আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মৃত্যুর ৭০ বছর পরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শাস্তি

অবশেষে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দীর্ঘ প্রায় ৭১ বছরের কৌতূহলের অবসান হইল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৪১ সালের ৭ই আগস্ট তারিখে ইহধাম ত্যাগ করিয়া পরকালের দিকে যাত্রা করিলেন। পরকালের খাস কামড়ায় ভগবানের মুখোমুখি হইবার পরেই চিত্রগুপ্ত একখানা হিসাবের খাতা তাহাকে ধরাইয়া দিলেন। রবীন্দ্রনাথ খাতাটা দেখিলেন। ভগবানের হিসাব খুব সূক্ষ্ণ।

তিনি হিসাবের বিবরনীতে দেখিলেন যে নিজের অজান্তে এবং অনিচ্ছায় কিছু পাপ করিয়া ফেলিয়াছেন। তিনি ভগবানের দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে চাহিয়া রহিলেন। ভগবানের খাস কামড়ায় নীরবতা নামিয়া আসিল। দয়াময় ভগবান প্রথম নীরবতা ভঙ্গ করিলেন। ভগবান রবীন্দ্রনাথকে বলিলেন, "তুমি অনেক বড় কবি।

তোমার সৃষ্টির মত তুমিই মহত। কিন্তু পাপ মাত্রই পাপ। আর পাপীকে শাস্তি ভোগ করিতে হইবে। ইহাই নিয়ম। সুতরাং তোমাকেও শাস্তি ভোগ করিতে হইবে।

" রবীন্দ্রনাথ অবাক হইয়া ভগবানের কথা শুনিতে লাগিলেন। ভগবান বলিলেন, "আশি বছর বয়স পর্যন্ত তুমি অক্লান্ত পরিশ্রম করিয়াছ। যাও স্বর্গে অবস্থান কর। বিশ্রাম কর। স্বর্গকে উপভোগ কর।

" এইবার রবীন্দ্রনাথ অবাক হইয়া প্রশ্ন করিলেন, "প্রভু, আমার শাস্তি কি তবে মওকুফ করা হইয়াছে!" ভগবান বলিলেন, " মওকুফের বিধান এখানে নাই। তোমার ক্লান্তি দূর করিবার জন্যই তোমাকে স্বর্গে প্রেরন করা হইতেছে। স্মরন রাখিও, আজ হইতে ৭০ বছর অতিক্রম হইলে তুমি কৃত পাপের জন্য শাস্তির মুখোমুখি হইবে। " রবীন্দ্রনাথ স্বর্গবাস করিতে থাকিলেন। স্বর্গের অপ্সরীগন গান গাহিয়া তাহাকে অনন্দ দিতে লাগিল।

তিনি স্বর্গের বাগানে বেড়াইতে লাগিলেন। স্বর্গের জোছনা উপভোগ করিতে করিতে ক্লান্ত হইতে লাগিলেন। তথাপি দিন শেষে তাহার মন কৌতূহলে অশান্ত হইত। তিনি ভাবিতেন ৭০ বছর অতিক্রম হইলে ভগবান তাহাকে কি শাস্তি দিবেন। এক একটা করিয়া বৎসর অতিক্রান্ত হইতে লাগিল।

রবীন্দ্রনাথের কৌতূহলও গাঢ়তর হইয়া উঠিতে লাগিল। ৮ই মে ২০১১ তারিখে রবীন্দ্রনাথ আবার ভগবানের সাক্ষাৎ পাইলেন। ভগবান "কবি, এইবার শাস্তির জন্য প্রস্তত হও" বলিয়া রবীন্দ্রনাথকে দুইখানা অতি চিকন চৌকোনা বাকসো প্রদান করিলেন। ৭০বছরের কৌতূহল মিটাইতে গিয়া রবীন্দ্রনাথ দ্রুত হস্তে বাকসো দুইটি খুলিয়া দেখিলেন তাহার ভিতরে একখানা করিয়া গোলাকার ধাতব পাত। রবীন্দ্রনাথ ভাবিতে লাগিলেন ইহা কোন প্রকারের শাস্তি!! রবীন্দ্রনাথের ভাবনা অনুধাবন করিয়া ভগবান হাসিয়া বলিলেন, " সকল কিছু পূর্বের মতনই থাকিবে।

তবে এখন হইতে স্বর্গের কোন অপ্সরী আর তোমাকে গান গাহিয়া শুনাইবেনা। এই গোল চাক্তিতে তেমার সৃস্টি করা যে গানসমূহ আছে তাহাই প্রতিদিন তিনবেলা করিয়া শুনিতে হইবে। " ভগবান তাহাকে ধাতব চাক্তিটি বাজাইবার জন্য একখানা যন্ত্রও প্রদান করিলেন। রবীন্দ্রনাথ ভাবিয়া পাইলেননা যে, নিজের গান শ্রবন করা কোন ধরনের শাস্তি!! তিনি স্বর্গে তাহার নির্ধারিত গৃহে ফিরিয়া আসিলেন। বাকসো দুইটি আবার দেখিলেন।

একখানা বাকসোর উপরে লেখা রহিয়াছে "মনে রবে কি না রবে আমারে" আর অন্যটিতে লেখা রহিয়াছে "মনে কী দ্বিধা....। " দুইটিতে একজন স্বাস্থ্যবতী রমনীর মুখের প্রতিকৃতি। রবীন্দ্রনাথ শাস্তি ভোগের নিমিত্তে চাক্তিটি যন্ত্রে প্রবেশ করাইলেন। যন্ত্রটি স্বর্গের আকাশ পাতাল কম্পিত করিয়া তাহার সৃজিত সংগীত উদগীরন করিতে শুরু করিল। তিনি নিজের সংগীত শুনিয়া মূর্চ্ছা যাইতে চাহিলেন।

কিন্ত মূর্চ্ছা যাইতে পারিলেন না। স্বর্গে মূর্চ্ছা যাইবার সুবিধা নাই। তিনি যন্ত্রটি বন্ধ করিতে চাহিলেন। কিন্তু যন্ত্রটি বন্ধ করা সম্ভব হইলনা। সংগীত চলিতে থাকিল আর রবীন্দ্রনাথ প্রবল যন্ত্রনায় কাতরাইতে লাগিলেন।

সংগীত শ্রবন করা যে এতটা ভয়ংকর শাস্তি হইতে পারে তাহা রবীন্দ্রনাথ বিন্দুমাত্র অনুধাবন করিতে পারেন নাই। সংগীত সৃষ্টির জন্য নিজের প্রতি প্রবল ক্রোধ বোধ করিলেন। বারংবার আত্নদংশনে দংশিত হইতে লাগিলেন। যন্ত্রনাকাতর অবস্থায় চৌকনা বাকসো দুইটি আবার হাতে লইলেন। দেখিলেন কাগজে মুদ্রিত স্বাস্থ্যবতী রমনীর প্রতিকৃতির প্বার্শে রঙিন হরফে লেখা রহিয়াছে 'ইভা রহমান'।

রবীন্দ্রনাথ যন্ত্রণা ভোগ করিতে করিতে ভাবিতে লাগিলেন ভগবান এতটাই ক্ষমতাবান ও সৃজনশীল যে গানকেও শাস্তির কঠিন অস্ত্র বানাইতে পারেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শাস্তিভোগের ভয়াবহ দৃশ্য দেখিয়া ভগবানের হৃদয় কাদিয়া উঠিলেও আড়াল হইতে চিত্রগুপ্ত হাসিতে লাগিলেন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.