শক্তি। সেদেশের নীতি নির্ধারকরা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের তাগিদে ১ সেকেন্ডও সময় ক্ষেপণ করেন না। ছুটে যান লাখ লাখ মাইল দুরঅবধি। যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্টের পরেই গুরুত্বপূর্ণ পদ পররাষ্ট্র মন্ত্রীর পদ। সে অর্থে বর্তমান বিশ্বের ২য় গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি হিলারি।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হিলারিকে বাংলাদেশ সফরে আনার ক্ষেত্রে অনেক উৎসাহী ছিল। অনেকবার আমন্ত্রণ-নিমন্ত্রণ জানিয়েও কোন লাভ হল না। কিন্তু হঠাৎ করেই রাজী হয়ে গেলেন হিলারি!!। বিষয়টি কি আকর্ষীকতা, ধারাবাহিকতা নাকি কার্য-কারণ সম্পর্কিত ? অবশ্যই আকর্ষিকতা নয় ধারাবাহিকতা নয় পুরোপুরি কার্য-কারন সম্পর্কিত। তাহলে অনুসন্ধান করা যাক, কি কি বিষয় হিলারিকে উড়িয়ে নিয়ে আসল বাংলাদেশে।

# বাংলাদেশের সমুদ্র সীমার রায়। ১৪ই মার্চ বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকার সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত বিরোধের নিষ্পত্তি করে ইটলস। এই রায়ে win-win ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সমুদ্রসীমা পুনঃ নির্ধারিত হয়। এই রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার জলভাগ পায়। ফলে সামুদ্রিক সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়, উন্মোচিত হয় প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রেও।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায় খনি গুলো তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে। ইতোমধ্যে মার্কিন কম্পানি কানকো ফিলিপ্স বঙ্গোপসাগরে জ্বালানী খনি অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে। # বঙ্গোপসাগরের কৌশলগত গুরুত্ব বিশ্ব বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারত মহাসাগরের এই অঞ্চল অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এ ছাড়াও প্যাসিফিক অঞ্চলে রয়েছে চীনের শক্ত উপস্থিতি। এছারাও অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন সিঙ্গাপুরের চেয়ে চট্টগ্রাম বন্দর মার্কিন পণ্যবাহী জাহাজগুলোর মধ্যবিরতির জন্যে বেশী সাশ্রয়ী।

এই অঞ্চলে মার্কিন স্বার্থ রক্ষার ক্ষেত্রে বঙ্গোপসাগরে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম টার্গেট। # টিফা চুক্তির বাস্তবায়ন যুক্তরাষ্ট্র অনেক দিন থেকেই চাচ্ছে বাংলাদেশের সাথে টিফা চুক্তি সই করতে। এই চুক্তিতে মার্কিন স্বার্থই রক্ষা হবে বাংলাদেশের পাওনা হবে শূন্য। # সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানে বাংলাদেশেকে অংশীদার করা ২০০১ সাল থেকে চলতে থাকা সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানের নামে চলতে থাকা বিভিন্ন দেশে আগ্রাসনে বাংলাদেশকেও ব্যাবহার করা। এক্ষেত্রে আফগানিস্থানে বাংলাদেশের সেনা পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে হিলারি।

যদিও এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নেতিবাচক সাড়া দিয়েছে। # বাংলাদেশকে ভারতের আরও কাছে নিয়ে আসা বর্তমানে দক্ষিণ এসিয়ায় মার্কিনীদের সবচেয়ে কাছের বন্ধু নিঃসন্ধেহে ভারত। মিত্র ভারতের বিভিন্ন স্বার্থ রক্ষার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা। আমাদের শাসক শ্রেণীর ইঁদুর দৌড় হিলারির এই সফরের মাধ্যমেই যথেষ্ট স্পষ্টতার সাথে দেখা গেল আমাদের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল গুলোর ইঁদুর দৌর । তারা ব্যাস্ত একে অন্যের বিরুদ্ধে নালিশ জানাতে।

ক্ষমতাশীল দল আওয়ামীলীগ হিলারির সাথে আসা সাংবাদিকদের হাতে তুলে দিলেন গত বি এন পি- জামাত সরকারের সময়ের জঙ্গিবাদের উত্থান সংক্রান্ত ভিডিও সিডি!!!! । এদিকে খালেদা জিয়া শোনালেন আগামীতে ক্ষমতায় আসলে কিভাবে দেশ চালাবেন!!!!!!। বাহ বাহ কি চমৎকার। একজন বোঝালেন বাংলাদেশ জঙ্গি রাষ্ট্র ছিল, অন্য জন আশীর্বাদ ভিক্ষা করে বললেন তিনি ক্ষমতায় আসলে সিভিল সোসাইটির প্রাধান্য নিশ্চিত করবেন। তাহলে কি হিলারির কথামতোই কি বাংলাদেশ চলে,জনগণের স্থান কোথায় ?।

প্রসঙ্গক্রমেই কিছু প্রশ্ন আমাদের মনে চলে আসে , শক্তিশালী দেশগুলোই কি আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ভাগ্যবিধাতা? তাহলে কেন আমরা ভোট দেই তাদের ? আমাদের কাছে কি তাদের কোন জবাবদিহিতা নেই ? অযোগ্য লোক আর এই কু-সংস্কৃতির দৌর আর কতদিন ? কবে আমরা নিজেদের শুধরে নিব ? আমরা কি কখনো স্বাবলম্বী হব না? আর কতদিন বলব আমরা গরীব দেশ তাই শক্তিশালী রাষ্ট্র গুলোর মুখাপেক্ষী থাকতে হয়? কে বলেছে আমাদের কিছু নেই? হংকং, সিঙ্গাপুর, তাইওান এই দেশগুলোর তুলনায় আমাদের অনেক কিছু রয়েছে। শুধু রাষ্ট্রীয় স্বার্থ রক্ষাকারী কিছু নীতির বাস্তবায়ন আর কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তাদের এই উন্নয়ন। আজ তারা কোথায় আর আমরা কোথায়? কবে আসবে সেই দিন যেদিন বাংলাদেশকে নিয়ে আন্তজাতিক মিডিয়ায় হাইলাইট করে দেখানো হবে, “" হে বিশ্ববাসী এই দেখ বাংলাদেশ, যে দেশ দুর্নীতি আর অযোগ্য নেতৃত্বের কালো রাহুকে দমন করে স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতি গ্রহনের মাধ্যমে বিশ্বে উন্নয়নের মডেলে পরিণত হয়েছে ...............”" ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।