আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বন্ধুত্ব মানে জীবনের সুখ-দুঃখ হাসি কান্নার ভাগীদারঃ ভালোবাসা যখন জ্বরে পুড়ে তখন তার নাম হয় বন্ধুত্ব

সামুতে অর্থহীন অশুদ্ধ বাংলা ও বাংলিশ শব্দ পরিহার করি সামাজিক জীব হিসেবে মানুষের পক্ষে সমাজে একা বসবাস করা সম্ভব নয়। নিঃসঙ্গতা কাটানোর জন্য, বিপদে সহযোগিতা পাওয়ার জন্য সামগ্রিকভবে সাহচর্য লাভের জন্য একজন বন্ধুর একান্ত প্রয়োজন। মানুষ জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে একজন ভালো বন্ধুর প্রয়োজন। কারণ,একজন প্রকৃত বন্ধু জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার অংশীদার হয়। বন্ধুত্ব বলতে আমরা কী বুঝি! প্রাচীন প্রবাদে বন্ধুত্বের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলা হতো, ‘সম্পর্ক যখন জ্বরে পুড়ে তখন তার নাম হয় ভালোবাসা, আর ভালোবাসা যখন জ্বরে পুড়ে তার নাম হয় বন্ধুত্ব।

প্রকৃত বন্ধুই পারে আত্মার আত্মীয় হয়ে কিছুক্ষণের জন্য হলেও দুঃখ-কষ্টকে ভুলিয়ে রাখতে। তবে মানুষ চেনা সহজ নয়। বন্ধু চেনা আরো কঠিন। বিশ্বাস রাখার মতো বন্ধু এই সময়ে খুঁজে পাওয়া নিতান্তই দুরূহ কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর সে জন্য বন্ধু নির্বাচনে দেখতে হবে তার বুদ্ধিমত্তা, সততা, সত্যবাদীতা এবং স্বভাব-চরিত্রে ভালো কি না।

জীবনে চলতে গেলে বন্ধুর সান্নিধ্য চাই সবারই। আবার চলতি পথে ব্যস্ততা কিংবা জীবন ধারার অদল-বদলের কারণে অনেক বন্ধুকে হয়তো নেহাত অনিচ্ছাতেই হারিয়ে ফেলি আমরা। একইভাবে পরিবেশ আর পারিপার্শ্বিকতার কারণে কখনো কখনো সন্ধান করতে হয় নতুন বন্ধুত্বেরও। আর নতুন বন্ধু খোঁজার এই সময়টায় কিছু বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখতে না পারলে তা সময়ের পালাবদলে অনেকের জন্যই বন্ধুত্ব কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। একজন ভালো বন্ধু পাওয়ার প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো বন্ধুত্বের সম্পর্কের মাঝে কোনো ধরনের স্বার্থ কিংবা প্রাপ্তির চিন্তা মাথায় না রাখা।

মনে রাখবেন স্বার্থের প্রয়োজনে করা বন্ধুত্ব আপনাকে একটা সময়ে লাভবান করলেও চূড়ান্ত বিচারে আপনাকে করে তুলতে পারে নিঃসঙ্গ। এ কারণে কোনো ধরনের প্রাপ্তির চিন্তা থেকে নয়, বরং নিজের ভালোলাগা আর ভালোবাসাগুলোকে ভাগাভাগি করে নেয়াই হোক বন্ধুত্বের প্রথম দাবি। দ্বিতীয়ত, বন্ধুত্বের মাঝে যেন ভুল বোঝাবুঝি বা মনোমালিন্য সহজেই স্থান করে নিতে না পারে সেজন্য নতুন করে বন্ধু হওয়ার মানসিকতাটুকু বোঝাও কম-বেশি জরুরি। এক্ষেত্রে শুধু যে সমমানসিকতাসম্পন্ন মানুষেরাই আপনার বন্ধু হবেন তেমনটা কিন্তু নয়, বরং নতুন বন্ধুর মানসিকতা যেমনই হোক না কেন তার প্রতি আপনার সহনশীলতা এবং আপনার মতের প্রতি তার সমর্থনই পারে একটা নির্ভেজাল বন্ধুত্ব গড়ে দিতে। নতুন কারো সাথে বন্ধুত্ব গড়বার মাধ্যমে আপনি যেমন আপনার মনের কথা কিংবা কাজের পরিবেশের অনেক কথা ভাগাভাগি করে নিতে চান, তেমনি আপনার বন্ধুটির মনেও একই রকম আকাঙ্ক্ষা থাকাটা স্বাভাবিক।

কাজেই নিজের কথা বলার পাশাপাশি বন্ধুর কথা শুনতে চাইবার মানসিকতাটাও থাকা জরুরি। আর এ প্রেক্ষাপটে খুব বেশি মাত্রায় আত্মকেন্দ্রিক কোনো মানুষের সাথে বন্ধুত্বে জড়ানোর আগে অবশ্যই তার সাথে আপনি কতটা মানিয়ে নিতে পারবেন সে বিষয়টুকু ভেবে দেখা দরকার। বন্ধুত্বের যেমন সুনির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা হয় না, তেমনি বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রেও ধরাবাঁধা কোনো নিয়মের কথা বলা যায় না। তবে বন্ধুত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে বয়স, লিঙ্গ বা সামাজিক অবস্থান যেন মুখ্য হয়ে না দাঁড়ায় সেটি অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে। আবার বন্ধুত্ব হয়ে যাবার পর এ ধরনের চিন্তাও মাথা থেকে সরিয়ে দিতে হবে।

কেননা যাদের কাছে বন্ধুত্বের আবেগের চাইতে নিজের অবস্থান অনেক বেশি মুখ্য তাদের সাথে কখনও প্রাণখুলে বন্ধুত্বের আনন্দটুকু উপভোগ করা যায় না। আবার বন্ধুর ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে যারা খুব বেশি কৌতূহল দেখান বা বন্ধুর কোনো বিষয়ে যারা উপযাচক হয়ে অযাচিত উপদেশ বিলাতে ভালোবাসেন তাদেরকেও নতুন বন্ধু হিসেবে নির্বাচন করতে সতর্ক হতে হবে। সর্বোপরি নতুন বন্ধু হিসেবে কারো দিকে হাত বাড়াতে বা কারো বন্ধুত্বের ডাকে সাড়া দিতে তার মানসিকতা, বন্ধুর প্রতি তার মূল্যায়ন সম্পর্কেও কম-বেশি জানতে এবং বুঝতে হবে। তাই বন্ধু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আপনার বিচার বিবেচনা করে নেওয়া উচিত। বন্ধু চেনার কয়েকটি সহজ উপায়ঃ ০১।

কারো প্রতি মন আকৃষ্ট হলেই তার সাথে বন্ধুত্ব করতে হবে এমনটা ঠিক নয়, বরং প্রথমে পর্যালোচনা করে দেখতে হবে ভালো লাগা বা তার প্রতি আকর্ষণের কারণ কিংবা উত্সটা কী এবং সে আদৌ বন্ধু হবার যোগ্য কি না ইত্যাদি। ০২। হঠাত্ করে কারো সাথে পরিচিত হবার মধ্য দিয়ে অর্থাত্ কোনো রকম বিচার বিশ্লেষণ ছাড়া বন্ধুত্ব গড়ে উঠলে অনেক সময় দুঃখজনক পরিণতি ঘটতে পারে। ০৩। বন্ধু চাহিবামাত্র তাকে সামর্থ্য অনুযায়ী কিছু টাকা ধার দিন।

এই টাকা পাওয়ার আশা আপনি ত্যাগ করুন। ধরে নিন এটা আপনার ইনভেস্ট। এরপর চুপচাপ লক্ষ করুন বন্ধু কথা অনুযায়ী আপনাকে টাকা ফেরত দেয় কি না। দিলে কীভাবে দেয়। আপনার পাওনা টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে তার সদিচ্ছা বা মনোভাব কেমন সেটা লক্ষ করুন।

ব্যস্ এতেই চলবে... আপনি বুঝে যাবেন যা বোঝার। ০৪। আপনি কৃত্রিম সংকট তৈরি করুন। ভাব দেখান আপনি অনেক বিপদে পড়েছেন। এবার বন্ধুর সাহায্য চান।

আপনাকে সাহায্যের ব্যাপারে প্রিয় বন্ধুর সদিচ্ছা বা মনোভাব কেমন সেটা লক্ষ করুন। এবার খুব সহজেই বুঝতে পারবেন, সে আপনার কেমন বন্ধু। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই আমরা সত্যিকারের বন্ধুদের খুঁজে পাই না, তাই বন্ধু নির্বাচনের এই ভুলটা অনেক সময়ই আমাদের বড় ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।